‘চিরকালের সেরা’র বিদায়দিনে চিরকালীন আক্ষেপের গল্প
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ১৫:৩৯
আধুনিক ক্রিকেটে ব্যাটিং আর স্যার ডোনাল্ড ব্রাডম্যান এ দুটো শব্দ প্রায় সমার্থক। তিনি চিরকালের সেরা- এ কথাটিও সর্বজন স্বীকৃত। ৫২ টেস্টে ৬ হাজার ৯৯৬ রান। গড় ৯৯.৯৪। অমরত্বের জন্য আর কি চাই? তবে এই স্যার ডনও পাননি পূর্ণতার স্বাদ। ১৭ বছর আগের আজকের দিনে এই কিংবদন্তি বিদায় নিয়েছিলেন ৪ রানের আক্ষেপ নিয়েই।
ক্রিকেট মাঠে ব্যাট হাতে আবার কেউ স্যার ব্রাডম্যানের মতো জ্বলে উঠবেন এমনটা হয়তো স্বপ্নের মতো। টেস্ট ক্রিকেটকে যিনি আনন্দময় করে তুলেছিলেন এই কিংবদন্তির জন্ম ১৯০৮ সালের ২৭ আগস্ট। নিউ সাউথ ওয়েলসের বাউরালে জন্ম নেয়া এই কিংবদন্তির পুরো নাম স্যার ডোনাল্ড জর্জ ব্র্যাডম্যান। ‘দ্য ডন’ খ্যাত এই অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানকে বলা হয় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যাটসম্যান। ক্রিকেট মাঠ কাঁপিয়ে গেছেন ১৯২৮ থেকে ৪৮ সাল পর্যন্ত।
ছোটবেলা থেকে অঙ্কের পাশাপাশি যে কাজটা খুব ভালো পারতেন, সেটা ছিল ব্যাট চালানো। অল্পবয়সেই তা দেখিয়েছেন এই ক্রিকেট লিজেন্ড। মাত্র ১২ বছর বয়সেই স্কুলের এক প্রতিযোগিতায় খেলতে নেমে সেঞ্চুরি করে বসেন তিনি। পুরো দলের স্কোর যেখানে ১৫৬, সেখানে একাই করেছিলেন ১১৫ রান।
৫ ফুট ৭ ইঞ্চি উচ্চতার এই অস্ট্রেলিয়ান প্রথম শ্রেণীতে জায়গা পেয়েছিলেন ১৯ বছর বয়সে। একের পর এক ভালো স্কোর তুলে সবার নজর কেড়েছিলেন এই ‘গ্রেট’।
তারপর সুযোগ পেয়ে যান ১৯২৮ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে। তবে শুরুটা ভালো ছিল না। অভিষেক টেস্টে দুই ইনিংস মিলে রান পেয়েছেন বয়সের সমান। প্রথম ইনিংসে ১৮ ও দ্বিতীয় ইনিংসে করেছিলেন মাত্র ১ রান। সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে দল থেকে বাদ পড়লেন। তৃতীয় টেস্টে আবার সুযোগ হয়েছিল। কে জানতো শুরুটা যার এমন দুঃস্বপ্নে, তিনিই এভাবে রেকর্ডের পাহাড় তুলে দিয়ে যাবেন ভবিষ্যৎ ক্রিকেটারদের সামনে! তৃতীয় টেস্টের দলে ফিরেই যা দেখিয়েছেন, সেখান থেকেই শুরু। আর পেছনে তাকাতে হয়নি। দুই ইনিংসে করে বসলেন ৭৯ ও ১১২ রান।
এরপর শুধু ব্যাট হাতে খেল দেখিয়েছিলেন। টেস্ট ক্রিকেটে ব্যাট হাতে বিশ্ব কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন সর্বকালের সেরা এই ব্যাটসম্যান। টেস্ট ক্যারিয়ারে ৫২ ম্যাচে ৬ হাজার ৯৯৬ আছে তার সংগ্রহে। এক ইনিংসে ৩৩৪ রানের কীর্তি আছে এই গ্রেটের। ২৯টি অর্ধশতক ও ১৩টি শতক তুলেছেন ৮০ ইনিংসের ক্যারিয়ারে।
আর সবচেয়ে বড় রেকর্ডের যেই পাহাড় তুলে দিয়ে গেছেন সেটি ছিল ক্রিকেটে তার ব্যাটিং গড়। ব্যাট হাতে টেস্ট ক্রিকেটে ৯৯.৯৪ গড় নিয়ে ইতিহাসে অন্যতম হয়ে থাকলেন সর্বকালের সেরা এই ব্যাটসম্যান। ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টও খেলেছিলেন ইংলিশদের বিপক্ষে ১৯৪৮ সালের ১৮ আগস্ট।
একমাত্র ক্রিকেটার বোধহয় তিনিই ছিলেন, যাকে ব্যাট করতে শেখাননি কোনো কোচ। ব্যাট হাতে সেঞ্চুরি হাঁকানোটা অনেকটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল ডানহাতি এই ব্যাটসম্যানের।
এতোগুলো রেকর্ডের জন্ম যিনি একাই দিয়েছিলেন, ক্রিকেটে সেঞ্চুরি হাঁকানোর এতোগুলো কীর্তি যার জীবনে সেই তিনিই কিনা আরেকটি সেঞ্চুরি থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন! টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে ১০০ গড় নিয়ে ক্যারিয়ার শেষ করার সহজতম বাধাটুকুও পেরোতে পারেননি স্যার ডন। ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় গর্বের এই অর্জনের জন্য শেষ টেস্টে মাত্র ৪ রান প্রয়োজন ছিল এই ব্যাটিং সম্রাটের।
১৯৪৮ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওই সিরিজে প্রথম চার টেস্টের ৮ ইনিংসে ৫০৮ রান সংগ্রহ করলেন স্যার ডন। লন্ডনের কেনসিংটন ওভালে জীবনের শেষ টেস্টে খেলতে নামলেন এই ব্যাটিং বিস্ময়। স্যার ডন তার ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টে ক্রিকেটকে নতুন কি উপহার দেবেন তারই অপেক্ষায় গোটা ক্রিকেট দুনিয়া। বড় বিস্ময়ই উপহার দিলেন ব্যাটিং সম্রাট! বোলার এরিক হলিজ। লেগ স্পিনার। সাদামাটা ক্যারিয়ার। কিন্তু এই নামটি স্থায়ী হয়ে গেল ক্রিকেটে। তিনিই স্যার ডনকে ফেরালেন শূন্য হাতে।
ক্যারিয়ারের শেষ ইনিংসে মাত্র দুই বল উইকেটে টিকলেন স্যার ডন। প্রথম বল থেকে রান পেলেন না। দ্বিতীয় বলেই হলিজের বলে হয়ে গেলেন বোল্ড। স্যার ডনের নামের পাশে ০! ইংল্যান্ড ইনিংস ব্যবধানে হেরে যাওয়ায় দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করার সুযোগ পেলেন না স্যার ডন। যতদিন ক্রিকেট থাকবে ততদিন স্যার ডনের এই ৪ রানের আক্ষেপ বয়ে বেড়াতে হবে ক্রিকেট পিয়াসীদের। জীবনের শেষ ইনিংসে সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান প্রমাণ করে দিলেন তিনিও রক্ত মাংসে গড়া মানুষই।
১৭ বছর আগের ২০০১ সালের আজকের দিনে জীবনের সেঞ্চুরিটাও পূরণের আগেই পৃথিবীকে বিদায় জানিয়েছিলেন ক্রিকেট দেবতা। ৯২ বছর বয়সে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার কিংস্টন পার্কে ক্রিকেট বিশ্বকে কাঁদিয়ে যান এই কিংবদন্তি।
সারাবাংলা/এসএন/ এসবি