Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জয়োল্লাসে ভাসছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০০:১৪

ঢাকা: বৃষ্টি বাধায় প্যাভিলিয়নে ফিরে গেছেন রাকিবুল আর আকবর। তখনো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসিতে বড় পর্দার সামনে থেকে একচুলও নড়েননি দর্শকরা। বৃষ্টি থেমে ক্রিজে ফিরলো বাংলাদেশ। পর্দার সামনে হাজারো দর্শকের চোখে-মুখে চিন্তার সাগর। সেই সাগরে হাসির লহর নিয়ে এসেছেন অধিনায়ক আকবর আলী ও তার সতীর্থ রাকিবুল।

আরও পড়ুন- ‘স্যালুট ক্যাপ্টেন’

এর আগে, পরতে পরতে উত্তেজনা ছড়ানো অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনাল টেনশন ছড়িয়েছে টিএসসিতেও। একপর্যায়ে যখন ছোট লক্ষ্যকে সামনে রেখেও টাইগারদের টপ-মির্ডল অর্ডার ধ্বসে পড়ার মুখে, তখন টিএসসিতেও বড় পর্দার সামনে থমথমে অবস্থা। ম্যাচ যত এগিয়ে যাচ্ছিল, একেকটি রান যেন পাহাড়সম ভারী। ছোট লক্ষ্য কঠিন চ্যালেঞ্জে রূপ নিলেও সেই চ্যালেঞ্জ জুনিয়র টাইগাররা উৎরে গেছে অধিনায়ক আকবর আলীর ব্যাটে।

শেষ মুহূর্তে যখন রাকিবুলের ব্যাটে এলো জয়সূচক রানটি, জয়োল্লাসে কেঁপে ওঠে টিএসসিসহ পুরো ক্যাম্পাস। মুহূর্তে ক্যাম্পাস রূপ নেয় আনন্দের মহোৎসবে। সবার মুখেই স্লোগান ‘বাংলাদেশ বাংলাদেশ…’।

আরও পড়ুন- জুনিয়র টাইগারদের বিশ্বজয়ে রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর অভিনন্দন

জয়ের পর ঘড়িতে মিনিটও ফুরায়নি। মুহূর্তের মধ্যে টিএসসি ভরে ওঠে জয়োধ্বনিতে। সবার মুখে একটাই নাম, ‘বাংলাদেশ বাংলাদেশ…। স্লোগানে স্লোগানে ভরে ওঠে ক্যাম্পাস। উল্লাস করতে ভরে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।

কেউ লাল-সবুজ পতাকা নিয়ে দৌড়ে মাতিয়ে বেড়াচ্ছেন প্রাঙ্গণ, কেউ খুশিতে আলিঙ্গন করছেন পরিচিত-অপরিচিত সবাইকে। ধর্ম-বর্ম ভেদাভেদ নেই এতে। এই আলিঙ্গন এক অনাবিল খুশির মুহূর্তের। বিশ্বকাপ জয়ের। টিএসসি প্রাঙ্গণে দেশের পক্ষে প্রথম বিশ্ব শিরোপা উল্লাসের। এই উৎসব এক যুগের কয়েকটি শিরোপা হাতের সামনে থেকে না ছুঁতে পারার কষ্টের অবসানের। সেই খুশিতে অনেকের চোখ দিয়ে নেমে এসেছে আনন্দাশ্রুও।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, ভারত বধ

বুনো উল্লাসে কেঁপে কেঁপে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। এমন জয়োৎসবে দর্শকের মুখেও ফুটলো আনন্দের বন্যা। গুলশান থেকে টিএসসির খেলার টানে আসা দিলশাদ জাহান দোদুলের কণ্ঠে বাঁধভাঙা উল্লাসের গল্প, ‘বহুদিন থেকে ক্যাম্পাসে কতগুলো টুর্নামেন্ট গেল। কখনো শিরোপা জেতা হয়নি। আজ সেটা পূরণ হলো। বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হলো। এত খুশি কখনও লাগেনি।’

দুপুর ২টা থেকে টিএসসির বড় পর্দার সামনে ঠাঁই নিয়ে বসে থাকা আরেক দর্শক নিম্মির মুখেও আনন্দের সুর, ‘গত বিশ্বকাপে সাকিবরা দুর্দান্ত খেলেছে। কিন্তু শিরোপা ছুঁয়ে দেখা হয়নি আমাদের। এরপর এসেছে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ। সেরা হিসেবেই জয় পেয়েছি আমরা। পুরো ম্যাচেই অনেক টেনশনে কেটেছে। জয়ে সেই চিন্তা আনন্দে রূপ নিয়েছে। জীবনে প্রথমবার কেঁদেছি। সেটা খুশির কান্না। আনন্দের অশ্রু।’

সূর্যসেন হলের শিক্ষার্থী তুহিন এমরান উচ্ছ্বাস জানিয়ে বলেন, বহু দিন, বহু ক্ষণ, বহু নিরতার পর একটি বিজয়, একটি উল্লাস। সত্যিই অসাধারণ পারফরম্যান্স। বাঘের বাচ্চারা দেখিয়েছে, বাংলাদেশও পারে।

আরও পড়ুন- অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ফাইনাল: বাংলাদেশ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন বল বাই বল

ঢাবি থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী ওবায়দুর সোহান অনুভূতি জানিয়ে বলেন, ম্যাচটি নিয়ে খুব শঙ্কা কাজ করছিল। কখনো আশা, কখনো হতাশা কাজ করছে। এই ম্যাচ জয়ের ক্ষেত্রে ক্যাপ্টেন আকবরের দ্বায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ের তুলনা হয় না।

টিএসসিতে খেলা দেখতে আসা এস এম হলের শিক্ষার্থী ইয়াসিন আল শাহীন বলেন, হলে টিভি থাকা সত্ত্বেও আজ টিএসসিতে খেলা দেখতে এসেছি। এটা বিশ্বাস ছিল, জয় নিয়েই হলে ফিরব। আজ জিতে আমাদের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। মনে হচ্ছে আমরা একটি যুদ্ধে জিতেছি।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- বিশ্ব জয়ের আনন্দে মাতোয়ারা জুনিয়র টাইগাররা

দলে দলে এই আনন্দ উল্লাসের ভিড়ে একজন মাথা নিচু করছে কাঁদছেন। কিছুক্ষণ সেভাবে থেকে মাথা উঁচু করলেন। দু’চোখ দিয়ে আনন্দের অশ্রু বেয়ে বেয়ে পড়ছে। জানতে চাইলে প্রতিবেদককে জড়িয়ে ধরলেন এই দর্শক। কথা বলার প্রয়োজন হলো না। কেঁদে বুঝিয়ে দিলেন— এই একটি মুহূর্তের জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করা সম্ভব।

উল্লাসের শব্দগুলো কোনো বাঁধ মানে না। ভেঙে পড়ে মানুষে মানুষে। প্রাঙ্গণে প্রাঙ্গণে। প্রজন্মে প্রজন্মে। জুনিয়র টাইগাররা যে এমন যে উল্লাস ছড়িয়ে দিলেন আজ, ক্রিকেটপ্রেমী ১৬ কোটি মানুষ এমন বাঁধ ভাঙা উল্লাসেই তো ভাসতে চায় বারবার, আনন্দ অশ্রু ঝরাতে চায় ক্ষণে ক্ষণে।

ছবি: সুমিত আহমেদ

অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট বিশ্বকাপ টিএসসি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঢা‌বি

বিজ্ঞাপন

নামেই শুধু চসিকের হাসপাতাল!
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২২:০৬

আরো

সম্পর্কিত খবর