Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মিরাজের অবিশ্বাস্য প্রতিরোধে ভারত বধ

স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট
৪ ডিসেম্বর ২০২২ ১৯:৫১

বোলিং ডিপার্টমেন্টের দুর্দান্ত পারফম্যান্সে ভারত গুটিয়ে যায় ১৮৬ রানেই। জবাব দিতে নেমে ৩৪ ওভার শেষে বাংলাদেশের  রান ছিল  ৪ উইকেটে ১২৭। অর্থাৎ ১৬ ওভারে ৬ উইকেটে দরকার ৬০ রান। উইকেটে ছিলেন মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ। ব্যাটিংয়ের অপেক্ষায় আফিফ হোসেন ধ্রুব, মেহেদি হাসান মিরাজের মতো ব্যাটার। জয়ের জন্য এর চেয়ে সহজ সমীকরণ আর কি-ই বা হতে পারে!

কিন্তু এরপর মাত্র ৮ রানের ব্যবধানে পাঁচ উইকেট হারিয়ে হারের একদম কাছাকাছি গিয়ে পৌঁছে গেল বাংলাদেশ। ১৩৬ রানের মাথায় নবম উইকেট হারিয়ে ফেলে স্বাগতিকরা। ভারতের বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটিতে হারটা তখন মনে হচ্ছিল সময়ের ব্যাপার মাত্র। কিন্তু মেহেদি হাসান মিরাজের অবিশ্বাস্য প্রতিরোধে সেখান থেকে ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ।

বিজ্ঞাপন

মোস্তাফিজুর রহমানকে নিয়ে শেষ উইকেটে ৫১ রানের জুটি গড়েন মিরাজ। তাতে মিরাজ ৩০ বলে একাই করেন ৩৭ রান। ৩৯ বলে শেষ পর্যন্ত ৩৮ রান করে অপরাজিত ছিলেন আট নম্বরে ব্যাট করতে নামা মিরাজ। ৪৬ ওভারে নয় উইকেট হারিয়ে জয়ের জন্য ১৮৭ রান তুলে ফেলে বাংলাদেশ।

নাগালের মধ্যে থাকা টার্গেট তাড়া করতে নেমে শুরু থেকেই ধীর গতিতে এগুতে চেয়েছে বাংলাদেশ। লিটন দাস, সাকিব আল হাসানরা ধীরগতিতে শুরু করলেও পরে অবশ্য দ্রুত রান তুলে বলের সঙ্গে রানের ব্যবধান কমাতে পেরেছেন। মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ তাতে পুরোপুরি ব্যর্থ। পরপর দুই বলে দুই অভিজ্ঞ আউট হলে চাপে পরেছে বাংলাদেশ। সেই চাপে বাংলাদেশকে আরও চেপে ধরেছিল ভারত। কিন্তু মেহেদি হাসান মিরাজের শেষের বীরত্বে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ পেয়েছে অবিশ্বাস্য এক জয়।

বিজ্ঞাপন

রোববার (৪ ডিসেম্বর) মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ১৮৬ রানের জবাব দিতে নেমে প্রথম বলেই নাজমুল হোসেন শান্তকে হারায় বাংলাদেশ। বাইরের বল অযথাই খোঁচা দিতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দিয়েছেন শান্ত। তারপর রানের চিন্তা বাদ দিয়ে উইকেট আকড়ে পরে থাকতে চেয়েছেন অপর ওপেনার লিটন দাস ও তিনে নামা এনামুল হক বিজয়।

৫৪ বলে দ্বিতীয় উইকেটে ২৬ রান তোলেন দুজন। এনামুল ২৯ বলে ১৪ রান করে ফেরেন। এরপর সাকিব আল হাসান ও অধিনায়ক লিটন টানছিলেন দলকে। দুজন ইনিংসের শুরুতে সময় নিলেও সেট হওয়ার পর বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই রান তুলছিলেন। কিন্তু দু’জনের কেউই বড় ইনিংস খেলতে পারেননি।

৬৩ বলে ৪১ রান করা লিটন আউট হয়েছেন ভুল শট খেলে। বিরাট কোহলির দুর্দান্ত এক ক্যাচ হওয়া সাকিব ফিরেছেন ৩৮ বলে ২৯ রান করে। এই দুজন ফেরার পর বড় দায়িত্ব ছিল দুই অভিজ্ঞ মুশফিুকর রহিম ও মাহমুদউল্লাহর কাঁধে।  দুজনের কেউই দায়িত্ব পালন করতে পারেননি।

