মেসি-রোনালদোদের ফিটনেস নিয়ে বিশ্বকাপ মিশনে জামাল ভূঁইয়ারা!
১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৯:৫২
ঢাকা: শিরোনাম ভুল পড়ছেন না। লিওনেল মেসি-ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোদের মতো বিশ্বমানের ফিটনেস নিয়েই বিশ্বকাপ ফুটবল বাছাইপর্ব মিশনে নামছে জামাল ভূঁইয়ারা। খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তনসহ কঠোর পরিশ্রম এমন ফিটনেস এনে দিয়েছে লাল-সবুজের ধারক-বাহকদের। একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ম্যাচ খেলতে যতটুকু ফিটনেস বা স্ট্যামিনা প্রয়োজন সেটা নিশ্চিত করেই মিশনে নেমেছে জামাল-সুফিল-সাদ-বিপলুরা।
কথাগুলো জাতীয় ফুটবল দলের প্রধান কোচ জেমি ডে’র। তার মতে, ‘বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের মতো বড় জায়গায় যেমন ফিটনেস বা মানসিক অবস্থা থাকা দরকার তার পরিপূর্ণটাই আছে জাতীয় দলের বর্তমান সদস্যদের। বিশ্বমানের। অর্থাৎ ইউরোপের ফুটবলারদের মতোই ফিটনেস লেভেল তাদের।’
ইতোমধ্যে দেশের বিকেএসপিতে ফিটনেস ও মানসিক পরীক্ষা দিয়ে এসেছে জামাল-রবিউল-বিপলুরা। তাদেরকে ‘এ প্লাস’ মার্ক দিয়েছেন খোদ জেমি ডেই। বর্তমানে জিপিএস প্রযুক্তি সেই পরিমাপ করার সুযোগটা করে দিচ্ছে। জিপিএসের মাধ্যমে ফুটবলারদের গতিসহ ফিটনেস ও স্ট্যামিনার বিভিন্ন দিক বিবেচনায় রেখে কোচ এ তথ্য দিয়েছেন সারাবাংলাডটনেটের কাছে।
দেশের ফুটবলারদের এমন ফিটনেস কিভাবে সম্ভব হয়েছে?
বেশিদূর যেতে হবে না। এক বছর আগে যখন ভুটান বিপর্যয়ের পর লাওস ম্যাচ দিয়ে নির্বাসন থেকে আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরেছে দেশের ফুটবল। সেই দলের ফিটনেস কোচ বা ট্রেইনার ছিলেন মারিও লেমস (এখন ঢাকা আবাহনীর কোচ)। তার হাত ধরেই খেলোয়াড়দের ফিটনেস ও স্ট্যামিনা বদলে যায়। পরে লাওস ম্যাচেও তার প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। যেখানে তথাকথিত বলা হতো ‘দ্বিতীয়ার্ধে গিয়ে ঝিমিয়ে পড়ে দেশের ফুটবলাররা’ সেখানে দেশের বেশিরভাগ জয় এখন ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধের গোলেই।
পরে লাওস, কম্বোডিয়া বা এশিয়ান গেমসে কাতার। সব ম্যাচেই দ্বিতীয়ার্ধের গোলে জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে বাংলাদেশ। এবং ফুটবলারদের শরীরী ভাষা, ফিটনেস ও স্ট্যামিনা ছিল চোখে পড়ার মতো।
এবার আফগানিস্তান ম্যাচকে সামনে রেখে দেশে সপ্তাহ জুড়ে যে ক্যাম্প করা হয়েছে তাতে ফুটবলাররা প্রমাণ করেছে তারা বিশ্বমানের। এর পেছনে অবশ্য ফুটবলারদের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হয়েছে। এবং ভাত ছেড়ে নিয়মমাফিক ফিটনেস কোচ বা ট্রেইনার সিমন মল্টবাইয়ের মেন্যুর সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়েছে জামাল ভূঁইয়াদের।
