Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ক্ষোভ নিয়ে সব ধরনের ক্রিকেট ছাড়লেন শরীফ


১১ এপ্রিল ২০২০ ২৩:৪৭

জাতীয় ক্রিকেট লিগের গেল মৌসুমকে সামনে রেখে প্রথম ধাপে দেওয়া ফিটনেস পরীক্ষায় পাস করতে পারেননি মোহাম্মদ শরীফ। দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষায় ১১ দশমিক ১ পেয়ে সফলতার সঙ্গে উত্তীর্ণ সত্যি কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। কোনো দলে ঠাঁই মেলেনি। এরপর পেলেন কাঁধে চোট। যা তাকে ছয় মাস মাঠ থেকেই ছিটকে দিল। সবশেষ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের ২০১৯-২০ মৌসুমেও কোনো ক্লাব থেকে ডাক আসেনি এই পেস বোলিং অলরাউন্ডারের। আছে নানান পারিপার্শ্বিক জটিলতাও। যা তাকে সব ধরনের ক্রিকেট থেকেই বিদায়ের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করল।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (১১ এপ্রিল) রাতে মুঠোফোনে নিজ শহর নারায়নগঞ্জ থেকে সারাবাংলাকে মোহাম্মদ শরীফ নিজেই খবরটি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেছেন, ‘গত এনসিএলে বিসিবি যে ফিটনেস পরীক্ষা নিল সেখানে প্রথমবার পাস করতে পারিনি বলে দল গুলো আমাকে নিল না। দ্বিতীয়বার বিপে ১১ দশমিক ১ পেলাম। সেটাও গ্রাহ্য করল না। এরপর কাঁধে চোট পেয়ে ছয় মাসের জন্য মাঠের বাইরে চলে যেতে হলো। ভাবলাম ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে খেলব। কিন্তু এবারের মৌসুমে একটি ক্লাবও ডাকল না। সব মিলিয়ে অবস্থা ভালো ঠেকছে না বলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি আর কোনো ধরনের ক্রিকেটই খেলব না। তাছাড়া এখন দলগুলো তরুণ প্লেয়ারের প্রতিই বেশি আগ্রহ দেখায়।’

ক্রিকেট ছেড়ে দিলেন এখন কী করবেন ভাবছেন? সারাবাংলার করা এমন প্রশ্নের জবাবে শরীফ জানালেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে চাকরি করতে চান। ‘২০ বছর ক্রিকেট খেলেছি। অভিজ্ঞতা তো আর একেবারে কম নেই। বিসিবিতে একটি চাকরি পাব বলে আশা করছি। নির্বাচক মন্ডলী, কোচিং কিংবা গেম ডেভেলপমেন্ট যেখানেই হোক সমস্যা নেই।’

সময়টা কম নয়, বছরের হিসেবে ২০। এত সময়ে ধরে বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের অন্যতম আলোচিত নাম মোহাম্মদ শরীফ। ২০০১ সালে অপর সম্ভবনা নিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় দলে নাম লিখিয়েছিলেন এই পেসার। উজ্জ্বল ক্যারিয়ারের পথে কিন্তু হয়ে দাঁড়াল ইনজুরি। পুরো ক্যারিয়ার জুড়েই ভুগেছেন ইনজুরিতে। আর তাতেই ক্যারিয়ারটা উজ্জ্বল হতে পারেনি তার। ২০ বছরের ক্রিকেটীয় ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের ইতিহাসের সফলতম পেসার মোহাম্মদ শরিফুল।

বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে মোহাম্মদ শরীফের নামের পাশে জ্বল জ্বল করছে ৩৯৩টি উইকেট। একটু ধৈর্য্য ধরলেই দেশের ইতিহাসের প্রথম বোলার হিসেবে নামের পাশে উজ্জ্বলতা ছড়াতো ৪শত উইকেট। তবে অতটা ধৈর্য্য যেন আর ধরতে পারলেন না শরীফ। বিদায় জানিয়ে দিলেন ক্রিকেটকে। পেস বোলিংয়ে তার ৩৯৩ উইকেটের সঙ্গে আছে ১৫ বার ৫ উইকেট নেওয়ারও দেশের রেকর্ড। আছে হ্যাটট্রিকও। ব্যাট হাতেও ছিলেন বরাবরই দুর্দান্ত। একটি শতক সঙ্গে ১০টি অর্ধশতকে নামের পাশে রানের সংখ্যা ৩ হাজার ২শ ২২।

বিজ্ঞাপন

শেষবার বাংলাদেশ জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চড়িয়েছিলেন ২০০৭ সালে। এর আগে ২০০১ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে অপার সম্ভবনা নিয়ে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চড়িয়েছিলেন তিনি। সে বছরেই রাজকীয় সাদা পোষাকেও অভিষেক ঘটে ডানহাতি এই পেসারের। টেস্ট আর ওয়ানডে উভয় ফরম্যাটেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অভিষেক ঘটে শরীফের। ১৭ বছর তরুণের জাতীয় দলে শুরুটা দুর্দান্ত না হলেও বেশ ভালোই হয়েছিল। তবে ইনজুরির কারণে অভিষেকের মাত্র এক বছর পরেই জায়গা হারান জাতীয় দলে।

এরপর ২০০৩ সালের বিশ্বকাপের পর ভারত এবং অস্ট্রেলিয়ায় অস্ত্রপচার করান এই পেসার। দীর্ঘ ৯ মাস ইনজুরি থেকে সেরে ওঠানোর পেছনে ব্যয় করেন শরীফ। তবে জাতীয় দলে ফিরতে ফিরতে সময় লেগে যায় চারটি বছর। ২০০৭ সালে ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফরম্যান্স দিয়ে জাতীয় দলে দ্বিতীয় দফার অভিষেক হয় শরীফের। আর সে বছরই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শেষ টেস্ট এবং জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের শেষ ওয়ানডে ম্যাচটি খেলেন তিনি। এরপরের বছরেই নিষিদ্ধ আইসিএল খেলতে গিয়ে ১০ বছরের নিষেধাজ্ঞায় পড়েন তিনি। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড।

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে একটি আক্ষেপ থেকেই যাবে তার। সেই আক্ষেপের কথাই জানালেন তিনি। দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রথম পেসার হিসেবে ৪শ উইকেট না নেওয়ার আক্ষেপটা রয়ে যাবে বলেন তিনি। জাতীয় দলে ২০০৭ সালের পর আর কখনোই খেলা হয়নি তার। এসব আক্ষেপ নিয়েই অবশেষে অবসরের ঘোষণা দিয়ে দিলেন নন্দিত এই পেসার।

অবসরের আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মোহাম্মদ শরীফ টেস্ট খেলেছেন ১০টি। সর্বোচ্চ ২৪ রানের ইনিংসসহ মোট রান ১২২ আর বল হাতে আছে ১৪টি উইকেট। টেস্টে ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ফিগার ৯৮ রানে ৪টি উইকেট। একদিনের আন্তর্জাতিকে শরীফ খেলেছেন ৯টি ম্যাচ। যেখানে ব্যাট হাতে রান সংখ্যা মোট ৫৩। আর বল হাতে নিয়েছেন ১০টি উইকেট। ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ফিগার ৪০ রানে ৩টি উইকেট।

৩৪ বছর বয়সী ক্রিকেটার ক্রিকেট থেকে অবসর মোহাম্মদ শরীফ সব ধরনের ক্রিকেট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর