‘মানুষ অবদান মনে রাখে না’
২২ জানুয়ারি ২০২৫ ১৬:২৬ | আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২৫ ১৭:৩৭
বিপিএলে উড়ছে রংপুর রাইডার্স। চলছে তাদের জয়রথ, থামানোর কেউ যেন নেই। সামনে যে-ই আসুক, পরিস্থিতি যতই প্রতিকূল হোক; ঠিকই দুমড়েমুচড়ে জয় ছিনিয়ে এনেছে দলটা। আট ম্যাচে টানা আট জয়, অঘোষিতভাবে সবার আগে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ এই দল নিশ্চিত করেছে প্লে অফ। আর রংপুরের এই অপ্রতিরোধ্য যাত্রায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন নুরুল হাসান সোহান। কখনো কিপিং গ্লাভস হাতে, কখনো ডেথ ওভারে ব্যাটিংয়ে নেমে দুঃসাধ্য সব সমীকরণ মিলিয়ে। আর অধিনায়ক হিসেবে নিজের সম্ভাব্য সেরা অস্ত্রগুলো ব্যবহার করে দলের জন্য সেরাটা আদায় করার ব্যাপার তো আছেই। সব মিলিয়ে মাঠে চরম ব্যস্ত সোহান।
গতকাল খেলা ছিল না বিপিএলের। তবুও সোহানের ব্যস্ততা ছিল দেখার মতো। একদিন আগেই রংপুর থেকে ট্রফি প্যারেড করে ফিরেছেন তারা, কিন্তু পরদিন এসেই নেমে গেছেন অনুশীলনে। চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের আউটার গ্রাউন্ডে বেশ লম্বা সময় ব্যাটিং অনুশীলন-কিপিং ড্রিল সেরেছেন সোহান। এরপর নানান চেষ্টার পর এই প্রতিবেদকের সু্যোগ মিলল তার সাথে কথা বলার।
রংপুরের জয়রথ, নিজের ব্যাটিং রোল, ক্যারিয়ারের পাওয়া-না পাওয়া, অধিনায়কত্ব থেকে শুরু করে ক্রিকেট সংস্কৃতি; অনেক কিছু নিয়েই সর্বশেষ ২০২৩ সালে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা সোহান কথা বললেন সারাবাংলা ডট নেট-এর সাথে। সেই সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো নিচে-
সারাবাংলা: নিচের দিকে নেমে ছোট কিন্তু কার্যকরী ইনিংগুলো খেলার পরেও লাইমলাইটে একটু কম আসা হয়, এ নিয়ে আক্ষেপ কাজ করে?
সোহান: না আসলে টিমে একেকজনের রোল একেকটা থাকে, আমার একটা রোল আছে। হয়তো ১০ বলে ২০ রান বা ৭ বলে ১৫ রান; এসব অবদান মানুষের মনে হয়তো থাকে না। ভুলে যায়। আমার কাছে মনে হয় রোলটাই এরকম। টিম আমার কাছে কতটুকু চাচ্ছে, আমি কতটুকু দিতে পারছি এটাই গুরুত্বপূর্ণ। সবসময় টিমের জন্য কন্ট্রিবিউট করতে চাই। আমি বড় রান করলাম, পঞ্চাশ করলাম, একশ করলাম, কিন্তু ম্যাচ জিতলাম না, এটার মূল্য নেই। কখনো সফল হব, কখনো ব্যর্থ হব। টিমের জন্য কতটুকু কন্ট্রিবিউট করতে পারছি এটাই আসল ব্যাপার।
সারাবাংলা: শেষদিকে নেমে খেলা ইনিংসগুলো মানুষ হয়তো মনে রাখে না। কিন্তু টিম ম্যানেজমেন্ট কিংবা সিলেকশন প্যানেলের লোকজন সেসব লক্ষ্য করেন না হয়তো সেভাবে…
সোহান: দিনশেষে আমার কাছে নিজের স্যাটিসফ্যাকশনটাই গুরুত্বপূর্ণ, কে কী মনে করছে সেটা না। আমাদের কালচারের কারণে আমাদের সবার ধৈর্য কম। সবক্ষেত্রেই এটা বড় একটা কারণ। আর ক্রিকেটের ক্ষেত্রে আমরা আরো বেশি ইমোশনাল। তো কে কী বলছে না বলছে, এটার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ নিজের সন্তুষ্টি।
সারাবাংলা: ব্যাটিংয়ে ইম্প্রোভাইজেশন কেমন হচ্ছে এবার?
সোহান: কাজ করছি এটা নিয়ে। গত বছর কিন্তু ছয়ে-সাতে ব্যাট করে আমি ২০০-২৫০ রান করেছি। তো জিনিসটা এরকম না। যেটা বললাম, টিমের প্রতি কন্ট্রিবিউট করার চেষ্টা করছি। চেষ্টা করছি নিজেকে আরো কতটা ইমপ্রুভ করা যায়।
আরেকটা বড় ব্যাপার রংপুরের হয়ে খেলতে পারছি। ফ্র্যাঞ্চাইজি হিসেবে বাংলাদেশের ক্রিকেট বলেন কিংবা স্পোর্টস ; তাদের অবদান অনেক বেশি। তাদের টিম ম্যানেজমেন্ট কিংবা মালিক যারা; তারা আসলে দলটাকে ধারণ করেন নিজেদের মধ্যে। একটা প্যাশনের জায়গা থেকে তারা এটা করেন। তারা যেভাবে সবকিছু চালাচ্ছেন, ম্যানেজ করছেন; সবকিছুতেই পেশাদারিত্বর ছাপ আছে। তাদের মতো দেশের আরো বড় প্রতিষ্ঠানগুলো যদি এগিয়ে আসে, তাহলে দেশের ক্রিকেট, ফুটবল; সবই এগিয়ে যাবে।
সারাবাংলা: আট ম্যাচে আট জয়, টিমের কোন জিনিসটা সবচেয়ে বেশি প্রভাবে ফেলেছে এই পারফরম্যান্সে?
সোহান: এটা ওরকম কিছু না। আমরা সবাই মিলে একটা দল হয়ে খেলার চেষ্টা করছি। দলের সবাই কন্ট্রিবিউট করার চেষ্টা করছে।
সারাবাংলা: এবারের আসরে নিজের অধিনায়কত্ব কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
সোহান: কিপিং করি, ব্যাটিং করি, অধিনায়কত্ব করি; যেভাবেই থাকি টিমের জন্য শতভাগ দেয়ার চেষ্টা করি। টিমের জন্য কতটুকু সততার সাথে দিতে পারছি ওটাই গুরুত্বপূর্ণ। আর যেটা বললাম এখানে নিজের সন্তুষ্টির জায়গা আছে। ওখানে অবশ্যই ফলাফল থাকবে, সাফল্য থাকবে, ব্যর্থতা থাকবে। আর সন্তুষ্টির জায়গাটায় থাকবে কতখানি দেয়ার চেষ্টা করছি আর দিতে পারছি।
সারাবাংলা: রংপুরের এবারের পারফরম্যান্সে আপনার অধিনায়কত্বের একটা বড় অবদান আছে, অনেকেই বলছে। আপনি কীভাবে দেখছেন?
সোহান: আমার কাছে মনে হয়, আলহামদুলিল্লাহ ভালো। টুর্নামেন্টের মাঝপথে আছি। যেহেতু জিএসএল চ্যাম্পিয়ন হয়েছি, চেষ্টা থাকবে দলকে ফাইনালে নিয়ে যাওয়ার। টুর্নামেন্ট শেষ হলে বলতে পারব, নিজে নিজেকে নিয়ে কতটা সন্তুষ্ট।
সারাবাংলা: জাতীয় দলে এখন কোনো টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক নেই। সেখানে নিজেকে দেখেন? বা কোনো প্রত্যাশা আছে?
সোহান: আমি যেটা বললাম, আমাদের ধৈর্য অনেক কম। সবকিছুই ধৈর্য নিয়ে করতে হবে। বাংলাদেশের ক্যাপ্টেন্সি করা সবসময়ই একটা প্রাইডের ব্যাপার, চ্যালেঞ্জের ব্যাপার। আর চ্যালেঞ্জগুলো আমি সবসময় এঞ্জয় করি
সারাবাংলা/জেটি