করোনাক্রান্তিতে দেশের স্বার্থে সর্বদা প্রস্তুত চয়নরা
৩১ মার্চ ২০২০ ২৩:৪৯
ঢাকা: করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে দেশের পুরো ক্রীড়াঙ্গন যখন স্থবির তখন একদল হকি খেলোয়াড় জাগ্রত দেশের সেবার অপেক্ষায়। করোনাক্রান্তির যেকোনো পরিস্থিতিতে তারা এগিয়ে আসতে মানসিক ও শারীরিকভাবে প্রস্তুত আছে। নির্দেশনা এলেই দেশের স্বার্থে জনগণের স্বার্থে, দেশের মানুষের স্বার্থে মাঠে নেমে যেতে প্রস্তুত খেলোয়াড়রা।
বিশেষভাবে বলা হচ্ছে বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে চাকরিরত বাংলাদেশের হকি খেলোয়াড়দের কথা। জাতীয় হকি দলের খেলোয়াড় রাসেল মাহমুদ জিমি, মামুনুর রহমান চয়ন, ফরহাদ আহমেদ শিতুল, সারওয়ার হোসেইন, আশরাফুল ইলাম, মইনুল ইলাম কৌশক, ফজলে হোসেইন রাব্বি এবং রুমান যারা এখন নৌবাহিনীতে চাকরি করছেন।
একইসঙ্গে জাতীয় দলের হয়ে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করছেন এই হকি খেলোয়াড়রা। সবশেষ ২০১৮ সালে জাকার্তায় এশিয়ান গেমসে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। আর নৌবাহিনীর হয়ে গেল ফেব্রুয়ারিতে শহীদ স্মৃতি ঘরোয়া টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। সঙ্গে তাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হচ্ছে স্থানীয় প্রশাসনকে সার্বিক সহায়তা করা। করোনাক্রান্তিতে বিপর্যস্ত মানুষদের ত্রাণ পৌঁছে দেওয়াসহ সাধারণ জনগণকে নিজ বাড়িতে অবস্থান করাতে উদ্বুদ্ধসহ নির্দেশনা দেওয়া।
নৌবাহিনীর অন্যান্য সৈন্য বা কর্মকর্তাদের মতো খেলোয়াড়দের দায়িত্ব এক নয়, তবে তাদের মৌলিক সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় যেন দেশের যেকোনো জরুরি মুহূর্তে অংশ নিতে পারে এবং সশস্ত্রবাহিনীর সদস্য হিসেবে দেশের স্বার্থে নিজেকে বিসর্জন দিতে সবসময় প্রস্তুত থাকে।
করোনাক্রান্তিতে দেশের স্বার্থে সবসময় প্রস্তুত থাকতে হয় বলে জানান হকির কিংবদন্তি খেলোয়াড় মাহমুদুর রহমান চয়ন, ‘আমরা সবাই শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত আছি। চাকরিজীবী হিসেবে আমাদের প্রথম পরিচয় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর। তারপর আমরা হকির খেলোয়াড়। নৌবাহিনীর ইউনিফর্ম পরে আমার প্রথম কাজ হলো দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সশস্ত্রবাহিনীর সদস্য হিসেবে আমাদের কোনো ছুটি নেই। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জেলা পর্যায়ে সেবা দিচ্ছে আর আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে সমূদ্রে যেখানে সেনাবাহিনী যেতে পারে না। যেহেতু আমরা ঢাকায় আছি, সেহেতু আমাদের দায়িত্ব হলো প্রশাসনিক কাজ করে যাওয়া।’
নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করবেন যদি এমন সময়ে দেশের স্বার্থে মাঠে কাজ করার নির্দেশনা আসে, জানান প্রথম প্যাটি অফিসার চয়ন। জাতীয় দলে যখন বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করতাম তেমন নৌবাহিনীর হয়ে মাঠ পর্যায়ে জনগণের সেবা করতে পারলে নিজেকে আরো সৌভাগ্যবান ভাবতাম, আমরা প্রস্তুত। উপর থেকে নির্দেশনা আসলেই আমরা মাঠে নেমে যাবো।’
চয়ন ২০১৪ সালে জাতীয় দলের হয়ে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেন। ১৪ বছর ক্যারিয়ারে পাঁচ-ছয় বছর অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পালন করেন। পেনাল্টিকর্নার স্পেশালিস্ট হিসেবে বিখ্যাত এই তারকার। হকি খেলোয়াড় হিসেবে ২০১৮ সালে এশিয়ান গেমসেই দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে নিজের শেষ ম্যাচটি খেলে হঠাতই অবসর ঘোষণা দেন।
তবে জাতীয় দল থেকে বিদায় নিলেও হকি ছাড়েননি তিনি। নৌবাহিনীর হয়ে শেষ টুর্নামেন্টরও চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। এখন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা এলেই জনগণের জন্য মাঠে নেমে পড়তে চান চয়ন, ‘করোনা পরিস্থিত দুদিন থেকে ভালো। কিন্তু খারাপ অবস্থায় গেলে আমরা মন থেকেই যেকোনো নির্দেশনা নিয়েই দেশের স্বার্থে নেমে যেতে প্রস্তুত আছি।’
করোনা আতঙ্ক নিয়ে দেশের জনগণের প্রতি চয়নের পরামর্শ, ‘গত দুইদিনে করোনা রোগী শনাক্ত হয়নি। এর মানে এই নয় যে রোগ নেই বা নির্মূল হয়ে গেছে। আর স্বাস্থ্যবিধি যেরকম দেওয়া হয়েছে ঠিক সেভাবেই দায়িত্ব পালন করে যেতে হবে সবার। কারণ সবাই মিলে এক যোগ নিজের বাসায় আইসোলেশনে না থাকলে এই অবস্থার উন্নতি হবে না কখনও। তাই সামাজিক দূরত্ব মেনে চলি। একেবারে জরুরি না হলে বাইরে যাওয়ার দরকার নেই। বাসায় থাকুন। আপনি, আপনার পরিবার, সমাজ ও দেশের জন্য নির্দেশনা মানা অতি জরুরি।’
করোনা মোকাবিলা করোনাভাইরাস জাতীয় হকি দল বাংলাদেশ নৌবাহিনী বাংলাদেশ হকি দল মামুনুর রহমান চয়ন