সেদিন সৌরভ বলেছিলেন, ‘তোরা আর ছোট নেই’
৭ মে ২০২০ ১৭:৫৫
২০০৭ সালের ১৭ মার্চ, পোর্ট অব স্পেনের কুইন্স পার্ক ওভাল। মনে আছে সেই দিনের কথা? বাংলাদেশ ক্রিকেট কোনো দিনই ভুলবে না দিনটার কথা। ক্যারিবিয়ান দ্বীপের বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই সেদিন ভারকে হারিয়ে বিশ্বকে চমকে দিয়েছিল তারুণ্যে টকবগে বাংলাদেশ।
ভারত ছিল ওই বিশ্বকাপের টপ ফেভারিট। কেমন ফেভারিট একাদশের দিকে তাকালে সেটা এখনও আন্দাজ করা যায়। ওপেনিংয়ে বীরেন্দ্র শেবাগ, সৌরভ গাঙ্গুলি। ব্যাটিংয়ে এরপর ছিলেন শচীন টেন্ডুলকার, রাহুল দ্রাবিড়, যুবরাজ সিং, মহেন্দ্র সিং ধোনি। বোলিংয়ে বিশ্বমানের জহির খান, হরভজন সিংয়ের সঙ্গে অজিত আগারকাররা। সেই তুলনায় বাংলাদেশ তখনও শিশু!
হালের সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিমরা তখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একেবারেই নবীন। কিন্তু এই নবীনদের কাছেই সেদিন ধরাশায়ী হয়েছিল ভারত। অনেকে মনে করেন, ২০০৭ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষের ওই জয়টা বাংলাদেশ ক্রিকেটকে আরেক ধাপ উপরে নিতে বড় ভূমিকা রেখেছে। আর ভারতের জন্য দিনটা ছিল লজ্জার। ভারতের তৎকালিন অধিনায়ক, রাহুল দ্রাবিড় অনেকবার বলেছেন, সেদিন বাংলাদেশের কাছে না হারলে তার ক্যারিয়ারটা আরও সুন্দর হতে পারত।
মাশরাফি বিন মুর্ত্তজার আগুন ঝরানো পেস আর মোহাম্মদ রফিক ও আব্দুর রাজ্জাকের ঘুর্ণি বিষের সঙ্গে তরুণ সাকিবের সমর্থনে ১৯১ রানের গুটিয়ে গিয়েছিল টস হেরে প্রথমে ব্যাটিং করতে নামা ভারত। পরে শুরুতেই জহির খানকে মাটিতে নামিয়ে আনেন তামিম ইকবাল।
৭ চার ২ ছয়ে ৫১ রান করে ফেরার আগে ভারতীয় বোলিং ডিপার্টমেন্টের মনোবল ভেঙে দেন তামিম। এরপর দাঁড়িয়ে যান তরুণ সাকিব, মুশফিক। ৪৮ দশমিক ৩ ওভারে পাঁচ উইকেটের ঐতিহাসিক জয় নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। সেদিন ভারতের সেরা পারফর্মার ছিলেন সৌরভ গাঙ্গুলি।
বর্তমান ভারতীয় বোর্ডের সভাপতি ও দেশটির সাবেক সফল অধিনায়ক সেদিন মোহাম্মদ রফিকের বলে সাজঘরে ফেরার আগে ৬৬ রান করেছিলেন। বাংলাদেশি তরুণদের নাকি হালকা স্লেজিংও করেছিলেন কলকাতার মহারাজ।
করোনাভাইরাসের কারণে ক্রিকেটহীন এই সময়টাতে অনলাইনে ভিডিও কনফারেন্স আড্ডায় মেতে উঠছেন ক্রিকেটের বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গরা। আজ বৃহস্পতিবর (০৭ মে) ফেসবুক লাইভ আড্ডায় এসেছিলেন মুশফিকুর রহিম। বিভিন্ন আলোচনার মধ্যে উঠে আসে ভারত বধের সেই সুখস্মৃতিও।
এক প্রশ্নের জবাবে মুশফিক বলেন, সেদিন ব্যাটিংয়ের সময় বাংলাদেশিদের হালকা স্লেজিং করেন সৌরভ। ভারতীয় তারকা বলেছিলেন, ‘তোরা আর ছোট নেই। তোদের সহজে ছাড়া যাবে না।’ কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভারতকেই কঠিন অবস্থায় ফেলে বাংলাদেশ।
ওই ম্যাচে তিন নম্বরে ব্যাটিং করতে নেমেছিলেন মুশফিকুর রহিম। তবে বিষয়টা নাকি তিনি আগে জানতেনই না! ভারত ১৯১ রানেই গুটিয়ে গেলে ইনিংস শেষে তাকে বলা হয় দ্রুত প্রথম উইকেট পড়ে গেলে তাকে তিনে পাঠানো হবে। ওপেনার শাহরিয়ার নাফিস মাত্র ৮ রান করে ফিরলে তিনে পাঠানো হয় মুশফিককে। তিনে গিয়ে ফিরেছেন বাংলাদেশকে জিতিয়েই। জয়সূচক রানটাও এসেছিল তার ব্যাট থেকে। ১০৭ বলে ৫৬ রানে অপরাজিত ছিলেন মুশফিক।
জয়সূচক রানের বিষয়ে আবেগময় এক ঘটনাও শোনালেন দেশসেরা এই ব্যাটসম্যান। মুশফিকের মুখেই শুনুন সেটা, ‘জয়সূচক রানটা আশরাফুল ভাইও (মোহাম্মদ আশরাফুল) নিতে পারতেন। কিন্তু তিনি ইচ্ছা করে দুই-তিনটা বল ছেড়ে দেন। ওভার শেষে আমাকে বলেন তুই আজ যেমন খেলেছিস তাতে জয়সূচক রানটা তোর ব্যাট থেকে আসাই মানায়। তুই নে এটা।’ তারপরই ইতিহাস।
বাংলাদেশ বনাম ভারত বাংলাদেশের স্তুতি বিশ্বকাপ ২০০৭ মুশফিকুর রহিম সৌরভ গাঙ্গুলি