চট্টগ্রামে মিরাজময় একটা দিন
৩০ এপ্রিল ২০২৫ ১৯:০২ | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৫ ২০:১৩
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিলেটে চার দিনে শেষ হয়ে যাওয়া টেস্টে বাংলাদেশের ৩ উইকেটের হার। সেই ম্যাচে বল হাতে জ্বলে উঠলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। দুই ইনিংসে পাঁচটি করে ম্যাচে দশ উইকেট তার, তবুও ঠেকাতে পারলেন না ঘরের মাঠে দলের টানা ষষ্ঠ টেস্ট পরাজয়। তবে আজ (বুধবার) শেষ হওয়া চট্টগ্রাম টেস্টে দলকে জেতাতে নিজের সেরাটা ঢেলে দিলেন এই অলরাউন্ডার। একইদিনে বিপর্যয়ের মুখে সেঞ্চুরি করে দলের লিডকে নিয়ে গেলেন ২০০ পেরিয়ে। প্রথম ইনিংসে উইকেটশূন্য থাকলেও দ্বিতীয় ইনিংসে নিলেন পাঁচ উইকেট। বাংলাদেশ ম্যাচ জিতল এক ইনিংস হাতে রেখে ১০৬ রানের ব্যবধানে।
জিম্বাবুয়ের দ্বিতীয় ইনিংসের ধসটা নামিয়েছেন তাইজুল ইসলাম আর নাঈম হাসান মিলে। প্রথম তিন উইকেট ভাগাভাগি করেছেন এই দুই স্পিনার। চট্টগ্রামের শেষ বিকেলে এরপর শুরু হয় মিরাজ শো। জিম্বাবুয়ের মিডল অর্ডার একাই গুঁড়িয়ে দিয়েছেন এই অফস্পিনার, উইকেটে সেট হয়ে যাওয়া জিম্বাবুইয়ান অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিনকে বোল্ড করে যার শুরু। টার্নিং বল উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে এসে মারতে চান আরভিন, মিরাজের টার্নে পরাস্ত হয় স্টাম্প খুইয়ে বসেন বাঁহাতি আরভিন।
একই ওভারের শেষ বলে ওয়েসলে মাধেভেরেও ধরা খেলেন মিরাজের স্পিনে। বলের লাইন মিস করে হয়েছেন এলবিডব্লিউ। রিভিউ নিয়েও রক্ষা পাননি এই ব্যাটার। এক ওভার পর বোলিংয়ে ফিরে আবারও মিরাজের চমক। তাফাদজওয়া সিগার প্যাড ছুঁয়ে বল যায় শর্ট লেগের এনামুল হক বিজয়ের হাতে। জোরালো আবেদনের মুখে আম্পায়ার আউট দিলেও রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান এই ডানহাতি ব্যাটার। কিন্তু পরের বলে আবার একই পজিশনে মিরাজের বলে ক্যাচ দেন সিগা, সেবারও ক্যাচ ধরতে ভুল করেননি বিজয়।

