প্রধানমন্ত্রী জানতে চেয়েছিলেন- ‘আফিফ কেন আগে নামেনি?’
১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০২:৫৬
ঢাকা: ত্রিদেশীয় সিরিজে বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ের মধ্যকার ম্যাচটি পুরোপুরিই দেখেছেন স্বাগতিক দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ম্যাচে সাকিব (১), মুশফিক (০), মাহমুদউল্লাহদের (১৪) অপরিনামদর্শী আউট তাকে বিচলিত করেছে। টাইগারদের জয়ের জন্য মুখিয়ে থাকা প্রধানমন্ত্রী অশান্ত মনকে শান্ত করতে তাই বারংবার ফোন দিয়েছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনকে। জানতে চেয়েছেন এমন কেন হচ্ছে? পাপন তাকে টু দ্য পয়েন্টে বুঝিয়েছেন, তাতে তিনি আশ্বস্ত হয়েছেন।
তবে বাংলাদেশ দলের সিনিয়র ব্যাটসম্যানেদের ব্যাটিং দেখে মন খারাপ হলেও আফিফ হোসেন ধ্রুবর নান্দনিকতায় পূর্ণ ব্যাটিং তার আহত হৃদয়ে প্রলেপ দিয়েছে। আফিফের ২৬ বলে ৫২ রানের দাপুটে ইনিংসটি দেখে তিনি এতটাই উদ্বেলিত যে ম্যাচ শেষে ফোনে জানতে চেয়েছিলেন তাকে কেন আটে নামানো হল? আগে কেন নামানো হল না? পাপন বুঝিয়েছেন, এটা অন্য কোন কারণে নয়, টিম কম্বিনেশনের কারণে।
শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ের মধ্যকার ম্যাচ শেষে মিরপুর শের ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে কথাগুলো বলেছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন।
তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বারবার আমাকে ফোন দিচ্ছিলেন। বলছিলেন, পাপন এটা কি হচ্ছে? উনি চিন্তিত ছিলেন। তারপরে যখন আফিফ আসল ওর খেলা দেখে বলল ও আগে নামেনি কেন? একে তো আগে দিখিনি। আমি বললাম, আপা, ও তো নতুন। দলে এসেছে মাত্র ১৯ বছর বয়সে। আপা বললেন, ওর খেলা দেখছি। তারপরে খেলা শেষ হওয়ার আগেও ফোন করেছে, বলেছে দোয়া করতে করতে আমার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি বলই দেখেছে। ও চার মেরেছিল আউট হওয়ার আগে ওটা দেখে বলেছে, শটটা দারুণ খেলেছে। খেলা শেষ হওয়ার পরপর আমার সাথে কথা বলেছে।’
প্রধানমন্ত্রীর মতো আফিফের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন খোদ বিসিবি সভাপতিও। এবং তার এই দায়িত্বশীল ইনিংস পাপনকে একটি শক্তিশালী পাইপলাইনের আভাস দিয়েছে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চওড়া ব্যাটে আফিফ এটা নিশ্চিত করেছেন যে, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড একটি সমৃদ্ধ পাইপলান তৈরী করতে সক্ষম হয়েছে। যেখ্ন থেকে অগণিত প্লেয়ার বেরিয়ে আসার অপেক্ষায়।
‘আজকের খেলায় সবচেয়ে ভাল লেগেছে শুধু আফিফের ব্যাটিং। যদি বলেন অসাধারণ একটা ইনিংস খেলেছে। এবং সবসময়ই আমাদের মনে প্রাণে এটা বিশ্বাস ছিল আমাদের পাইপলাইনে আরও কয়েকটা ছেলে আছে। ওদেরকে আসলে সুযোগ দিতে হবে। যদি সুযোগ না দেই। সবাই এসেই আন্তর্জাতিক ম্যাচে রান করবে এটা না। সবাইকে অন্তত ৫-৬টা করে ম্যাচ সুযোগ দিতে হবে। এবং বাদ পড়তে পারে এই ভয় থাকলে ওরা খেলতে পারবে না। আমি আফিফকে বলেছি তুমি রান কত করেছ সেটা বড় কথা না। প্রথম বল থেকে তুমি যেভাবে খেলেছ অন্যরা সেভাবে খেলেনি। বার্তা পরিষ্কার ছিল, তুমি ভয় পাচ্ছ না।’
বয়সে বাংলাদেশ দলের সবচাইতে তরুণ (১৯ বছর ৩৫৬ দিন) আফিফ কাজটি করেছেন অনেক বড়। দলের এক যুগেরও বেশি অভিজ্ঞরা যেখানে জিম্বাবুয়ান বোলারদের তোপে থরহরিকম্প হয়ে ড্রেসিংরুমের পথ ধরেছেন সেখানে উইকেট আঁকড়ে দেশের জন্য একাই লড়েছেন।দলীয় ৬০ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ডোমিঙ্গ শিষ্যরা যখন পুরোপুরিব্যাক ফুটে ঠিক তখন ব্যাটিংয়ে নেমে ২শ স্ট্রাইক রেটে ২৬ বলে খেলেছেন ৫২ রানের দপুটে ইনিংস। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ম্যাচেই তুলে নিয়েছেন ফিফটি।তার ব্যাটের চড়া এই চওড়া হাসিতেই তিন ফর্মেটে টানা ৬ ম্যাচ হারের পরে জয়ের দেখা পেয়েছে বাংলাদেশ। ১৪৫ রানের লক্ষ্য সাকিবরা ছঁয়ে ফেলেছে ৭ উইকেটের খরচায়, ২ বল বাকি থাকতেই।
১৮ তম ওভারের দ্বিতীয় বলে মাদজিভার বলে এক্সট্রা যখন কাভারে হ্যামিল্টন মাসাকাদজার তালুতে বন্দি হলেন তখন জয়ের জন্য বাংলাদেশের প্রয়োজন মাত্র ৩ রান। কিন্তু তার আগেই ফিরতে হয়েছে তরুণ এই ব্যাটিং অলরাউন্ডারকে।