উইকেটে সেট হতে দুজন অনেক সময় নিয়েছেন। সেট হওয়ার পর যখন রান করার দাবি ছিল তখনই পরপর দুই বলে ফিরেছেন দুজন। মাহমুদউল্লাহ, মুশফিকুর রহিম, আফিফ হোসেন ধ্রুব, ইবাদত হোসেন ও হাসান মাহমুদ এই পাঁচ জন ফিরেছেন মাত্র ৮ রানের ব্যবধানে। তখন মনে হচ্ছিল হারটা সময়ের ব্যাপার মাত্র।

কিন্তু এরপর সবাইকে অবাক করে দিয়ে শেষ ব্যাটারকে নিয়ে অবিশ্বাস্য এক ইনিংস খেলে বাংলাদেশকে জয় এনে দিলেন মিরাজ। ৪১তম ওভারে কুলদ্বীপ সেনকে দুই ছক্কা হাঁকিয়ে শুরু। তারপর প্রতি ওভারের শুরুর বলগুলো থেকে রান তুললেন আর শেষ দিকে সিঙ্গেল নিয়ে মোস্তাফিজুর রহমানের উইকেট জিইয়ে রাখলেন। এভাবেই ভারতীয় বোলিং আক্রমণকে কাবু করে ম্যাচ জিতিয়ে মিরাজ।

এর আগে টস জিতে আগে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক লিটন দাস। নিয়মিত অধিনায়ক তামিম ইকবালের ইনজুরিতে অধিনায়কত্ব করছেন লিটন। নতুন অধিনায়কের সিদ্ধান্তটা যথার্থই প্রমাণ করলেন বোলাররা। ভারতের দুই ওপেনার শিখর ধাওয়ান ও রোহিত শর্মা সাবধানী শুরু করেছিলেন। ষষ্ঠ ওভারে শিখরকে ফেরান মিরাজ। মিরাজকে সুইপ খেলতে গিয়ে লাইন মিস করে সরাসরি বোল্ড ভারতীয় ওপেনার (১৭ বলে ৭ রান)।

দশম ওভারে জোড়া আঘাত হানেন সাকিব আল হাসান। নিজের প্রথম ওভার করতে এসে দ্বিতীয় বলেই রোহিত শর্মাকে সরাসরি বোল্ড করেছেন সাকিব। চতুর্থ বলে বিরাট কোহলিকে লিটন দাসের ক্যাচ বানিয়েছেন। ৪৯ রানে তৃতীয় উইকেট হারানো ভারতের হয়ে এরপর হাল ধরেন ওপেনিং থেকে মিডল অর্ডারে নেমে আসা লোকেশ রাহুল।

প্রথম শ্রেয়াস আয়ারের সঙ্গে ৪৩ রানের জুটি গড়ে ধস ঠেকিয়েছেন। শ্রেয়াসকে (২৪) রানে ফেরান ইবাদত। পরে ওয়াসিংটন সুন্দরকে নিয়ে এগুচ্ছিলেন রাহুল। দলীয় ১৫২ রানের মাথায় সুন্দরকে ফিরিয়ে ভারতীয়দের পথ আগলে ধরেন সাকিব। তাতেই যেন ধস নামল।

৪ রানের ব্যবধানে চার উইকেট হারায় ভারত। যার তিনটিই সাকিবের। দলীয় ১৬৫ রানের মাথায় অষ্টম উইকেট হারায় ভারত। ভারতের লেজকে দাঁড়াতে দেননি ইবাদত হোসেন। লোকেশ রাহুলকেও ফিরিয়েছেন ইবাদতই।

৪১.২ ওভারে ১৮৬ রানে গুটিয়ে গেছে ভারত। লোকেশ রাহুল ৭০ বলে ৫টি চার, ৪টি ছয়ে সর্বোচ্চ ৭৩ রান করেছেন। সাকিব ১০ ওভারে ৩৬ রানে নিয়েছেন পাঁচ উইকেট। ক্যারিয়ারে এই প্রথম ওয়ানডেতে ভারতের বিপক্ষে পাঁচ উইকেট পেলেন সাকিব। একটা রেকর্ডও হয়েছে। কোনো বাঁহাতি স্পিনারের সেরা বোলিং ফিগার এটি। ইবাদত ৮.২ ওভারে ৪৭ রানে নিয়েছেন চার উইকেট। বাকি উইকেটটি নিয়েছেন মেহেদি হাসান মিরাজ।

সারাবাংলা/এসএইচএস

বাংলাদেশ-ভারত সিরিজ ২০২২ মাহমুদউল্লাহ মুশফিকুর রহিম সাকিব আল হাসান

বিজ্ঞাপন

নতুন ইসির শপথ রোববার দুপুরে
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১৪:২৩

আরো

সম্পর্কিত খবর