সালাউদ্দিনের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করলেন বাদল রায়
৪ মার্চ ২০২০ ২০:৩৯
ঢাকা: আগামী ২০ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) নির্বাচন। আসন্ন নির্বাচনে চতুর্থবারের মতো সভাপতি পদে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন বাফুফের বর্তমান সভাপতি কাজী মো. সালাউদ্দিন। গেল ১৭ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান বাংলাদেশ জেলা ও বিভাগীয় ফুটবল এ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব তরফদার মো. রুহুল আমিন। আপাতত সভাপতি পদে নির্বাচন করছেন না; তবে নির্বাচনে তার প্যানেল থাকবে এমনটাও জানান তিনি। সালাউদ্দিন বিরোধী হিসেবে পরিচিত তৃণমূল ফুটবলের এ সংগঠক সরে দাঁড়ানোয় অনেকেই বলছিলেন ফাঁকা মাঠেই গোল দিতে যাচ্ছেন কাজী সালাউদ্দিন।
কিন্তু গত ২০ ফেব্রুয়ারি বাফুফের বর্তমান সহ-সভাপতি বাদল রায়ের এক ঘোষণায় দৃশ্যপটই যেন বদলে যায়! ‘আগামী নির্বাচনে সভাপতি পদে কেউ না দাঁড়ালে আমি আছি’- বাদল রায় এমন ঘোষণা দিলে নড়েচড়ে বসেন সবাই। শারীরিকভাবে অসুস্থ বাদল রায় সত্যিই কী নির্বাচন করবেন!- এ নিয়ে অনেকের মনে তৈরি হয় সংশয়-সন্দেহ।
তবে সব জল্পনা-কল্পনায় জল ঢেলে নিজের সিদ্ধান্তেই অটল থাকলেন বাদল রায়। সালাউদ্দিনকে ছুঁড়ে দেন নির্বাচনি চ্যালেঞ্জ। নিজেও সালাউদ্দিনের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে ভোটের মাঠে থাকার ঘোষণা দেন। আজ জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে সাবেক ফুটবলদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত সভাতে একই সঙ্গে বাফুফের নেতৃত্বে পরিবর্তনেরও ডাক দেন। ‘পরিবর্তন সময়ে দাবি ও আমাদের করণীয়’ শীর্ষক ওই অনুষ্ঠানে বাদল রায় জানান, বাংলাদেশের ৯৯ শতাংশ মানুষ পরিবর্তনের পক্ষে। আমরাও পরিবর্তন চাই।’
জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত সাবেক তারকা ফুটবলার হাসানুজ্জামান খান বাবলুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বাদল রায়কে সমর্থন জানাতে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টু, প্রতাপ শংকর হাজরা, গোলাম সারোয়ার টিপু, খুরশিদ আলম বাবুল, ওয়াহিদুজ্জামান খান পিন্টু, আবদুল গাফফার, কায়সার হামিদ, ইমতিয়াজ সুলতান জনি, স্বপন কুমার দাস, আরমান মিয়া, আলফাজ আহমেদ, আবু হাসান চৌধুরী প্রিন্সসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
‘দেশে কোনো সংকট নাই, ফুটবলেই যত সংকট- এমন বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে ফুটবলের বর্তমান যে সংকট, দৈন্যদশা সেটাকে তুলে ধরার চেষ্টা করেন বাদল রায়। গেল ১২ বছরে কাজী সালাউদ্দিন এবং তার কমিটি যে ফুটবলের কোনো উন্নয়ন-উন্নতি করতে পারেননি; ফুটবলকে এগিয়ে নিতে পারেননি সে কথা আরেকবার মনে করিয়ে দেন। সালাউদ্দিনের এমন ব্যর্থতায় দায় সহ-সভাপতি হিসেবে নিজে এড়াতে পারেন না এমনটা জানান বাদল রায়। একই সঙ্গে এটাও মনে করিয়ে দেন, ‘আমি কাজ করতে চেয়েছি। কিন্তু আমাকে সুযোগ দেয়া হয়নি। বিভিন্ন কমিটি থেকে আমাকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। আমার পরিবারের কাছে ফোন করে আমাকে ফেডারেশনে আসতে নিষেধ করা হয়েছে জানান বাদল রায়।
সালাউদ্দিনের আক্রোশের শিকার বাদল রায় সহ-সভাপতির পদ ছেড়ে চলে আসতে চেয়েছিলেন, সহকর্মীদের সঙ্গে এ নিয়ে কথাও বলেছিলেন। বাইরে থেকে প্রতিবাদ করার চেয়ে পদে থেকে প্রতিবাদ করাকেই শ্রেয়তর মনে করে এখনও প্রতিবাদ করে যাচ্ছেন। সেই প্রতিবাদই তাকে আসন্ন নির্বাচনে সভাপতি পদে দাঁড়াতে অনুপ্রাণিত করেছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে, ভোট হলে সভাপতি পদে নির্বাচিত হবেন এমনটা বিশ্বাস বাদল রায়ের।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মায়ের আসনে বসিয়েছেন বাদল রায়। তার দ্বিতীয় জীবন দানে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকার কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি, ‘প্রধানমন্ত্রী একজন স্পোর্টস লাভার, তিনি ফুটবলকে ভীষণ ভালোবাসেন, সাবেক অনেক ফুটবলারদের এক নাম চেনেন। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত নিবেন বলেই বিশ্বাস বাদল রায়ের। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর পরই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যাবেন বাদল রায়।’
সাবেক খেলোয়াড়রা আজকের (গতকাল) যে দাবিগুলো জানিয়েছেন সেটাও তুলে ধরবেন। প্রটোকল মেনেই সব কিছু করতে চান বাদল রায়। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের আগে অভিভাবক হিসেবে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কে এসব বিষয়ে অবহিত করতে চান। যদিও সালাউদ্দিনের দুর্নীতির অনেক বিষয়ই ইতোমধ্যে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছেন বলে জানিয়েছে সাবেক ফুটবলাররা। এই ব্যাপারে কেন তারা নিশ্চুপ বোধগম্য নয় বাদল রায়ের।
সালাউদ্দিন আবারও সভাপতি পদে নির্বাচিত হলে আগামী এক বছরের মধ্যে ফুটবল চিরতরে হারিয়ে যাবে মন্তব্য বাদল রায়ের। সালাউদ্দিনকে মাফিয়া কায়দায় নির্বাচন আয়োজন না করা, সুষ্ঠুভাবে যাতে ভোটাররা ভোট দিতে পারেন সেই পরিবেশ তৈরির আহ্বান জানান বাদল রায়। নির্বাচনে কেউ দাঁড়াতে চাইলে তাকে সরিয়ে দেন সালাউদ্দিন ভাই- এই কাজ না করার অনুরোধ জানিয়েছেন বাফুফের সহ-সভাপতি।
তরফদার রুহুল আমিন নির্বাচনি মাঠ থেকে হঠাৎ সরে যাওয়ায় বিস্মিত বাদল রায়! প্রধানমন্ত্রী এবং তার সংশ্লিষ্ট লোকদের বলব কেন তরফদার সাহেবকে বসিয়ে দেয়া হল। ভুল কথা বলে তরফদারকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে মন্তব্য বাদল রায়ের। তরফদার সাহেব যখন নির্বাচন থেকে সরে গেছেন; তখন আমি ঘোষণা দিয়েছি কেউ নির্বাচনে সভাপতি পদে না দাঁড়ালে আমি দাঁড়াব। আমি বাদল কাউকে ভয় পাই না। জন্ম যখন নিয়েছি একদিন মরতে হবে। সবাইকে মরতে হবে। তৃণমূলের ফুটবল উন্নয়নে ভালোই কাজ করছিলেন তরফদার রুহুল আমিন। তার কারণে প্রথম বিভাগ, দ্বিতীয় বিভাগ, তৃতীয় বিভাগের ফুটবল মাঠে ছিল। কিন্তু হঠাৎ তার (তরফদার রুহুল আমিন) সঙ্গে স্পন্সরশীপ বাতিল করে দেয় বাফুফে। বলা হল তার চেয়ে আরও বড় স্পন্সর নাকি পেয়েছে। কই এখন তো মাঠে খেলাই হয় না।’
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে নির্বাচনে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন বাদল রায়। প্রধানমন্ত্রী নিষেধ করলে তখন কী করবেন- এমন প্রশ্নে বাদল রায় বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যা বলবেন আমি সেটাই মেনে নেব।’ এর আগে বাদল রায় জানান, আমার চেয়ে যোগ্য কেউ আসলে অবশ্যই সরে দাঁড়াব। এদিকে বাদল রায় নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালে সাবেক তারকা ফুটবলার শেখ মোহাম্মদ আসলাম নির্বাচনে থাকবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
সাবেক তারকা ফুটবলার গোলাম সারোয়ার টিপু বলেছেন, তরফদারের সঙ্গে কী হয়েছে আমরা জানি না। বাদল তোমার সঙ্গে এমন কিছু যেন না। আমরা তোমার সঙ্গে আছি। আলফাজ আহমেদ বলেন, ১২ বছরে যে উন্নতি করতে পারেনি, আগামী ২০ বছরও উন্নতি করতে পারবে না। ফুটবলার হিসেবে সালাউদ্দিন ভাইয়ের খ্যাতি এখনও অক্ষুণ্ন আছে। আগামী নির্বাচনে আসলে সেটা ধূলিসাৎ হয়ে যাবে। সম্মান থাকতে এখনই নির্বাচন থেকে সরে যাওয়া উচিত। জাকারিয়া পিন্টু, কায়সার হামিদ, ইমতিয়াজ সুলতান জনি, ওয়াহিদুজ্জামান পিন্টু, খুরশিদ আলম বাবুলরাও গেল ১২ বছরে সালাউদ্দিনের দুর্নীতি, ব্যর্থতার প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি বাদল রায়ের প্রতি নিজেদের সমর্থন ব্যক্ত করেন।