মাশরাফিকে তাড়াতে আমরা উঠে-পড়ে লেগেছি কেন?
৬ আগস্ট ২০১৯ ২০:৩৪
সময়ের করাল স্রোতে একদিন হয়তো সাকিবের ব্যাট-বলও কথা কইবে না। বিষাদের বিউগল বাজবে অলক্ষ্যে। কোনো এক বর্ষা কিংবা হেমন্তের দিনে থেমে যাবে বসন্ত দিনের গান। মুশফিকের ধারালো ব্যাট ভোঁতা হয়ে যাবে। উইকেটের পেছনে তার বিদ্যুৎ গতির কিপিং দেখা যাবে না, বল গ্লাভসে লুফে নিয়েই বেলস ফেলে আম্পায়ারের দিকে আঙুল তুলে সজোরে আপিল করার সামর্থ্য থাকবে না, গ্লাভস ফাঁকি দিয়ে বল চলে যাবে সীমানার দিকে। সহজ সহজ ডিসমিসাল মিস করবেন।
ক্রিকেটীয় রীতিতে তখন তাদেরও সংবাদ সম্মেলনে আসতে হবে। আচ্ছা,তখনও কী এভাবেই আমরা বার বার তাদের প্রশ্নবানে জর্জরিত করব? এটাই আপনার শেষ ম্যাচ নাকি আগামি কালেরটা? এটাই শেষ শ্রীলঙ্কা সফর? অবসরের ঘোষণাটা কি ঘরের মাঠেই দিচ্ছেন? অনিবার্য কিছু না জেনেও আমরা সংবাদ মাধ্যম কর্মীরা শিরোনাম করব-‘মুশফিক, সাকিবের বিদায়ী ম্যাচে কোটি টাকা খরচ করে অমুক দল, তমুক দল নিয়ে আসছে বিসিবি।’ ‘মুশফিক-সাকিবের বিদায়: অমুক দলের সবুজ সঙ্কেতের অপেক্ষায় বিসিবি’- ঠিক আজ যেটা মাশরাফিকে নিয়ে আমরা করছি।
পড়ুন: মাশরাফির বিদায়: জিম্বাবুয়ের সবুজ সঙ্কেতের অপেক্ষায় বিসিবি
তখন দেশ সেরা এই দুই পারফর্মারকে তাড়াতেও নিশ্চয়ই আমরা এখনকার মতোই উঠে পড়ে লাগবো। স্বস্তিতে তাদের প্রিয় কাজের জায়গাটি ছাড়ার ফুসরৎও দেব না। বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে মাশরাফির মতো তারাও নিশ্চয়ই তখন পরিচিতজন এড়িয়ে চলবেন।
কী নিষ্ঠুর আমরা! কী অকৃতজ্ঞ আমরা! হৃদয় নিংড়ানো নিবেদনে বাংলাদেশকে যারা পৃথিবীর বুকে দাপুটে বলে পরিচয় করে দিয়েছেন সেই তাদেরই টিস্যু পেপারের মতো ছুঁড়ে ফেলে দেই!
কী দোষ মাশরাফির? বিশ্বকাপে পারফর্ম করতে পারেননি, এই তো? সেটা কেন জেনেও অনেকেই না জানার ভান করে আছেন। যারা জানেন না তাদের মনে করিয়ে দিচ্ছি… হ্যামস্ট্রিংয়ের পুরোনো চোট তার শরীরে জেঁকে বসেছিল। অথচ বিশ্বকাপের আগে আয়ারল্যান্ড সিরিজে চার ম্যাচে ৬ উইকেট নিয়েছেন সেটা বেমালুম ভুলে গেছেন!
বিশ্বকাপের আগে নিজেই জানিয়েছেন, সদ্য সমাপ্ত বিশ্বকাপটিই তার শেষ। দেশে ফিরে সুবিধাজনক সময়ে ক্রিকেট ছাড়ার ঘোষণা দেবেন। কিন্তু আমরা তার সেই সময়টিই আর দিচ্ছি কই? সম্ভব হলে আজই ক্রিকেট ছাড়া করি!
আমরা হয়তো ভুলে যাই, ছুরি কাঁচিতে ক্ষত বিক্ষত পায়ের নিক্যাপ টানতে টানতে বোলিং মার্কে যাওয়া এই মাশরাফিই বাংলাদেশকে অনেক প্রথমের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। অসংখ্য প্রথমের নায়ক তিনি নিজেও।
ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটে ৩৮৬ উইকেট নিয়ে দেশ সেরা বোলার মাশরাফি। দেশের প্রথম পেসার হিসেবে ওয়ানডেতে ছুঁয়েছেন দুশ উইকেটের মাইলফলক। ক্রিকেটে সব সময়ের শক্তিশালি ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকাকে সিরিজ হারানো যায় সেটা শিখিয়েছেন তিনিই। শরীরে সাতবার অস্ত্রোপচারের পরেও অমন বীর দর্পে ক্রিকেট খেলা যায় সেটাও শিখিয়েছেন তিনি। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল, আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমি ফাইনাল তার নেতৃত্বেই খেলেছে বাংলাদেশ। এমন আরও কত কি…!
মাঠের খেলার পাশাপাশি ব্যক্তিগত গুণাবলীতে অনন্য মানুষটি। যা তাকে জয়াগা করে দিয়েছে এদেশের মানুষের অন্তরের অন্তস্থলে, সুগম করেছে জনপ্রতিনিধিত্বের পথ। ১৬ কোটি মানুষের হৃদয় জয় করে হয়েছেন সংসদ সদস্য।
সেই পারফর্মার মাশরাফিকে, মানুষ মাশরাফিকে ক্রিকেটাঙ্গন ছাড়া করতে আমরা উঠে পড়ে লেগেছি। কিন্তু কেন? অপেক্ষা করুন, ঘোষণাটি তিনিই দেবেন।
আরও পড়ুন: বার্নস খেললেন বার্মিংহাম টেস্টের পাঁচ দিন!