যেমন কেটেছে ইউরোপিয়ান দলবদলের মৌসুম
৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১২:৫১
ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের দলবদলের মৌসুম শেষ হয়েছে ২ সেপ্টেম্বর মধ্যরাতে। বাংলাদেশ সময় সোমবার দিবাগত রাত ৪টায় শেষ হয়েছে গ্রীষ্মকালীন দলবদলের মৌসুম। এবারের যেন অন্য সব বছরের ট্রান্সফার বাজারকে ছাড়িয়ে গেছে নাটকীয়তার দিক দিয়ে। দেড় বছর আগে ১৪৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে লিভারপুল থেকে বার্সেলোনায় পাড়ি জমানো কুতিনহোকে ধারে বায়ার্ন মিউনিখে পাঠানো হয়েছে। রিয়ালের হয়ে টানা তিন চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতা কেইলর নাভাস পাড়ি জমিয়েছেন পিএসজিতে। ইন্টার মিলানের অধিনায়ক হওয়া স্বত্বেও পিএসজিতে চলে গেলেন ইকার্দি। আবার চেলসি থেকে ১০০ মিলিয়নের বিনিময়ে রিয়ালে যোগ দিয়েছেন এডেন হ্যাজার্ড। এছাড়াও পুরো দলবদলের মৌসুম জুড়ে নানান নাটকীয়তা।
আর এই সব নাটকীয়তার মধ্যে সব থেকে বড় নাটক ছিল নেইমারের বার্সেলোনায় প্রত্যাবর্তন নিয়ে। কেবল বার্সা নয় নেইমারকে দলে ভেড়ানোর জন্য রিয়াল মাদ্রিদও কম কাট খড় পোড়ায়নি। নেইমারের জন্য বার্সেলোনা পিএসজিকে ওসমান দেম্বেলে আর ইভান রাকিটিচের সাথে ১০০ মিলিয়ন ইউরোও অফার করেছিল। তবে নেইমারের জন্য আরও বেশি দাম হাঁকিয়েছে পিএসজি। সেই সাথে দেম্বেলে এই চূক্তিতে নিজেকে জড়াতে কোনো প্রকার ইচ্ছায় প্রকাশ করেনি। বরংচ আরও কঠর হয়ে বলেছেন তিনি কোনো ভাবেই এই চুক্তিতে জড়াবেন না।
এছাড়াও অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদ থেকে ১২০ মিলিয়ন রিলিজ ক্লজ পরিশোধ করে বার্সেলোনায় নাম লিখিয়েছেন আন্তোনিও গ্রিজম্যান। এই ডিল নিয়েও কম নাটকীয়তা দেখেনি ফুটবল বিশ্ব। অ্যাতলেটিকো বলে গ্রিজম্যানকে কেনার ক্ষেত্রে কারচুপি করেছে বার্সা। এর জন্য লা লিগার স্মরণাপন্নও হয়েছিল মাদ্রিদের ক্লাবটি।
এছাড়া ১৯ বছর বয়সী সাবেক আয়াক্স অধিনায়ক এবং ডিফেন্ডার ম্যাথিউস ডি লিটকে নিয়েও কম নাটক হয়নি এবারের দলবদলের মৌসুমে। একবার বার্সেলোনা তো অন্যবার পিএসজিতে নাম লিখিয়েছেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত জুভেন্টাসের জার্সি গায়ে চড়িয়েছেন এই তরুণ ডিফেন্ডার। আর তার জন্য জুভেকে গুণতে হয়েছে মোটা অঙ্কের অর্থও।
এবারের দলবদলের মৌসুমে ফুটবল ইতিহাসের সব থেকে দামী ডিফেন্ডারের তকমা গায়ে লাগিয়েছেন লিচেস্টার সিটি থেকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে পাড়ি জমানো হ্যারি ম্যাগুয়ের। দলবদলের এবারের মৌসুমে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের দলগুলো মোট ১.৪১ বিলিয়ন ইউরো খরচ করেছে। এর মধ্যে সব থেকে বেশি খরচ করেছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। রেড ডেভিলরা খরচ করেছে ১৪৬ মিলিয়ন ইউরো। রেড ডেভিলদের সাথে ১৪৬ মিলিয়ন ইউরো খরচ করে যৌথ ভাবে শীর্ষে আছে এস্টন ভিলা। ম্যানচেস্টার সিটি আছে দ্বিতীয় স্থানে, সিটিজেনরা খরচ করেছে ১৩৮.৪ মিলিয়ন ইউরো। আর এই তালিকার তিন নম্বরে আছে আর্সেনাল। গানার্সরা খরচ করেছে ১১৮.৫ মিলিয়ন ইউরো।
স্প্যানিশ লা লিগা এবারের মৌসুমে খরচ করেছে ১.২৩ বিলিয়ন ইউরো। এর মধ্যে সব থেকে বেশি খরচ করেছে রিয়াল মাদ্রিদ। লস ব্ল্যাঙ্কোসরা খরচ করেছে ২৭৬.৭৫ মিলিয়ন ইউরো। লা লিগায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খরচ করেছে বার্সেলোনা। তারা খরচ করেছে ২২৯.৫ মিলিয়ন ইউরো। তালিকায় চতুর্থ স্থানে আছে অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদ, এই ক্লাবটি খরচ করেছে ২১৯.১৫ মিলিয়ন ইউরো। এই তিন ক্লাব ছাড়াও ১৪২.৮৮ মিলিয়ন ইউরো খরচ করেছে সেভিয়া।
স্বনামধন্য ক্লাব গুলোর দলবদলের চিত্র:
রিয়াল মাদ্রিদ: ২০১৯/২০২০ মৌসুমের গ্রীষ্মকালীন দলবদলের মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদে নতুন করে নাম লিখিয়েছেন বেশ কিছু ফুটবলার। এরমধ্যে সব থেকে বড় তারকা হলেন এডেন হ্যাজার্ড। সাবেক চেলসি এবং বেলজিয়ান এই তারকাকে দলে ভেড়াতে রিয়ালকে খরচ করতে হয়েছে ১০৫ মিলিয়ন ইউরো। এছাড়াও এন্ট্রাঞ্চট ফ্রাঙ্কফ্রুট থেকে রিয়ালে যোগ দিয়েছেন লুকা জোভিচ। এই সার্বিয়ানের জন্য রিয়াল গুণেছে ৬০ মিলিয়ন ইউরো। এছাড়া লস ব্ল্যাঙ্কোসদের দলে এসেছেন এডার মিলিতাও (পোর্তো), ফারল্যান্ড মেন্দি (অলিম্পিক লিও), রদ্রিগো (সান্তোস), আলফোন্সো অ্যারিওলা (পিএসজি থেকে লোনে)।
বার্সেলোনা: এবারের দলবদলের মৌসুমে বেশ সক্রিয় সময় পার করেছে বার্সেলোনা। অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদ থেকে আন্তোনিও গ্রিজম্যানকে দলে ভিড়িয়েছে বার্সা, তার জন্য গুণতে হয়েছে ১২০ মিলিয়ন ইউরো। আয়াক্স থেকে কাতালানদের সাথে যোগ দিয়েছেন ফ্র্যাঙ্কি ডি ইয়ং, তার জন্য বার্সা গুণেছে ৭৫ মিলিয়ন ইউরো।
অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদ: মার্কোস লরেন্তে- রিয়াল মাদ্রিদ থেকে ৪০ মিলিয়নের বিনিময়ে,
জাও ফেলিক্স- বেনফিকা থেকে ১২৬ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে,
মারিও হেরমোসো- রিয়াল মাদ্রিদ থেকে ২৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে,
কিরান ট্রিপিয়ের- টটেনহ্যাম হটস্পার্স থেকে ৪৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে।
পিএসজি: মাউরো ইকার্দি-ইন্টার মিলান থেকে এক বছরের জন্য ধারে, কেইলর নাভাস-রিয়াল মাদ্রিদ থেকে ১৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে।
জুভেন্টাস: ম্যাথিউস ডি লিট- আয়াক্স থেকে ৬৭.৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে
এরন ওয়ান বিসাকা- ক্রিস্টাল প্যালেস থেকে ৫৫ মিলিয়ন ইউরো।
ম্যানচেস্টার সিটি: জাও ক্যানসেলো- জুভেন্টাস থেকে ৬৫ মিলিয়ন ইউরো।
রদ্রি- অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদ থেকে ৭০ মিলিয়ন ইউরো।
বায়ার্ন মিউনিখ: কুতিনহো- বার্সেলোনা থেকে এক মৌসুমের ধারে।
লুকাস হার্নান্দেজ- অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদ থেকে ৮০ মিলিয়ন ইউরো।
বেঞ্জামিন পাভার্ড- স্টুগার্ড থেকে ৩৫ মিলিয়ন ইউরো।
এছাড়াও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থেকে ৬৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে ইন্টার মিলানে নাম লিখিয়েছেন রোমেলো লুকাকু, আর ধারে অ্যালেক্সিস সানচেজও লুকাকুকে অনুসরণ করেছেন।
অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদ ইউরোপিয়ান দলবদল জুভেন্টাস বার্সেলোনা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড রিয়াল মাদ্রিদ