এশিয়া কাপের শিরোপা শ্রীলংকার
১১ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২৩:৫৪
রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত শ্রীলংকা। এশিয়া কাপ জিতে দেশের দুঃখী মানুষদের মুখে একটু হাসি ফোটাতে চান, এমন কথা বলে আসছিলেন শ্রীলংকান ক্রিকেটাররা। দাসুন শানাকার নেতৃত্বে সেটা করেও দেখালো তারুণ্যনির্ভর শ্রীলংকা। টুর্নামেন্টের ফেভারিট পাকিস্তানকে আজ ফাইনালের লড়াইয়ে ২৩ রানে হারিয়ে এশিয়া কাপের শিরোপা জিতে নিয়েছেন লংকানরা।
আগে ব্যাটিং করতে নেমে মাত্র ৫৮ রানে পাঁচ উইকেট হারালেও ভানুকা রাজাপাক্ষের ব্যাটে শেষ পর্যন্ত ১৭০ রানের বড় স্কোর গড়ে শ্রীলংকা। পরে শুরু থেকেই বড় টার্গেট তাড়া করার মতো উপযুক্ত ব্যাটিং করতে পারেনি পাকিস্তান। বাবর আজম আজও রান পাননি। অপর ওপেনার মোহাম্মদ রিজওয়ান অনেকক্ষণ উইকেটে থাকলেও বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান তুলতে ব্যর্থ। পাকিস্তানের মিডল অর্ডারও আজ ব্যর্থ। সব মিলিয়ে ১৪৭ রানে থেমেছে পাকিস্তান।
যাতে ‘আন্ডারডগ’ হিসেবে টুর্নামেন্ট শুরু করা শ্রীলংকাই শেষ পর্যন্ত এশিয়া কাপের চ্যাম্পিয়ন। এ নিয়ে ষষ্ঠবার টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতল শ্রীলংকা। সর্বোচ্চ ৭ বার এশিয়া কাপ জিতেছে ভারত।
রোববার (১১ সেপ্টেম্বর) দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ফাইনাল ম্যাচে টস জয়কে মনে করা হচ্ছিল বড় কিছু। দুবাইয়ে টস জিতলেই ম্যাচ জয়, এমন একটা প্রচলনই আছে। পাকিস্তানি অধিনায়ক বাবর আজম টস জিতেছেন। আগে বোলিং করতে নেমে মাত্র ৫৮ রানে শ্রীলংকার পাঁচ ব্যাটারকে ফিরিয়েও দেয় পাকিস্তান। কিন্তু সেই চাপটা পরে আর ধরে রাখতে পারেনি।
ব্যাটিংটাও ভালো হয়নি পাকিস্তানের। পুরো টুর্নামেন্ট রান না পাওয়া বাবর আজমের দিকে আজ তাকিয়ে ছিল দল। কিন্তু আজ শিরোপার লড়াইয়েও ব্যর্থ বাবর। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে পর পর দুই বলে ফিরেছেন বাবর ও ফখর জামান। তাতেই যেন কঠিন চাপে পড়ে যায় পাকিস্তান!
ওভারে পাঁচ ওয়াইড দিয়ে শ্রীলংকার ইনিংস শুরু করেছিলেন দিলশান মাদুশাঙ্কা। তবে প্রথম ওভারটা বাদ দিলে পরে কখনোই পাকিস্তানিদের মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে দেয়নি শ্রীলংকার বোলিং আক্রমণ।
পরপর দুই বলে বাবর ও ফখরকে হারানো পাকিস্তান পরে যেন খোলসবন্দি হয়ে পড়ল! চারে নামা ইফতিখার আহমেদ রান তোলার চেয়ে উইকেট বাঁচিয়ে রাখাতেই বেশি মনযোগ দিয়েছেন। বাবর শুরুতেই ফিরলে মোহাম্মদ রিজওয়ানের ওপর ছিল বড় দায়িত্ব। টি-টোয়েন্টি র্যাংকিংয়ের শীর্ষ ব্যাটার অনেকক্ষণ ক্রিজে ছিলেনও। কিন্তু ১৭তম ওভারে ছক্কা মারতে গিয়ে আউট হওয়ার আগে রিজওয়ান ৫৫ রান করতে খেলেছেন ৪৯ বল! ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী যা মোটেও যথেষ্ঠ নয়।
আগের ম্যাচগুলোতে ব্যাটিং অর্ডার ওলট-পালট করে সাফল্য পেয়েছিল পাকিস্তান। সুপার ফোরে ভারতের বিপক্ষে স্পিনার মোহাম্মদ নাওয়াজকে চার নম্বরে পাঠানো হয়েছিল। নিয়মিত নিচের দিকে ব্যাটিং করা নাওয়াজ সেদিন ওপরে ব্যাটিং করতে নেমে ম্যাচের গতিপথ পাল্টে দেওয়ার এক ক্যামিও ইনিংস খেলেন। আফগনিস্তানের বিপক্ষে সেই ভূমিকা পালন করেছিলেন শাদাব খান। আজ ফাইনাল বলেই কিনা তেমন সিদ্ধান্ত নেয়নি পাকিস্তান।
চার নম্বরে পাঠানো হয় ইফতিখার আহমেদকে। ইফতিখার ক্রিজে ছিলেন বটে। কিন্তু বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান তুলতে ব্যর্থ। ৩১ বল খেলে তুলেছেন ৩২ রান! রিজওয়ান-ইফতিখার তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৫৯ বল খেলে ৭১ রান তুলেছেন। দুজন বড় জুটি গড়েছেন বটে তবে পাকিস্তান চাপে পড়েছে এই দুজনের ধীরগুতির ব্যাটিংয়েই।
চাপ কাটিয়ে উঠতে পরে কাউকে ক্যামিও ইনিংস খেলতেই হতো। কিন্তু আসিফ আলি, খুশদিল শাহ বা মোহাম্মদ নাওয়াজদের কেউই তা পারেননি। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে ১৪৭ রানে গুটিয়ে গেছে পাকিস্তান।
শ্রীলংকার হয়ে প্রমোদ মাদুশান ৩৪ বলে ৪টি উইকেট নিয়েছেন। হাসারাঙ্গা ২৭ বলে নিয়েছেন তিন উইকেট।
এর আগে শ্রীলংকার ১৭০ রানের বড় স্কোরে বড় অবদান ভানুকা রাজাপাক্ষের। পাকিস্তানের গতির ঝড়ে ৫৮ রানে পাঁচ উইকেট হারিয়ে ফেলা শ্রীলংকা একশর আগেই গুটিয়ে যায় কিনা এমন শঙ্কাও জেগেছিল। সেখান থেকেই ভানুকা রাজাপাক্ষের পাল্টা আক্রমণ।
এই যাত্রায় হাসারাঙ্গাকে পেয়েছেন উপযুক্ত সঙ্গী হিসেবে। ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে ৩৬ বলে ৫৮ রান তোলেন দুজন। হাসারাঙ্গা ২১ বলে ৩৬ রান করে ফিরলেও শেষ দিকে পাকিস্তানি বোলারদের স্রেফ কচুকাটা করেছেন রাজাপাক্ষে।
শেষ পর্যন্ত ৪৫ বল খেলে ৭১ রানে অপরাজিত ছিলেন। তার ইনিংসে চারের মার ৬টি, ছক্কা ৩টি। পাকিস্তানের পক্ষে ২৯ রানে তিন উইকেট নিয়েছেন হারিস রউফ।
সারাবাংলা/এসএইচএস