আন্তর্জাতিক ক্রিকেট না খেলেও যিনি টাইগারদের কোচ!
১৮ আগস্ট ২০১৯ ১২:০৮
বিশ্বকাপের মাঝ পথেই শোনা গিয়েছিল প্রধান কোচ স্টিভ রোডস আর দায়িত্বে থাকছেন না টাইগারদের। আর বিশ্বকাপ শেষে দল দেশে ফেরার পর তো নিশ্চিতই হয়ে গেল দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে রোডসকে। আর সেই থেকেই নতুন কোচ খোঁজার কাজে লেগে পড়ে বিসিবি। এরপর বিশ্বের নামীদামী অনেক কোচের সাক্ষাৎকারের পর সাবেক দক্ষিণ আফ্রিকা জাতীয় দলের প্রধান কোচ রাসেল ডোমিঙ্গোকেই বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে বিসিবি।
রাসেল ডোমিঙ্গো ১৯৭৪ সালের ৩০ আগস্ট পোর্ট এলিজাবেথে জন্মগ্রহণ করেন। টাইগারদের কোচ সম্পর্কে সব থেকে বড় যে বিস্ময় সামনে এসেছে তা হলো কখনোই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে মাঠে দেখা যায়নি তাকে। তবে একেবারেই যে তিনি ক্রিকেটার ছিলেন না তা নয়। খেলেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার ইস্টার্ন প্রোভিন্সের হয়ে।
তবে ক্রিকেটীয় জীবনের একেবারে শুরুতেই মনে করলেন খেলোয়াড় হওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়। আর এই কারণেই সিনিয়র কোনো দলের হয়ে ক্যারিয়ার শুরুর আগেই ক্রিকেট খেলা ছেড়ে দিলেন। তবে ক্রিকেট থেকে সরে যাননি, আর তাই তো মাত্র ২২ বছর বয়সেই বেছে নিলেন কোচিং ক্যারিয়ার। যে সময়ে একজন খেলোয়াড়ের ক্যারিয়ার শুরু হয়, সে সময়ে ডোমিঙ্গোর শুরু হলো কোচিং ক্যারিয়ার।
মাত্র ২৫ বছর বয়সেই ইস্টার্ন প্রোভিন্সের বয়সভিত্তিক দলের কোচ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন ডোমিঙ্গো। এসময় তিনি কাজ করেন দক্ষিণ আফ্রিকা জাতীয় একাডেমিতে হিল্টন অ্যাকারম্যানের অধীনে। এরপর ২০০৪ সালে ডোমিঙ্গোর বয়স যখন মাত্র ৩০ বছর সে সময়ই তার হাতে তুলে দেওয়া হয় দক্ষিণ আফ্রিকা অনূর্ধ্ব-১৯ দলের দায়িত্ব।
দক্ষিণ আফ্রিকার বয়সভিত্তিক দলের কোচ হিসেবে বাংলাদেশে এসেছিলেন ডোমিঙ্গো। ২০০৪ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকা দলের কোচ ছিলেন তিনি। তবে পরের বছর ২০০৫ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ দল ছেড়ে ডোমিঙ্গো দায়িত্ব নেন দক্ষিণ আফ্রিকার ঘরোয়া ক্রিকেটের ফ্রাঞ্চাইজি ভিত্তিক দল ‘দ্য ওয়ারিয়র্সের’। ডোমিঙ্গোর অধীনেই ওয়ারিয়র্সরা ২০০৯-১০ মৌসুমে দক্ষিণ আফ্রিকার ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি প্রতিযোগিতার শিরোপা অর্জন করে।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ টি-টোয়েন্টিতেও ২০১০ এবং ২০১১ সালে ওয়ারিয়র্সের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তবে ফাইনালে চেন্নাই সুপার কিংসের কাছে পরাজিত হয় তার দল।
এরপর ২০১০ সালে ক্লাব ক্রিকেটের দায়িত্ব ছেড়ে আবারও দেশের ক্রিকেটের দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকা ‘এ’ দলের প্রধান কোচ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন ৩৬ বছর বয়সে। টাইগারদের সাথে ডোমিঙ্গোর সম্পর্ক যেন বেশ শক্ত। আর তাই তো প্রোটিয়া ‘এ’ দলের হয়ে তার প্রথম কাজটাও পড়ে বাংলাদেশেই। সে বছরই বাংলাদেশ ‘এ’ দল দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যায়, আর তখনও প্রোটিয়াদের প্রধান কোচ হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন ডোমিঙ্গোই।
