Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

করোনাযুদ্ধে এক অকুতভয় বীর সেনানীর গল্প


২৬ এপ্রিল ২০২০ ১৩:৩৫

করোনাভাইরাস নামক অদৃশ্য এক শত্রুর মোকাবিলায় দেশের সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে লড়ছেন। সাধারণ মানুষ নিজেদের রেখেছেন ঘরবন্দী, ফ্রন্টলাইন ফাইটার হিসেবে চিকিৎসকেরা দিন-রাত এক করে কাজ করে যাচ্ছেন, লক ডাউন ও ত্রাণ কার্যক্রম বাস্তবায়নে প্রশাসনের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছেন সামরিক বহিনীর কর্মকর্তা ও সৈনিকেরা। ঘাতক এই শত্রু মোকাবিলায় বসে নেই বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররাও। এদেশে প্রাদুর্ভাব ছড়ানোর মাসেই (মার্চ) নিজেদের বেতনের অর্ধেক দিয়ে দিয়েছেন। এরপর মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিকরা স্ব স্ব অবস্থান থেকে সামর্থ্যের সেরাটুকু দিয়ে দুঃস্থদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাদের পাশাপাশি নীরব এই ঘাতক মোকাবিলায় শামিল হয়েছেন নাজমুল ইসলাম অপুও।

তবে অপুর যুদ্ধ অনেকটাই সম্মুখ যোদ্ধাদের মতো। নিজে তো আর্থিক সহযোগিতা দিচ্ছেনই সমাজের বিত্তবান, পরিবার ও জাতীয় দলের সতীর্থদের কাছ থেকেও অর্থ সংগ্রহ করে তা দিয়ে খাবার কিনে নিজ হাতে দুঃস্থদের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছেন। মাইক নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন করোনাকালের সচেতনতামূলক প্রচারণা। আর যে বাসায় শিশু আছে তাদের জন্য দুধ কেনা থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য সেবাও পৌঁছে দিচ্ছেন নাগিন ডান্সের এই জনক।

দেশের মধ্যে ঢাকার পরেই সম্ভবত নারায়ণগঞ্জে করোনা আক্রান্তদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। সংগত কারণেই করোনা এদেশে প্রাদুর্ভাব ছড়ানোর শুরুর দিকেই জেলাটিকে লক ডাউন ঘোষণা করে স্থানীয় প্রশাসন। কিন্তু চমকে যাওয়ার মতো খবর হলো সেই জেলার একজন বাসিন্দা হয়েও করোনাভয়কে তুচ্ছজ্ঞান করে অনেকটাই ফ্রন্টলাইন যোদ্ধার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলে নিয়মিত হওয়ার চেষ্টায় থাকা নাজমুল ইসলাম অপু। সহযোদ্ধা হিসেবে আছেন এলাকার আরো ১৪ জন।

অপু ও তার সহযোদ্ধাদের বাড়ী নারায়ণঞ্জের বন্দর এলাকায়। কিন্তু সেখানে লক ডাউন চলছে বিধায় প্রশাসনের অনুমতি ব্যতীত বাইরে যাওয়া বস্তুতই অসম্ভব। তাই ইউএনও’র (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা) কাছ থেকে মোট ১৫টি কার্ড করেছেন। সেই কার্ড নিয়ে রাতে বেরিয়ে পড়েন দুঃস্থদের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দেওয়ার ব্রতে। অথচ সেখানে মৃত্যু প্রতিটি পায়ে পায়ে ধাওয়া করে। সেই ঝুঁকি তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে এই পর্যন্ত মোট ১ হাজারেরও বেশি পরিবারকে খাদ্য সহযোগিতা দিয়েছেন নাজমুল ইসলাম অপু ও তার সঙ্গীরা।

‘ভয় তো করেই। কিন্তু কাউকে না কাউকেও তো এগিয়ে আসতেই হবে। সেই ভাবনা থেকেই এভাবে এগিয়ে আসা। আমরা ইউএনও সাহেবের কাছে থেকে কার্ড করিয়ে নিয়েছি। যাতে করে বের হতে সমস্যা না হয়।’

তার এই যুদ্ধে স্থানীয় বিত্তাবনদের পাশপাশি পেছন থেকে রসদ যুগিয়ে যাচ্ছেন; নিজের প্রবাসী এক ভাই, তামিম ইকবাল, মুমিনুল হক ও মুশফিকুর রহিম। ‘এলাকার অনেকেই টাকা দিয়ে সাহায্য করছে। আমার একটা ছোট ভাই আছে, দেশের বাইরে থাকে। ও সাহায্য করছে। তামিম ইকবাল করেছে। গতকাল মুমিমুল (মুমিনুল হক) ফোন দিয়েছিল। বলল, যতটুকু পারে করবে। মুশফিকের (মুশফিকুর রহিম) তো  বলেছেন যতটুকু সম্ভব যতদিন পারি চেষ্টা করে যাবে।

অপু ও তার দল যে শুধুই খাবার পৌঁছে দিচ্ছে তা কিন্তু নয়। রাতে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় হাতে একটি মাইক নিয়ে বের হন। সেই মাইকে এলাকাবাসীকে উচ্চকণ্ঠে জানিয়ে দেন করোনাকালের করণীয়, তাদের সতর্ক করেন, আর বুনে দেন সচেতনতার ধান।

শনিবার থেকে শুরু হয়েছে পবিত্র রমজান মাস। সেজন্যও তার আলাদা পরিকল্পনা আছে। লক্ষ্য নিয়েছেন, রোজার সময় ১৬-১৭শ মানুষের মধ্যে ইফতার বিতরণ করবে অপু কন্টিনজেন্ট। আর এভাবেই চলবে করোনার বিরুদ্ধে তার নিরন্তর যুদ্ধ। সেই যুদ্ধে অপুর মতো বীরেরই জয় সুনিশ্চিত। ইতিহাস তো সেই স্বাক্ষ্যই দেয়।

করোনা মোকাবিলা করোনাভাইরাস ক্রিকেটার অপু টপ নিউজ দুঃস্থদের পাশে নাজমুল ইসলাম অপু বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর