‘দেশের হয়ে খেলবে নাকি বেটিংয়ের সঙ্গে থাকবে— সিদ্ধান্ত সাকিবের’
১১ আগস্ট ২০২২ ১৮:৪০
কদিন আগ পর্যন্তও শোনা যাচ্ছিল, আসন্ন এশিয়া কাপ থেকে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দলের নেতৃত্ব উঠছে সাকিব আল হাসানের কাঁধে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি বলছে, সাকিব এশিয়া কাপের দলে থাকছেন তো? বেটিং প্রতিষ্ঠান বেটউইনারের অঙ্গসংগঠন বেটউইনার নিউজের সঙ্গে চুক্তি করে বড় বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন সাকিব নিজেই। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) এই বিষয়ে ছাড় দিতে নারাজ।
বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, বাংলাদেশের হয়ে খেলতে হলে সাকিবকে বেটউইনার নিউজের চুক্তি ছাড়তেই হবে। সেই চুক্তি না ছাড়লে ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করা হবে তার সঙ্গে। অর্থাৎ নিষেধাজ্ঞার আভাস দিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার পাপন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা তো বলেছি কোনো ধরনের সম্পর্কই থাকতে পারবে না (বেটিং সংশ্লিষ্ট কোনো কিছুর সঙ্গে)। আমরা নিজেদের ভাবনায় পরিষ্কার। আলোচনার কিছুই নেই। এখন তাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে দেশের ক্রিকেটে থাকবে, দেশের হয়ে ক্রিকেট খেলবে নাকি বেটিংয়ে থাকবে।’
বেটিং বাংলাদেশের আইন পরিপন্থি। দেশের ক্রিকেট নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ফলে চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটার হিসেবে সাকিবের বেটিং সংস্থার অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির বিষয়টি কিছুতেই মানতে নারাজ বিসিবি। বিসিবি সভাপতি কদিন আগেও সরাসরি বলেছিলেন, এটা মানার প্রশ্নই উঠে না। ‘জিরো টলারেন্স’ অবস্থানের কথা জানিয়েছিলেন পাপন।
কোনও চুক্তির আগে বিসিবির অনুমতি নেওয়া চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটারদের জন্য বাধ্যতামূলক। সাকিব বেটউইনার নিউজের সঙ্গে চুক্তির আগে বিসিবিকে বিষয়টি জানায়নি।
শোনা যাচ্ছে, সাকিবের সঙ্গে চুক্তির আগে প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের আরও দুজন সিনিয়র ক্রিকেটারকে চুক্তির প্রস্তুব দেয়। প্রস্তাব পাওয়ার পর তারা বিষয়টি বিসিবিকে অবহিত করলে বিসিবি চুক্তির অনুমতি না দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেয়। দুই ক্রিকেটারের ক্ষেত্রেই বিষয়গুলো থেমে গেছে সেখানেই।
পরে বেটউইনার নিউজ ডাবলেরও বেশি টাকায় সাকিবকে চুক্তির প্রস্তাব দেয়। অঙ্কের হিসেবে চুক্তির পরিমান ১০ কোটি টাকার আশেপাশে। সাকিব বিসিবিকে না জানিয়েই চুক্তি সম্পন্ন করেন। তবে আপাতত না জানিয়ে কোনও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করার বিষয়টি ধর্তব্যে না নিয়ে বিসিবির পুরো মনোযোগ সাকিবকে চুক্তি থেকে ফিরিয়ে আনা।
কদিন থেকেই সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা। বিসিবির পক্ষ থেকে লিখিত বার্তা দেওয়া হয়েছে সাকিবকে, একাধিক বোর্ড পরিচালক কথাও বলেছেন। কথা বলেছেন বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনও।
বোর্ডের পক্ষ থেকে বার্তা দেওয়া হয়, বেটউইনার নিউজের সঙ্গে চুক্তি ভঙ্গে করে বোর্ডকে যেন তা লিখিত আকারে জানানো হয়। জানানোর শেষ সময় ছিল গত মঙ্গলবার। কিন্তু সাকিব কিছুই জানায়নি।
সাকিব নাকি শুরু থেকেই বোর্ডকে বুঝানোর চেষ্টা করছেন, বেটিং ওয়েবসাইট বেটউইনারের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান বেটউইনার নিউজের সঙ্গে চুক্তি করে তিনি ভুল কিছু করেননি। একটি সূত্র জানাচ্ছে, সাকিবের পক্ষ থেকে নাকি মৌখিকভাবে বলা হয়েছে তাকে টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়কত্ব না দিলেও যেন বেটউইনারের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করতে না বলা হয়। তবে দেশের আইন এবং ক্রিকেট নীতিরও পরিপন্থি বলে বিসিবি এই জায়গায় বিন্দুমাত্র ছাড় দিতে নারাজ।
আজ বিসিবি সভাপতি জানিয়েছেন, আগামীকাল লিখিত জবাব দিতে চেয়েছেন সাকিব। সেই জবাবের অপেক্ষায় এখন বিসিবি। সাকিব চুক্তি ছাড়তে না চাইলে তাকে ছাড়াই যে আসন্ন এশিয়া কাপের দল ঘোষণা করা হচ্ছে তা মোটামুটি নিশ্চিত। সেক্ষেত্রে অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহর কাঁধে আবারও উঠতে পারে টি-টোয়েন্টি দলের নেতৃত্ব। আর সাকিব চুক্তি ছাড়লে অধিনায়কত্ব হয়তো উঠবে তার কাঁধেই।
বল এখন সাকিবের কোর্টে। সময় এক দিন। দেখা যাক, দেশের সেরা ক্রিকেটার কি সিদ্ধান্ত নেন।
সারাবাংলা/এসএইচএস