আব্দুললাহ আল-আমরি, আব্দুলেলাহ আল-মালকি, ফিরাস আল-বুরাইকান এবং সামি আল-নাজেইয়ের মতো তরুণদের কঠিন পরিশ্রমের ফলে বাছাই-পর্বে এশিয়ান অঞ্চল থেকে ‘গ্রুপ-বি’র চ্যাম্পিয়ন হতে কোন সমস্যা হয়নি।
তাদের সেরা সাফল্য হচ্ছে মাত্র দ্বিতীয় রাউন্ড পর্যন্ত পৌঁছানো, যেটা তারা ১৯৯৪ সালের প্রথম বিশ্বকাপেই অর্জন করেছিল। ২০০২ বিশ্বকাপে এশিয়াতে অনুষ্ঠিত হলেও তারা সেবার জার্মানির কাছে ০-৮ গোলে পরাজিত হয়। ২০১৮ বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই তারা ০-৫ গোলে হেরে গিয়েছিল রাশিয়ার কাছে।
১৯৯৪ সালে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচটি তারা খেলেছিল বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে। ওই ম্যাচের ৫ মিনিটের মাথায় সৌদি ইতিহাসের সবচেয়ে বিখ্যাত গোলটি করেন, সাঈদ আল-ওয়াইরান। আক্রমণাত্মক এই মিডফিল্ডারটি তার নিজ অর্ধ থেকে দৌড় শুরু করেছিলেন এবং গোলের পথে ৫ জন বেলজিয়ানকে কাটিয়েছিলেন এবং ইতিহাসের বইতে নিজের নাম লেখানোর জন্য গোলরক্ষককে ঠাণ্ডা মাথায় পরাস্ত করেছিলেন।
বিশ্বকাপে এ পর্যন্ত তারা ১৬টি ম্যাচ খেলে ৩টি ম্যাচ জিতেছে, ড্র করেছে মাত্র ২টি ম্যাচে আর পরাজিত হয়েছে ১১টি ম্যাচে। তারা গোল করতে পেরেছিল ১১টি আর তাদের বিপক্ষে গোল হয়েছে ৩৯টি।
এই বিশ্বকাপে তাদের প্রথম ম্যাচ শুরু হবে শক্তিশালী আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ২২শে নভেম্বর। তার চার দিন পরে অর্থাৎ ২৬শে নভেম্বর দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে হবে পোল্যান্ডের বিরুদ্ধে। গ্রুপের সর্বশেষ ম্যাচের প্রতিপক্ষ হচ্ছে মেক্সিকো, যাদের বিরুদ্ধে লড়তে হবে আরো ৪ দিন পর ৩০শে নভেম্বর তারিখে। গ্রুপের প্রথম ও তৃতীয় ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে লুসাইল স্টেডিয়ামে এবং দ্বিতীয় ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে।
সৌদিরা স্পেন এবং আরব আমিরাতে প্রশিক্ষণ নিয়েছে। বিশ্বকাপ বাছাই-পর্বের ম্যাচ গুলো শেষ হবার পরে আরো ৭টি প্রীতি ম্যাচ খেলেছে, যার মধ্যে ৪টি খেলেছে স্পেনে এবং বাকি ৩টি খেলেছে আরব আমিরাতে। বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার সঙ্গে প্রথম ম্যাচ খেলার আগে আগামী বুধবার নিজেদের মাটিতে ক্রোয়েশিয়ার সাথে সর্বশেষ প্রীতি ম্যাচ খেলবে।
কোচ হার্ভে রেনার্ড বর্তমানে দলকে পুরনো ও প্রতিষ্ঠিত ৪-২-৩-১ পদ্ধতির পরিবর্তে ৪-৩-৩ পদ্ধতিতে দলকে খেলাচ্ছেন।
৮) অন্য যাদের দিকে চোখ রাখতে হবে:
প্রীতি ম্যাচে কাঁধে চোট পাওয়া সত্ত্বেও আল-হিলাল মিডফিল্ডার এবং দলের অধিনায়ক সালমান আল-ফারাজকে কোচ মনোনীত করেছেন। ফারাজ সৌদি মিডফিল্ডের চাবিকাঠি। তার নির্ভুল পাস দিয়ে আক্রমণে সাহায্য করা থেকে শুরু করে প্রতিপক্ষের আক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখা ও সঠিক নেতৃত্ব দেশের জন্য ভাল ফল আনতে পারে।
৯) নেপথ্যের নায়ক:
২০১৮ বিশ্বকাপের ব্যর্থতা পিছনে ফেলে এ বছরের বিশ্বকাপে যোগ্যতা অর্জন করলেও তাদের দলের স্ট্রাইকিং লাইনআপে এখনো দুর্বলতা রয়েছে। আর এই জায়গায় কাজ করবেন সালেহ আল-শেহরি। স্ট্রাইকার হিসেবে তিনি একজন নিঃস্বার্থ পারফর্মার এবং আন্ডাররেটেড ফিনিশার। এশিয়ান অঞ্চলের বাছাইপর্বে ১৩টি গোলের মধ্যে ৭টি গোলই তিনি করেন। তিনি তার ১০টি গোলের ভেতরে ৯টি গোলই করেছেন ২০২১ সালের পর থেকে।
১০) বিশ্বকাপে কারা কারা আছেন ২৬ জনের মূল দলে:
একটি অদ্ভুত ব্যাপার হলো সৌদিরা সালাফি মতবাদের কট্টর অনুসারী হওয়ায় তাদের খেলোয়াড়দের ওপর বিদেশি লীগে খেলার নিষেধাজ্ঞা বলবৎ আছে, ফলে এই দলের কেউই সৌদি আরব ছাড়া বাহিরের কোন দেশে লিগ খেলার অভিজ্ঞতা নেই।
তাদের ঘোষিত দলের গড় বয়স মাত্র ২৩ বছর।
গোলরক্ষক: মোহাম্মদ আল-ওয়াইস (আল-হিলাল), নাওয়াফ আল-আকিদি (আল-নাসর), মোহাম্মদ আল-ইয়ামি (আল-আহলি)
ডিফেন্ডার: ইয়াসির আল-শাহরানি (আল-হিলাল), আলী আল-বুলাইহি (আল-হিলাল), আবদুল্লাহ আল-আমরি (আল-নাসর), আবদুল্লাহ মাদু (আল-নাসর), হাসান তাম্বকতি (আল-শাবাব), সুলতান আল -ঘানম (আল-নাসর), মোহাম্মদ আল-ব্রেক (আল-হিলাল), সৌদ আবদুলহামিদ (আল-হিলাল)
মিডফিল্ডার: সালমান আল-ফারাজ (আল-হিলাল), রিয়াদ শারাহিলি (আভা), আলী আল-হাসান (আল-নাসর), মোহাম্মদ কান্নো (আল-হিলাল), আবদুল্লাহ আল-মালকি (আল-হিলাল), সামি আল-নাজেই (আল-নাসর), আবদুল্লাহ ওতাইফ (আল-হিলাল), নাসের আল-দাওসারী (আল-হিলাল), আবদুল রহমান আল-আবউদ (ইত্তিহাদ), সালেম আল-দাওসারী (আল-হিলাল), হাতান বাহেবরি (আল-শাবাব)
ফরোয়ার্ড: ফাহাদ আল-মুওয়াল্লাদ (আল-শাবাব), হাইথাম আসিরি (আল-আহলি), সালেহ আল-শেহরি (আল-হিলাল) এবং ফিরাস আল-বুরাইকান (আল-ফাতেহ)।
১১) উপরের এই খেলোয়াড়রা কে কোথায় খেলবেন:
দলের গোলরক্ষক হিসেবে খেলবেন ৩১ বছর বয়সী মোহাম্মদ আল-ওয়াইস। যিনি গোলরক্ষক হিসেবে সবচেয়ে অভিজ্ঞ এবং কাতারেও প্রথম পছন্দের কিপার হিসেবে থাকবেন।
৩০ বছর বয়সের লেফট-ব্যাক, আল-শাহরানি যথেষ্ট অভিজ্ঞতা সম্পন্ন যিনি ইতিমধ্যে জাতীয় দলের হয়ে ৭১টি ম্যাচ খেলে ফেলেছেন।
৬ ফুট ৪ ইঞ্চি উচ্চতার মিডফিল্ড যোদ্ধা মোহাম্মদ কান্নোর দিকেও নজর রাখা উচিত। ২৮ বছর বয়সী তার ক্লাব আল-হিলালের সাথে ৫টি ঘরোয়া চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছে।
ফাহাদ আল-মুওয়াল্লাদ এবং সালেম আল-দাওসারি মিডফিল্ডে সৌদি আরবের প্রধান আকর্ষণ। তারা দুজনেই যৌথ-সর্বোচ্চ গোলদাতা হবার পথে ১৭টি গোল করেছেন।
১২) দলের শক্তিমত্তা ও দুর্বলতা:
সৌদিদের মূল শক্তির জায়গা হল তাদের ডিফেন্স। বাছাই-পর্বের ১২টি ম্যাচে তারা ক্লিন শীট বজায় রেখেছিল। তবে যেহেতু তাদের ইউরোপে খেলার অভিজ্ঞতা নেই, সেহেতু ডিফেন্স কার্যকরী ভূমিকা রাখবে কিনা সে ব্যাপারে সন্দেহ আছে।
গোল করার ক্ষেত্রেও তাদের যথেষ্ট দুর্বলতা আছে, ফলে তারা শেষ ১৬টি ম্যাচে ২টির বেশি গোল করতে পারেনি কোন দলের বিপক্ষে। আর বাছাই-পর্বে কিছুটা দুর্বল দলের সঙ্গে ১০টি ম্যাচে ১২টি গোল করতে পেরেছিল।
শক্তি ও আঘাতকে পাত্তা না দেয়ার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ফুল-ব্যাক ইয়াসির আল-শাহরানি। আল হিলাল আইকন সালমান আল-ফারাজের কাজ হবে মিডফিল্ডকে নিয়ন্ত্রণ করা। ব্যতিক্রমী উইঙ্গার সালেম আল-দাওসারির সৌদিদের অনুপ্রেরণার নাম। তবে দাওসারীর ও আল-ফারাজের ইনজুরি তাদের অনেক চিন্তায় ফেলে দিয়েছে।
সাধারণত, নিখুঁত মিডফিল্ড তৈরি করতে সিল্ক এবং স্টিলের মিশ্রণের প্রয়োজন হয় এবং সৌদি আরবকে মাঠের মাঝখানে দক্ষতার মিশ্রণ আনতে হবে।
১৩) তাদের সম্ভাবনা:
সৌদি আরব হল কাতারে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী দ্বিতীয় সর্বনিম্ন র্যাঙ্কের দল এবং তারা প্রতিযোগিতার অন্যতম দুর্বল দল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তাদের টুর্নামেন্ট জেতার সম্ভাবনা তো দূরের কথা তাদের দ্বিতীয় রাউন্ডে যাবার সম্ভাবনা প্রায় শূন্য।
১৪) আমার দেখা সৌদিদের সেরা-১৪ ফুটবলার (পূর্বেকার বিশ্বকাপসহ):
সৌদিরা ২০১০ এবং ২০১৪ বিশ্বকাপে যোগ্যতা অর্জন করতে ব্যর্থ হওয়ায় তাদের অধিকাংশ খেলোয়াড় তাদের আগের বিশ্বকাপের।
ক) গোল-রক্ষক:- মোহাম্মাদ আল-দাইয়া (ম্যাচ: ১৭৮। ৬ ফুট ৪ ইঞ্চি উচ্চতার এই গোলরক্ষক সৌদিদের হয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছেন। বিশ্বকাপ খেলেছেন ৪টি)
খ) রক্ষণ-ভাগ:-
রাইট-ব্যাক: মোহাম্মদআল-জাহানি (ম্যাচ: ১০৪। বিশ্বকাপ খেলেছেন ২টি)