Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দু’হাত ভরেই পেলেন মেসি

স্পোর্টস ডেস্ক
১১ জুলাই ২০২১ ০৮:৫৮

আর্জেন্টিনার অপেক্ষাটা ২৮ বছরের। লিও মেসির অপেক্ষাটা ততদিনের নয়। ২০০৫ সালে জিতেছেন যুব বিশ্বকাপ। ২০০৮ সালে অলিম্পিক ফুটবলের শিরোপাও উঠেছে হাতে। কিন্তু ওই শেষ। এর মধ্যে বার্সেলোনার সমার্থক হয়ে যাওয়া মেসি একে একে জিতে নিয়েছেন গোটা দশেক লিগ শিরোপা, ইউরোপসেরার তকমাও জিতেছেন চার বার। যে ব্যালন ডি’অর সব ফুটবলারের স্বপ্ন, সেটিকেও ডালভাত বানিয়ে ফেলেছিলেন। শুধু আক্ষেপ ছিল একজায়গাতেই— তর্কাতীতভাবে এই সময়ে সবচেয়ে বড় তারকা এবং তর্কসাপেক্ষে বিশ্বের সেরা ফুটবলার হয়ে ওঠার পরও জাতীয় দলের হয়ে কোনো ট্রফিই নেই মেসির শোকেসে!

বিজ্ঞাপন

শেষ পর্যন্ত ঘুচলো সেই আক্ষেপ। বিশ্বকাপ না হোক, দক্ষিণ আমেরিকার আঞ্চলিক ফুটবল আসর কোপা আমেরিকার শিরোপা জিতল আর্জেন্টিনা। আর গোটা টুর্নামেন্টেই সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে আর্জেন্টিনা ও নিজের হয়ে সেই ট্রফি ঘরে তুললেন মেসিই। ফাইনালে গোল না পেলেও কিংবা ম্যাচের একমাত্র গোলে অ্যাসিস্ট না করতে পারলেও টুর্নামেন্ট ট্রফির পাশাপাশি সর্বোচ্চ গোলদাতা আর সেরা খেলোয়াড়ের ট্রফি দুইটিই উঠেছে মেসির হাতেই। এই কোপা আমেরিকাই ৩৪ বছর বয়সী মেসির আঞ্চলিক প্রতিযোগিতায় শেষ টুর্নামেন্ট ধরে নিয়ে বলা যায়, দু’হাত ভরেই তাকে বিদায় দিলো লাতিনের সর্বোচ্চ আসর।

বিজ্ঞাপন

আর্জেন্টিনার আর মেসির শিরোপার এই আক্ষেপ গত একযুগে সমার্থকে পরিণত হয়েছিল। ১৯৯৩ সালে শেষবার কোপা আমেরিকা জিতেছিল আর্জেন্টিনা। এরপর আর কোনো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের শিরোপা ঘরে তুলতে পারেনি দলটি। এর মধ্যে তিন তিন বার কোপা আমেরিকার ফাইনাল খেলার সুযোগ হয়েছে। কিন্তু শিরোপা আসেনি। ২০১৪ সালের বিশ্বকাপের মঞ্চেও ফাইনালে উঠেছিল মেসি বাহিনী। কিন্তু নির্ধারিত ৯০ মিনিটের পর অতিরিক্ত ৩০ মিনিটের শেষের দিকে মারিও গোৎসের গোলে সেই ফাইনালও জিতে নেয় জার্মানি। ফলে ২৮ বছরেও শিরোপা খরা কাটেনি আর্জেন্টিনার।

আরও পড়ুন-

একই দশা মেসিরও। ক্লাব ক্যারিয়ারসহ জাতীয় দলের হয়েও ব্যক্তিগত সবগুলো পুরস্কার সম্ভব, বলতে গেলে সবই জিতেছেন লিও। বার্সেলোনার হয়ে তো ১০ লা লিগার পাশাপাশি চার চ্যাম্পিয়নস লিগ রয়েছে ঝুলিতে। রয়েছে একাধিক কোপা দেল রে, স্প্যানিশ সুপার কাপ, কিংস কাপ। উয়েফা সুপার কাপ এবং ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপেরও একাধিক শিরোপা বার্সেলোনার হয়ে জিতেছেন মেসি।

ব্যক্তিগত পুরস্কারও বলতে গেলে লিও মেসির কোনোটিই বাকি নেই জেতা। ২০১৪ সালে দল রানার-আপ হলেও জিতে নিয়েছেন সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার। ফিফা ব্যালন ডি’অর জিতেছেন ছয় ছয় বার। ইউরোপিয়ান গোল্ডেন শু জিতেছেন ছয় বার। উয়েফার ইউরোপসেরা খেলোয়াড়, পিচিচি ট্রফি— কী নেই মেসির শোকেসে। পেপ গার্দিওলা যুগে জাভি-ইনিয়েস্তাকে সঙ্গে নিয়ে মেসির যে অসামান্য সব অর্জন, সেসব অর্জন তাকে এই সময়ের ফুটবলের সর্বোচ্চ তারকায় পরিণত করেছে, কোনো সন্দেহ নেই। তাকে রীতিমতো ‘ভিনগ্রহের ফুটবলার’ বলে থাকেন ভক্তরা। সে অভিধায় ফুটবলবোদ্ধারাও খুব একটা আপত্তি করেন না। শুধু তাই নয়, কেউ কেউ তো মেসিকে পেলে-ম্যারাডোনার সঙ্গেও তুলনা করেন, কেউ কেউ সর্বকালের সেরা ফুটবলার হিসেবেও মেসির নাম নিতে কুণ্ঠা করেন না।

