Monday 21 Oct 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মুমিনুলদের প্রবল চাপের ম্যাচ


২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৪:৩১

জিম্বাবুয়ে এমনই এক প্রতিপক্ষ যাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ জিতলে তেমন কিছুই আসবে যাবে না। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপেও পয়েন্ট যোগ হবে না, এমনকি মুমিনুলদের নিয়ে রচিত হবে না কোন বীরত্ব গাঁথাও। শুধুই দুই দলের দ্বৈরথের পরিসংখ্যানে লেখা থাকবে কোন দল কতবার জিতল বা হারল। তাতে বিসিবি সভাপতি থেকে শুরু করে সংবাদমাধ্যম এমন কি দেশের আপামর ক্রিকেট ভক্তরাও তৃপ্তির ঢেকুর তুলবেন না। ভাবখানা এমন করবেন যেন- ও! জিম্বাবুয়ে? ওদের তো হারারই কথা। ওদের হারানো এমন আর কঠিন কি? একেবারে থ্যাংকসলেস জব যাকে বলে।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু ভুল করেও যদি বাংলাদেশ হেরে যায়! সে ক্ষেত্রে তো একেবারে সাড়ে সর্বনাশ! জাত গেল জাত গেল অবস্থা। বিসিবি বস নাজমুল হাসান পাপন সংবাদমাধ্যমের সামনে প্লেয়ারদের এক হাত নেবেন। সেই সঙ্গে সংবাদমাধ্যমগুলোও রসিয়ে রসিয়ে সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠবে, আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে উঠবে প্রবল সমালোচনার ঝড়।

শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এক মাত্র টেস্ট ম্যাচটি খেলতে নামার আগে অবধারিতভাবেই এই বিষয়গুলো মুমিনুলদের মাথায় রাখতে হবে। বলার অপেক্ষাই থাকছে এতে করে প্রবল চাপ তৈরি হবে স্বাগতিক দলে।

এখন দেখার বিষয় হচ্ছে সেই চাপ জয় করে টিম টাইগার্স মাঠের খেলাটি কতটা নিপুণ হাতে খেলতে পারে। যদি পারে তাহলে তো কথাই নেই। প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় সাদা পোশাকে হারের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে এসে নতুন আত্মবিশ্বাসে এপ্রিলে পাকিস্তানের বিপক্ষে দুই ম্যাচ সিরিজের শেষ ম্যাচটি খেলতে পারবে।

আসলে এই ম্যাচটি আয়োজনের পেছনে বিসিবির উদ্দেশ্যও তাই। টেস্টে টানা হারে ছন্নছাড়া দলটিকে ছন্দে ফেরাতেই মূলত ডাকা হয়েছে জিম্বাবুয়েকে। কেননা ক্রিকেটের দর্শন অনুযায়ী- ছন্দ ফিরতে একটি জয়ই যথেষ্ট। সেটা একটি দলের ক্ষেত্রে যেমন সত্যি, ঠিক তেমনই একজন ক্রিকেটারের ক্ষেত্রেও। বাংলাদেশ দলে এই মুহুর্তে যারা ব্যাট হাতে নিদারুণ ছন্দহীনতায় ভুগছেন তারা নিজেদের ফিরে পেতে এই ম্যাচটির দিকে নিশানা তাক করতেই পারেন।

আর যদি তারা এখানেও তারা ব্যর্থ হন! তাহলে কিন্তু হীতে বিপরীত হয়ে দাঁড়াবে। এতদিন যে আত্মবিশ্বাসটুকু ছিল তাও ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে। যা বড় রকমের নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের আগামী ম্যাচগুলোতে। এমন কি এপ্রিলের করাচি টেস্টেও পড়বে এর প্রভাব।