তৃতীয় দিন বারবার এভাবেই উদযাপনে মেতেছেন মিরাজ। ছবি: শ্যামল নন্দী
ওয়েলিংটন মাসাকাদজা অনেকক্ষণ ধরেই যেন হাঁসফাঁস করছিলেন শটস খেলার জন্য। মিরাজও নিলেন সেই সুযোগটাই। ঝুলিয়ে দেয়া শর্ট লেংথের বলে লফটেড ড্রাইভ খেলতে বাধ্য করেন তাকে। মিড অফে ক্যাচ নেন তাইজুল। এই ইনিংসে জিম্বাবুয়ের সেরা ব্যাটার বেন কারানের উইকেটটাও গেছে মিরাজের পকেটেই। এ নিয়ে ইনিংসে ১৩-তম বার পাঁচ উইকেট নিলেন মিরাজ। তার চেয়ে এগিয়ে আছেন কেবল সাকিব আল হাসান ও তাইজুল ইসলাম।
এই ম্যাচটা মিরাজের জন্য আরও স্পেশাল। কারণ একই ম্যাচে একইদিনে পেয়েছেন সেঞ্চুরি। বাংলাদেশের হয়ে যে কীর্তিটা আছে কেবল দুজনের; সাকিব আল হাসান ও সোহাগ গাজী। সাকিব অবশ্য একাই দুইবার ম্যাচে সেঞ্চুরির সাথে পাঁচ উইকেট নিয়েছেন। মিরাজ নিলেন আজ প্রথমবার।
মিরাজ নিজের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিটা করেছিলেন ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। আজ দ্বিতীয়টির দেখা পেলেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৭ নম্বরে ব্যাট করতে এসে। অবশ্য আজকের সেঞ্চুরিটার মাহাত্ম্য একটু হলেও আলাদা। উইকেটে এসেছিলেন ২৬৭ রানে দলের পাঁচ নম্বর উইকেটটা পড়ার পর। লিড ততক্ষণে মাত্র ৪০ রান। অপর প্রান্তে মুশফিকুর রহিম টিকতে পারেননি। মিরাজ পুরোটা সময় লড়াই করে গেলেন টেইলএন্ডারদের নিয়ে। লোয়ার অর্ডারের প্রাণ বাঁচানো ব্যাটার থেকে হয়ে উঠেছেন মিডল অর্ডারের মাস্টার।

চট্টগ্রাম টেস্টে সেঞ্চুরির পর পাঁচ উইকেট নিয়ে মাচ সেরা মিরাজ। ছবি: শ্যামল নন্দী
তাইজুল ইসলামের সাথে গড়েছেন ৮৪ বলে ৬৩ রানের জুটি। স্টাম্পড হয়ে তাইজুল ফিরলে তানজিম সাকিব এসে যোগ দেন তার সাথে। সেখানেই এসেছে ইনিংসে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯৬ রানের জুটি। সাকিব দারুণ ধৈর্য্যের পরিচয় দিয়েছেন আজ, মিরাজকে দিয়েছেন যোগ্য সঙ্গ। অবশ্য ফিফটির দ্বারপ্রান্তে থেকে রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে শর্ট লেগে ক্যাচ না দিলে ইনিংস আরও বড়ও হতে পারত।
তবে এর আগে অন্য প্রান্তে সাকিবের ভরসা পেয়ে অনায়াসে শটস খেলেছেন মিরাজ। সুইপ, স্কুপ, পুল, ব্যাক ফুট পাঞ্চ কিংবা কভার ড্রাইভে বাউন্ডারি আদায় করেছেন ১১টা বাউন্ডারি। মেরেছেন একটা ছক্কাও। অবশ্য দলের শেষ ব্যাটার হিসেবে আউট হওয়ার আগে ১০৪ রান করেছেন এই ডানহাতি ব্যাটার। অভিষিক্ত লেগ স্পিনার মাসেকেসাকে উইকেট দিয়েছেন স্টাম্পড হয়ে।

অনবদ্য অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে সিরিজ সেরাও মিরাজ। ছবি: শ্যামল নন্দী
ব্যাটে-বলে এই দারুণ পারফরম্যান্সের স্বীকৃতিও পেয়েছেন মিরাজ। আজ সেঞ্চুরির সাথে পাঁচ উইকেটে নিয়ে হয়েছেন ম্যাচ সেরা। এর সাথে দুই ম্যাচে ১৫ উইকেট ও ব্যাট হাতে ১১৬ রান করে হয়েছেন সিরিজ সেরা।
মিরাজময় দিনের ইতি ঘটল আজ চট্টগ্রামে। এই পারফরম্যান্সগুলোই সাক্ষ্য দেয় ধীরে ধীরে ম্যাচ উইনার হয়ে উঠছেন এই অলরাউন্ডার।
সারাবাংলা/জেটি
জিম্বাবুয়ের বাংলাদেশ সফর বাংলাদেশ ক্রিকেট দল মেহেদী হাসান মিরাজ সাকিব আল হাসান