১৫ বছর পর ঘরের মাটিতে ১০ উইকেটের লজ্জা ভারতের
১৪ জানুয়ারি ২০২০ ২১:৩৫
বছরখানেক হলো পিচে আগুন ঝরাচ্ছিলেন জাসপ্রিত বুমরাহ। তাকে যথেষ্ট যোগ্য সঙ্গত দিয়ে যাচ্ছিলেন মোহাম্মদ শামি। ঘরের মাটিতে রবীন্দ্র জাদেজা-কেদার যাদবরাও ঘূর্ণি নাচনে নাকাল করে চলছিলেন ভিনদেশি ব্যাটসম্যানদের। সেই ঘরের মাটিতেই ভারতের ‘তারকা’ বোলারদের একেবারে গলির বোলার বানিয়ে ছাড়ছেন দুই অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার আর অ্যারন ফিঞ্চ। দু’জনেই তুলে নিয়েছেন ঝড়োগতির শতক। আর তাতে করে সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে ভারতের দেওয়া ২৫৬ রানের ‘মাঝারি’ সংগ্রহের বিপরীতে ১০ উইকেটের জয় তুলে নিয়েছে অজিরা। সেটাও মাত্র ৩৭ দশমিক ৪ ওভার, মানে ১২ ওভার ২ বল হাতে রেখেই।
ঘরের মাটিতে এটি ভারতের ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো ১০ উইকেটের হার। সর্বশেষ ২০০৫ সালে কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ উইকেটের হার দেখেছিল ভারত। এর আগে ১৯৮১ সালে মেলবোর্নে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে, ১৯৯৭ সালে ব্রিজটাউনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আর ২০০০ সালে শারজাহতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ১০ উইকেটের হার দেখেছিল ভারত। অস্ট্রেলিয়ার এই জয়ের গৌরব আরও বেশি এ কারণে যে, এর আগে আড়াইশ পেরোনো টার্গেট তাড়া করে ১০ উইকেটের জয়ের নজির ছিল মাত্র দুইটি।
মুম্বাইয়ে সিরিজের প্রথম ম্যাচে ভারতের বোলারদের একেবারেই পাত্তা দেননি ওয়ার্নার-ফিঞ্চ। ২৫৬ রানের টার্গেটে শুরু থেকেই ব্যাট হাতে রুদ্র মূর্তিতে ছিলেন তারা। বলতে গেলে সমানে সমান ব্যাট চালিয়েছেন তারা। মাত্র ১০ ওভারেই তুলে ফেলেন ৮৪ রান।
এরপর রানের গতি খানিকটা কমলেও তাতে তেমন কিছু যায় আসেনি। কারণ ৩০ ওভার যেতে না যেতেই টার্গেটের প্রায় ৮০ শতাংশ রান তুলে ফেলেন দুই অজি ওপেনার। ৩১তম ওভারেই সেঞ্চুরি তুলে নেন ওয়ার্নার। চার ওভার পর একই অর্জনের সাক্ষী হন ফিঞ্চও। দু’জনে মিলে বেশিক্ষণ আর সময় নেননি। ৩৮তম ওভারের তৃতীয় ও চতুর্থ বলে মোহাম্মদ শামিকে টানা দুই বাউন্ডারি হাঁকিয়ে লক্ষ্য পূরণ করেন ওয়ার্নার।
মাচ শেষে ওয়ার্নারের সংগ্রহ ছিল ১২৮ রান, তা এসেছে ১১২ বলের মোকাবিলায়। ১৭টি বাউন্ডারির পাশাপাশি তিনটি ছক্কাও ছিল তার ইনিংসে। শেষ পর্যন্ত ওয়ার্নারের তুলনায় ফিঞ্চের গতি খানিকটা কমই মনে হবে। তার ১১০ রানের ইনিংস এসেছে ১১৪ বলের বিপরীতে। ১৩ বাউন্ডারি আর দুই ছক্কায় ফিঞ্চের স্ট্রাইক রেট ছিল ৯৬ দশমিক ৪৯। স্ট্রাইক রেট ওয়ার্নারের মতো শতকের ঘর না ছাড়ালেও ১০ উইকেটের জয়ে ফিঞ্চের নিশ্চয় অখুশি থাকার কোনো কারণ নেই।
বোলিংয়ের মতো ভারতের ‘তারকা’ ব্যাটিং লাইনআপের ইনিংসের সূচনাও সুখকর ছিল না। মাত্র ১৩ রানে স্টার্কের বলে ওয়ার্নারকে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন ‘বিগম্যান’ রোহিত শর্মা। ক্রিজে তখন শিখর ধাওয়ানের সঙ্গে ওয়ান ডাউনে নামেন ওপেনার হিসেবেই পরিচিত লোকেশ রাহুল। শুরুর বিপর্যয় বেশ ভালোই সামাল দেন তারা ১২১ রানের জুটি গড়ে। দু’জনেই তুলে নেন অর্ধশতক।
এরপরই বেরিয়ে আসে ভারতের ভঙ্গুর মিডল অর্ডার। বিরাট কোহলি ব্যর্থ হলেই যে ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে, তারই যেন প্রমাণ মিললো আবার। ১৩৪ থেকে ১৬৪— এই ৩০ রানের মধ্যেই একে একে সাজঘরে ফেরেন লোকেশ রাহুল (৬১ বলে ৪৭), শিখর ধাওয়ান (৯১ বলে ৭৪), বিরাট কোহলি (১৪ বলে ১৬) আর শ্রেয়াস আইয়ার (৯ বলে ৪)।
২০০ রানের মধ্যেই ভারত গুটিয়ে যাবে কি না, সেই শঙ্কা তখন প্রবল। তবে সেই শঙ্কা কাটিয়ে দেয় ঋষভ পন্ত আর রবীন্দ্র জাদেজার ৪৯ রানের জুটি। ৪৩তম ওভারের প্রথম বলে জাদেজাকে (৩২ বলে ২৫ রান) ফিরিয়ে সে জুটি ভাঙেন রিচার্ডসন। পরের ওভারেই প্যাট কামিন্স বিদায় দেন পন্তকেও (৩৩ বলে ২৮ রান)। লোয়ার অর্ডারের শার্দুল ঠাকুর (১০ বলে ১৩), মোহাম্মদ শামি (১৫ বলে ১০) আর কুলদীপ যাদব (১৫ বলে ১৭) কোনোমতে স্কোরকে পার করেন ২৫০ রানের গণ্ডি। শেষ ওভারের প্রথম বলেই অলআউট হয় ভারত।
তবে যেকোনো ওয়ানডে ম্যাচের জন্য ‘মোটামুটি’ হিসেবে স্বীকৃত এই স্কোরকে যে দুই অজি ওপেনার ছেলেখেলা বানিয়ে ফেলবেন, তা নিশ্চয় ভাবেননি ইনিংস ব্রেকে যাওয়া ভারতের বোলাররা।
এই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বোলিং ইউনিটের পারফরম্যান্স ছিল যেন ‘দশে মিলে করি কাজে’র এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ। কমবেশি উইকেট পেয়েছেন সবাই, প্রত্যেকের ইকোনমি রেটও ছিল ৬-এর নিচে। ১০ ওভারে ৫৬ রান দিয়ে সবচেয়ে বেশি তিন উইকেট নিয়েছেন মিচেল স্টার্ক। বাকি দুই পেসার প্যাট কামিন্স আর কেন রিচার্ডসন বল করেছেন সমানে সমান, দু’জনেই নিয়েছেন দুইটি করে উইকেট। এর জন্য কামিন্স ১০ ওভারে খরচ করেছেন ৪৪ রান, রিচার্ডসন ৯ ওভার ১ বলে ৪৩ রান। বাকি দুই স্পিনারের দখলে গেছে একটি করে উইকেট। অ্যাডাম জাম্পা ১০ ওভারে দিয়েছেন ৫৩ রান, অ্যাস্টন অ্যাগার সমান বল করে ৫৬ রান। ব্যাটিং-বোলিং কোনোটিরই সুযোগ না পাওয়া অনেকের মধ্যে স্টিভেন স্মিথ ডিরেক্ট থ্রো’তে রান আউট করেন যাদবকে।
গত কয়েকমাসে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে টেস্টে রানের বন্যা বয়ে দেওয়া মারনাস লাবুশেংয়ের অভিষেক হয়েছিল ভারতের বিরুদ্ধে তিন ম্যাচ সিরিজের এই প্রথম ম্যাচে। ওয়ানডেতে ভারতের মাটিতে তার ব্যাট কেমন কথা বলে, তা দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেছিলেন অনেকেই। ওয়ার্নার-ফিঞ্চে সে সুযোগ পেলেন না লাবুশেং। শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) রাজকোটে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ আর রোববার (১৯ জানুয়ারি) ব্যাংগালুরুতে সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে সে সুযোগ পেলে তা নিশ্চয় লুফেই নেবেই লাবুশেং। প্রথম ম্যাচে দলের দুই সহযোদ্ধার ব্যাটিং তাকে নিশ্চয় তখন অনুপ্রাণিতই করবে।
ছবি: ক্রিকইনফো
১০ উইকেটের হার অস্ট্রেলিয়া অস্ট্রেলিয়া-ভারত সিরিজ প্রথম ওয়ানডে ভারত