আর্জেন্টিনার হোঁচট, ব্রাজিলের হেক্সা মিশন
২৪ নভেম্বর ২০২২ ১৬:৪১
বিশ্বকাপ ফুটবলের উত্তাপ মরুর দেশ কাতারে। বিশ্ব কাঁপছে ফুটবল জ্বরে। কাতার থেকে প্রায় ৪ হাজার কিলোমিটার দূরত্বের বাংলাদেশও ফুটবল রোমাঞ্চে বুদ। বিশ্বকাপ শুরুর আগ থেকেই বাকযুদ্ধ চলছে, চলবেও। সোসাল মিডিয়ায় তোলপাড়। বিশ্বকাপের সময় ফুটবলের উন্মাদনা এদেশের জনপ্রিয় খেলা ক্রিকেটকেও হার মানিয়ে যায়। যদিও বাংলাদেশে ফুটবলের খুঁটি নড়বড়ে। দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর মতো বাংলাদেশের সমর্থকদের বেশিরভাগই দুই দলে বিভিক্ত। ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনা। কোন দল এগিয়ে- এমন তর্কে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত চায়ের কাপে ঝড়। বিশ্বকাপে সেরা কারা, কোন দল লক্ষ্য ছুঁতে পারবে, ব্রাজিলের মিশন হেক্সা সফল হবে নাকি মেসির বিশ্ব ট্রফির স্বাদ- এসব নিয়ে তর্ক-বিতর্ক আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রল।
গত ২০ নভেম্বর স্বাগতিক কাতার ও ইকুয়েডরের মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপের পর্দা উঠলেও দেশে বিশ্বকাপের মূল উন্মাদনা শুরু মূলত ২২ নভেম্বরে আর্জেন্টিনা আর সৌদি আরবের ম্যাচ দিয়ে। খেলার আগে-পরে পাড়ার টং দোকান থেকে শুরু করে ঘরোয়া আড্ডা, সবখানেই এই আলোচনা। ফেসবুক ট্রলে ছয়লাভ। কিন্তু লিওনেল মেসির শেষ বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই ঘটে অঘটন। সৌদি আরবের সঙ্গে ২-১ ব্যবধানে হারে আর্জেন্টিনা। এই হারে বাকযুদ্ধ যেন আরও বাড়ে! টক অফ দ্যা কান্ট্রি যেন যোজন যোজন পিছিয়ে থাকা সৌদি আরবের বিপক্ষে আর্জেন্টিনার হার! বিশ্বকাপে কতদূর যেতে পারবে- সেই প্রশ্নে আর্জেন্টিনা সমর্থকদের ক্ষতে নুন দিচ্ছে ব্রাজিল সমর্থকরা। এদিকে আর্জেন্টিনা সমর্থকরাও নিশ্চয় মনে মনে উঁত পেতে আছে। ব্রাজিলের প্রথম ম্যাচ ২৫ নভেম্বর। প্রতিপক্ষ সার্বিয়া। পরিস্কার ফেভারিট নেইমারের দল। তবে মাঠের খেলায় ফেভারিট তত্ব যে পুরোপুরি কাজে লাগে না সেটা সৌদি আরবের বিপক্ষে আর্জেন্টিনার হারেই আরেকবার প্রমাণিত হলো। মাঠে পারফর্ম করতে না পারলে ব্রাজিলকেও হারতে হতে পারে সার্বিয়ার বিপক্ষে। আর্জেন্টিনার কোটি সমর্থক নিশ্চয় সেই অপেক্ষাতেই আছেন। অবশ্য ব্রাজিল আছে দুর্দান্ত ছন্দে।
কোপা আমেরিকা ফাইনালে আর্জেন্টিনার কাছে হারের পর থেকে অপরাজিত ব্রাজিল। শীর্ষ দল হিসেবে লাতিন অঞ্চলের বাছাই পর্ব শেষ করেছে নেইমাররা। তাই ব্রাজিলের পোস্টার বয় নেইমার আশাবাদী। গণমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে তার বক্তব্য, ‘ব্রাজিলিয়ানদের কাছে বিশ্বকাপ জিততে না পারাটাই ব্যর্থতা। যুগে যুগে আমাদের সব দল বিশ্বকাপ খেলতে এসেছে চ্যাম্পিয়ন হতে। আমরাও শিরোপা জিততে চাই। আমি নিশ্চিত, শেষ পর্যন্ত যাওয়ার শক্তি ও সামর্থ্য আছে এই দলের।’ ব্রাজিলের জার্সি গায়ে কিংবদন্তি পেলের গোল ৭৭টি। নেইমারে মাত্র দু’টি কম। ব্রাজিল সমর্থকদের প্রত্যাশা এবার পেলেকে ছাড়িয়ে যাবে নেইমার। গেল বিশ্বকাপে ব্রাজিল নেইমার নির্ভর ছিল। যেমনটা মেসি নির্ভর আর্জেন্টিনা। তবে এবার নেইমার ছাড়াও অপশন আছে তিতের দলের। ব্রাজিল দলে ভিনিসিয়ুস জুনিয়রকে নিয়ে ব্যাপক আশা ব্রাজিলের। তুরুপের তাস হতে পারেন তিনি। অনেকে মনে করেন নেইমারকে ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে রিয়াল মাদ্রিদের এই তারকার। এছাড়া দলে রাফিনহার মতো খেলোয়াড় রয়েছে। ফলে চাপ কমবে নেইমারের। ব্রাজিল দলের গোলপোস্টের মাকড়শা আলিসন। তার জালে বল ধরা দেয়া কঠিন। ব্রাজিল সমর্থকদের চোখ তার দিকেও। ঘরের মাঠে ব্রাজিলের ২০১৯ কোপা আমেরিকা জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন আলিসন। পুরো আসরে ছয় ম্যাচে তিনি গোল হজম করেছিলেন স্রেফ একটি, সেটিও পেনাল্টি থেকে। আসরের সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার তার হাতে উঠেছিল অবধারিতভাবেই। থিয়াগো সিলভা ও মারকুইনহোস ব্রাজেলের ডিফেন্সে বড় শক্তি। তাদের ভেদ করা বিপক্ষ যেকোন দলের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। কোন কারণে এই দু’জন না খেলতে পারলেও এডার মিলিটাও এবং গ্লেজন ব্রেমার থাকবেন দলে। গত মৌসুমেই এডার মিলিটাও রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছেন। তিনি ডিফেন্সের সঙ্গে রক্ষণ থেকে বল বাড়িয়ে আক্রমণে নিতে পছন্দ করেন। আর গ্লেজন ব্রেমার ইতালিয়ান লিগের বর্ষসেরা ডিফেন্ডারের পুরস্কার পেয়েছেন।
২০১৪ সালের বিশ্বকাপে জার্মানির বিপক্ষে ব্রাজিলকে গুনে গুনে সাত গোল হজম করতে হয়েছিল। ব্রাজিলের ওভাবে বিধ্বস্ত হওয়াটা পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা কোটি সমর্থকের মতো এদেশের ব্রাজিল সমর্থকদেরও হৃদয়ক্ষরণ করেছিল। বিভিন্ন ভাবে ব্রাজিলভক্তদের ট্রলের শিকার হতে হয়েছে দীর্ঘ আট বছর। সাত গোলের হিসেব ধরে ‘সেভেন আপ’ সমর্থক বলে ট্রলের জোয়ার বয়েছে। এবার সেই ট্রলের অবসান ঘটবে? অবসান ঘটুক ব্রাজিল সমর্থকদের প্রত্যাশা নিশ্চয় তেমনই। ব্রাজিল এবার ফেভারিট তকমা গায়ে মাখিয়েই মাঠে নামবে। প্রত্যাশা থাকবে, চলতি বিশ্বকাপে প্রতীক্ষিত হেক্সা জয়। তারপর এখান থেকেই শুরু হোক নতুন স্বপ্ন দেখা, ২০২৬ সালে ৭ নাম্বার বিশ্বকাপ জয়। এটিকে কী ‘সেভেন আপ’ নামও দেওয়া যায়!
সারাবাংলা/এসএইচএস