২০১৫-২০১৯, খুব একটা বদলায়নি রিয়াল মাদ্রিদের চেহারা
২৬ আগস্ট ২০১৯ ২০:২০
২০১৩ সালের জুনে হোসে মরিনহো স্প্যানিশ জায়ান্ট রিয়াল মাদ্রিদের কোচের পদ থেকে চলে গেলে ছয়বার হাত বদল হয় ক্লাবটির। ২০১৩ সালের জুনে দায়িত্ব নেন কার্লো আনচেলত্তি। এরপর মাত্র ৬ মাসের মতো কোচ ছিলেন রাফা বেনিতেজ। ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে সহকারী কোচ থেকে হেড কোচ হয়ে আসেন জিনেদিন জিদান। ২০১৮ সালের মে মাসে নিজে থেকে কোচের পদ ছেড়ে দেন জিদান।
ফরাসি এই কোচের পর রিয়াল নিয়ে আসে স্প্যানিশ কোচ হুলেন লোপেতেগুইকে। ২০১৮ সালের জুন থেকে অক্টোবর ছিলেন লোপেতেগুই। এরপর আর্জেন্টাইন কোচ সান্তিয়াগো সোলারি দায়িত্ব পালন করেন মাত্র চার মাসের কিছু বেশি সময়। চলতি বছরের ১১ মার্চ দ্বিতীয় মেয়াদে কোচ হিসেবে নিয়োগ পান জিদান।
রিয়ালের মতো সাম্প্রতিক সময়ে উইরোপের কোনো ক্লাবের কোচ এতো বেশি যাওয়া-আসা করেনি। কোচের এতো বেশি যাওয়া-আসার মধ্যেও মাদ্রিদের জায়ান্টদের কিন্তু খুব একটা চেহারা বদলে যায়নি। যতটা না বদলে গেছে বার্সেলোনা, অ্যাতলেতিকো মাদ্রিদ, ম্যানচেস্টার সিটি, জুভেন্টাস, বায়ার্ন মিউনিখ, পিএসজি, লিভারপুলের চেহারা।
২০১৫ সালের পর রিয়ালের নিয়মিত একাদশে থাকতেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। গত মৌসুমে ইতালির ক্লাব জুভেন্টাসে নাম লিখিয়েছেন তিনি। পর্তুগিজ এই তারকা ছাড়া মোটামুটি প্রায় সবাই আছেন এখনও। রিয়ালের কোস্টারিকান গোলরক্ষক কেইলর নাভাস যাবো যাবো করছেন। চলতি মৌসুমে লিগের দ্বিতীয় ম্যাচে রিয়াল ভায়োদলিদের বিপক্ষে ১-১ গোলে ড্র করে রিয়াল। পাঁচ বছর আগে প্রায় একই রকম আক্রমণভাগ নিয়ে খেলেছিল স্পেনের জায়ান্টরা।
২০১৪ সালের ৩১ আগস্ট তখনকার রিয়াল কোচ কার্লো আনচেলত্তির অধীনে অ্যাওয়ে ম্যাচে রিয়ালের প্রতিপক্ষ ছিল রিয়াল সোসিয়েদাদ। অ্যানোয়েতা স্টেডিয়ামে আতিথ্য নেওয়া রিয়ালের শুরুর একাদশে আক্রমণভাগে ছিলেন গ্যারেথ বেল, করিম বেনজেমা, জেমস রদ্রিগেজ আর ইসকো। বিশ্রামে রাখা হয়েছিল তখনকার সেরা অস্ত্র ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে। গত ম্যাচে রিয়াল ভায়োদলিদের বিপক্ষে হোম ম্যাচেও এই চার তারকা রিয়ালের শুরুর একাদশে আক্রমণভাগে ছিলেন। ইনজুরির কারণে ছিলেন না রিয়ালের নতুন অস্ত্র বেলজিয়ামের এডেন হ্যাজার্ড। শুরুর একাদশে আরও ছিলেন না ভিনসিয়াস জুনিয়র। একাদশে ছিলেন দানি কারভাহাল, সার্জিও রামোস, মার্সেলো এবং টনি ক্রুস। পাঁচ বছর আগের সেই ম্যাচে খেলা ১১ জনের ৯ জন খেলেছেন গত ম্যাচে।
গোলরক্ষক ইকার ক্যাসিয়াস, পেপে আর লুকা মদ্রিচ পাঁচ বছর আগের সেই ম্যাচে থাকলেও ক্যাসিয়াস আর পেপে রিয়ালের অধ্যায় শেষ করেছেন। মদ্রিচ রিয়ালে থাকলেও গত ম্যাচে জায়গা মেলেনি। লাল কার্ড দেখে নিষিদ্ধ হওয়া মদ্রিচ খেলতে পারেননি সেই ম্যাচে। পাঁচ বছর আগের সেই ম্যাচটিতে বেল আর সার্জিও রামোস গোল করলে রিয়াল মাদ্রিদ ২-০ গোলের লিড নেয়। কিন্তু চমক জাগিয়ে স্বাগতিক সোসিয়েদাদ ৪-২ গোলে হারিয়ে দেয় রিয়ালকে। আর গত ম্যাচে দুই মৌসুম বায়ার্ন মিউনিখে ধারে কাঁটিয়ে রিয়ালের একাদশে ফেরেন কলম্বিয়ান তারকা রদ্রিগেজ। এবারের মৌসুমে ঘরের মাঠে প্রথম ম্যাচেই জিদানের একাদশে জায়গা মিলেছিল এই কলম্বিয়ানের। বেল আর রদ্রিগেজের সাথে সাথে করিম বেনজেমাও বেশ কিছু সুযোগ পান, তবে গোল করতে ব্যর্থ হন সবাই।
এদিকে, ২০১৫ সালে বার্সার জার্সিতে মাঠ মাতানো নেইমার নেই। দুই মৌসুম আগেই তিনি রেকর্ড ট্রান্সফার ফিতে বার্সা ছেড়ে পিএসজিতে নাম লেখান। বার্সার দলে নেই গোলরক্ষক ক্লদিও ব্রাভো, দানি আলভেজ, আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা, জাভিয়ের মাশচেরানোরা। লুইস এনরিকের অধীনে খেলা ক্রোয়েশিয়ার তারকা ইভান রেকিটিচও যাবো যাবো করছেন।
সেই ২০১১ সালে কোচের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে অ্যাতলেতিকো মাদ্রিদেই থিতু হয়েছেন আর্জেন্টাইন কোচ দিয়েগো সিমিওন। তার অধীনে ২০১৫ সালে খেলা গ্যাবি, দিয়েগো গডিন, ফার্নান্দো তোরেস, হুয়ানফ্রান, অ্যান্তোনিও গ্রিজম্যান আর ক্যারাসকো এখন নেই। গত মৌসুমে অ্যাতলেতিকো ছেড়ে জাপানিজ ক্লাব সাগান তোসুতে নাম লেখান তোরেস। কদিন আগেই যিনি বুটজোড়া একেবারেই তুলে রেখেছেন। এই মৌসুমে অ্যাতলেতিকো ছেড়ে বার্সায় নাম লিখিয়েছেন বিশ্বকাপ জয়ী ফরাসি তারকা গ্রিজম্যান। এখনও ক্লাবটিতে আছেন জন ওব্লাক, হোসে জিমিনেজ, কোকে, সাউলরা।
এদিকে, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি ২০১৫ সালে খেলেছিল ম্যানুয়েল পেল্লেগ্রিনির অধীনে। তার পরবর্তী সিটিজেনদের দায়িত্ব নেন পেপ গার্দিওয়ালা। ইতিহাদ স্টেডিয়ামের সেই সময়ের অর্ধেক খেলোয়াড়ই এখন নিজেদের মতো দল বেছে নিয়েছেন। এখনও আছেন ফার্নান্দিনহো, কেভিন ডি ব্রুইন, সার্জিও আগুয়েরো আর ডেভিড সিলভা। দল ছেড়ে চলে গেছেন তখন নিয়মিত একাদশে জায়গা করে নেওয়া ব্যাকারি স্যাগনা, ফার্নান্দো রেগেস, ভিনসেন্ট কোম্পানি, জো হার্ট, গায়েল ক্লিচি আর জেসুস নাভাসের মতো তারকারা।
ওদিকে, ইতালিয়ান চ্যাম্পিয়ন জুভেন্টাসের তো অর্ধেকের বেশি খেলোয়াড়ই নেই। ইন্টার মিলানের দায়িত্ব ছেড়ে ২০১৪ সালে জুভেন্টাসের দায়িত্ব নেন ম্যাসিমিলিয়ানো আল্লেগ্রি। বাজে সময়ে দায়িত্ব নিলেও খুব অল্প সময়ে গুছিয়ে নিয়েছিলেন শিষ্যদের, দায়িত্ব ছেড়েছেন গত মৌসুমে। তার অধীনে খেলা পল পগবা যোগ দিয়েছেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে। রাশিয়ায় পাড়ি জমিয়েছেন ক্লাউদিও মারচিশিও, অবসর নিয়েছেন আন্দ্রেয়া বারগালিয়া, রিয়াল মাদ্রিদে নাম লিখিয়েছেন আলভারো মোরাতা আর পিএসজিতে চলে যান জুভিদের বহুদিনের গোলবার রক্ষা করা সৈনিক বুফন।
জার্মানির জায়ান্ট বায়ার্ন মিউনিখের অবস্থাও একই। পেপ গার্দিওয়ালার অধীনে ২০১৫ সালে খেলেছেন জাবি আলোনসো, ফিলিপ লাম, ফ্রাঙ্ক রিবেরি, আরিয়ান রোবেন এবং আর্তুরো ভিদালরা। কদিন আগেই ফিওরেনটিনায় যোগ দিয়েছেন শেষ সময়ে চলে আসা রিবেরি, ভিদাল গিয়েছেন বার্সায়। থমাস মুলার, ম্যানুয়েল ন্যুয়ের, জেরোমে বোয়েতাং আর থিয়াগো আলকান্ত্রারা থাকলেও পরের দুজন একাদশে জায়গা পেতে হিমশিম খাচ্ছেন।
ফরাসি চ্যাম্পিয়ন পিএসজিও ২০১৫ সালের পর হারিয়েছে অনেক খেলোয়াড়কে। সে সময় ফরাসি জায়ান্টদের টেনে নিয়ে যান জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ, সার্জি আউরিয়ের, থিয়াগো মোত্তা, ডেভিড লুইজ, ম্যাক্সওয়েল, ব্লেইসিস মাতুইদি, কেভিন ট্রাপরা। তারা না থাকলেও পিএসজির নিয়মিত মুখ এখনও থিয়াগো সিলভা, এডিনসন কাভানি, অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়ারা। দলের সেরা অস্ত্র এখন কাইলিয়ান এমবাপে, নেইমাররা।
লিভারপুলের দিকে একটু নজড় দেওয়া যাক। ২০১৫/১৬ মৌসুমে কোচ হিসেবে জার্গেন ক্লপ যাদের পেয়েছিলেন, তাদের মাত্র দুজন এখনও লিভারপুলে আছে। ব্রাজিল তারকা রবার্তো ফিরমিনো আর জেমস মিলনারকে ছাড়া ক্লপ এখন পাচ্ছেন না তার শুরুর শিষ্যদের। চলে গেছেন ব্রাজিল তারকা ফিলিপ কুতিনহো। বার্সায় নাম লিখিয়ে এবার ধারে খেলতে গেছেন বায়ার্ন মিউনিখে। একে একে লিভারপুল ছেড়ে চলে গেছেন কোলো কোলো তোরে, ড্যানিয়েল স্টুরিজ, এমরিক্যান, আলবার্তো মোরেনো, সিমোনে মিগনোলেটরা। ক্লাবে এখনও ক্লপের অধীনে খেলছেন নাথানিয়েল, অ্যাডাম লালানা আর দেজান লোভরেনরা। তবে তারা ২০১৫ সালের দিকে লিভারপুলের সেরা দলের অংশ ছিলেন না।