১ ঘণ্টা আগেই দিনের খেলা শেষ
৪ ডিসেম্বর ২০২১ ১৭:৩২
মিরপুর টেস্টের প্রথম দিনের খেলা মাঠে গড়াল কেবল ৫৭ ওভার। এর মধ্যে চা-বিরতির পর আলোর স্বল্পতায় আর খেলায় মাঠে গড়ায়নি। এতেই শুরুতে তাইজুল ইসলামের ঘূর্ণিতে দুই ওপেনারকে হারানো পাকিস্তানের আজহার আলী এবং বাবর আজমের দৃঢ়তায় দিন শেষ করে ২ উইকেটে ১৬১ রানে।
মিরপুর শের-ই-বাংলায় দ্বিতীয় টেস্টে টস হেরে প্রথমে ফিল্ডিং করতে নামে বাংলাদেশ। টসে হারটা সুখকর হয়েছে বলা চলে বাংলাদেশের জন্য। কেননা মধ্যাহ্ন বিরতি পর্যন্ত পাকিস্তানের দুই উদ্বোধনী ব্যাটারকে ফিরিয়েছেন তাইজুল ইসলাম। তার ঘূর্ণিতেই মধ্যাহ্ন বিরতি পর্যন্ত ৭৮ রান তুলতেই দুই উইকেট হারায় পাকিস্তান।
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দ্বিতীয় মৌসুমে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে শুরু করে বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে চট্টগ্রামে ৮ উইকেটের বিশাল ব্যবধানের হার। সে হার ভুলে মিরপুর টেস্টে ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্য মুমিনুল হকের দল। মিরপুরে শুরুটা করেছে দারুণ।
ইনিংসের শুরু থেকেই দারুণ বল করতে থাকেন দুই পেসার এবাদত হোসেন এবং খালেদ হোসেন। ১০ম ওভারে এসে স্পিনার নিয়ে আসেন মুমিনুল। চোট কাটিয়ে দলে ফেরা সাকিব আল হাসানের হাতে বল তুলে দেন অধিনায়ক। পরের ওভারে অপর প্রান্ত থেকে বলে আসেন তাইজুল ইসলাম।
১৬তম ওভারে বল হাতে আসেন সাকিব আল হাসান। ওই ওভারের ৫ম বলে সাকিবের বলে শট খেলেননি আব্দুল্লাহ শফিক। বল লাগে প্যাডে। আম্পায়ার এলবিডব্লিউর আবেদনে সাড়া না দিলে রিভিউ নেন মুমিনুল হক। ব্যাটার শট না খেলায় বল স্টাম্পে লাগলেই চলতো। কিন্তু বল ট্র্যাকিংয়ে দেখা যায়, বল যেত অফ স্টাম্পের বাইরে দিয়ে। রিভিউয়ে হেরে যায় বাংলাদেশ।
এক প্রান্ত থেকে সাকিব আল হাসান আর অন্য প্রান্ত থেকে তাইজুল ইসলামের বল মোকাবিলা করতে গিয়ে চাপে পড়ে পাকিস্তান। ১৯তম ওভারের৩য় বলে আব্দুল্লাহ শফিককে বোল্ড করেন তাইজুল। এই স্পিনারকে সামনের পায়ে খেলতে গিয়েছিলেন আব্দুল্লাহ শফিক। কিন্তু বলটা একটু ভেতরে ঢোকায় তার ব্যাট ও প্যাডের ফাঁক গলে আঘাত হানে স্টাম্পে। এতেই বোকা বনে যান শফিক। ভাঙে ১১১ বল স্থায়ী ৫৯ রানের জুটি। আউট হওয়ার আগে শফিক করেন ৫০ বলে দুই চার ও এক ছক্কায় ২৫ রান।
এরপর ২১তম ওভারে আবারও তাইজুল ইসলাম আঘাত হানতে পারতেন। শূন্য রানে ফিরতে পারতেন আজহার আলি। কিন্তু তিনি পেলেন বেনিফট অব ডাউট। বাংলাদেশ হারাল আরেকটি রিভিউ। বাঁহাতি স্পিনারকে পা বাড়িয়ে ডিফেন্ড করতে চেয়েছিলেন আজহার। কিন্তু ঠিক মতো পারেননি। ক্যাচের জোরাল আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার। শেষ মুহূর্তে রিভিউ নেন মুমিনুল হক। বল ব্যাট পার হওয়ার মুহূর্তে আল্ট্রা এজে মৃদু স্পাইক দেখা গেছে। আম্পায়ার আউট দিলেও দিতে পারতেন। তবে মাঠের আম্পায়ার আউট না দেওয়াতেই হয়ত দেননি তিনি।
উইকেটের দুই প্রান্ত থেকে সাকিব ও তাইজুল চেপে ধরে পাকিস্তানের রানের চাকা। টানা ১৮ বল কোনো রান নিতে পারেনি পাকিস্তান। দুই প্রান্ত থেকে সৃষ্ট চাপেই শেষ পর্যন্ত আরও এক উইকেট তুলে নিল টাইগাররা। রান নিতে মরিয়া হয়ে তাইজুলকে কাট করতে চেয়েছিলেন আবিদ। বলটা প্রত্যাশিতভাবে টার্ন করেনি। আর তাতেই বলটা স্টাম্পে চলে এসেছে।
পেছন থেকে অনেকক্ষণ ধরেই লিটন দাস তাগিদ দিচ্ছিলেন, মেডেন ওভারের জন্য। তাইজুলের পর সাকিব আল হাসানও নেন মেডেন। তাইজুলের পরের পাঁচটি বলও ডট খেলেন আবিদ। শেষ বলে পিছিয়ে গিয়ে কাট করে আলগা করতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ঠিক মতো খেলতে পারেননি এই ওপেনার। যতটা আশা করেছিলেন ততটা ওঠেনি বল। ব্যাটের কানায় লেগে এলোমেলো করে দেয় স্টাম্প। ৬ চারে ৮১ বলে ৩৯ রান করেন আবিদ। ৭০ রানে ২ উইকেট হারাল পাকিস্তান।
মধ্যাহ্ন বিরতির পর ২য় সেশনে ২৬ ওভারে ৮৩ রান তুলেছে পাকিস্তান। ৬০ রানে অপরাজিত বাবর আজম। ৩৬ রানে অন্য প্রান্ত ধরে রেখেছেন আজহার আলী।
এর আগে অবশ্য দ্বিতীয় সেশনে ১৩ ওভার খেলা শেষে হানা দিয়েছিল বৃষ্টি। পাকিস্তান ৪৪ ওভারে ২ উইকেটে ১২৩ রান তোলার পর বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হয়ে যায়। বৃষ্টির পর মোটামুটি হাত খুলেই খেলা শুরু করেছেন বাবর আজম ও আজহার আলী। বৃষ্টির পর আক্রমণে আসা সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজদের ওপর চড়াও হয়েছিলেন পাকিস্তানি ব্যাটাররা।
২১ মাস পর টেস্টে ফিরে শুরুর দিনটা বাজে কাটছে সৈয়দ খালেদ আহমেদের। বোলিংয়ে খুঁজে পাননি লাইন, লেংথ। এবার ছাড়লেন বাবর আজমের ক্যাচ। সাকিব আল হাসান ছক্কায় ওড়াতে চেয়েছিলেন পাকিস্তান অধিনায়ক। টাইমিং করতে পারেননি তিনি। বলের নিচে যাওয়ার যথেষ্ট সময় পেয়েছিলেন খালেদ। কিন্তু বলের ফ্লাইট বুঝতে পারেননি তিনি। শেষ সময়ে ডাইভ দিয়ে ক্যাচের চেষ্টায় সফল হননি। উল্টো চার পেয়ে যান বাবর।
জীবন পাওয়ার পর দ্রুতই পঞ্চাশ স্পর্শ করলেন বাবর আজম। ৭৫ বলে বলে সাত চার ও এক ছক্কায় এসেছে পাকিস্তান অধিনায়কের ফিফটি। তিনি জীবন পেয়েছিলেন ৩৯ রানে।
প্রথম সেশনে তাইজুল ইসলামের ঘূর্ণিতে অবশ্য দুটি উইকেট হারিয়েছিল পাকিস্তান। তবে দ্বিতীয় সেশনে বাংলাদেশের বোলাররা তেমন কিছুই করতে পারননি। এরপর চা-বিরতির পর শেষ সেশন মাঠেই গড়ায়নি। নির্ধারিত সময়ের এক ঘণ্টা আগে আলোর স্বল্পতার কারণে দিনের খেলা শেষ করতে বাধ্য হন আম্পায়াররা।
সংক্ষিপ্ত স্কোরকার্ড:
১ম ইনিংস (১ম দিন)
পাকিস্তান: ১৬১/২; (আবিদ ৩৯, শফিক ২৫, আজহার ৩৬, বাবর ৬০); (এবাদত ৫-১-১৫-০, খালেদ ৪-১-১৯-০, তাইজুল ১৭-৫-৪৯-২, সাকিব ১৫-৬-৩৩-০, মেহেদী মিরাজ ১২-২-৩১-০)।
সারাবাংলা/এসএস
আলোর স্বল্পতা দ্বিতীয় টেস্ট প্রথম দিন বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তান