স্টোকসের ধুলো, ধোঁয়া এবং বিশ্বজয়
১৪ জুলাই ২০২০ ২০:৪৮
২০১৯ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালকে ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর ম্যাচ মনে করেন অনেকে। শেষ বল পর্যন্ত কেউ বাজি ধরে বলতে পারেনি, জিতবেন কারা। নির্ধারিত ওভারের খেলা টাই হয়েছে। সুপার ওভারেও দুই দলের রান ছিল সমান। বেশি বাউন্ডারি হাঁকানোর হিসেবে শেষ পর্যন্ত জিতেছে ইংল্যান্ড। নাটকীয়, রোমাঞ্চকর, অভাবনীয় সেই ফাইনালের বর্ষপূর্তি আজ। ১৪ জুলাই ২০১৯ সালে নাটকীয় ফাইনাল জিতে প্রথমবার বিশ্বকাপের স্বপ্নের শিরোপাটা ছুঁয়েছিল ইংল্যান্ড।
ইংলিশদের বিশ্বজয়ের বর্ষপূর্তিতে বহু বিষয় আলোচিত হচ্ছে। দলের অধিনায়ক ইয়ান মর্গান বিশ্বজয়ের বিভিন্ন তথ্য জানিয়েছেন। ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপজয় নিয়ে প্রকাশিত বই ‘মরগানস ম্যান: দ্য ইনসাইড স্টোরি অব ইংল্যান্ডস রাইজ ফ্রম ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড কাপ হিউমিলেশন টু গ্লোরি’তে বিশ্বকাপের বিভিন্ন প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। কঠিন চাপের মুখে বেন স্টোকসের সিগারেট ফুকতে থাকার গল্পও উল্লেখ করা হয়েছে।
ইংল্যান্ডের আজন্ম লালিত বিশ্বকাপ স্বপ্ন পূরণ হওয়ার মূল কারিগর ছিলেন বেন স্টোকস। ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের দিকেই ম্যাচ বেশি সময় হেলে ছিল। ২৪১ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে ৮৪ রানে প্রথম চার ব্যাটসম্যানকে হারায় ইংল্যান্ড। বেন স্টোকস ও জস বাটলারের মধ্যে দারুণ এক জুটি হলেও শেষ ৪৫ রান ছয় উইকেট হারানো ইংল্যান্ড জিততে পারেনি।
শেষ দিকে ইংল্যান্ডের যখন টপাটপ উইকেট পড়ছিল তখন দলকে একাই টেনে নিয়ে গেছেন বেন স্টোকস। শেষ ওভারে লাগত ১৫ রান। ট্রেন্ট বোল্টকে দুই ছক্কা হাঁকিয়ে ম্যাচ টাই করে দেন স্টোকস। পরে সুপার ওভারেও ব্যাটিংয়ে পাঠানো হয় তাকে। নিশ্চয় কঠিন চাপে ছিলেন স্টোকস। ইংলিশ অলরাউন্ডার সেদিন কিভাবে চাপ মুক্তির পথ খুঁজেছিলেন তা উল্লেখ করা হয়েছে ওই বইয়ে। ঘামে ভেজা ধুলোভর্তি শরীরে সেদিন সিগারেটে কয়েকটান দিয়েছিলেন স্টোকস।
বইয়ের দুই লেখক নিক হোল্ট ও স্টিভ জেমস লিখেছেন, ‘সুপার ওভারের উন্মাদনার মাঝে ২৭ হাজার দর্শক ভর্তি স্টেডিয়ামে কোনো শুনশান জায়গা খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন ছিল। বিশেষ করে দর্শকের চোখ, টিভি ক্যামেরা তখন মাঠ, লংরুম এবং ড্রেসিং রুমে সবার ওপর নজর রাখছে। কিন্তু বেন স্টোকসের লর্ডসের অলি–গলি ভালোই চেনা। ইয়ান মর্গান যখন ড্রেসিংরুমে সবাইকে শান্ত করতে ব্যস্ত, কী করা যায় সে পরিকল্পনা করছেন; তখন স্টোকস আস্তে করে বেরিয়ে গেলেন দুদন্ড শান্তির খোঁজে।’
‘পুরো শরীরে ঘাম আর ধুলো। দুই ঘন্টা ২৭ মিনিট ধরে অবিশ্বাস্য চাপে ব্যাট করেছেন। স্টোকস কী করলেন তখন? ইংল্যান্ডের ড্রেসিংরুমের পেছনে চলে গেলেন। অ্যাটেন্ডেটদের অফিস আর গোসলের জায়গা পার হয়ে চলে গেলেন এক কোনায়। সেখানেই একটি সিগারেট ধরিয়ে নিজেকে শান্ত করলেন।’
এরপর সুপার ওভারে ৩ বল খেলে ৮ রান করেন স্টোকস। ইংল্যান্ডের অপর ব্যাটসম্যান জস বাটলার বাকি তিন বলে তোলেন ৭ রান। সেই ১৫ রানকেই বিশ্বজয়ের পুঁজি করেছিল ইংল্যান্ড।