বিজ্ঞাপন

তবে সাম্প্রতিক সময়ে তামিম, মুশফিকরা ঘরের মাটিতে যে ক্রিকেট উপহার দিয়ে আসছেন তাতে পা হড়কানোর সম্ভাবনা কিন্তু প্রবল। এই তো গেল বছরের সেপ্টেম্বরের কথা, টেস্ট ক্রিকেটে মাত্রই জন্ম নেওয়া আফগানদের কাছেও ২২৪ রানের বড় ব্যবধানে উড়ে গেল সাকিব আল হাসান অ্যান্ড কোং। তার আগের বছর জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথমটিতে টিম টাইগার্স পা হড়কেছিল ১৫১ রানে।

আর দেশের বাইরে তো কথাই নেই। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরের সেই দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ থেকে শুরু করে সবশেষ রাওয়ালপিন্ডি টেস্ট পর্যন্ত জয় দূরে থাক, একটি ম্যাচে ড্র করেও দেশে ফিরতে পারেনি বাংলাদেশ। তার চাইতেও শঙ্কার বিষয় হলো, ওই সিরিজটির আগে সাদা পোশাকে লাল সবুজের দলের মধ্যে যে লড়াকু মনোভাব দেখা যেত তা এখন বলতে গেলে নেই মোটেও। আগে যেখানে ৫ দিনে ম্যাচ হারত, এখন তাও পারে না! অর্থাৎ দিন যত যাচ্ছে সাদা পোশাকে ততই জীর্ণ শীর্ণ হয়ে উঠছে রঙিন পোশাকে দক্ষিণ এশিয়ার উঠতি পরাশক্তির এই দলটি।

সেই জীর্ণদশা কাটাতে কিন্তু খুব বেশি কিছু করার প্রয়োজন নেই। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এই ম্যাচটিতে জয়ই যথেষ্ট। কিন্তু জিম্বাবুয়ের ব্যাটিং অল রাউন্ডার আজ সংবাদমাধ্যমে যা বললেন, তাতে জয় নামক সোনার হরিণের দেখা মুমিনুলরা আদৌ পাবেন কিনা সেটা নিয়েও রাজ্যের সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে।

সিকান্দার কি বলেছেন জানেন? ‘আমরা এখন আগের থেকে আরো অনেক বেশি শক্তিশালী। এই ম্যাচে যেভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি তাতে কোনো স্নায়ুর চাপ থাকার কথা না।’

ভাবছেন তিনি এভাবে হুঙ্কার দেওয়ার সাহস কোথা থেকে পেলেন?

এক মাসও হয়নি, দেশের মাটিতে সফরকারী শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে দুই ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচটি ড্র করেছেন সিকান্দাররা। প্রথমটিতে ১০ উইকেটে হেরেছিলেন সত্যি কিন্তু পরেরটিতে ঠিকই প্রবল বিক্রমে ঘুরেও দাঁড়িয়েছিলেন।

অথচ আইসিসি’র টেস্ট র‌্যাংকিংয়ে শ্রীলঙ্কা ছয়ে আর জিম্বাবুয়ের অবস্থান ১১ নম্বরে। তার চাইতেও বড় বিষয় হলো, জিম্বাবুয়ের খেলার ধরণ ছিল ভীষণ লড়াকু। এতে করে ম্যাচটি গড়িয়েছে পঞ্চম দিন পর্যন্ত। অধিনায়ক শন উইলিয়ামসের ১০৭, অভিজ্ঞ  সিকান্দার রাজার ৭২ ও ব্রেন্ডন টেইলরের ৬২ বলে ৬২ রানের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে প্রথম ইনিংসের সংগ্রহটাও ছিল বেশ সন্তোষজনক (৪০৬)। পক্ষান্তরে শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংসে সাকুল্যে সংগ্রহ করতে পেরেছিল ২৯৩ রান। রোডেশিয়ানদের হয়ে বল হাতে সিকান্দার রাজা একাই তুলে নিয়েছিলেন ৭ উইকেট।

প্রথম ইনিংসে দুর্দান্ত সেই দলটি দ্বিতীয় ইনিংসে ৭ উইকেটের বিনিময়ে ২৪৭ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করলে দিমুথ করুনারত্নের দল ৩ উইকেটে ২০৩ সংগ্রহ করতেই ম্যাচ ড্র ঘোষণা করা হয়। পুরো ম্যাচের চিত্রটা কিন্তু পরাক্রমশালী জিম্বাবুয়ের কথাই বলে। সেই পারফরম্যান্সই বাংলাদেশের বিপক্ষে আসন্ন ম্যাচটিতে জিম্বাবুয়েকে দারুণ কিছু করে দেখানোর জ্বালানি যোগাচ্ছে বলে জানিয়েছেন এই ব্যাটিং অল রাউন্ডার।

তবে সিকান্দার রাজার এমন হুঙ্কারের পেছনে যে কেবল জিম্বাবুয়ের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স সাহস যুগিয়েছে তা কিন্তু নয়। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ দলের সাম্প্রতিক সময়ের দুর্দশাও কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা একদিকে যেমন বাংলাদেশ দলের নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের নিষেধাজ্ঞার কারণে দলে নেই অপরদিকে মুমিনুল হক এবং তামিম ইকবালের মতো ব্যাটসম্যানরা ব্যাট হাতে পাচ্ছেন না রান।

কেবল ব্যাট হাতে বাজে সময় নয় এর সঙ্গে যোগ হয়েছিল মুশফিকুর রহিমের ইনজুরিও। সদ্যই ইনজুরি থেকে ফিরেছেন মুশফিকুর রহিম। আর বাজে পারফরম্যান্সের কারণে বাদ পড়েছেন অভিজ্ঞ মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও। সব মিলিয়ে বলা চলে বাংলাদেশ দলের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সই আশা যুগিয়েছে জিম্বাবুয়েকে।

অবশ্য ঢালাও ভাবে বাংলাদেশ দলের ব্যাটসম্যানদের ওপর দায় চাপালে যেন হাপ ছেড়ে বেঁচে যাবেন বোলাররা। তাদের দৈন্য পারফরম্যান্সটা ঢাকা পড়ে যাবে ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায়। এই তো সদ্য শেষ হওয়া পাকিস্তানের বিপক্ষের টেস্টেই দল থেকে বাদ পড়েছিলেন দেশ সেরা পেসার মোস্তাফিজুর রহমান। কারণ কি ছিল? কারণ ছিল লাল বলে আশানুরূপ পারফরম্যান্স না দেখাতে পারা।

কেবল মোস্তাফিজ একাই নন, এই তালিকায় আরো যুক্ত হয়েছিলেন মেহেদি হাসান মিরাজও। টাইগারদের দন্তহীন বোলিংয়ে প্রতিপক্ষ রান তুলেছে দ্বিধাহীনভাবেই। আর তাই তো জিম্বাবুয়ের এমন আত্মবিশ্বাসের পেছনে যতটা না বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের দৈন্যদশা দায়ী ঠিক ততটাই বোলারদের দন্তহীন বোলিংও দায়ী।

বাংলাদেশের কাছে জিম্বাবুয়ের মতো এমন তরতাজা কোনো সুখস্মৃতি নেই। তবে তারা আত্মবিশ্বাস যোগাতে পারে দলটির বিপক্ষে বিগত ৫ বছরের জয়ের পরিসংখ্যান থেকে। এই সময়টিতে দুই দলের ৫ বারের মোকাবিলায় চারটিতেই বাংলাদেশ জিতেছে।

আাবার সামগ্রিক পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে দু:শ্চিন্তা ভর করবে বাংলাদেশ দলে। কেন জানেন? টেস্টে দুই দলের ১৬ বারের দেখায় ৭ বারই জয়ের শেষ হাসি নিয়ে মাঠ ছেড়েছে জিম্বাবুয়ে। আর বাংলাদেশ ৬টিতে। এই ম্যাচটি যদি মুমিনুলরা নিজেদের করে নিতে পারে তাহলে দুই দলের জয়ের সংখ্যা সমান হবে।

শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৯টায়।

টপ নিউজ বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে টেস্ট সিরিজ মুমিনুল হক সাকিব আল হাসান

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর