কানপুর টেস্ট: রোমাঞ্চকর চতুর্থ দিনে ১৮ উইকেট পতন
৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৯:০১
বাংলাদেশ-ভারত মধ্যকার কানপুর টেস্টের আড়াই দিনের বেশি গেছে বৃষ্টির পেটে। আজ বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস ২৩৩ রানে থামলে এরপর রীতিমতো টি-টোয়েন্টি খেলেছে ভারত। বাংলাদেশের দুই স্পিনার সাকিব আল হাসান ও মেহেদি হাসান মিরাজ অবশ্য সেই সুযোগটা নিয়েছেন। নিয়মিত উইকেট তুলে নিয়েছেন দুজন। ভারত ২৮৫ রানে ৯ উইকেট হারিয়ে ফেললে ইনিংস ঘোষণা করেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা। চতুর্থ দিনের খেলা শেষে তবু বাংলাদেশই চাপে।
কারণ শেষ বিকেলে ব্যাটিং করতে নেমে দ্বিতীয় ইনিংসে ২৬ রানে ২ উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। চতুর্থ দিনের খেলা শেষে ভারতের চেয়ে ২৬ রানে পিছিয়ে বাংলাদেশ। হাতে আছে ৮ উইকেট। ম্যাচ বাঁচাতে কাল পঞ্চম দিনের প্রায় পুরো সময় ব্যাটিং করতে হবে নাজমুল হোসেন শান্তর দলকে। অপর দিকে ভারত দ্রুত বাংলাদেশকে অলআউট করতে পারলে জয়ের কাছাকাছি চলে যাবে।
আজ শেষ বিকেলে উইকেট কামড়ে পড়ে থাকার ব্যাটিং করেছেন সাদমান ইসলাম। ৪০ বল খেলে ৭ রানে অপরাজিত আছেন সাদমান। এভাবে মাটি কামড়ে পড়ে থাকার ব্যাটিং করে গেলে বাংলাদেশের জন্য অবশ্য এই ম্যাচ বাঁচানো কঠিন কিছুও নয়।
সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) আজ কানপুর টেস্টের চতুর্থ দিনটা হয়েছে রোমাঞ্চকর। দুই দল মিলিয়ে উইকেট পরেছে মোট ১৮টি! বাংলাদেশ টেস্টের প্রথম দিনে ৩ উইকেটে ১০৭ রান তোলার পর বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হয়ে যায়। টেস্টের দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনের বৃষ্টির কারণে একটা বলও মাঠে গড়ায়নি। আজ চতুর্থ দিনে দেখা গেল উইকেটের বৃষ্টি!
৩ উইকেটে ১০৭ রান নিয়ে খেলা শুরু করা বাংলাদেশ নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়েছে। তবে একপ্রান্তে অবিচল ছিলেন মুমিনুল হক। অনেকদিন ধরে বড় রান পাচ্ছিলেন না মুমিনুল। তা নিয়ে সমালোচনাও চলছিল। আজ স্বস্তির এক সেঞ্চুরি পেলেন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক। অনেকদিন পর ব্যাটিং করতে নেমেছিলেন তিন নম্বরে। তিনে ফিরেই ভারতের মতো শক্ত বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে সেঞ্চুরি তুলে নিলেন।
তিনে নামা মুমিনুল অপরাজিত ছিলেন ইনিংসের শেষ অবদি। ১৯৪ বল খেলে ১৭টি চার ১টি ছয়ে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন ১০৭ রানে। ৬৫ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে মুমিনুলের এটা ১৩তম সেঞ্চুরি। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩১ রান করেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। মুশফিকুর রহিম, লিটন দাসরা সেট হয়েও বড় রান পাননি। সাকিব আল হাসান নেমেছিলেন সাত নম্বরে। ১৭ বলে ৯ রান করে কাটা পরেছেন বাংলাদেশি তারকা।
পরে ভারত তাদের ইনিংসের শুরুতেই রীতিমতো ‘টি-টোয়েন্টি’ খেলেছে! বৃষ্টির পেটে গেছে আড়াই দিন, তবুও টেস্টের ফলাফল বের করার জন্য খেলেছেন স্বাগতিকরা। ব্যাটিং করেছেন সেভাবে, আবার বোলিংও করেছেন সেই চেষ্টায়। যাসম্বী জয়সওয়াল ও রোহিত শর্মা ওপেনিং জুটিতে মাত্র ৩.৫ ওভারে তোলেন ৫৫ রান! রোহিতকে ১১ বলে ২৩ রানে ফেরান মেহেদি হাসান মিরাজ। এরপর শুভমান গিলকে নিয়ে ভারতকে টেনেছেন জয়সয়াল।
৫১ বলে ১২টি চার ২টি ছক্কায় ৭২ রান করে হাসান মাহমুদের বলে ফিরেছেন জয়সয়াল। এরপর ভারতকে চেপে ধরার সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। ব্যক্তিগত ৫ রানের মাথায় বিরাট কোহলিকে রান আউট করার সহজ সুযোগ মিস করেছেন বাংলাদেশি পেসার খালেদ আহমেদ। খানিক বাদে রিষভ পন্ত ৯ রান করে ফিরলে কোহলি আর লোকেশ রাহুল মিলে ফের চড়াও হন বাংলাদেশি বোলারদের ওপরে।
তবে দ্রুত রান তুলতে থাকা ভারতীয় ব্যাটাররা বাংলাদেশের দুই স্পিনার সাকিব-মিরাজের টোপ গিলে উইকেটও দিয়েছেন। কোহলি ৩৫ বলে ৪৭ রান করে সাকিব আল হাসানের বলে সরাসরি বোল্ড হয়েছেন। এরপর রবিচন্দ্রন অশ্বিনকেও বোল্ড করেছেন সাকিব। ৪৩ বলে ৭টি চার ২টি ছয়ে ৬৮ রান করা লোকেশ রাহুলকে দারুণ এক বলে স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন মেহেদি হাসান মিরাজ। এরপর ভারতের লেজের ব্যাটারদের সুবিধা করতে দেয়নি বাংলাদেশ। নবম উইকেট হারিয়ে ফেলার পর ইনিংস ঘোষণা করে দেন ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা। বাংলাদেশের পক্ষে সাকিব আল হাসান ৪টি ও মেহেদি হাসান মিরাজ সমান ৪টি উইকেট তুলে নিয়েছেন। অপর উইকেটটি পেসার হাসান মাহমুদের।
ইনিংস ঘোষণায় ভারতের উদ্দেশ্য ছিল পরিষ্কার, শেষ বিকেলে কিছু উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশের চাপ বাড়ানো। ভারত সেটা পেরেছেও। পুরো সিরিজে ব্যর্থ জাকির হাসান ১০ রান করে অশ্বিনের বলে আউট হয়েছেন। এরপর নাইটওয়াচম্যান পেসার হাসান মাহমুদকে ব্যাটিং করতে পাঠায় বাংলাদেশ। হাসানও ফেরেন অশ্বিনের বলে। প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান মুমিনুল হক ও সাদমান ইসলাম এরপর আর বিপদ হতে দেননি। সাদমান অপরাজিত ৭ রানে, মুমিনুল অপরাজিত শূন্য রানে।
২৬ রানে পিছিয়ে থেকে চতুর্থ দিনের খেলা শেষ করেছে বাংলাদেশ। কানপুর টেস্টের পঞ্চম দিনে এখন রোমাঞ্চের অপেক্ষা।
সারাবাংলা/এসএইচএস