গোয়ালিয়রে বাংলাদেশের বড় হার
৬ অক্টোবর ২০২৪ ২২:৩৫
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশের ব্যাটিংটা হয়েছে হতশ্রী। পরে জবাব দিতে নেমে শুরু থেকেই মারকাটারি ব্যাটিং করেছে ভারত। দুই মিলিয়ে ভারতের বিপক্ষে তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথমটিতে বড় ব্যবধানেই হেরেছে বাংলাদেশ।
গোয়ালিয়রে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ৭ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। সিরিজে ১-০তে এগিয়ে গেল ভারত। দিল্লিতে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ ৯ অক্টোবর। ১২ অক্টোবর হায়দরাবাদে হবে তৃতীয় টি-টোয়েন্টি। সিরিজ হার এড়াতে হলে ওই দুই ম্যাচই জিততে হবে বাংলাদেশকে।
রোববার (৬ অক্টোবর) গোয়ালিয়রে আগে ব্যাটিং করে ১২৭ রানে থেমে গেছে বাংলাদেশ। ভারতের মতো দলের বিপক্ষে তাদের ঘরের মাঠে এতো অল্প পুঁজি নিয়ে ম্যাচ জেতা পাহাড় ডিঙ্গানোর মতোই কঠিন। বোলিংয়ের শুরুটা ভালো হলে তাও একটা সুযোগ তৈরি হলেও হতে পারত। কিন্তু হয়েছে তার বিপরীতটা।
ভারত দ্বিতীয় ওভারে ওপেনার অভিষেক শর্মাকে হারালেও পাওয়ার প্লেতেই তুলে ফেলে ৭১ রান। ম্যাচের ভাগ্য অনেকটা সেখানেই নির্ধারিত হয়েছে। তারপর কততম ওভারে গিয়ে বাংলাদেশের হার নিশ্চিত হয় সেটাই ছিল দেখার!
দ্বিতীয় ওভারে ভুল বুঝাবুঝিতে রান আউট হয়েছেন অভিষেক শর্মা। তবে ফেরার আগে মাত্র ৭ বল খেলেই ১৬ রান করেন অভিষেক। তিনে নেমে অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব রীতিমতো ঝড় তুলেছিলেন। মোস্তাফিজুর রহমানের লেগ সাইটের বলে ক্যাচ তুলে দেওয়ার আগে মাত্র ১৪ বলে ২৯ রান করেন যাদব। চার মেরেছেন ২টি, ছক্কা ৩টি।
খানিক বাদে দারুণ এক সুইং বলে সাহ্জু স্যামসনকে ফেরান মেহেদি হাসান মিরাজ। মিরাজকে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে রিশাদ হোসেনের হাতে ধরা পরার আগে ১৯ বলে ২৯ রান করেন স্যামসন। অভিষিক্ত নিতিশ কুমারকে নিয়ে বাকি কাজটা সেরেছেন হার্দিক পান্ডিয়া।
শেষ দিকে হার্দিক পান্ডিয়া রীতিমতো কচুকাটা করেছেন বাংলাদেশি বোলারদের। তাসকিন আহমেদকে পর পর তিন বলে ৪, ৪, ৬ হাঁকিয়ে জয় নিশ্চিত করা হার্দিক মাত্র ১৬ বলে ৩৯ রানে অপরাজিত ছিলেন। হার্দিক চার হাঁকিয়েছেন ৫টি, ছক্কা ২টি। তরুণ নিতিশ অপরাজিত ছিলেন ১৫ বলে ১৬ রান করে। ১১.৫ ওভারে সাত উইকেটের জয় নিশ্চিত করেছে ভারত। বাংলাদেশের হয়ে মোস্তাফিজুর রহমান ও মেহেদি হাসান মিরাজ একটি করে উইকেট নিয়েছেন।
