Wednesday 11 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ফেভারিটদের বিষাদময় রাত


৮ আগস্ট ২০২০ ০৭:৫৬

উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগকে যদি একটা রাজ্য ধরা হয় তবে রিয়াল মাদ্রিদ তার শাসক। ক্লাব ফুটবলের সবচেয়ে মর্যাদার আসরটিতে ১৩ বার শিরোপা জিতেছে মাদ্রিদের ক্লাবটি। ফাইনাল খেলেছে মোট ১৬ বার। শিরোপা সংখ্যায় দুই নম্বরে থাকা এসি মিলানের শিরোপা রিয়ারের প্রায় অর্ধেক, ৭টি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে জুভেন্টাসের অর্জনও কম নয়। দু’বার শিরোপা জিতলেও ইতালিয়ান জায়ান্টরা ফাইনাল খেলেছে মোট ৯ বার। কাল এক রাতেই কাটা পড়ল দু’দলই।

শুক্রবার (৭ আগস্ট) রাতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ষোলো থেকেই বিদায় নিশ্চিত হয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ ও জুভেন্টাসের। এমন দু’দুলের কাছে পড়াজিত হয়েছে রিয়াল-জুভেন্টাস যারা কিনা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল পর্যন্ত উঠতে পারেনি কখনোই।

ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে কাল ২-১ গোলে হেরেছে রিয়াল মাদ্রিদ। নিজেদের মাঠে প্রথম লেগের লড়াইয়েও একই ব্যবধানে হেরেছিল জিনেদিন জিদানের দল। যাতে দুই লেগ মিলিয়ে ৪-২ ব্যবধানের হারে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে ছিটকে পড়েছে টুর্নামেন্টির সবচেয়ে সফল দল রিয়াল। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদের জুভেন্টাস অবশ্য হারেনি। রোনালদোর জোড়া গোলে কাল ঘরের মাঠে ২-১ গোলে জিতেছে তুড়িনের বুড়িরা। কিন্তু প্রথম লেগে মহা-গুরুত্বপূর্ণ একটা গোল পেয়েছিল অলিম্পিক লিও। ফলে দুই লেগ মিলিয়ে ২-২ গোলের ড্র হলেও অ্যাওয়ে গোলের সুবাদে কোয়ার্টারের টিকিট পেয়েছে অলিম্পিক লিও, বাদ পড়েছে রোনালদোর জুভেন্টাস।

সমর্থকরা নিশ্চয় এসব মানতে চাইবেন না! প্রথম লেগে এক গোলে পিছিয়ে থাকলেও রিয়াল মাদ্রিদ সমর্থকরা আত্মবিশ্বাসীই ছিলেন। লকডাউনে যে দুর্দান্ত ফুটবলই খেলছিলেন জিদানের ছাত্ররা। বার্সেলোনার চেয়ে দুই পয়েন্ট পিছিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত লিগ জিতল রিয়াল। সিটির মাঠে কাল সেই ধারাটা অব্যাহত রাখতে পারেনি মাদ্রিদের ক্লাবটি। সার্জিও রামোস ছিলেন না বলেই হয়তো!

লাল কার্ডের খড়গে কাল খেলতে পারেননি রিয়াল মাদ্রিদ অধিনায়ক। তার জায়গায় খেলতে নেমেছিলেন রাফায়েল ভারানে। রিয়াল দুটি গোলই খেয়েছে তার ভুলে। ফরাসি ডিফেন্ডার প্রথম ভুলটা করলেন ম্যাচর নবম মিনিটেই। ডি-বক্সের মধ্যেই বল হারান ভারানে। তার কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়ে রাহিম স্টার্লিংকে পাস বাড়ান গ্যাব্রিয়েল জেসুস। স্টার্লিংয়ের সহজ গোলে ১-০ তে এগিয়ে যায় ম্যানসিটি।

২১ মিনিটে বেনজেমার লম্বা শট কর্নারের বিনিময়ে আটকে দেন সিটি গোলরক্ষক এদারসন। তবে মিনিট সাতেক পর এদারসনকে ঠিকই পরাজিত করেছেন বেনজেমা। রদ্রিগোর ক্রসে মাথা ছুঁইয়ে রিয়াল মাদ্রিদকে সমতায় ফেরান ফর্মে থাকা বেনজেমা।

৪২ মিনিটে সিটির ফিল ফোডেনের দুর্দান্ত এক শট অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছে। প্রথমার্ধে আর গোল হয়নি। দ্বিতীয়ার্ধে রিয়ালের ওপর চাপ বাড়ানোর ছক কষেন সিটি কোচ পেপ গার্দিওয়ালা। একের পর এক আক্রমণে রিয়ালকে ব্যস্ত রাখে স্বাগতিকরা। ৪৮ মিনিটে থিবো কোর্তোয়ার প্রচেষ্টায় গোল খায়নি রিয়াল। কিছুক্ষণ পর রিয়ালকে আবারও বাঁচান বেলজিয়াম গোলরক্ষক। ডি ব্রুইনের নেওয়া শট ফিরিয়ে দেন তিনি।

৬৭ মিনিটে সিটির গ্যাব্রিয়েল জেসুসের শট হাত ছুঁয়ে বারের ওপর দিয়ে পাঠিয়ে দেন কোর্তোয়া। ৭০ মিনিটে আর পারেননি। এবারও ভুলটা সেই ভারানের। মাঝমাঠ থেকে উড়ে আসা বলে হেড করে বিপদমুক্ত করতে চেয়েছিলেন, পারেননি ফরাসি ডিফেন্ডার। দ্বিতীয়ধাপে হেড করে বল কোর্তোয়াকে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার দুর্বল হেডে বল কোর্তোয়ার কাছে পৌঁছার আগেই আলতো টোকায় গোল করেন গ্যাব্রিয়েল জেসুস। বহু চেষ্টা করেও এরপর আর গোল পায়নি রিয়াল মাদ্রিদ। শেষ পর্যন্ত ২-১ গোলের হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে জিদানের দলকে।

অপর ম্যাচে জুভেন্টাসও গোল খেয়ে বসেছিল ম্যাচের শুরুতে। ৯ মিনিটে রেফারির ভুলে গোল খেতে হয়েছে ইতালির ক্লাবটিকে। ডি-বক্সের ভেতরে জুভেন্টাসের বেন্টাকুর পা সামান্য স্পর্শ করে পড়ে যান অলিম্পিক লিওর আউয়ার হিলে। তবুও পেনাল্টি ডেকে বসেন রেফারি। যাতে ১-০ তে পিছিয়ে পরে জুভেন্টাস। তাতেই কাজটা কঠিন হয়ে পড়ে রোনালদোদের। অ্যাওয়ে গোলের হিসেবে তখন তিন গোলের ব্যবধানে জিততে হতো জুভেন্টাসকে। দুর্দান্ত খেলেও পারেননি রোনালদো।

১৭ মিনিটে সমতায় ফিরতে পারত জুভেন্টাস। ফেডেরিকো বার্নার্ডেস্কি যখন শট নিয়েছিলেন তখন গোলরক্ষকও গোলবারের নিচে ছিলেন না। তবুও গোল হয়নি, গোললাইন থেকে বল ক্লিয়ার করেছেন ফার্নান্দো মার্কল। পরের মিনিটে রোনালদোর হেড বারের ওপর দিয়ে চলে যায়। ৩৯ মিনিটে রোনালদোর দুর্দান্ত এক ফ্রি-কিক অসম্ভব ক্ষীপ্রতায় ঠেকিয়ে দেন লিওর গোলরক্ষক। ৪০ মিনিটে পেনাল্টি গোলে সমতায় ফেরে জুভেন্টাস।

আরেকটি ফ্রি-কিক পেলে রোনালদোর শট ডি-বক্সে প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারের হাতে লেগে যায়। পেনাল্টি থেকে গোল করতে ভুল করেননি রোনালদো। ৬০ মিনিটে অচমকা এক শটে রোনালদো আরেকটা দুর্দান্ত গোল করলে কোয়ার্টারের আশা ভালোভাবেই জেগে উঠে জুভেন্টাসের। কিন্তু ভাগ্যদেবীকে পায়ে পায়নি ইতালির ক্লাবটি।

৬৮ মিনিটে রোনালদোর ক্রসে হিগুয়েনের হেড অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছে। ৭৫ মিনিটে গোল করার সুযোগ পেয়েছিলেন রোনালদো নিজেই। কিন্তু তার হেডও সামান্য ওপর দিয়ে বেড়িয়ে যায়। ম্যাচের অস্তিম সময়ে ফ্রি-কিক কাজে লাগাতে পারেননি রোনালদো। যাতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে বিদায়ের হতাশা নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয়েছে ইতালির শীর্ষ ক্লাবটিকে।

উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো জুভেন্টাস রিয়াল মাদ্রিদ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর