বিসিবি অধ্যায় শেষ করলেন ফাহিম স্যার
৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ২১:৪৩
শরতের গোধুলি বেলা। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত হলো নাজমুল আবেদীন ফাহিমের বিদায়ী অনুষ্ঠান। বিসিবি’র প্রায় প্রতিটি বিভাগেরই কর্তা ব্যক্তিরা সেখানে উপস্থিত। সবার মুখই গোমরা, গুরুগম্ভীর পরিবেশ। কারণটিও যে সঙ্গত, দীর্ঘ দিনের সহকর্মী আজ চলে যাচ্ছেন!
সম্মেলন কক্ষের টেবিলে সামনে তিনটি কেক রাখা। তার ঠিক সামনে নারী ক্রিকেট দলের প্রধান শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, যার অধীনে গেল দেড়টি বছর কাটিয়েছেন নাজমুল আবেদীন। নাদেলের পাশের চেয়ারটিতে বসে তিনি। বিদায় বেলা, তাই বলে মুখের হাসি উবে যায়নি। ততটা আবেগাপ্লুতও তাকে মনে হয়নি। বরং ছিলেন বেশ সপ্রতিভ।
কেক সামনে বিসিবি সিইও নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজন ও মিডিয়া বিভাগের সিনিয়র ম্যানেজার রাবিদ ইমামের অপেক্ষা। খানিক বাদে সিইও সুজন ও রাবিদ ইমাম এসে কিছু একটা বলে পরিবেশটা হালকা করতে চাইলেন। অদূরের টেবিলে রাখা ফুলের তোড়া ফাহিম স্যারের হাতে তুলে দিলেন। এরপর তুলে দিলেন বিসিবির বিশেষ ক্রেস্ট। হাসিমুখে সবাই। একই ফ্রেমে বন্দি হলেন নাদেল, সুজন, ফাহিম ও রাবিদ ইমামসহ অনেকে। বিদায় বেলার ফ্রেম। আর এর মধ্য দিয়েই বিসিবির সঙ্গে সুদীর্ঘ কালের পথচলা শেষ করলেন অভিজ্ঞ এই মেন্টর।
সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকালেই ফেইসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন ফাহিম, ‘বিসিবি অফিসে আজ আমার শেষ দিন।’ অন্য আট দশটি দিনের মতো কর্মব্যস্ত একটি দিন কাটিয়ে ক্রমাগত অপ্রিয় হয়ে ওঠা কর্মস্থলকে বিদায় জানালেন। বিসিবির সঙ্গে তিনি আর থাকছেন না চলতি মাসের শুরুতেই সেটা জানিয়ে দিয়েছিলেন ফাহিম। আজ স্রেফ আনুষ্ঠানিকতা সারলেন।
২০০৫ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে চাকুরি শুরু করা ফাহিম শুরুটা করেছিলেন হাই পারফরম্যান্স (এইচপি) দলের সিনিয়র কোচ। এরপর অনূর্ধ্ব-১৯ দলের কোচের দায়িত্ব শেষে অলংকৃত করেন ন্যাশনাল গেমস ডেভেলপমেন্টের ম্যানেজারের পদ। টানা দশ বছর তার অধীনে বেশ ভালোই চলছিল বাংলাদেশের গেম ডেভেলপমেন্ট বিভাগ। কিন্তু গেল বছরের এপ্রিলের দিকে কোনো এক অজানা কারণে সেখান থেকে সরিয়ে তাকে দেওয়া হয় নারী ক্রিকেট দলে। কিন্তু সেখানে তাকে কোনো স্থায়ী পদ দেওয়া হয়নি। দিনের পর দিন পদহীন থেকেই সালমা-জাহানারাদের গুরু দায়িত্ব সেরেছেন। নাম মাত্র ইনচার্জ পদ নিয়ে ইচ্ছের বিরুদ্ধে কাজ করে গেছেন। প্রতিটি দিনই নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন।
এভাবে চলল প্রায় দেড় বছর। কিন্তু মানুষ ফাহিম এই দম বন্ধ পরিবেশ মেনে নিতে পারেননি। ফলে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়ে বিসিবি বরাবর চিঠি দিয়েছেন যে-অক্টোবরের ১ তারিখ থেকে তিনি আর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে নেই। আর এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে প্রায় দুই দশকের সম্পর্কের যবনিকা টানলেন এই অভিভাবক।
নাজমুল আবেদীন ফাহিম এমনই এক অভিভাবক, যিনি বাংলাদেশ ক্রিকেটের বর্তমান সময়ের সবার শিক্ষক। সাকিব, তামিম, মুশফিক, মুমিনুলরা যখনই ছন্দহীনতায় ভুগেছেন, ছুটে গেছেন তার কাছে। তিনিও পরম মমতায় তাদের ভুল শুধরে দিয়েছেন। সেই ‘শিক্ষক’ ফাহিম কে আর বিসিবি’র চত্বরে দেখা যাবে না।