হেসেখেলে সিরিজ জয় বাংলাদেশের
৩০ নভেম্বর ২০২৪ ১৬:৩৩
লরা ডিলানির লেগ স্টাম্প লাইনে পিচ করা ফুল লেংথের বল। স্বর্ণা আক্তার গাইড করে দিলেন ফাইন লেগে। বল পার হলো বাউন্ডারি লাইন। ডাগ আউটে বাকিদের উচ্ছ্বাস। তবে খুব বেশি নয়। উইনিং শট নেয়ে সোবহানা-ফাহিমাও ভাবলেশহীনই ছিলেন। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে পাঁচ উইকেট আর ৩৭ বল হাতে রেখে সহজ জয়ে সিরিজ জয় নিশ্চিত করল বাংলাদেশ। সব মিলিয়ে ওয়ানডেতে নিজেদের তৃতীয় সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জিতল বাংলাদেশের মেয়েরা।
আগের ম্যাচের দুই পারফর্মার ফারজানা পিংকি-শারমিন আক্তার সুপ্তা আজও ব্যাট হাতে উজ্জ্বল। ব্যাটিং অর্ডারের নিচের দিকে অধিনায়ক নিগার সুলতানার ঝলমলে এক ইনিংসের সাথে স্বর্ণার দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে হেসেখেলেই জিতল বাংলাদেশ। সিরিজ শুরুর আগে বাংলাদেশের ব্যাটিং ব্যর্থতা নিয়ে যে সমালোচনা ছিল, সেটার উত্তর কিছুটা হলেই দিতে পেরেছেন জ্যোতি-পিংকিরা।
১৯৪ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নেমে শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদশের। দলীয় ১৫ রানের অরলার প্রেন্ডারগেস্টের বলে গ্যাবি লুইসের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন মুর্শিদা খাতুন। শুরুর সেই ধাক্কা বাংলাদেশ কাটিয়ে উঠে পিংকি ও চার রানের জন্য সেঞ্চুরি মিস করা সুপ্তার ব্যাটে।
পাঁচ ওভারের মাথায় প্রথম উইকেট পড়ার পর পরের পাঁচটা ওভার দুজন মিলে সাবধানেই ব্যাট করেন। দেখেশুনে ঝুঁকিহীন ব্যাটিংয়ে তোলেন মাত্র ১০ রান। তবে এরপর থেকেই হাত খুলে খেলতে শুরু করেন পিংকি। নিয়মিত স্ট্রাইক রোটেশনে সচল রেখেছেন রানের চাকা। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে পেলেন ফিফটি। সাথে ছয়টি বাউন্ডারি দিয়ে সাজিয়েছেন নিজের দ্বাদশ ওয়ানডে ফিফটি।
অবশ্য ফিফটি ছোঁয়ার পর আর ইনিংস বড় করতে পারেননি। লরা ডিলানির শর্ট লেংথের বলে জোরে পুল করতে গিয়ে শর্ট মিড উইকেটে লুইসের হাতে ক্যাচ দিয়ে মাঠ ছাড়েন হতাশা নিয়ে। ৮৯ বলে ৫০ রানের ইনিংসের পথে সুপ্তার সাথে গড়েছেন ৮৫ রানের জুটি। আগের ম্যাচেও ১০৪ রানের জুটি গড়েছিলেন এই দুজন।
সুপ্তা আজ একটু রয়েসয়েই খেলছিলেন। পিংকির সাথে ৮৫ রানের জুটি ভাঙার পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তিনিও। অ্যাভা ক্যানিংয়ের বলে আউট হওয়ার আগে ৬৩ বলে চারটি চারে খেলেন ৪৩ রানের ইনিংস। সুবিধা করতে পারেননি সোবহানা মোস্তারিও। লরা ডিলানির দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফেরার আগে খেলেন ১৬ রানের ইনিংস।
দলের জয় সহজ করেছেন ম্যাচ সেরা জ্যোতি। চারে নেমে ৩৯ বলে খেলেছেন ৪০ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস। ম্যাচের প্রথম ছয়টাও এসেছে তার ব্যাট থেকেই। আর্লেন কেলির লাইনে পিচ করা বল মিস করে বোল্ড হয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। অবশ্য জয় থেকে তখন মাত্র ১৪ রান দূরে ছিল দল। এর আগে স্বর্ণার সাথে গড়েন ৫৩ রানের জুটি। এক ছক্কা আর এক চারে ২৯ বলে ২৯ রানের অপরাজিত থেকে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন স্বর্ণা।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ব্যর্থ হন দুই আইরিশ ওপেনার সারা ফোর্বস ও গ্যাবি লুইস। এই দুজন ফেরার পর ইনিংস টেনে নেন অ্যামি হান্টার। প্রথম ম্যাচে রানের খাতা খুলতে না পারলেও আজ করেছেন ফিফটি। তার সাথে অরলা প্রেন্ডারগেস্ট আর লরা ডিলানির ত্রিশোর্ধ্ব ইনিংসে বাংলাদেশের বিপক্ষে নিজেদের ইতিহাসের সর্বোচ্চ ১৯৩ রানের দলীয় সংগ্রহ পায় আয়ারল্যান্ড।
তৃতীয় উইকেটে অরলার সাথে ২৪ ওভার ব্যাট ৯১ রানের জুটি গড়েন উইকেটকিপার ব্যাটার অ্যামি। ধীরগতির জুটি হলেও পরিস্থিতি অনুযায়ী সেটাই ছিল আদর্শ। কিন্তু ৩৫ তম ওভারে ব্রেক থ্রু পায় বাংলাদেশ। স্বর্ণা আক্তারের বলে রান আউটে মাঠ ছাড়েন অরলা। চার বলের ব্যবধানে ব্যক্তিগত ৬৮ রানে হান্টারকে ফেলেন লেগ বিফোরের ফাঁদে। এক ওভারে জোড়া উইকেট হারিয়ে ব্যাকফুটে চলে যায় আইরিশরা।
শেষদিকে ইনিংস টেনেছেন লরা ডিলানি। লিয়াহ পলের সাথে ২৬ রানের জুটির পর উনা রেমন্ডহয়ের সাথে গড়েন ৩৭ রানের জুটি। এই দুই জুটিতেই দুইশো ছোঁয়া সংগ্রহ পেয়েছে আয়ারল্যান্ড। স্বর্ণা আক্তারের দুর্দান্ত এক থ্রোতে রান আউট হওয়ার আগে ৫০ বলে ৩৩ রান করে লরা।
আজ আইরিশদের ছয় উইকেটের মধ্যে দুটি নেন সুলতানা খাতুন। চার ওভারে মাত্র ছয় রানের স্পেলে এক উইকেট পেয়েছেন স্বর্ণা। নাহিদা নেন এক উইকেট।
সারাবাংলা/জেটি
নিগার সুলতানা জ্যোতি বাংলাদেশ আয়ারল্যান্ড সিরিজ বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট