Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অর্থ? সুযোগ-সুবিধা? ক্রিকেটটা যে মেয়েদের!


৮ মার্চ ২০১৮ ১০:৫০

মোসতাকিম হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

‘অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর’। কথাটা কাজীর গরুর মতোই অনেকটা, কাগজে আছে কিন্তু গোয়ালে নেই। আরও অনেক জায়গার মতো যেমন নেই ক্রিকেটেও। ছেলে ও মেয়েদের বেতনের ব্যবধান ২২ গজে এতোটাই প্রকট, তা নিয়ে তুলনাও একটু হাস্যকর হয়ে যায়। সেটা না হয় একপাশে সরিয়ে রাখলেন, কিন্তু ক্রিকেট-খেলুড়ে অন্য দেশের মেয়েদের সঙ্গে বাংলাদেশের সালমাদের পার্থক্যটাও যখন চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়তে থাকে, সেটা নিয়ে প্রশ্ন আসলে উঠবেই।

বিজ্ঞাপন

সম্প্রতি ভারতের ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) থেকে যে নতুন চুক্তির অঙ্ক প্রকাশ করা হলো, তাতে এই প্রশ্নটা আরও বেশি করেই উচ্চকিত হচ্ছে। বিসিসিআই মেয়েদের সঙ্গে চুক্তির যে নতুন অঙ্ক প্রকাশ করেছে, তাতে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে থাকা মিতালি রাজ, হারমানপ্রিতদের বেতন ১৫ লাখ রূপি থেকে এক ধাক্কায় বেড়ে হয়েছে ৫০ লাখ রূপি। আর সাকিব, তামিমরা বছরে বোর্ডের কাছ থেকে সর্বশেষ চুক্তির পর সাকুল্যে পান ৫০ লাখ টাকা। এমনকি ভারতে ‘বি’ গ্রেডে থাকা নারী ক্রিকেটারদের বেতনও এখন ৩০ লাখ রূপি। আর বাংলাদেশে গত বছরেও সালমা-রুমানারা জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের একটা ম্যাচ খেলার জন্য পেতেন ৬০০ টাকা করে!

ওই সময়ে সেই ঘটনা নিয়ে তোলপাড় কম হয়নি। বিসিবির উইমেন্স উইংয়ের ওই সময়ের চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল ওই সময় দায় চাপিয়েছিলেন স্পন্সরদের অনাগ্রহের ওপর। প্রবল সমালোচনার মুখে বিসিবি অবশ্য কদিন পর ম্যাচ ফি ৪০০ টাকা বাড়িয়ে ১০০০ টাকা করেছিল। কিন্তু বার্ষিক বেতনটা আটকে আছে আগের বৃত্তেই।

বিসিবি অবশ্য মেয়েদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় চুক্তি একটা করেছে। সেখানে শীর্ষ ক্যাটাগরিতে থাকা রুমানাদের মাসিক বেতন ধরা হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। বছরে যেটা হয় ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। হিসেব করলে দেখা যাচ্ছে, ভারতের মেয়েরা বাংলাদেশের মেয়েদের প্রায় ১৮ গুণ বেশি টাকা পাচ্ছেন! বাংলাদেশের মেয়েদের অবশ্য আরও দুইটি ক্যাটাগরি আছে। ‘বি’ ক্যাটাগরিতে মেয়েরা মাসে পান ২০ হাজার টাকা, আর ক্যাটাগরি ‘সি’ তে পান ১০ হাজার টাকা।

বিজ্ঞাপন

অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটের সাথে তুলনা করলে আপনার চোখ অবশ্য কপালে উঠে যেতে পারে। অস্ট্রেলিয়া মেয়েদের ক্রিকেটে ভর্তুকি দিয়েও বৈষম্য দূর করার ক্ষেত্রে সবসময় সামনে থেকেই পথ দেখিয়েছে। গত বছর যখন ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে পেশাদার ক্রিকেটারদের কষাকষিতে বাংলাদেশ সফরই সংশয়ে পড়ে যাচ্ছিল, লভ্যাংশ ভাগাভাগিতে মেয়েদেরও রাখা হয়েছিল তখন। অনেক জলঘোলার পর ওই চুক্তি হয়েছে, মেয়েদের বেতনটা এর পর বেড়ছে প্রায় ১২৫ শতাংশ। নতুন চুক্তির আগে সর্বোচ্চ বেতন ছিল বছরে ৭৯ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার, এখন সেটা বেড়ে হয়েছে বছরে ১ লাখ ৭৯ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার। বাংলাদেশি টাকায় অঙ্কটা মাথা ঘুরিয়ে দিতে পারে, বছরে ১ কোটি ১৬ লাখ টাকার কাছাকাছি! বাংলাদেশের মেয়েদের সেটা কত গুণ, তা আপনি নিজেই হিসেব করে নিতে পারবেন। তার বাইরেও অস্ট্রেলিয়ার মেয়েরা ম্যাচপ্রতি টেস্টের জন্যই পান ১ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার। আর ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টিতে সেটা ৭০০ অস্ট্রেলিয়ান ডলার।

মেয়েদের ক্রিকেটে পেশাদারি কাঠামো আনার ক্ষেত্রে সবার চেয়ে এগিয়ে ছিল অবশ্য ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেই ২০১০ সালে প্রথম মেয়েদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় চুক্তি করে বোর্ড, এক বছরে সর্বোচ্চ তারা পান ২৫ লাখ টাকা। তবে আর্থিক প্রণোদনার ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের পরেই আছে ইংল্যান্ডের মেয়েরা, বাংলাদেশি মুদ্রায় বছরে তাদের চুক্তিভুক্ত খেলোয়াড়েরা পান ৫২ লাখ টাকা। এমনকি পাকিস্তানের মেয়েদের বেতনও সালমাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে। বাংলাদেশি মুদ্রায় তাদের ক্যাটাগরি ‘এ’ তে থাকা ক্রিকেটাররা মাসে পান ৮০ হাজার টাকা, সালমাদের প্রায় তিনগুণেরও কাছাকাছি। বছরে যা প্রায় ৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা।

অন্য দেশের মেয়েদের সঙ্গে বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটারদের এতোটা বৈষম্য কেন? এ ব্যাপারে সারাবাংলার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছিল বিসিবি ওমেন্স উইংয়ের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলের সঙ্গে। তিনি পৃষ্ঠপোষকদের অনাগ্রহকেই এজন্য দায়ী করলেন, ‘দেখুন, মেয়েদের ক্রিকেটে অনেক স্পন্সরই আসতে চায় না। যারা আসবে, তাদের বাণিজ্যিক দিকটাও তো দেখতে হবে। আমরা চেষ্টা করছি মেয়েদের পারফরম্যান্স যাতে আরও ভালো হয়। আশা করি, সেক্ষেত্রে আমাদের জন্য স্পন্সর জোগাড় করা কঠিন হবে না।’

কিন্তু অন্য বোর্ড থেকে নারীদের জন্য আলাদা করে ভর্তুকি দিয়ে তাদের বেতন বাড়ানো হয়েছে, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সেটা হচ্ছে না। শফিউল আলম অবশ্য কদিন আগেই স্বীকার করেছিলেন, মেয়েদের সম্মানীটা আরও বেশি সম্মানজনক হওয়া উচিত। এবারো তিনি বললেন, এ ব্যাপারে খুব শিগগির বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের সঙ্গে বসবেন। সেখানেই একটা সিদ্ধান্ত আসতে পারে, এমন আভাস দিয়েছেন।

শুধু বেতন-ভাতা নয়, মাঠের খেলায়ও যেন মেয়েদের প্রতি অবহেলাটা একটু বেশি করেই চোখে লাগছে। সর্বশেষ গত বছর শ্রীলঙ্কার মাটিতে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে মাঠে নেমেছিলেন রুমানারা। শফিউল আলম অবশ্য কদিন আগেই বলেছেন, এই বছরের জুন থেকে ছয় মাসে পাঁচটি সফর আছে মেয়েদের। মেয়েদের দলের নতুন কোচ আনারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু বেতন বাড়ানো, আরও বেশি সিরিজের প্রতিশ্রুতি কতটা রাখা হবে তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়। ক্রিকেটটা যে মেয়েদের!

সারাবাংলা/এএম/এমআরপি

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

কানপুরে প্রথম দিনে বৃষ্টির দাপট
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৬:৩৫

সম্পর্কিত খবর