হামজার কণ্ঠে ‘বাংলাদেশ! জিন্দাবাদ!’
১৭ মার্চ ২০২৫ ১৮:০৪ | আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২৫ ১৯:৫৪
বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাস তো বটেই সামগ্রিক ক্রীড়াঙ্গনের জন্যই আজ গুরুত্বপূর্ণ এক দিন। ১৭ মার্চ দিনটা চাইলে দেশের ফুটবলপ্রেমীরা আলাদা করে ক্যালেন্ডারে মার্ক করে রাখতেই পারেন। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা প্রথম বাংলাদেশি ফুটবলার হামজা চৌধুরী আজ (সোমবার) সকালে এসে পৌঁছেছেন বাংলাদেশে। উপলক্ষ্য আগামী ২৫ মার্চ বাংলাদেশের জার্সিতে আন্তর্জাতিক ফুটবলে অভিষেক ম্যাচ খেলা।
দীর্ঘ ১১ বছর পর দেশে ফিরলেন হামজা। তার আগমন কিংবা প্রত্যাবর্তন, যাই বলুন না কেন; দেশের ক্রীড়াঙ্গনের সবার নজর সকাল থেকে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়েতে। নিরাপত্তা বলয়ে থেকে বাফুফের কর্মকর্তাদের সাথে নিজের বাবা ও চাচাকে নিয়ে ভিআইপি গেটের সামনে হামজাকে দেখা যেতেই শুরু হলো ক্যামেরাপার্সন, ফটোগ্রাফার আর মাল্টিমিডিয়া জার্নালিস্টদের হুড়োহুড়ি। কে কার আগে ছবি নেবেন, কার ফ্রেমে আগে বন্দী হবেন হামজা। হৈ-হট্টগোলের মধ্যে কে কী বলছেন, বোঝার উপায় নেই। এর আগে থেকেই মূল ফটকের কাছে ‘হামজা! হামজা! স্লোগান তুলে অপেক্ষা করছিলেন সমর্থকগোষ্ঠী ‘বাংলাদেশ ফুটবল আল্ট্রাস’।
বাফুফের কর্মকর্তারা মিনিট দুয়েকের চেষ্টায় সাংবাদিক-ক্যামেরাপার্সনদের শান্ত করার বৃথা একটা চেষ্টা করলেন বটে। তবে সেটা কাজে এলো না আদৌ। সেই হৈ-হল্লাতেই শুরু হলো মিনিট খানেকের সংবাদ সম্মেলন। ইংরেজি আর সিলেটি ভাষার মিশ্রণে কথা বললেন হামজা। অল্প কথাতেই জানিয়ে দিলেন ভারতকে হারাতে চান। এর আগে তাকে বরণের আয়োজন দেখে হামজা বলেছিলেন, ‘আমার হৃদয় আজ পূর্ণ।’
ছোট্ট সেই সংবাদ সম্মেলনের পর সানরুফ সম্পন্ন একটা গাড়িতে উঠেছেন হামজা, সপরিবারের রওনা দেন হবিগঞ্জ জেলার বাহুবলে অবস্থিত নিজ গ্রাম স্নানঘাটের পথে। বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে সানরুফ খুলে দুই হাত প্রসারিত করে দিলেন দুই পাশে। সাংবাদিক থেকে শুরু করে সাধারণ ভক্ত; সবাই ছুঁয়ে দেখলেন হামজাকে। ভক্তদের ভালোবাসার কেবল শুরু তখন।
পুলিশ পাহাড়ায় বাকিটা রাস্তা তার সঙ্গী হয়ে রইল বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের গাড়ি। যারা বিমানবন্দর থেকে হামজার বাড়ি পর্যন্ত রাস্তার পুরোটা সময় সরাসরি দেখানোর চেষ্টা করেছে সেই যাত্রাটা। আঞ্চলিক মহাসড়কে বানানো হয়েছে হামজার ছবি সম্বলিত অভ্যর্থণা তোরণ। গ্রামের রাস্তায় ঢোকার পথে দুই পাশে স্কুলের ছোট ছাত্র-ছাত্রীরা সারি বেধে দাঁড়িয়ে ছিল ফুলের পাপড়ি হাতে নিয়ে। হামজার গাড়িটা সরু রাস্তায় আসা মাত্রই ভিজল ফুলের বৃষ্টিতে। পেছনে ছিল বিশাল মোটর সাইকেল বহরও।
হামজার বাড়িতেও এলাহি কাণ্ড। ছেলে আসবে বলে বাবা দেওয়ান মোরশেদ চৌধুরীও সাজিয়েছেন গেট, উঠানে বানিয়েছেন ছোট্ট একটা মঞ্চও। ঘর থেকে বেরিয়ে মঞ্চতে উঠতে গিয়ে সে আরেক কাণ্ড। মানুষের ভিড়ে পা ফেলা দায়, তবুও হাসিমুখে মঞ্চে উঠেছেন হামজা, নিজের ফোনে ছবিও তুলেছেন তাকে এক নজর দেখতে আসা মানুষদের। কারণ হামজা নিজেও জানেন, দেশের গ্রামাঞ্চলে ফুটবলের ক্রেজটা কেমন, কতটা আগ্রহ নিয়ে সবাই এসেছেন তাকে দেখতে।
তাই কথা বলতে এসে হামজা অল্প কথায় জানালেন, ভক্তদের ভালোবাসা ছুঁয়ে গেছে তাকে। ধন্যবাদ জানিয়েছেন নিজের আঞ্চলিক সিলেটি ভাষাতেই। ফেসবুকে প্রকাশিত এক ভিডিওতে হামজাকে বলতে দেখা যায়, ‘আসসালামু আলাইকুম এভ্রিওয়ান, আমার খুব ভালা লাগসে যে আফনারা সব যে আইসো আমারে দেখবার লাগি।’
ধন্যবাদ পর্ব শেষে হামজার কন্ঠে শোনা গেল বাংলাদেশ নিয়ে স্লোগানও। অথচ বিমানবন্দর থেকে স্নানঘাটে নিজের বাড়ির সেই মঞ্চ পর্যন্ত পুরোটা সময়ই শোনা গেছে ‘হামজা! হামজা!’ স্লোগান। আর হামজা নিজে বললেন, ‘বাংলাদেশ! জিন্দাবাদ! জিন্দাবাদ! বাংলাদেশ!’
সারাবাংলা/জেটি