ডোমিঙ্গোর সফলতার কারণে প্রথমবারের মতো ডাক পান জাতীয় দলে। ২০১১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রধান কোচ হিসেবে নিয়োগ পাওয়া গ্যারি কারস্টেনের অধীনে সহকারী কোচ হিসেবে দায়িত্ব পান ডোমিঙ্গো। আর ২০১২ সালের ডিসেম্বরেই গ্যারি কারস্টেনকেই তার স্থানে দায়িত্ব গ্রহণ করেন বর্তমান টাইগার কোচ। সে সময় ডমিঙ্গোর বয়স ছিল ৩৮ বছর।
প্রোটিয়াদের দায়িত্ব গ্রহণ করার সময় অবশ্য কেবল টি-টোয়েন্টির জন্যই নিয়োগ পান তিনি। গ্যারি কারস্টেন ২০১৩ সালে প্রোটিয়াদের কোচের পদ থেকে সরে দাড়ালে প্রধান কোচের হওয়ার দৌড়ে সব থেকে এগিয়ে যান ডোমিঙ্গোই। আর প্রোটিয়া ক্রিকেট বোর্ডও ডোমিঙ্গোর ওপরই আস্থা রাখলো এবং তাকে নিয়োগ দিলো প্রধান কোচ হিসেবে।
ডোমিঙ্গো দায়িত্বে থাকা সময়ে ২০১৪ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকা খেলেছিল সেমিফাইনালে। ২০১৫’তে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপেও ডোমিঙ্গোর অধীনে সেমিফাইনালে উঠেছিল প্রোটিয়ারা। ভিলিয়ার্স-ডু প্লেসিদের কোচের দায়িত্বে ডোমিঙ্গো ছিলেন ২০১৭ সাল পর্যন্ত। এরপর তার বদলি হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় ওটিস গিবসনকে। ২০১৭ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত এই দুই বছর বিশ্রামেই ছিলেন রাসেল ডোমিঙ্গো।
৪৫ বছর বয়সী ডোমিঙ্গো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট না খেললেও ক্রিকেটের সাথে তার সম্পর্ক পুরাতন। এই প্রোটিয়ার কোচিং ক্যারিয়ারের বয়স প্রায় ২৩ বছর। ক্লাব ক্রিকেট থেকে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ আসর সব জায়গাতেই আছে কাজ করার অভিজ্ঞতা। বয়সভিত্তিক দল থেকে শুরু করে জাতীয় দল অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন সব ক্ষেত্র থেকেই। প্রোটিয়াদের সাবেক কোচ- এ পরিচয়েই এখন হাই প্রোফাইল কোচে পরিণত হয়েছেন রাসেল ডোমিঙ্গো।
ডোমিঙ্গো যে সময় প্রোটিয়া কোচ ছিলেন অর্থাৎ ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত, সে সময় তার অধীনে ব্যাটিং কোচ হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের বর্তমান ব্যাটিং কোচ নেইল ম্যাকেঞ্জি। এছাড়া টাইগারদের নতুন বোলিং কোচও আরেক প্রোটিয়া। চার্ল ল্যাঙ্গাভেল্ট বিশ্বকাপের পর টাইগারদের পেস বোলিং কোচ হিসেবে দায়িত্ব পান।
প্রোটিয়াদের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় দলকে খেলিয়েছেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমি ফাইনাল এবং ২০১৫ অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের ওডিআই বিশ্বকাপেরও সেমি ফাইনাল। তবে টাইগারদের হয়ে কতটা সফল হতে পারবেন এই প্রোটিয়া তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে টাইগার সমর্থকদের।
আরও পড়ুন: দুই মাস সময় চেয়েছেন মাশরাফি