সিলেটে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথমটিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হেরেছিল বাংলাদেশ। যোজন যোজন পিছিয়ে থাকা দলটার বিপক্ষে টেস্টে হারার পর সমালোচনা কম উঠেনি। চট্টগ্রাম গিয়ে সেই সমালোচনার জবাব দিল বাংলাদেশ দল। সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে ৩ দিনেই জিম্বাবুয়েকে ইনিংস ব্যবধানে হারিয়ে দিলো বাংলাদেশ।
এমন দাপুটে জয়ে অসাধারণ অবদান মেহেদি হাসান মিরাজের। ব্যাট হাতে সেঞ্চুরি করা মিরাজ পরে দ্বিতীয় ইনিংসে একাই নিয়েছেন পাঁচ উইকেট। দুর্দান্ত মিরাজে দাপুটে জয়ে সিরিজ শেষ হলো ১-১ ব্যবধানের সমতায়।
চট্টগ্রামে আজ যখন দিনের শেষ ওভারের খেলা চলছিল তখন ক্রিজে জিম্বাবুয়ের দশম উইকেট জুটি। বাংলাদেশ আজই জয় নিশ্চিত করবে নাকি ম্যাচটা পরের দিনে নিতে পারবে জিম্বাবুয়ে? এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল। এই স্নানুচাপেই কিনা জিম্বাবুয়ের নবম ব্যাটার রান আউট হয়ে বসলেন। তাতে তৃতীয় দিনেই ইনিংস ব্যবধানে জয় নিশ্চিত হয়েছে বাংলাদেশের।
জিম্বাবুয়েকে প্রথম ইনিংসে ২২৭ রানে গুটিয়ে দিয়ে সাদমান ইসলাম অনিক ও মেহেদি হাসান মিরাজের সেঞ্চুরিতে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৪৪৪ রানের বিশাল স্কোর গড়ে বাংলাদেশ। তাতে জিম্বাবুয়ের সামনে লিড দাঁড়ায় ২১৭ রানের। এতো বড় লিডের জবাবে আফ্রিকান দলটির দ্বিতীয় ইনিংস শেষ পর্যন্ত থেমেছে ১১১ রানে। যাতে ইনিংস ও ১০৬ রানের বিশাল জয় নিশ্চিত হয়েছে বাংলাদেশের।
সিলেট টেস্টে ব্যাটিংটা ডুবিয়েছিল বাংলাদেশকে। চট্টগ্রামে দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের সঙ্গে দাপুটে বোলিংও করল বাংলাদেশ। বিশেষ করে দুই স্পিনার তাইজুল ইসলাম ও মেহেদি হাসান মিরাজ। প্রথম ইনিংসে একাই ৬ উইকেট নিয়েছিলেন তাইজুল। সিলেট টেস্টে দশ উইকেট নেওয়া মিরাজ প্রথম ইনিংসে উইকেটশূন্য ছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে পাঁচ উইকেট তুলে নিয়েছেন মিরাজ। তিন উইকেট নিয়েছেন তাইজুল। অপর স্পিনার নাঈম হাসান নিয়েছেন ১ উইকেট।
বুধবার (৩০ এপ্রিল) বাংলাদেশের দেওয়া ২১৭ রানের লিডের জবাব দিতে নেমে শুরু থেকেই বাংলাদেশি স্পিন আক্রমণের বিপক্ষে দাঁড়াতে পারেনি জিম্বাবুয়ে। দলীয় ৮ রানের মধ্যে জিম্বাবুয়ের দুই উইকেট তুলে নেন তাইজুল ইসলাম। দলীয় ২২ রানে শেন উইলিয়ামসকে ফেরান নাঈম হাসান।
মেহেদি হাসান মিরাজ দৃশ্যাপটে হাজির খানিক বাদে। ৬৯তম ওভারে তিন বলের ব্যবধানে দুই উইকেট তুলে নেন মিরাজ। ২৫ রান করা জিম্বাবুয়ান অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিনকে সরাসরি বোল্ড করার পর ওয়েসলে মাদভেরেকে এলবির ফাঁদে ফেলেন মিরাজ। এরপর থেকে বাকিদের দাঁড়াতেই দেননি মিরাজ।
জিম্বাবুয়ের শেষ ছয় ব্যাটারের মধ্যে দুই অঙ্কের কোটা পেরুতে পেরেছেন কেবল একজন, ওয়েলিংটন মাসাকাদজা। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে শেষ পর্যন্ত ১১১ রানে গুটিয়ে গেছে জিম্বাবুয়ে।
মিরাজ ২১ ওভার বোলিং করে ৩২ রান খরচায় নিয়েছেন পাঁচ উইকেট। তাইজুল ইসলাম ১৬.২ ওভারে ৪২ রান খরচায় নিয়েছেন তিন উইকেট।

দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরির পর মিরাজের উদযাপন। ছবি- শ্যামল নন্দী
এরআগে ৭ উইকেটে ২৯১ রান নিয়ে আজ তৃতীয় দিনের খেলা শুরু করা বাংলাদেশকে শেষ পর্যন্ত ৪৪৪ রানে নিয়ে গেছেন মিরাজ। অবশ্য অষ্টম ব্যাটার তাইজুল ইসলাম ও নবম ব্যাটার অভিষিক্ত পেসার তানজিম হাসান সাকিবের কাছ থেকে দারুণ সঙ্গ পেয়েছেন।
অষ্টম উইকেটে আজ তাইজুল ইসলামকে নিয়ে ৬৩ রান যোগ করেছেন মিরাজ। তাইজুল ৪৫ রানে ২০ রান করে আউট হলে এই জুটি ভেঙেছে। নবম উইকেট জুটিতে অভিষিক্ত পেসার তানজিমকে নিয়ে মিরাজ যোগ করেছেন ৯৬ রান। ৮০ বলে ২টি চার ১টি ছয়ে ৪১ রান করে আউট হয়েছেন তানজিম।
মিরাজ তখন নব্বয়ের ঘরে। শেষ ব্যাটার হাসান মাহমুদকে নিয়ে শেষ পর্যন্ত সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছেন মিরাজ। টেস্ট ক্যারিয়ারে মিরাজের এটা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। একই টেস্ট সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নেওয়া তৃতীয় ক্রিকেটার হলেন মিরাজ। আগে এই কৃর্তীটি ছিল সাকিব আল হাসান ও সোহাগ গাজির।
ব্যাট হাতে মিরাজ আজ শেষ পর্যন্ত ১০৪ রানে থেমেছেন। ১৬২ বল খেলে ১১টি চার ১টি ছক্কায় এই রান করেছেন তিনি।