Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক জয়

স্পোর্টস ডেস্ক
২ ডিসেম্বর ২০২৩ ১১:০৩

২০২২ সালে নিউজিল্যান্ডের মাটিতেই তাদের হারিয়ে প্রথমবারের মতো টেস্টে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। তবে ঘরের মাঠে কিউইদের বিপক্ষে সাদা পোশাকের জয় অধরায় ছিল এতদিন। তবে শেষ হলো অপেক্ষার পালা। ২০২৩ সালে সিলেটের নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টেস্টে জয় পেল বাংলাদেশ।

শনিবার (২ ডিসেম্বর) সিলেট টেস্টের পঞ্চম দিনের প্রথম সেশনে কিউইদের দ্বিতীয় ইনিংস থেমেছে ১৮১ রানে। ফলে ১৫০ রানের বড় জয় নিশ্চিত করেছে স্বাগতিকরা। এতে বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে নাজমুল হোসেন শান্ত করলেন শুভ সূচনা। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের তৃতীয় চক্রও জয়ের আনন্দে শুরু করল টাইগাররা।

বিজ্ঞাপন

প্রথম ইনিংসে চার উইকেট নেওয়া তাইজুল ইসলাম দ্বিতীয় ইনিংসে ৭৫ রান দিয়ে নিয়েছেন ৬টি উইকেট। দুই ইনিংস মিলিয়ে তাইজুলের উইকেট সংখ্যা ১০টি। এছাড়া নাঈম হাসান দ্বিতীয় ইনিংসে ৪০ রানে নিয়েছেন দুটি। একটি করে নিয়েছেন শরিফুল ইসলাম ও মেহেদী হাসান মিরাজ।

আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্রের শুরুতেই বাজিমাৎ বাংলাদেশের। ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এর আগেও ছয় ম্যাচ খেলেছিল বাংলাদেশ। তবে তাতে আসেনি একটিও জয়। ৭ম টেস্টে এলো প্রথম জয়।নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৮ টেস্টে বাংলাদেশের এটি দ্বিতীয় জয়, দেশের মাটিতে প্রথম। এর আগে এখানে দুই দলের ছয় টেস্টের তিনটি জিতেছিল কিউইরা, বাকি তিনটি হয়েছিল ড্র।

সব মিলিয়ে ১৩৯ টেস্টে বাংলাদেশের জয়ের সংখ্যা বেড়ে হলো ১৯টি। আর দেশের মাটিতে ৭৪ টেস্টে এটি তাদের ত্রয়োদশ জয়। ঘরের মাঠে সপ্তম প্রতিপক্ষের বিপক্ষে টেস্ট জিতল টাইগাররা। এর আগে জিম্বাবুয়ে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয় ছিল তাদের।

বিজ্ঞাপন

সিলেটের মাটিকে নিজের ঘাটি হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন বাঁহাতি টাইগার স্পিনার তাইজুল ইসলাম। অধিনায়ক শান্তর সেঞ্চুরির সঙ্গে তাইজুলের ১০ উইকেটে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক জয়। সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজের পর বাংলাদেশের তৃতীয় বোলার হিসেবে টেস্টে দ্বিতীয়বারের মতো এক ম্যাচে ১০ উইকেট নিলেন তাইজুল। ২০১৮ সালে টেস্টে প্রথমবারের মতো তাইজুল ১০ উইকেট নিয়েছিলেন সিলেটেই।

পঞ্চম দিনের শুরু থেকেই উইকেটের খোঁজে থাকা বাংলাদেশ আক্রমণাত্মক ফিল্ডিং সাজিয়ে চাপ তৈরির চেষ্টা করে। দুই প্রান্ত থেকে আক্রমণে আসেন আগের দিন দারুণ বল করা তাইজুল ও নাঈম। দুজনের বোলিংয়ের সময়ই চারজন করে ফিল্ডার রাখা হয় ব্যাটারদের আশেপাশে। তাইজুল দুটি স্লিপ এবং একটি করে সিলি পয়েন্ট ও শর্ট লেগ রেখে বল করতে থাকেন। নাঈম ব্যবহার করেন একটি করে স্লিপ, লেগ স্লিপ, শর্ট লেগ ও সিলি পয়েন্ট।

আগের দিনের ৭ উইকেটে ১১৩ রান নিয়ে খেলতে নেমেছিল কিউইরা। দিনের প্রথম ওভারেই একটি চার মারেন মিচেল। ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে মিড-অফ দিয়ে বল সীমানার বাইরে পাঠান তিনি। তবে এই ইতিবাচক অ্যাপ্রোচ জারি রাখতে পারেননি তিনি। তাকে রক্ষণে মনোযোগী হতে বাধ্য করেন বাংলাদেশের স্পিনাররা।

সতীর্থ ব্যাটারদের ব্যর্থতার মাঝে নিউজিল্যান্ডের একমাত্র ব্যতিক্রম মিচেল ফিফটি স্পর্শ করেন ৯৯ বলে। এরপর অবশ্য ইনিংস বড় করতে পারেননি। মিচেলকে ফিরিয়ে বাংলাদেশের জয়ের পথে সবচেয়ে বড় কাঁটাটি সরিয়ে দেন নাঈম। ১২০ বলে ৭ চারে ৫৮ রানে থামেন মিচেল। সুইপ করার চেষ্টায় বাড়তি বাউন্সে কুপোকাত হন তিনি। টপ এজ হয়ে উপরে উঠে যাওয়া বল লুফে নেন তাইজুল।

এই উইকেটের পেছনে কৃতিত্ব দিতে হয় শান্তকে। সাধারণত ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে ফিল্ডার যে অবস্থানে থাকেন, সেটার চেয়ে কিছুটা ভিন্ন অবস্থানে রেখেছিলেন তাইজুলকে। পরিকল্পনা কাজে লাগায় তৃপ্তি থাকবে বাংলাদেশ অধিনায়কের। প্রথম আধা ঘণ্টা কোনো সাফল্য না পাওয়ার পর মিচেল বিদায় নিলে নিউজিল্যান্ডকে দ্রুত গুটিয়ে দেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়।

এরপর টিম সাউদির পাল্টা আক্রমণ থামিয়ে ৫ উইকেট পূর্ণ করেন তাইজুল ইসলাম। শর্ট মিড উইকেটে জাকির হাসানের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন স্রেফ ২৪ বলে ৩৪ রান করা নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক। টেস্ট ক্যারিয়ারে তাইজুলের দ্বাদশ ৫ উইকেট এটি। চলতি বছর দ্বিতীয়। এরপর শোধিকে তুলে নিয়ে বাংলাদেশকে এনে দিলেন ঐতিহাসিক জয়।

সংক্ষিপ্ত স্কোরকার্ড

প্রথম ইনিংস

বাংলাদেশ: ৩১০/১০; ৮৫.১ ওভার; (জয় ৮৬, শান্ত ৩৭, মুমিনুল ৩৭, সোহান ২৯); (ফিলিপ্স ৪/৫৩, এজাজ প্যাটেল ২/৭৬, জেমিসন ২/৫২)

নিউজিল্যান্ড: ৩১৭/১০; ১০১.৫ ওভার; (ড্যারিল মিচেল ৪১, গ্লেন ফিলিপস ৪২, কেন উইলিয়ামসন ১০৪, টিম সাউদি ৩৫); (তাইজুল ৪/১০৯, মুমিনুল ৩/৪, শরিফুল ১/৫৪)

দ্বিতীয় ইনিংস

বাংলাদেশ: ৩২৮/১০; ১০০.৪ ওভার; (মিরাজ ৫০*, মুশফিকুর ৬৭, শান্ত ১০৫, মুমিনুল ৪০); (এজাজ ৪/১৪৮, সোধি ২/৭৪, সাউদি ১/৩৩)

নিউজিল্যান্ড: ১৮১/১০; ৭১.১ ওভার; (সোধি ২২, সাউদি ৩৪, মিচেল ৫৮, কনওয়ে ২২); (তাইজুল ৬/৭৫, নাঈম ২/৪০, মিরাজ ১/৪৪, শরিফুল ১/১৩)।

বাংলাদেশ ১৫০ রানে জয়ী।

বাংলাদেশ এবং নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার সবকটি ম্যাচ সরাসরি সম্প্রচার করছে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্যাটেলাইট টেলিভিশন জিটিভি। অনলাইন প্ল্যাটফর্ম র‍্যাবিটহোলবিডি‘তেও দেখা যাবে এই সিরিজ।

সারাবাংলা/এসএস

বাংলাদেশ বনাম নিউজিল্যান্ড সিলেট টেস্ট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর