Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

তথ্য গোপন করায় ম্যানসিটির কড়া সমালোচনা ক্রীড়া আদালতের


২৯ জুলাই ২০২০ ১৭:১৭

আর্থিক স্বচ্ছতার ধারা (ফাইন্যান্সিয়াল ফেয়ার প্লে, এফএফপি) ভঙ্গ ও ইউরোপিয়ান লিগের (উয়েফা) গর্ভনিং বডির প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপনের অভিযোগে দুই বছরের জন্য ইউরোপের সর্বোচ্চ মর্যাদার টুর্নামেন্ট উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে নিষিদ্ধ হয়েছিল ম্যানচেস্টার সিটি। আর এর বিরুদ্ধে ‘কোর্ট অব অ্যারবিট্রেশন ফর স্পোর্টস’এ আপিল করে ম্যানচেস্টার সিটি। গত ১৩ জুলাই ম্যান সিটির করা আপিলের রায় প্রকাশিত হয়। যেখানে তাদের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার নির্দেশ দেয় ক্রীড়া আদালত-সিএএস। অর্থাৎ সামনের মৌসুম থেকেই সাধারণভাবেই চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলতে পারবে সিটি।

বিজ্ঞাপন

তবে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেও উয়েফার তদন্তে তথ্য প্রদানে গাফিলতি করায় এবং সর্বোচ্চ ফুটবল সংস্থার প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করার কারণে ম্যানচেস্টার সিটির কড়া সমালোচনা করেছেন ‘কোর্ট অব অ্যারবিট্রেশন ফর স্পোর্টস’। অবশ্য এর আগে প্রকাশিত রায়ে কেবল নিষেধাজ্ঞায় কমেনি সিটিজেনদের, সেই সঙ্গে ৩০ মিলিয়ন ইউরোর জরিমানাও কমে ১০ মিলিয়নে নেমে এসেছে। তবে প্রশ্ন জাগতে পারে সিটি যদি কোনো অপরাধই না করে থাকে তবে জরিমানা কিসের?

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন: সিটি বাঁচলেও সেবার নিষেধাজ্ঞায় পুড়েছিল এসি মিলান

এমন সকল প্রশ্নের উত্তর অবশেষে মিলেছে কোর্ট অফ অ্যারবিট্রেশন ফর স্পোর্টসের (সিএএস) প্রকাশিত ৯৩ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত রায়ে। মূলত উয়েফার ক্লাব ফাইনান্সিয়াল কন্ট্রোল বডিকে (সিএফসিবি) তদন্তকাজে অসহযোগিতা করার কারণে সিটিজেনদের জরিমানার কিছু অংশ বহাল রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে আদালত। একইসঙ্গে রায়ে তদন্তে অসহযোগিতার জন্য সিটির কড়া সমালোচনাও করেছেন বিচারকরা। সিএএসের ভাষায়, ‘ভয়ংকর অবমাননা’ করা হয়েছে।

প্রথমে প্রকাশিত রায়ে সিএএস এক বিবৃতিতে জানায়, ‘বিজ্ঞাপনদাতাদের থেকে প্রাপ্ত অর্থের হিসাবে কোনো গণ্ডগোল পাওয়া যায়নি। সিটির বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলো কোনো নিয়ম ভাঙেনি। যেহেতু কোনো ধরনের নিয়ম ভাঙার প্রমাণ পাওয়া যায়নি তাই ম্যানচেস্টার সিটির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়াও অনুচিত। তবে যেকোনো অনুসন্ধানে উয়েফাকে সাহায্য করা উচিৎ ছিল সিটির, কিন্তু তা করতে ব্যর্থ হওয়ায় তাদের জরিমানা করা অর্থের এক তৃতীয়াংশ প্রদান করতে হবে উয়েফার কাছে।’

সিটির বেশকিছু ই-মেইল ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর উয়েফার তদন্তকারীরা সেগুলো পর্যালোচনা করে বিজ্ঞাপনদাতাদের থেকে ক্লাবটি আয় বাড়িয়ে দেখিয়েছে বলে নিশ্চিত হয়। এরপর সিটির কাছ থেকে এই বিষয়ে বিভিন্ন নথিপত্র আহবান করে ইউরোপিয়ান ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। তবে সিটি তখন ইউরোপের ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থাকে সব তথ্য দিয়ে সাহায্য করেনি। যাতে করে উয়েফা সিটিকে চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেয় এবং জরিমানা করে।

এফএফপি সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদনে উয়েফার বক্তব্য— ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ম্যানচেস্টার সিটি উয়েফার আর্থিক স্বচ্ছতার ধারা ভেঙেছিল। তারা ক্লাবের আয়ের ঠিকঠাক হিসেব দেয়নি। তবে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে উয়েফার প্রধান তদন্ত কর্মকর্তা অনুসন্ধান শুরুর আগেই সিটিজেনদের ‘দোষী’ বলে উল্লেখ করেন এবং জানান, এর জন্য তাদের শাস্তি পেতে হবে। তবে তদন্ত শুরুর আগেই তদন্ত কর্মকর্তার বক্তব্যের জের ধরে সিটিজেনরা বলছেন, সঠিক তদন্ত ছাড়াই পূর্বপরিকল্পনা থেকে তাদের শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।

উয়েফার যে আর্থিক নীতি মূলত ফিনান্সিয়্যাল ফেয়ার প্লে বা এফএফপি নামে পরিচিত। ২০১১ সাল থেকে এই নীতি চালু হয়েছে। দলবদলের বাজারে কোনো দল যেন অসদুপায়ে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করতে না পারে ,সেটা দেখভাল করাই এ নীতির উদ্দেশ্য। এবং একইসঙ্গে ক্লাবের বিজ্ঞাপনদাতাদের অর্থ সঠিকভাবে হিসাব করে দেখানো হচ্ছে কি না,  তা নিয়েও কাজ করে এফএফপি।

রায় ঘোষণার পর ম্যান সিটি কোচ পেপ গার্দিওলা

দুই বছরের নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবেই আপিল করে ম্যানচেস্টার সিটি। উয়েফার কাছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে নিষিদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি জরিমানা গুনতে হলে আন্তর্জাতিক খেলাধুলাভিত্তিক সর্বোচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হয় সিটিজেনরা। নিজেদের নির্দোষ দাবি করে উয়েফাকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়। পাঁচ মাস পর সেই আপিলের রায় অবশেষে প্রকাশ পায়।

আপিলের শুনানির আগে ম্যানচেস্টার সিটির স্প্যানিশ কোচ পেপ গার্দিওলা জানিয়েছিলেন তিনি এ নিয়ে চিন্তিত। তিনি মনে জানিয়েছিলেন তার ক্লাব সম্পূর্ণ নির্দোষ। তিনি এ-ও জানিয়েছিলেন যে, তার দল আগামী মৌসুমে অবশ্যই চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলবে।

গার্দিওলা বলেছিলেন, ‘আমরা প্রস্তুত। আমি অনেক আত্মবিশ্বাসী এবং আমি বিশ্বাস করি যে আমরা অবশ্যই চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলব। কারণ আমরা মাঠে থাকতে চাই আরও অনেক বছর। আমি জানি আগামি ১৩ জুলাই আমরা সব জানতে পারব। কিন্তু তারপরেও আমি আশা করি— ক্লাব, ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত কর্মী ও খেলোয়াড়সহ সকল কোচিং স্টাফদের জন্য মঙ্গলকর রায়ই আসবে।’

অবশেষে সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হলো এবং আগামী মৌসুমেও চ্যাম্পিয়নস লিগে বহাল তবিয়তে খেলবে ম্যানচস্টার সিটি।

এদিকে সিটির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার আদেশ বহাল রাখতে অনুরোধ করে সিএএসের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ৯টি প্রিমিয়ার লিগ ক্লাব চিঠি দিয়েছিল বলে জানিয়েছে সিএএস। ক্লাবগুলো হচ্ছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, আর্সেনাল, চেলসি, লিভারপুল, টটেনহাম, উলভস, বার্নলি, নিউক্যাসল ইউনাইটেড এবং লেস্টার সিটি।

উয়েফার নিষেদ্ধাজ্ঞা কড়া সমালোচনা ক্রীড়া আদালত (সিএএস) ম্যানচেস্টার সিটি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর