মিরাজ বদলে গেলেন যেভাবে
৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ২০:০৬
একটা সময় ‘আগামীর সাকিব’ মনে করা হতো মেহেদি হাসান মিরাজকে। ডানহাতি এই স্পিনিং অলরাউন্ডারকে জাতীয় দলের জাতীয় দলের পরবর্তী অধিনায়ক হিসেবে গড়ে তোলার বহু চেষ্টাও করা হয়েছে। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তার নেতৃত্বে যুব বিশ্বকাপও খেলেছে বাংলাদেশ। তাকে ব্যাটিং, বোলিং দুই বিভাগেই দারুণ সম্ভাবনাময় মনে করা হতো বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকেই। কিন্তু জাতীয় দলে এসে ব্যাটিংটা যেন ভুলতে বসলেন মিরাজ!
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টের আগে জাতীয় দলের হয়ে তিন সংস্করণ মিলিয়ে ৮১ ম্যাচ খেলে ফেলেছেন মিরাজ। তাতে মিরাজের হাফ সেঞ্চুরি ছিল মাত্র ৩টি! সেঞ্চুরি তো নেই-ই। তাকে বোলার হিসেবেই খেলানো হতো দলে। সেই মিরাজ চট্টগ্রামে আজ বাতিমাত করে দেখালেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্পিন ও পেস বাঁধা ডিঙিয়ে দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি করেছেন ডানহাতি ক্রিকেটার। তাতে চট্টগ্রামে বাংলাদেশও বেশ শক্ত অবস্থানে। ম্যাচ শেষে এই সাফল্যের রহস্য জানাচ্ছিলেন মিরাজ।
জানালেন বাংলাদেশ দলের তিন সিনিয়র ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম ও সাকিব আল হাসানের কাছ থেকে পেয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরামর্শ। সে হিসেবে এগিয়েই পেয়েছেন ক্যারিয়ার সেরা এই সাফল্য।
বৃহস্পতিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) মিরাজ সংবাদমধ্যমকে বলছিলেন, ‘আমি যখন সেদিন নেটে ব্যাটিং করছিলাম তখন তামিম ভাই আমাকে ২-১টা পরামর্শ দিচ্ছিলেন। তার আগে মুশফিক ভাই অনেক পরামর্শ দিয়েছিলেন। উনি (মুশফিক) যখন প্র্যাকটিসে ব্যাটিংয়ে আসতেন, আমাকেও নিয়ে আসতেন। উনিও ব্যাটিং করতেন, আমাকেও ব্যাটিং করাতেন। লাস্ট এক সপ্তাহ আগেও আমি তার সাথে ব্যাটিং নিয়ে অনেক কাজ করেছি।’
মিরাজ বলেন, ‘তামিম ভাই সেদিন আমাকে একটা পরামর্শ দিয়েছেন, জোরে বলগুলো কীভাবে খেলতে হবে। শরীরের দিকে আসা বলগুলো কীভাবে খেলতে হবে। তামিম ভাই শুধু একটা কথা বলেছেন যে, শরীরের দিকে আসা বলগুলো সোজা রাখার জন্য, এটা যেন না ঘুরিয়ে দেই। আজকে এটা এপ্লাই করেছি। শ্যানন গ্যাব্রিয়েল যখন আমাকে শরীর বরাবল বল করেছে, যতটা সম্ভব সোজা রাখতে পেরেছি এবং লিভ করে দিয়েছি। এক সপ্তাহ আগে মুশফিক ভাইয়ের সঙ্গে যে ট্রেনিং করেছি, তখন মুশফিক ভাই একটা কথা বলেছেন যে, সোজা খেলতে হবে এবং বাইরের বলে যেন খোঁচা না দেই, এটা যেন লিভ করে দেই। পাশাপাশি সবসময় যেন মনোযোগ ধরে রাখি এবং বল টু বল খেলার চেষ্টা। দুজনের পরামর্শই অনেক কাজে লেগেছে।’
আজ মিরাজ আট নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে উইকেটে গিয়ে সঙ্গী হিসেবে পেয়েছিলেন সাকিব আল হাসানকে। জানালেন সাকিবের কাছ থেকেও পরামর্শ পেয়েছিলেন তখন, ‘সাকিব ভাইকে জিজ্ঞেস করছিলাম যে শুরুর নার্ভাসনেস কিভাবে কাটিয়ে উঠতে পারব।সাকিব ভাই একটা কথা বলেছেন নরমাল ক্রিকেট খেলতে এবং কনফিডেন্ট থাকতে।’
‘যেমন মাঝখানে হয়তো আমি নিজের প্রেশার রিলিজ করতে একটা স্লগ সুইপ চেষ্টা করব, তখন সাকিব ভাই আমাকে বলেন এখানে স্লগ সুইপের চেয়ে প্যাডল সুইপ করলে ভালো। তখন আমার মাথায় চিন্তাটা কাজে লেগেছে যে, আমি যদি স্লগ সুইপের বদলে প্যাডল সুইপ খেলি তাহলে হয়তো ভালো হবে, আউট হওয়ার চান্স কম থাকবে। এসব ছোট ছোট জিনিস অনেক গুরুত্বপূর্ণ, যা আমাকে হয়তো সাহস দিয়েছে। মাঠে নামার আগে মুশফিক ভাই দুই-একটা কথা বলেছেন, এ উইকেটে অনেক সুযোগ আছে, ভালো কিছু যেমন ৭০ রানে নটআউট থাকতে পারবি এসব বলেছেন তিনি। এ জিনিসগুলো যখন ড্রেসিংরুমে সিনিয়র প্লেয়াররা যখন ব্যাকআপ করে জুনিয়র প্লেয়ারকে, তখন কিন্তু আমাদের বুক অনেক বড় হয়ে যায় এবং ভালো করতে নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করা যায়।’
টেস্ট সিরিজ তামিম ইকবাল বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ মেহেদি হাসান মিরাজ সাকিব আল হাসান