এশিয়া কাপে ভারত-পাকিস্তান ফাইনাল হওয়ার যে সম্ভবনা ছিল তা শেষ হয়ে যাওয়াতে উম্মাদনা কিছুটা কমেছে বটে তবে শেষ হয়ে যায়নি। দক্ষিণ এশিয়ান ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই এশিয়া কাপের ফাইনালে আজ মুখোমুখি পাকিস্তান ও শ্রীলংকা। টুর্নামেন্টের অন্যতম ফেভারিট হিসেবেই ফাইনালে উঠেছে পাকিস্তান। অপর দিকে শ্রীলংকাকে মনে করা হচ্ছিল ‘আন্ডারডগ’। ভারতকে বিদায় করে তারাই এখন ফাইনালে।
পাকিস্তান-শ্রীলংকার মধ্যকার শিরোপার লড়াইয়ে জয়ী হবে কোন দল, তা জানা যাবে রাতে। আজ রোববার (১১ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ফাইনাল খেলতে নামবে দুই দল।
পরিস্কার ফেভারিট হিসেবে এশিয়া কাপ খেলতে এসেছিল পাকিস্তান। টুর্নামেন্টের ঠিক আগে দলের সেরা বোলার শাহিন শাহ আফ্রিদিকে অবশ্য হারিয়েছে তারা। তবুও দুই ওপেনার বাবর আজম, মোহাম্মদ রিজওয়ানের অসাধারণ ফর্ম ও বোলিং ডিপার্টমেন্টের অন্য সদস্যদের নিয়ে শক্ত প্রতিপক্ষই ছিল পাকিস্তান।
তবে টুর্নামেন্টে পাকিস্তানের পথচলাটা একদম প্রত্যাশা মতো হয়নি। গ্রুপ পর্বের ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে পাঁচ উইকেটের হার। সুপার ফোরে দেখায় অবশ্য সেই ভারতকে হারিয়েই ফাইনালের পথে অনেকটা এগিয়ে যাওয়া। কিন্তু তারপর শক্তির বিচারে পিছিয়ে থাকা আফগানিস্তানের বিপক্ষ ভড়কে গেল বাবর আজমের দল। শেষ ওভারে বোলার নাসিম শাহ দুই ছক্কায় পাকিস্তান ম্যাচ জিতেছে ঠিকই তবে হারের একদম কাছাকাছিই গিয়েছিল তারা। ওই ম্যাচ হারলে ফাইনাল অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পাকিস্তানিদের।
তারপর সুপার ফোরেরশেষ ম্যাচে শ্রীলংকার বিপক্ষে বাজেভাবে হেরেছে পাকিস্তান। আগে ব্যাটিং করে মাত্র ১২১ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল বাবর আজমের দল। তার চেয়েও বড় চিন্তা হয়তো বাবর আজমকে নিয়ে। গত কয়েক মাস ধরেই ব্যাট হাতে অবিশ্বাস্য পাকিস্তানি অধিনায়ক। কিন্তু এশিয়া কাপে এখনো ব্যাট হাসেনি তার। সিলেবাসের বাইরে থাকা ক্রিকেটাররা ম্যাচ জিতিয়েছেন পাকিস্তানকে। ভারতের বিপক্ষে জয়ে যেমন ব্যাট হাতে বড় অবদান রেখেছিলেন স্পিনার মোহাম্মদ নাওয়াজ। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ব্যাট হাতে বড় অবদান রেখেছিলেন শাদাব খান ও নাসিম শাহ।
শক্তির বিচারে এগিয়ে থাকলেও তাই আজ শিরোপার লড়াইয়ে এই ‘অধারাবাহিকতা’ নিয়ে ভাবতে হবে পাকিস্তানকে। বাবর আজম অবশ্য বললেন, যেকোনো ভাবে হোক আর একটা ধাপ পেরিয়ে শিরোপা নিয়েই দেশে ফিরতে চান তারা, ‘অধিনায়ক হিসেবে ফাইনালে কোনও দলকে নেতৃত্ব দেওয়া দারুণ কিছু। আমরা ট্রফি জয় থেকে এখন মাত্র এক পা দূরে। সব অধিনায়ক এবং সব দল ট্রফি জিততে চায়। দল হিসেবে আমাদের লক্ষ্য ভালো পারফর্ম করা এবং ট্রফি জেতা।’
শ্রীলংকার যাত্রাটা ছিল অন্যরকম। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার কারণে দেশে করুন দশা। হাহাকার আর বিক্ষোভে পুরো দেশ উত্তাল। টুর্নামেন্টটা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল দ্বীপদেশটিতেই। কিন্তু দেশের সার্বিক পরিস্থিতির কারণে শ্রীলংকা আয়োজনে অপারগতা জানালো বলে টুর্নামেন্ট সরে এসেছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে।
সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স ও শক্তির বিচারেও পিছিয়ে ছিল তারুণ্যনির্ভর দলটি। টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে মাত্র ১০৫ রানে গুটিয়ে গিয়ে হেরেছিল বিশাল ব্যবধানে। সেই শ্রীলংকাই যে এভাবে ঘুরে দাঁড়াতে কে জানত!
পরের ম্যাচেই বাংলাদেশের বিপক্ষে দারুণ এক জয়। তাতেই হয়তো বাড়তি আত্মবিশ্বাস মিলল! ভয়ডরহীন ক্রিকেটের বার্তা দিয়ে তারপর ভারত, আফগানিস্তানকে বিদায় করে ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে শ্রীলংকা। শুরুর দিকে পাথুম নিশাঙ্কা ও কুশল মেন্ডিস এবং মাঝের ওভারগুলোতে ভানুকা রাজাপাক্ষে ও অধিনায়ক দাসুন শানাকা দুর্দান্ত ব্যাটিং করছেন। রান তাড়া করে ম্যাচ জিততে এই চারজন নিয়মিত পারফর্ম করেছেন। ফাইনালেও নিশ্চয় তার পূনরাবৃত্তি করতে চাইবেন।
দেশের মানুষ ভালো নেই। শ্রীলংকান ক্রিকেটাররা আগেই বলে দিয়েছেন, এশিয়া কাপের শিরোপা জিতে দেশের মানুষের মুখে একটু হাসি ফিরিয়ে আনতে চান।
পরিসংখ্যানেও অবশ্য লংকানে এগিয়ে। এখন পর্যন্ত পাঁচবার এই টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে দলটি। ভারতের (৭ বার) পর যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। পাকিস্তান শিরোপা জিতেছে দুইবার। এশিয়া কাপে পাকিস্তান-শ্রীলংকার দেখা হয়েছে তিনবার। তার মধ্যে শ্রীলংকার জয় দুটি, পাকিস্তানের একটি। ২০১৪ সালের ফাইনালে এই পাকিস্তানকে হারিয়েই সর্বশেষ শিরোপা জিতেছিল শ্রীলংকা।
এশিয়া কাপের গত আসরের রানার্সআপ বাংলাদেশ এবার গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছে। তবে আজকের ফাইনালে কিন্তু থাকছেন একজন বাংলাদেশি। ফাইনাল ম্যাচে ফিল্ড আম্পায়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বাংলাদেশি আম্পায়ার মাসুদুর রহমান। এর আগে টুর্নামেন্টে ভারত-পাকিস্তানের দুবারের দেখায় আম্পায়ারের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। সেখানে ভালো পারফরম্যান্সের পুরস্কার হিসেবেই দায়িত্ব পেয়েছেন ফাইনাল পরিচালনা করার।