এর আগে হতাশার ব্যাটিং করেছে বাংলাদেশ। টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান ভারতীয় অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব। গোয়ালিয়রের এই উইকেটে বাড়তি বোলিং সুবিধা নেই। আবার ভারতের বোলিং আক্রমণেও জাসপ্রিত বুমরাহ, কুলদ্বীব যাদবদের মতো বড় বড় অস্ত্রো নেই। সে হিসেবে বাংলাদেশের সামনে সুযোগ ছিল চ্যালেঞ্জিং একটা স্কোর দাঁড় করানো। কিন্তু সুযোগ কাজে লাগানো তো দূরের কথা উল্টো টপাটপ উইকেট হারিয়ে অল্পতেই গুটিয়ে গেছে বাংলাদেশের।
ওপেনার লিটন দাস নিজের মোকাবিলা করা প্রথম বলটা চার হাঁকিয়ে পরের বলেই ক্যাচ আউট হয়েছেন। আর্শদ্বীপ সিংয়ের সুইং বল টেনে খেলতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন লিটন। খানিক বাদে সেই আর্শদ্বীপের বাইরের বল স্ট্যাম্পে টেনে এনে বোল্ড হয়েছেন তরুণ ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন। বাংলাদেশের ইনিংসের বয়স তখন মাত্র ২.১ ওভার!
ফর্মে থাকা তাওহিদ হৃদয়ের ওপর বড় দায়িত্ব ছিল সেই অবস্থা থেকে দলকে টেনে তোলার। তরুণ হৃদয় পারেননি। বরুন চক্রবর্তীর অফস্পিন উড়িয়ে খেলতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন। সেই যাত্রায় ‘জীবন’ পেয়েও ইনিংস লম্বা করতে পারেননি হৃদয়। সেই বরুনের শর্ট বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে টাইমিং মিলাতে পারেননি। বল চলে যায় লং অফে হার্দিক পান্ডিয়ার হাতে।
অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ নিজের মোকাবিলা করা দ্বিতীয় বলেই উড়িয়ে খেলতে গিয়ে টাইমিং গড়বড় করে উইকেট বিলিয়ে দিয়েছেন। ২ বলে আউট হয়েছেন ১ রান করে। তরুণ জাকের আলী মায়াঙ্ক আগারওয়ালকে লম্বা একটা ছক্কা হাঁকিয়ে ভালো কিছুর বার্তা দিয়েছিলেন। পরের ওভারে বরুন চক্রবর্তীর দুসরা বুঝতেই পারেননি জাকের। সরাসরি বোল্ড হয়েছেন ৬ বলে ৮ রান করে।
ইনিংস ধরে খেলতে থাকা অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তও সেই সময় আউট হয়ে চাপ বাড়ান বাংলাদেশের। ২৫ বলে ১টি করে চার-ছয়ে ২৭ রান করে শান্ত যখন ফিরলেন বাংলাদেশের স্কোর তখন ৭৫/৬।
সেখান থেকে লোয়ার অর্ডার ব্যাটারদের নিয়ে বাংলাদেশকে একশ ত্রিশের কাছাকাছি নিয়েছেন মেহেদি হাসান মিরাজ। ভারতীয় বোলিংয়ের বিপক্ষে খোলসবন্দি না হয়ে পরে উইকেট জিইয়ে রেখে রান তুলে গেছেন মিরাজ। ৩২ বলে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন ৩৫ রান করে। প্রায় ১৮ মাস পর টি-টোয়েন্টি দলে সুযোগ পাওয়া মিরাজের ইনিংসে চারের মার ৩টি।
শেষ দিকে রিশাদ হোসেনের ৫ বলে ১১ ও তাসকিন আহমেদের ১৩ বলে ১২ রানের ইনিংসগুলো দারুণ সঙ্গ দিয়েছে মিরাজকে। ভারতের হয়ে আর্শদ্বীপ সিং ও বরুন চক্রবর্তী।
সারাবাংলা/এসএইচএস