জাতীয় দলের খেলোয়াড়রাও এখন এই রুটিনে অভ্যস্ত। ফিটনেস কোচ সিমন মল্টবাই সারাবাংলাকে বলেন, ‘একজন খেলোয়াড়কে ফিট থাকতে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আবশ্যক। মেসি-রোনালদো যাদের কথাই বলুন তারাও খাদ্যের মেন্যুসহ পরিশ্রম নিয়ে অনেক সিরিয়াস। কেননা পেশাদার ফুটবলারদের ফিটনেসটা সবসময় ঠিক রাখতে হয়। নাহলে ইনজুরির আশঙ্কা থাকে। খেলায় এর বাজে প্রভাব পড়ে। জামালদের সেইভাবেই রুটিনে আনা হয়েছে। এবং তারা ভালো পরিশ্রম করছে।’
দেশের মাটিতে সকালে মাঠে অনুশীলন বিকালে জিমন্যাসিয়ামে ঘাম ঝরানোসহ রাতে টিম সেশন এইভাবেই কেটে গেছে সাতদিনের বিশ্বকাপ প্রস্তুতির প্রথম পর্ব। ফুটবলারদের ফিটনেস বা মানসিক সামর্থ্যে কোনও কমতি দেখেননি জেমি। বরং বিশ্বমানের ফিটনেস উপধা দিয়েছেন কোচ। ফিটনেস নিয়ে এতটাই সিরিয়াস কোচ জেমি যে ওজন বাড়ার কারণে আনিসুর রহমান জিকোকে অর্থ জরিমানাও করা হয়েছে। আবার সময়ের মধ্যেই সেই ওজন কমানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ফিটনেসটা বিশ্বমানের না হলে বাংলাদেশের বিপদ আরও বেশি হবে। কেননা শক্তি আর গতিতে আফগানরা বেশ এগিয়ে। পুরো ম্যাচে তাদের স্ট্যামিনা ও ফিটনেসের সঙ্গে লাল-সবুজদেরও নামতে হবে যুদ্ধে। এবার অন্তত গত বিশ্বকাপের মতো ভরাডুবি চায় না বাংলাদেশ। বড় দলগুলোর বিপক্ষে প্রমাণের অপেক্ষায় আছে জাতীয় দল। সেই দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ফুটবলারদের কঠোর পরিশ্রমেই দেখা মিলছে।
এমন ফিটনেস নিয়ে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের প্রথম ম্যাচ খেলতে তাজিকিস্তানে অবস্থান করছে লাল-সবুজরা। সেখানে আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে ৩ ও ৫ তারিখে দেশটির দুই ক্লাব এফসি কুকতোস ও সিএসকেএ পামিরের সঙ্গে খেলবে বাংলাদেশ। ১০ তারিখ দেশটির দুশানবেতে আফগানিস্তান ম্যাচ দিয়ে বাংলাদেশ শুরু করবে বিশ্বকাপ।
বাংলাদেশের ২৩ সদস্যের চূড়ান্ত দল:
গোলরক্ষক: আশরাফুল ইসলাম রানা, শহীদুল আলম সোহেল ও আনিসুর রহমান জিকো। রক্ষণভাগ: টুটুল হোসেন বাদশা, সুশান্ত ত্রিপুরা, বিশ্বনাথ ঘোষ, ইয়াসিন খান, রহমত মিয়া, রিয়াদুল হাসান রাফি ও ইয়াসিন আরাফাত। মাঝমাঠ: জামাল ভূঁইয়া (অধিনায়ক), সোহেল রানা, রবিউল হাসান, মাসুক মিয়া জনি, মামুনুল ইসলাম, মোহাম্মদ ইব্রাহিম, আরিফুর রহমান ও বিপলু আহমেদ। আক্রমণভাগ: নাবীব নেওয়াজ জীবন, মাহবুবুর রহমান সুফিল, মতিন মিয়া, সাদ উদ্দিন ও জুয়েল রানা।
আরও পড়ুন: কষ্টের ফিটনেস ধরে রাখা দায়!