Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মহাকাশে স্যাটেলাইটের ‘জট’, তবু মিস করবেন না এই ১০ ঘটনা


৩০ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৯:০০

ঢাকা: সময়টা এমন, আর কিছু থাক বা না থাক— ইন্টারনেট থাকা চাই। পরের ধাপে রয়েছে ইন্টারনেটের গতি। তৃতীয় বিশ্বের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা ইতোমধ্যে দ্রুত গতিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য এখন বড় চ্যালেঞ্জ হলো, দুর্গম অঞ্চলে দ্রুত গতিসম্পন্ন ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেওয়া। আর তাতে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে তারের ব্যবহার। ক্যাবলের পরিবর্তে যদি স্যাটেলাইট বা উপগ্রহ ব্যবহার করা সম্ভব হয়, তাহলে খুব সহজে দুর্গম এলাকায় দ্রুত গতিসম্পন্ন ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়া যাবে।

এই মতের বিরোধিতা করছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। তারা মনে করছেন, এই উপগ্রহগুলো সৌরজগৎ নিয়ে গবেষণায় বাধা সৃষ্টি করবে। উপগ্রহগুলো থেকে উজ্জ্বল সাদা আলোর প্রতিফলন হবে বলে রাতের আকাশের ছবি তুললে তারার সঙ্গে পার্থক্য করতে অসুবিধা হবে। কেবল আকাশ পর্যবেক্ষকরা নন, বাধার মুখে পড়বেন রেডিও অ্যাস্ট্রোলজিস্টরাও। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন ইমপেরিয়াল কলেজ লন্ডনের জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানী ড. ডাভ ক্লেমেন্ট।

পৃথিবীকে কেন্দ্রে রেখে বর্তমানে দুই হাজার দুই শোটি সক্রিয় উপগ্রহ ঘুরছে। দ্রুত গতিসম্পন্ন ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করতে মার্কিন কোম্পানি স্পেসএক্স প্রতি সপ্তাহে ৬০টি করে ছোট ছোট উপগ্রহ কক্ষপথে পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে।

অর্থাৎ আগামী বছরের শেষে নতুন দেড় হাজার উপগ্রহ ঘুরবে পৃথিবীর চারপাশে। যুক্তরাজ্যের কোম্পানি ওয়ানওয়েব ৬৫০টি উপগ্রহ আকাশে পাঠাতে চায়। তবে ভোক্তা চাহিদা বিবেচনায় এই সংখ্যা বাড়িয়ে দুই হাজার করা হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বের বৃহত্তম অনলাইন শপিং রিটেইলার আমাজনও তিন হাজার দুইশো উপগ্রহ পাঠানোর পরিকল্পনা করছে।

এগুলোকে বলা হচ্ছে স্টারলিংক। অনেকগুলো নক্ষত্রকে যেমন নক্ষত্রপুঞ্জ বলা হয়, উপগ্রহগুলোকে মিলিয়ে বলা হচ্ছে স্টারলিংক বা উপগ্রহপুঞ্জ।

মে এবং নভেম্বরে যে ১২০টি উপগ্রহ কক্ষপথে পাঠানো হবে, সেগুলো থাকবে পাঁচশ কিলোমিটারের ভেতরে। র‌য়্যাল অবজারভেটোরি গ্রিনিচ-এর জ্যোতির্বিজ্ঞানী ধারা পাটেল বলেন, উপগ্রহগুলো আকৃতি হবে টেবিলের সমান। যেসব উপাদান দিয়ে উপগ্রহগুলো নির্মাণ করা হয়েছে, তাতে সূর্যের আলোর প্রতিফলন অনেক বেশি হবে। এর অর্থ হলো, টেলিস্কোপ দিয়ে আমরা যে ছবি তুলি তাতেও উপগ্রহগুলো থাকবে। এই উপগ্রহগুলোর রেডিওওয়েভ অনেক বেশি। তাই জ্যোর্তিবিজ্ঞানীরা যে সংকেত ব্যবহার করেন তা বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

ড. ক্লেমেন্ট মনে করেন, উপগ্রহগুলো আকাশ পর্যবেক্ষণে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে। চিলিতে অবস্থিত বিশ্বের বৃহত্তম ডিজিটাল ক্যামেরা লার্জ সিনোপটিক সার্ভে টেলিস্কোপের (এলএসএসটি) মাধ্যমে যে আকাশ জরিপ করা হয়, তাতে প্রত্যক্ষভাবে হস্তক্ষেপ করবে উপগ্রহগুলো। আমরা চেষ্টা করি রিয়েল-টাইম মোশন ছবি নিতে যেন বোঝা যায় কিভাবে আকাশ বদলে যাচ্ছে।

আরেক জ্যোতির্বিজ্ঞানী অধ্যাপক মার্টিন বলেন, এতগুলো উপগ্রহ একসঙ্গে ভয়ানক শব্দ করবে। মনে হতে পারে আকাশ তো অসীম। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ঘনত্ব অনুযায়ী জায়গাটা বেশি না।

স্পেসএক্স বলছে, আমরা জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের সঙ্গে কাজ করছি। খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি কিভাবে আকাশ পর্যবেক্ষণের প্রতিবন্ধকতা কমিয়ে আনা যায়।

নতুন বছরে আকাশজুড়ে ১০ ঘটনা

সখের বশে যারা আকাশ পর্যবেক্ষণ করেন, তারাও নতুন বছরে ১০টি ঘটনা দেখতে ভুলবেন না। কারণ আগামী অন্তত দুই দশকে এমন ঘটনা আর ঘটবে না।

সুপারমুনস
বছরের বিভিন্ন সময় পূর্ণ চাঁদ স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা বড় হয়ে যায়। এটাকেই বলে সুপারমুন। আগামী বছর ফেব্রুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত এক সারিতে আসতে থাকবে সুপারমুন।

মঙ্গলের সামনে আসবে চাঁদ
যারা ভোরে ঘুম থেকে ওঠেন তাদের জন্য এই ইভেন্টটি দেখা বেশি সহজ হবে। আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি পৃথিবী এবং মঙ্গলের মাঝখানে আসবে চাঁদ। অনেকটা গ্রহণের মতো। যারা উত্তর আমেরিকার বাসিন্দা তারাই এটি দেখতে পাবেন। সূর্য ওঠার আগে দক্ষিণ-পূর্ব এলাকায় এই দৃশ্য দেখা যাবে। সময়টা জায়গা ভেদে আলাদা হবে।

উল্কা বৃষ্টি
উল্কা বৃষ্টি দেখতে হলে তিন মাস অপেক্ষ করতে হবে। তারপরে অল্প সময়ের ব্যবধানে আরও একবার এই অমৃত স্বাদের দৃশ্য আস্বাদনের সুযোগ পাওয়া যাবে। এপ্রিলের ২২ ও ২৩ এবং মে মাসের ৬ ও ৭ তারিখ হবে উল্কা বৃষ্টি।

চন্দ্রগ্রহণ
আগামী বছর চারটি চন্দ্রগ্রহণ হবে। এর মধ্যে দুটি হবে উত্তর আমেরিকায়। যদিও খুব মনোযোগ দিয়ে না দেখলে তা বোঝা যাবে না।

আলো যখন বৃহস্পতি-শনিতে
আমাদের সৌরজগতের দু’টি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বৃহস্পতি এবং শনি নজর কাড়বে আগামী বছরে। জুলাই মাসের মাঝামাঝি বৃহস্পতিবার এবং শনি গ্রহ দেখার উত্তম সময়। কারণ এই সময় গ্রহ দুটি পৃথিবীর কাছাকাছি আসবে, তাই টেলিস্কোপ ছাড়া খালি চোখেও দেখা যাবে।

‘তারাখসা’ বৃষ্টি
উল্কা বৃষ্টিই, তবে একটু আলাদা। প্রধান তিনটি উল্কা বৃষ্টির একটি দেখা যাবে আগস্টের মাঝামাঝিতে। ২০১৯ সালের চেয়ে এবার বেশি ভালো দেখা যাবে। এর বৈশিষ্ট্য হলো আকাশে পূর্ণ চাঁদ থাকলেও জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ঘণ্টায় ১০০টি ‘তারা‘ খসে যেতে দেখবেন।

নীল চাঁদ
নীল চাঁদ মূলত জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের ভাষা। কেন নীল চাঁদ বলা হয় তার সুনির্দিষ্ট কারণ অবশ্য জানা যায়নি। তবে এটি সব সময় দেখা যায় না। কয়েক বছর পরপর একবার আসে। ২০২০ সালের ৩১ অক্টোবরের পরে ‘ব্লু মুন’ দেখতে হলে ২০৩৯ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

চাঁদ শূন্য আকাশ
বিতর্ক আছে— কোন সময়ের উল্কা বৃষ্টি বেশি সুন্দর। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলছেন, আগামী বছরের ১৩ ও ১৪ ডিসেম্বর সবচেয়ে সুন্দর উল্কা বৃষ্টি দেখা যাবে। কারণ ওই সময় আকাশ থাকবে চাঁদ শূন্য। ঘণ্টায় খসে পড়বে দেড়শোটি ‘তারা’। এই অপূর্ব দৃশ্য দেখতে হলে অবশ্যই শহরের আলোর বাইরে চলে যেতে হবে।

দক্ষিণ আমেরিকায় দিনে নেমে আসবে রাত
দিনটি হবে ১৪ ডিসেম্বর। ২০২০ সালে দক্ষিণ আমেরিকায় দেখা যাবে পূর্ণ সূর্যগ্রহণ। হঠাৎ দিনের বেলায় নেমে আসবে কঠিন কালো রাত।

মহামিলন
আগামী বছরের শেষ গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি ঘটবে ডিসেম্বরের ২১ তারিখে। বৃহস্পতি এবং শনি খুব কাছাকাছি চলে আসবে ওইদিন। কানাডার রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির মতে, ১৬২৩ সালের পরে এই ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে।

উপগ্রহ চন্দ্রগ্রহণ তারাখসা নীল চাঁদ মহাকাশ সুপার মুন সূর্যগ্রহণ স্যাটেলাইট স্যাটেলাইট ইন্টারনেট


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর