ইডেন, লীডস আর মাঝে লর্ডসে বিশ্বজয়ী স্টোকস!
২৬ আগস্ট ২০১৯ ০৭:৩২
ইংলিশ না হয়েও ইংলিশদের ইতিহাস রচনা করছেন বেঞ্জামিন এন্ড্রু স্টোকস। আশ্চর্যকর হলেও সত্য, ইংলিশদের বিশ্ব জয় কিংবা ঐতিহাসিক অ্যাশেজে সমতায় ফেরানো স্টোকসের জন্ম নিউজিল্যান্ডে। বাবার কর্মক্ষেত্রের কারণে ইংল্যান্ডে চলে আসা স্টোকস একের পর রচনা করছেন ইতিহাস। ইংলিশ রূপকথাকে নতুন করে লিখছেন স্টোকস। আর তার উত্থানও যেন রূপকথা ফিনিক্স পাখির মতো।
ফিনিক্স পাখি যেমন পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ার পর আবার সেই ছাই হতেই পুনরায় জন্ম নেয়। বেন স্টোকসও জন্ম নিয়েছেন ছাই থেকেই। স্টোকস রূপকথার শুরুটা পুড়ে যাওয়ার মধ্য দিয়েই। কোলকাতার ইডেন গার্ডেনসে মহাকাব্যিক টি-টোয়েন্টি ফাইনালে শেষ ওভারে ক্যারিবীয়দের দরকার ১৯ রান।
শেষ ওভারে ১৯ রান প্রয়োজন যা বেশ কঠিন তবে টি-টোয়েন্টির যুগে অসম্ভব কখনোই নয়। বল হাতে নিয়ে স্টোকস হয়তো ভাবছিলেন বিশ্বকাপটা হয়তো জিতেই গেলেন। তবে ২০তম ওভারের প্রথম চার বলেই স্টোকসকে চারটি ছয় মেরে বিশ্বজয় করেছিলেন কার্লোস ব্র্যাথওয়েট। সেবার ইংলিশদের বিশ্বকাপের স্বপ্ন ধুলোয় জড়িয়ে দিয়েছিলেন স্টোকস। কেঁদেছিলেন ইডেনে হাজার হাজার মানুষের সামনে।
ইডেন দেখেছিল এক অসহায় স্টোকসকে। যে কিনা একাই ভেঙেছিলেন ইংলিশদের বিশ্বজয়ের স্বপ্ন। তবে স্টোকস তো রূপকথার সেই ফিনিক্স। পুড়ে ছাই হয়েছেন তাতে কি? সেখান থেকেই তো আবার জন্ম হবে তার।
তিন বছর আগে ইংলিশদের টি-টোয়েন্টির বিশ্বজয়ের স্বপ্নকে নিঃশেষ করে দেওয়া বেন স্টোকসই ইংলিশদের এনে দিলেন অধরা ওয়ানডে বিশ্বকাপ। তিন বছর আগে ইডেনের সেই ফাইনাল হারের পর কেউ যদি বলতো এই স্টোকসই ইংলিশদের বিশ্বকাপ এনে দিবেন তাহলে হয়তো হাসি থামতোই না বিশ্ববাসীর। তবে স্টোকসের জন্মই যেন রূপকথা লেখার জন্য।
আর তাই তো বাকিরা যখন ব্যর্থ ঠিক তখনই খেললেন নিজের ক্যারিয়ারের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস। অন্যরা যখন সাজঘরে যাওয়া আসায় ব্যস্ত তখনও মাটি কামড়ে উইকেটে পড়ে থাকলে স্টোকস। সবাই যখন বিশ্বজয়ের স্বপ্ন ভঙ্গ বলে মনে করছেন, তখনও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন স্টোকস।
আর তাই তো মহাকাব্যিক ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনাল একা হাতেই জেতালেন স্টোকস। সংখ্যার হিসেবে নামের পাশে রান মাত্র ৮৪। তবে প্রয়োজনের হিসেবে এই রান অমূল্য।
বিশ্ব জয়েই থেমে যায়নি স্টোকস। এ যেন কেবল ক্রিকেটে স্টোকস অধ্যায়ের শুরু। এখনও বাকি বিশ্বকে নিজের রূপকথা দেখানোর। ইংলিশদের রূপকথার নতুন কারিগর বেন স্টোকসে মুগ্ধ করার সময় তখনও বাকি।
বিশ্বকাপ শেষ, রূপকথার এক অধ্যায় প্রকাশিত হয়েও গেছে স্টোকসের। নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য এক উচ্চতায়। তবে স্টোকস রূপকথা তখনও চলছেন। ২০১৯ অ্যাশেজের প্রথম টেস্ট জিতে এগিয়ে অস্ট্রেলিয়া, দ্বিতীয় টেস্টে জিততে জিততেও ড্র করেছে ইংলিশরা। আর তৃতীয় টেস্টও হারতে বসেছে ইংলিশরা। কারণ চতুর্থ ইনিংস ৩৫৯ রান তাড়া করে কখনোই জিততে পারেনি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।
আর ইতিহাস যা বলে সে দিকেই এগিয়ে যাচ্ছিল ইংলিশরা। মাঝ পথে বাধা হয়ে দাঁড়ালেন বেন স্টোকস। তার রণকৌশল ছিল অন্য কিছু। ৩৫৯ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামা ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা প্রথম ইনিংসে নিজেদের ব্যাটিংয়ের পথেই হাটা শুরু করে। প্রথম ইনিংসে মাত্র ৬৭ রানে অল আউট হয়েছিল তারা। আর দ্বিতীয় ইংসের শুরুতেই ১৫ রানেই বিদায় দুই ওপেনারের।
ইংলিশদের সামনে তখনও পাহাড়সম রান। জো রুট আর জো ডেনলি যথাক্রমে ৭৭ আর ৫০ করে আউট হন। আর তাদের সাথে সাথে সাজঘরের পথ ধরেন বাকি ব্যাটসম্যানরাও। ৯ম উইকেটের যখন পতন হয় তখন ইংলিশদের রান সংখ্যা ২৮৬। জয়ের জন্য প্রয়োজন তখনও ৭৩ রান। অজিদের জয় তখন কেবল সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
উইকেটে রয়েছেন এক বেন স্টোকস আর জ্যাক লিচ। দুইজন মিলে গড়লেন এক মহাকাব্যিক রূপকথা। অসম্ভবকে জয় করলেন বেন স্টোকস। একা হাতেই লিখে ফেললেন ইতিহাস। ইংল্যান্ডকে এনে দিলেন জয়। ১৩৫ রান করে ইনিংসটাকে অমরত্ব এনে দিলেন স্টোকস। লীডসের আকাশে তখন কেবল স্টোকসের বন্দনা। অজিরা কেবল অসহায়ের মতো স্টোকসের দিকে তাকিয়ে। স্তুতিতে গাইছেন নতুন এই কিংবদন্তির।
ক্রিকেট বিশ্ব ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন স্টোকসের বন্দনা করতে। ইডেনে ঠিক যেভাবে স্টোকস হাটু গেড়ে বসে পড়েছিলেন ঠিক সেভাবে আরও একবার হাটু গেড়ে বসে পড়লেন। আর এভাবে হাটু গেড়ে বসে পড়েছিলেন বিশ্বকাপ জয় করেও।
স্টোকসের ১৩৫ রানের এই ইনিংস সংখ্যার হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে খুব নগন্য হলেও, ক্রিকেটের সব থেকে মর্যাদার এই লড়াইয়ে যা অমরত্ব লাভ করেছে। একা হাতেও যে কোনো টেস্ট ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড়া যায় তা দেখালেন স্টোকসই। ২০১৯ সালের অ্যাশেজের তৃতীয় টেস্ট হেডিংলি লীডস, চির অমরত্ব লাভ করলো বেন স্টোকসের ১৩৫ রানের মহাকাব্যিক ইনিংস।
আরও পড়ুন: স্টোকসের আরেক ‘মহাকাব্য’, রেকর্ড গড়ে অ্যাশেজে সমতায় ইংলিশরা
অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড দ্য অ্যাশেজ বিশ্বকাপ ফাইনাল বেন স্টোকস