রোনালদোর গোল-অ্যাসিস্ট, তবু জার্মানিতে বিধ্বস্ত পর্তুগাল
১৯ জুন ২০২১ ২৩:৫৪ | আপডেট: ২০ জুন ২০২১ ০৮:৫৪
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর গোলে জার্মানির বিপক্ষে লিড নিয়েই বড় ভুল করে ফেলল পর্তুগাল। তবে এরপরে মাত্র চার মিনিটের ব্যবধানে দুটি আত্মঘাতী গোলে পিছিয়ে পড়ে পর্তুগাল। জার্মানদের হাই প্রেসের কোনো উত্তরই যেন ছিল না পর্তুগিজদের সামনে। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই কাই হাভার্টজ ও রবিন গোসেন্সের গোলে বড় ব্যবধানের জয়ের দিকেই এগোচ্ছিল জার্মানরা। এরপর রোনালদোর অ্যাসিস্ট থেকে ডিয়েগো জোটা গোল করে ম্যাচে ফেরার ইঙ্গিত দিলেও শেষ পর্যন্ত জার্মানদের কাছে ৪-২ গোলের ব্যবধানে বিধ্বস্ত হয় পর্তুগাল।
অ্যালিয়েঞ্জ অ্যারেনায় ম্যাচের শুরু থেকেই হাই প্রেসে খেলতে শুরু করে জার্মানি। যার ফল মেলে মাত্র পাঁচ মিনিটের মাথাতেই। কিমিচের ভাসানো ক্রসে ভলিতে বল জালে জড়িয়ে জার্মানদের লিড এনে দেন গোসেন্স। তবে ভিএআরের মাধ্যমে রেফারি তা অফসাইডের কারণে বাতিল করলে রক্ষা পায় পর্তুগাল।
ম্যাচের ১৫তম মিনিটে প্রতি-আক্রমণে বার্নার্দো সিলভার হাওয়ায় ভাসানো বল বুক দিয়ে নামিয়ে এনে নিয়ন্ত্রণ করে ম্যানুয়েল নয়্যারের সঙ্গে ওয়ান-অন-ওয়ান পরিস্থিতি তৈরি করেন ডিয়েগো জোটা। তবে সেখান থেকে ডানে ফাঁকায় থাকা রোনালদোকে বল বাড়িয়ে দেন আর টোকা দিয়ে বল জালে জড়িয়ে পর্তুগিজদের ১-০ গোলের ব্যবধানে এগিয়ে নেন রোনালদো।
আগের ম্যাচে দুটি রেকর্ড গড়া রোনালদো এবার গড়লেন আরেক কীর্তি। মেজর টুর্নামেন্টে (বিশ্বকাপ ও ইউরো মিলে) ইউরোপিয়ান খেলোয়াড়দের সর্বোচ্চ গোলের তালিকায় ১৯ গোল নিয়ে বসলেন শীর্ষে, জার্মানির সাবেক স্ট্রাইকার মিরোস্লাভ ক্লোসার পাশে।
এরপরেই যেন তেঁতে ওঠে জার্মানি। একের পর এক আক্রমণে পর্তুগালকে দম ফেলার সময়ও দিচ্ছিল না জোয়াকিম লো’র শিষ্যরা। খেলার সময় আধা ঘণ্টা পেরুতে না পেরুতেই জার্মানদের হাই প্রেসিংয়ের সামনে ভেঙে পড়ল পর্তুগিজ ডিফেন্স। ম্যাচের ৩৫তম মিনিটে ডান দিক থেকে দূর পোস্টের দিকে ক্রস ভাসান কিমিচ। ডি-বক্সের বাইরে বল পেয়ে ছয় গজের ভেতর ক্রস করেন গোসেন্স। তাঁর বাড়ানো বলে পা ছোঁয়াতে যাবেন কাই হাভার্টজ, তবে তিনি পা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হলেও রুবেন ডিয়াজের পায়ে লেগে বল জালে জড়ায়। আর তাঁর আত্মঘাতী গোলে ম্যাচে ১-১ গোলে সমতায় ফেরে জার্মানরা।
এর মাত্র চার মিনিট পরে আবারও আক্রমণে জার্মানরা। পর্তুগিজ রক্ষণ নিয়ে বেশকিছুক্ষণ ছেলে খেলায় মাতে মুলার, কিমিচ, গোসেন্সরা। পরে ডান দিক থেকে কিমিচের নেওয়া ক্রস বিপদমুক্ত করতে গিয়ে নিজেদের জালেই জড়িয়ে ফেলেন রাফায়েল গুয়েরো। প্রথমার্ধ শেষ দিকে ব্যবধান বাড়ানোর মতো আরও কিছু সুযোগ তৈরি করে জার্মানি। কিন্তু শেষ মেষ আর বাড়েনি ব্যবধান।
বিরতি থেকে ফিরেই ৫১তম মিনিটে রবিন গোসেন্সের অ্যাসিস্ট থেকে ব্যবধান ৩-১ করেন হাভার্টজ। বাঁ দিক থেকে গোসেন্সের মাটি কামড়ানো ক্রসে পা বাধিয়েন বল জালে জড়ান হাভার্টজ। এর মাত্র মিনিট ৯ বাদেই জার্মানিকে ৪-১ গোলের লিড এনে দেন গোটা ম্যাচে দুর্দান্ত পারফর্ম করা রবিন গোসেন্স।
৬০তম মিনিটে জশুয়া কিমিচের ক্রস ডি-বক্সের ভেতর ধরতে পারেননি হাভার্টজ, তবে সেখানে পৌঁছে গিয়েছিলেন গোসেন্স। লাফিয়ে উঠে বাঁ দিকের গোলপোস্ট দিয়ে জালে জড়ান গোসেন্স। আর তাতেই ৪-১ ব্যবধানে লিড নেয় জার্মানি। এর আগে হাভার্টজকে দিয়ে এক গোল করিয়েছিলেন গোসেন্স, আর এক আত্মঘাতী গোলটিও এসেছিল তাঁর ক্রস থেকে।
চার গোল হজম করেও ম্যাচে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছিল পর্তুগিজরা। ম্যাচের ৬৭তম মিনিটে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর অ্যাসিস্ট থেকে ডিয়েগো জোটা গোল করলে ব্যবধান ৪-২ করেন। অ্যাক্রোব্যাটিক শটে ডি-বক্সের ভেতর বল রাখেন রোনালদো আর সেখান থেকেই ডান পায়ের শটে বল জালে জড়ান জোটা। তাতেই ব্যবধান কমে ৪-২ হয় পর্তুগালের।
ম্যাচের ৭৯তম মিনিটে তৃতীয় গোলের দেখা প্রায় পেয়ে গিয়েছিল পর্তুগাল তবে এবারে বাধা হয়ে দাঁড়ায় গোলপোস্ট। রেনাতো সানচেজের শক্তিশালী হেডার নয়্যারকে পরাস্ত করতে পারলেও গোলপোস্টে লেগে প্রতিহত হলে আর ম্যাচে গোলের দেখা পাওয়া হয়নি পর্তুগিজদের। শেষ দিকে দুই দলই আরও বেশ কয়েকটি সুযোগ তৈরি করলেও আর কেউই গোলের দেখা পায়নি। আর তাতেই পর্তুগালকে ৪-২ গোলে বিদ্ধস্ত করে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে জার্মানি।
এই জয়ে পর্তুগালের সমান ৩ পয়েন্ট নিয়েও টেবিলের দুইয়ে অবস্থান করছে জার্মানি। চার পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে ফ্রান্স। হাঙ্গেরিকে হারানো পর্তুগাল জার্মানির আছে হেরে গোল ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে তিনে। আর গ্রুপের তলানি আছে হাঙ্গেরি।
সারাবাংলা/এসএস