কিন্তু সেই ‘এলিয়েন মেসি’র সব ব্যক্তিগত প্রাপ্তিতে একমাত্র আক্ষেপ ছিল জাতীয় দলের হয়ে শিরোপা জিততে না পারা। বার বার দলের জন্য সবটুকু ঢেলে দিয়েও কেবল একটি শিরোপার অভাবে তাকে কপালে জুটেছে ‘ক্লাবের বাঘ, জাতীয় দলের বিড়ালে’র তকমা। কোপা আমেরিকাতেই তিন তিন বার ফাইনালে উঠেও শিরোপা গেরো কাটাতে পারেননি। বিশ্বকাপের ফাইনালেও মরণপণ চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। মেসি ভক্তদেরও কেউ কেউ ধরেই নিয়েছিলেন, একটি শিরোপার অনন্ত আক্ষেপ নিয়েই হয়তো ক্যারিয়ার শেষ করতে হবে মেসিকে!

তাদের ভাবনাও অমূলক ছিল না। কারণ এর মধ্যে মেসির বয়সও হয়েছে ৩৪। আগামী বছর অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপটা হয়তো খেলবেন। এখন পর্যন্ত আর্জেন্টিনার যে দল, তাতে বিশ্বকাপ শিরোপার আশা হয়তো দলের ম্যানেজার লিওনেল স্কালোনিও এখন করবেন না। অন্যদিকে এবারের কোপা আমেরিকাই আঞ্চলিক আসরে মেসির শেষ অংশগ্রহণ— এটি বলাই যায়। ফলে এই আসরই বলতে গেলে ছিল মেসির শিরোপা জয়ের শেষ সুযোগ। আর সেই সুযোগটিকেই যে প্রাণপণে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছেন মেসি, সেটি গোটা টুর্নামেন্টেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

প্রথম ম্যাচ থেকেই সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। গোটা টুর্নামেন্টে নিজে করেছেন চারটি গোল। এর মধ্যে ইকুয়েডরের ম্যাচে নেওয়া ফ্রি-কিকের গোলটা তো ফ্রেমে বাঁধিয়ে রাখার মতো। শুধু গোলই তো নয়, অ্যাসিস্টও করেছেন পাঁচটি। গোটা টুর্নামেন্টের প্রতিটি মিনিটেই খেলেছেন। তাই তো সর্বোচ্চ গোল আর সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার মেসি পাচ্ছেন— সেটি ফাইনালের আগেই বলা যাচ্ছিল। শুধু শঙ্কাটা ছিল— ফাইনালের গেরো খুলতে পারবেন কি না মেসি। ম্যাচটি যখন মারাকানায়, আর প্রতিপক্ষ যখন ব্রাজিল এবং সেই ব্রাজিলও যখন দেশের মাটিতে কোনো কোপায় ফাইনালে হারেনি— শঙ্কাটা তাই আরও বড় হয়ে উঠেছিল।

শেষ পর্যন্ত ফাইনালে নিজে একটা অ-মেসি-সুলভ মিস করলেও স্কালোনির আর্জেন্টিনা দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করেছে। সতীর্থদেরও যে মেসিকে অন্তত একটি শিরোপা উপহার দেওয়ার তাড়না ছিল, সেই তাড়নায় ব্রাজিলের সঙ্গে চোখ রাঙিয়েই খেলেছেন ডি মারিয়া, ডি পল, রোমেরো। আগের ম্যাচেই হিরো বনে গিয়ে নব্বইয়ের সার্জিও গয়াকোচিয়ার স্মৃতি ফিরিয়ে আনা এমিলিয়ানো মার্টিনেজও এই ম্যাচে চীনের প্রাচীর হয়ে দাঁড়ালেন। তাই ম্যাচের ২২ মিনিটে ডি পলের থ্রু দলে ডি মারিয়ার অসামান্য ফিনিশিংয়ে এনে দেওয়া একটিমাত্র গোলই কোপার শিরোপার জন্য যথেষ্ট প্রমাণিত হলো।

রেফারির শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গেই তাই আর্জেন্টাইন শিবিরে বুনো উল্লাস। সতীর্থদের কাঁধে তাদের চোখে দেখা সবচেয়ে বড় তারকা— লিওনেল মেসি। আর শুধু তাই না— ট্রফির সঙ্গে সর্বোচ্চ গোলদাতা, সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার দিয়ে মেসিকে দু’হাত ভরেই দিলো এবারের কোপা। এর মধ্য দিয়ে হয়তো সপ্তমবারের মতো ব্যালন ডি’অরও নিশ্চিত করে ফেললেন!

মারাকানার ফাইনালে ডিফেন্স, মিডফিল্ড, অ্যাটাকিং থার্ড— তিন বিভাগেই ব্রাজিলকে পরাস্ত করেছে আর্জেন্টিনা। তাতেই ঘুচলো ২৮ বছরের শিরোপা খরা। মেসির শোকেসেও শেষ পর্যন্ত যুক্ত হলো আন্তর্জাতিক শিরোপা। ফুটবল বিধাতাও শেষ পর্যন্ত খালি হাতে ফেরালেন না সময়ের সেরা সন্তানকে। আর কোনো অর্জন থাকুক না থাকুক, মারাকানায় ম্যাচ শেষে মেসির হাতে কোপার শিরোপার যে ছবি— সেটিই লিও ভক্তরা মানসপটে টাঙিয়ে রাখবেন নিশ্চয়।

সারাবাংলা/টিআর

আর্জেন্টিনা জাতীয় দল কোপা আমেরিকা টপ নিউজ লিওনেল মেসি

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর