Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মুখোমুখি বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া: কার্ডিফ-মিরপুরের স্মৃতি ফিরবে?

স্পোর্টস ডেস্ক
৩ আগস্ট ২০২১ ১২:৫৩

২০০৫ থেকে ২০১৭— কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেন থেকে মিরপুরের শের-ই-বাংলা। অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সুখস্মৃতির ব্যবধান ঠিক এই এক যুগের। ২০০৫ সালে আশরাফুলের দুঃসাহসী ব্যাটিং আর ২০১৭ সালে ব্যাটে-বলে সাকিবের অতিমানবীয় পারফরম্যান্স— তাতেই টাইগারদের দু’টি জয় ধরা দিয়েছিল অজিদের বিপক্ষে— প্রথমটি ওয়ানডেতে, দ্বিতীয়টি টেস্টে।

তবে আইসিসির বিভিন্ন ইভেন্টে চার বার মুখোমুখি হয়েও টি-টোয়েন্টিতে টাইগারদের কোনো জয় নেই। টি-টোয়েন্টিতে সেই আক্ষেপ ঘুচানোর মিশনের আগে কার্ডিফ আর মিরপুরের সেই দুই জয়ের স্মৃতি নিশ্চয় ফিরে আসছে অনেক ক্রিকেটপ্রেমীর মনে। টিম টাইগারও নিশ্চয় সেই দুই স্মৃতি থেকেই অনুপ্রেরণা খুঁজছেন।

বিজ্ঞাপন

আজ মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথমটিতে মাঠে নামছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। সিরিজের সবক’টি ম্যাচই অনুষ্ঠিত হবে মিরপুর শের-ই-বাংলায়। দুই দল এর আগে টেস্ট ও ওয়ানডেতে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেললেও টি-টোয়েন্টিতে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ এই প্রথম। ক্রিকেটের এই ফরম্যাটে দুই দলের আগে যে চার বারের সাক্ষাৎ, তার সবগুলোই আইসিসির কোনো না কোনো ইভেন্টে।

আরও পড়ুন-

বিজ্ঞাপন

২০০৬ সালে ক্রিকেটের সর্বকনিষ্ঠ সংস্কণের যাত্রা শুরুর পর বাংলাদেশ ১০২টি ও অস্ট্রেলিয়া ১৪১টি টি-টোয়েন্টি খেললেও দুই দলের মুখোমুখি হওয়ার ঘটনা মাত্র চারটি। এর কারণ, দুই দলের মধ্যে টি-টোয়েন্টির কোনো দ্বিপাক্ষিক সিরিজ এতদিন ছিল না। এবারে অজিদের বাংলাদেশ সফরে সেই আক্ষেপ ঘুচছে। ১৫ বছরে চার টি-টোয়েন্টিতে মুখোমুখি দুই দল এক সিরিজেই খেলবে পাঁচ ম্যাচ।

বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া মুখোমুখি হওয়ার ঘটনাই অবশ্য বেশ কম। এখন পর্যন্ত ওয়ানডেতে মাত্র ২১ ম্যাচ আর টেস্টে ছয় ম্যাচে মুখোমুখি দুই দল। তাতে জয়ের পাল্লা একেবারেই হেলে রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার দিকে। বাংলাদেশের জয় বলতে ওই ২০০৫ সালের কার্ডিফের সেই ওয়ানডে আর ২০১৭ সালে মিরপুরের সেই টেস্ট।

অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ছয় টেস্টের তিনটিতে ইনিংস ব্যবধানসহ পাঁচ ম্যাচেই হেরে বসা বাংলাদেশের একমাত্র সুখস্মৃতি ২০১৭ সালে শের-ই-বাংলাতে অনুষ্ঠিত টেস্ট। সেবার টাইগারদের নেতৃত্বে ছিলেন মুশফিকুর রহিম, অজিদের নেতৃত্বে স্টিভ স্মিথ। মিরপুরে সাকিব আল হাসানের ৮৪ আর তামিম ইকবালের ৭১ রানে ভর করে প্রথম ইনিংসে ২৬০ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। জবাবে সাকিব আল হাসানের পাঁচটি আর মেহেদি মিরাজে তিন উইকেট তুলে নিলে অজিরা অলআউট হয় মাত্র ২১৭ রানে।

দ্বিতীয় ইনিংসে তামিমের ৭৮ আর মুশফিকের ৪১ রানে ভর করে ২২১ রান তুলতেই অলআউট বাংলাদেশ। তাতেই অজিদের সামনে ২৬৫ রানের লক্ষ্য। মিরপুরের উইকেটে বেশ জমজমাট টেস্টের দেখা মিলেছিল সেবার। ডেভিড ওয়ার্নারের ১১২ রানের ইনিংসে এক সময় মনে হচ্ছিল জয় নিয়েই মাঠ ছাড়বে সফরকারীরা। তবে শেষ দিনে মধ্যাহ্ন বিরতির পর সাকিবের অবিশ্বাস্য বোলিংয়ে ম্যাচ নিজেদের করে নেয় বাংলাদেশ।

ব্যাট হাতে দারুণ প্রথম ইনিংসের পর বল হাতেও প্রথম ইনিংসে সাকিব নিয়েছিলেন পাঁচ উইকেট। আর দ্বিতীয় ইনিংসে ২৮ ওভার বল করে ৮৫ রানের বিনিময়য়ে নেন আরও পাঁচটি উইকেট। তাতেই ইতিহাস রচনা হয় টাইগারদের। প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়াকে সাদা পোশাকে পরাজিত করার গৌরব অর্জন করে ঘরের মাটিতেই।

টেস্টে জয় পেতে ২০১৭ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হলেও রঙিন পোশাকে অর্থাৎ একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয় বাংলাদেশ আদায় করে নিয়েছিল ২০০৫ সালে। ইংল্যান্ডে ত্রিদেশীয় ন্যাটওয়েস্ট সিরিজে মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া। ওই সিরিজেই কার্ডিফের সেই ম্যাচে আশরাফুলের মহাকাব্যিক ব্যাটিংয়ে ধরাশায়ী হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া।

কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেনে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৫ উইকেট হারিয়ে ২৪৯ রান তোলে অস্ট্রেলিয়া। টাইগারদের হয়ে তিনটি উইকেট নেন তাপস বৈশ্য, একটি করে উইকেট নেন মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা ও নাজমুল হোসেন। এর মধ্যে মাশরাফি তার ১০ ওভারে দিয়েছিলেন মাত্র ৩৩ রান। অন্যদিকে কোনো উইকেট না পেলেও ১০ ওভারে ৩১ রান দিয়ে অজিদের রানের চাকা চেপে ধরেছিলেন মোহাম্মদ রফিক।

২৫০ রানের জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই নাফিস ইকবালকে হারায় বাংলাদেশ। দলীয় সংগ্রহ ৫০ পেরোতেই বিদায় নেন তুষার ইমরান। ৭২ রানে জাভেদ ওমর ফিরলে উইকেটে আসেন অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন। আশরাফুলের সঙ্গে জুটি বেঁধে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন দলকে। ইনিংসের ৪৪ ওভারের পঞ্চম বলে হাবিবুল বাশার যখন রান আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরছেন, তখন দলের রান ২০২।

তখনো জয়ের জন্য প্রয়োজন ৩৭ বলে ৪৮ রান। এর ৩ ওভার ১ বল পর দলকে ২২৭ রানে জয়ের পথে রেখে গিলেস্পির বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে বিদায় নেন আশরাফুল। দলের প্রয়োজন ১৭ বলে ২৩ রান। তখনো রান তাড়া করে জেতার অভিজ্ঞতা তেমন না থাকায় শঙ্কা চেপে ধরেছিল। কিন্তু আফতাব আহমেদ আর মোহাম্মদ রফিক পথ হারাতে দেননি। আফতাবের ১৩ বলে ২১ আর রফিকের ৭ বলে ৯ রানের দুই অপরাজিত ইনিংসে প্রথমবারের মতো অজি বধের স্বাদ দেয় টাইগারদের।

টেস্ট ও ওয়ানডেতে অস্ট্রেলিয়া বধ করার আনন্দে টাইগাররা ভাসলেও টি-টোয়েন্টির ১৫ বছরের ইতিহাসে সেই সুযোগ হয়নি বাংলাদেশের। ঘরের মাঠের চেনা কন্ডিশন আর অজি দলে স্টিভ স্মিথ, ডেভিড ওয়ার্নার, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, অ্যারন ফিঞ্চের মতো ব্যাটারদের অনুপস্থিতি টাইগারদের অনুপ্রাণিত করতেই পারে টি-টোয়েন্টিতে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম জয় খুঁজে পেতে।

আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টাতেই সিরিজের প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়া। বাকি ম্যাচগুলো রয়েছে ৪ আগস্ট, ৬ আগস্ট, ৭ আগস্ট ও ৯ আগস্টে। প্রথম ম্যাচের মতো বাকি ম্যাচগুলোও মাঠে গড়াবে সন্ধ্যা ৬টায়। দর্শকদের বহু কাঙ্ক্ষিত ও আলোচিত এ সিরিজের প্রত্যেকটি ম্যাচ বাংলাদেশ ও দেশের বাইরে থেকে লাইভ দেখতে Rabbitholebd Sports Youtube Channel -এ সাবস্ক্রাইব করুন।
সাবস্ক্রাইবের জন্য ক্লিক করুন এই লিংকে র‍্যাবিটহোলবিডি স্পোর্টস

বাংলাদেশ দল

মাহমুদউল্লাহ (অধিনায়ক), মোহাম্মদ নাঈম শেখ, সাকিব আল হাসান, সৌম্য সরকার, আফিফ হোসেন, শামীম হোসেন, নুরুল হাসান সোহান, নাসুম আহমেদ, মেহেদি হাসান,মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন, মোস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদ,শরিফুল ইসলাম, রুবেল হোসেন, মোসাদ্দেক হোসেন, মোহাম্মদ মিঠুন, তাইজুল ইসলাম।

অস্ট্রেলিয়া দল

ম্যাথু ওয়েড (অধিনায়ক ও উইকেটরক্ষক) অ্যাস্টন অ্যাগার, ওয়েস অ্যাগার, জেসন বেহরেনডর্ফ, অ্যালেক্স ক্যারি (উইকেটরক্ষক), ড্যান ক্রিশ্চিয়ান, জশ হ্যাজলউড, মইসেস হেনরিকস, মিচেল মার্শ, বেন ম্যাকডেরমট, রিলে মেরেডিথ, জশ ফিলিপ, মিচেল স্টার্ক, মিচেল সুয়েপসন, অ্যাশটন টার্নার, অ্যান্ড্রু টাই, ও অ্যাডাম জাম্পা।

সারাবাংলা/এসএস/টিআর

ওয়ানডে সিরিজ টি-টোয়েন্টি সিরিজ টেস্ট সিরিজ বাংলাদেশ বনাম অস্ট্রেলিয়া

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর