তামিমের ফোনে হাসপাতালে ঠাঁই হলো বিপ্লবের বাবার
১১ জুন ২০২০ ১৫:১৫
গেল কয়েকদিন ধরেই পুরোনো অসুখ শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন জাতীয় ক্রিকেট দলের তরুণ সদস্য আমিনুল ইসলাম বিপ্লবের বাবা আব্দুল কুদ্দুস। দিন তিনেক আগে তা বেড়ে গেলে পরশু বাবাকে হাসপাতালে ভর্তির উদ্দেশ্যে বের হন। কিন্তু কোথাও একটি হাসপাতালও জুটছিল না যেখানে। রাজধানীর এই হাসপাতাল থেকে ওই হাসপাতালে ছুটেছেন রুদ্ধশ্বাসে। কিন্তু কোথাও ভর্তি নিচ্ছিল না। ভর্তি দূরে থাক, তার কী হয়েছে সেই পরীক্ষাটি পর্যন্ত করতে চাইছিলো না কোনো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
তাতে অবশ্য আশা ছাড়েননি বিপ্লব ও তার পরিবার। খোঁজাখুঁজির ধারবাহিকতা অব্যাহত রেখে গতকাল যান রাজধানী শ্যামলীর সেন্ট্রাল ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে। সেখানে তারা তার বাবার পরীক্ষা করতে সম্মত হয়। পরীক্ষা শেষে তারা জানান মূলত হার্টের সমস্যা থেকেই এই শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। পরামর্শ দেন হার্ট ফাউন্ডেশনে নিয়ে যেতে।
সেন্ট্রাল ইন্টারন্যাশনালের পরামর্শ মোতবেক সঙ্গে সঙ্গে বিপ্লব বাবাকে নিয়ে যান হার্ট ফাউন্ডেশনে। কিন্তু সেখানে গিয়ে পড়েন বিপাকে। কেননা তারা বিপ্লবের বাবাকে ভর্তি করতে চাচ্ছিল না। অনন্যপায় হয়ে বিপ্লব ফোন করেন ওয়ানডে দলপতি তামিম ইকবাল ও বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের ম্যানেজার সাব্বির খানকে। বিপ্লবের ফোন পেয়ে তামিম ইকবাল হার্ট ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বললে তারা বিপ্লবের বাবাকে ভর্তি করে।
সেখানে আপাতত আইসোলেশনে রেখেই তাকে চিকিৎসা দিচ্ছে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ। তার শরীরের কোভিড-১৯ এর উপস্থিতি আছে কিনা সেটা পরীক্ষা করে তবেই তাকে ওয়ার্ড কিংবা ক্যাবিনে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেবে।
বৃহস্পতিবার (১১ জুন) বিপ্লব নিজেই সারাবাংলাকে বিষয়টি অবহিত করেছেন।
তিনি জানান, ‘আব্বুর শরীরটা খারাপ। সমস্যাটা হয়েছে শ্বাসকষ্ট থেকে। এটা তার পুরোনো অসুখ। কিন্তু গত কয়েকদিন যাবৎ বেড়েছে। খুব বাজে অবস্থা হয়ে গিয়েছিল। আমরা অনেকগুলো হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছি। কিন্তু কেউ ভর্তি নিচ্ছিল না। এরপর শ্যামলীতে সেন্ট্রাল ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ নামে একটা হাসপাতালে ওখানে নিয়ে যাওয়ার পর কিছু টেস্ট দেয়। রিপোর্ট দেখে ওনারা বলেন হার্টের সমস্যা থেকে এটা হচ্ছে তাই আমার বাবাকে এখানে রাখতে পারবে না। ওনারা পরামর্শ দিল হার্ট ফাউন্ডেশনে নিয়ে যেতে। আমরা গেলাম। কিন্তু ওখানে গিয়ে দেখি অনেক জটিলতা। এটা করতে বলে, ওটা করতে বলে। কি করব বুঝতে পারছিলাম না। তখন তামিম ভাই (তামিম ইকবাল) ও অপারেশন্স ম্যানেজার সাব্বির ভাইকে (সাব্বির খান) ফোন দেই। ফোন দেওয়ার পর তামিম ভাই ওনাদের সঙ্গে কথা বললেন। এরপর ওখানে আব্বুকে ভর্তি করায়। গতকাল রাতে ভর্তি নিয়েছে।’
‘এখানে ভর্তির পরে রিপোর্ট দেখে চিকিৎসা দিচ্ছে। এখানে আব্বুকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। কেননা এখানে করোনা পজিটিভ ও নেগেটিভ রোগি আছে। এখনো আব্বুর কোভিড টেস্ট করানো হয়নি। টেস্ট শেষে রেজাল্ট পেলে বেড বা ক্যাবিনে দেবে।’
এই দিয়ে করোনাকালে আরেকটি মহানুভবতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন দেশ সেরা ব্যাটসম্যান ও ওয়ানডে দলপতি তামিম ইকবাল। কেননা দেশের ক্রান্তিকালে দারুণ প্রশংসনীয় এক একটি উদ্যোগ নিয়ে হাজির হয়েছেন লাল সবুজের এই ওয়ানডে দলপতি। যারা শুরুটা হয়েছিল সেই মার্চেই যখন মহামারি করোনা এদশে সংক্রমণ ছাড়াতে শুরু করেছে। শুরু থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সচেতনতামূলক বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি দিয়ে গেছেন আর্থিক সহযোগিতা। কখনো বা অসহায়দের পাশে দাঁড়িয়েছেন খাদ্য সহযোগিতা দিয়ে।
দেশে করোনার আবির্ভাবের শুরুতে ২৭ ক্রিকেটারের বেতনের অর্ধেক দান করার যে প্রক্রিয়া তার উদ্যোক্তা ছিলেন তামিম।
জুনিয়র অ্যাথলেটিকসে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে সোনাজয়ী সামিউল ইসলাম অর্থাভাবে যখন চরম বিপদে এগিয়ে গিয়েছিলেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
ঢাকার মোহাম্মদপুরের ‘একজন বাংলাদেশ’ নামে পরিচিতি পাওয়া নাফিসা খানের মাধ্যমেও অনেক পরিবারকে খাদ্য সরবরাহ করেছেন তামিম। করোনা মোকাবিলায় ক্রিকেটারদের সংগঠন ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (কোয়াব) তহবিল গঠনের কমিটিতেও কাজ করছেন তিনি। এরপর অর্থ সহায়তা দিলেন ৯১ অসচ্ছল ক্রিকেটারদের। জাতীয় দলের সতীর্থ নাজমুল ইসলাম অপুর সঙ্গে জুটি গড়ে খাবার ও অর্থ সহযোগিতা দিয়েছেন নারায়নগঞ্জের মানুষকে। জেলাটির দুঃস্থ মুক্তিযোদ্ধাদেরও দিয়েছেন আর্থিক সহযোগিতা। এই সপ্তাহের শুরুতে আগে নিজ জেলা চট্টগ্রামের ৫০ কোচকে দিয়েছেন আর্থিক সহযোগিতা।
সবশেষ দুই দিন আগে রংপুরের ১৫০ গর্ভবতী মায়েদের দিয়েছেন আর্থিক সহযোগিতা।