Friday 13 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চিরঞ্জীব বঙ্গবন্ধু দি গ্রেট


১৭ মার্চ ২০১৮ ১২:২২ | আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৮ ১২:২৩
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

১৭ মার্চ ২০১৮ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৮তম জন্মবার্ষিকী। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের এক অজপাড়াগাঁ টুঙ্গিপাড়ায় যে শিশুটি পৃথিবীতে প্রথম আলোর মুখ দেখেছিল। তখন কি কেউ চিন্তা করেছিলেন এই শিশুটিই একদিন বাংলার বঞ্চিত, লাঞ্ছিত, অবহেলিত নির্যাতিত জনগণের মুক্তির দূত হিসেবে আবির্ভূত হবেন। এই শিশুটিই একদিন বড় হয়ে ঠিকই পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে ছিনিয়ে এনেছিল বাংলার স্বাধীনতার লাল সূর্য। তিনি হলেন বাঙালির মুকুটমণি, শতাব্দীর মহাপুরুষ, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

বঙ্গবন্ধু ছিলেন পাকিস্তানিদের চক্ষুশূল- বাংলার কথা বাঙালির মুক্তির কথা বলতে গিয়ে যার জীবন-যৌবনের মূল্যবান গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলো কেটেছে পাকিস্তানি স্বৈরাচার সামরিক শাসকদের কারাগারের অন্ধ প্রকোষ্ঠে। ১৯৭০ সালের শেষভাগে পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে- কিন্তু পাকিস্তানি বর্বর শাসকরা বাঙালিদের হাতে পাকিস্তানের রাষ্ট্রক্ষমতা দেওয়া-তো দূরের কথা, উল্টো ষড়যন্ত্র করে বাঙালি জাতিকে চিরতরে স্তব্ধ করার জন্য।

বিজ্ঞাপন

অগ্নিঝরা ৭ মার্চ ৭১ রোববার। রক্তঝরা অগ্নিঝরা রোদন ভরা বসন্তের উত্তপ্ত ফাল্গুনের অপরূপ অপরাহ্ণে রাজধানী ঢাকার রমনার সবুজ প্রান্তর রেসকোর্স ময়দানের জনমহাসমুদ্রে এ দিন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা পৃথিবী কাঁপানো ভাষণের টগবগে রক্তে আগুন জ্বলা বজ্র কণ্ঠে উচ্চারণ করলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ মাত্র ১৯ মিনিটের এই পৃথিবী কাঁপানো বজ্রকণ্ঠের ঐতিহাসিক জ্বালাময়ী ভাষণ ছিল বাঙালির হাজার বছরের আবেগ, হাজার বছরের স্বপ্নের বাণী, হাজার বছরের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন- যা ছিল বাঙালিকে মুক্ত করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা। দীপ্তকণ্ঠে বঙ্গবন্ধু উচ্চারণ করলেন, ‘রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেবো, এই দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ্।’ এই ঐতিহাসিক ভাষণই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে-নির্দেশে মুক্তিপাগল বাঙালি জাতিকে হানাদার পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে মহান মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্বুদ্ধ করেছিল এবং এই ভাষণের মধ্য দিয়েই বাঙালির ভবিষ্যত ভাগ্য স্পষ্ট নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল।

এরপর শুরু হলো বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সারা বাংলায় পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি। ২৩ মার্চ ৭১ সারা বাংলা বাংলাদেশের নতুন পতাকা উত্তোলন করা হয়।

তারপর আসে ২৫ মার্চের বিভীষিকাময় কালরাত্রি। এই রাত্রে বাংলার স্বাধীনতাকামী নিরস্ত্র ঘুমন্ত মানুষের উপর ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ নামে নৃশংস গণহত্যায় ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বর্বর নরপিশাচ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। বিশ্ববাসী স্তম্ভিত হতবাক চিত্তে প্রত্যক্ষ করেছিল ইতিহাসের নৃশংসতম বর্বরতা- যা কুখ্যাত চেঙ্গিস, হিটলার, হালাকুকেও হার মানিয়েছিল। পৃথিবীর শান্তিকামী মানুষ বিস্ময়ে আরও প্রত্যক্ষ করেছিল নিরীহ বাঙালিদের উপর হিংস্র শ্বাপদের ভয়াল থাবার নখর-দন্তের বিষাক্ত ছোবল। মানবতাকে পদাঘাত করে ষড়যন্ত্রকারী ভুট্টো, নরপশু ইয়াহিয়া ও কসাই টিক্কাখান- ট্যাংক, রকেট ল্যাঞ্চার, মর্টার ও মেশিনগানের বুলেটের আঘাতে বাঙালি জাতির স্বাধীনতার স্বপ্নকে চিরতরে ধূলিস্মাৎ করে দিতে চেয়েছিল। এর আগে সেই রাত্রেই পাকিস্তানি বাহিনী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তাঁর ধানমন্ডির ৩২ নং রোডের বাসা থেকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পূর্বে সেই রাত্রিতে (রাত ১২টার পর অর্থাৎ ২৬ মার্চ ৭১) বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং দেশকে শত্রমুক্ত করতে হানাদার পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের ডাক দেন।

বাংলার সাড়ে সাত কোটি নিপীড়িত জনগণ সেদিন বঙ্গবন্ধুকে লক্ষ্য করে গেয়ে উঠেছিলেন- গীতিকার মোহাম্মেদ শাহ্‌ বাঙালি-র গানটি শিল্পী মো. আবদুল জব্বার এভাবেই আবেগময় কণ্ঠে গেয়েছিলেন- ‘মুজিব বাইয়া যাওরে-/নির্যাতিত দেশের মাঝে জনগণের নাও ওরে মুজিব বাইয়া যাওরে।…/মুজিবরে বাঙালিদের ভাগ্যাকাশে এলো দুখের নিশি/তুমি বাংলার চিরসম্রাট অন্ধকারের শশী।’

মরুপশু হানাদার বর্বর পাকিস্তানি বাহিনীকে বাংলার পবিত্র মাটি থেকে চিরতরে বিতাড়নের জন্য শুরু হয় সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। ‘এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়।’ বাংলার দুরন্ত-দুর্বার দেশপ্রেমিক মুক্তিপাগল দামাল ছেলেরা মরণপণ প্রতিজ্ঞা করে বঙ্গবন্ধুর মন্ত্র বুকে নিয়ে দলে দলে মহান মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে থাকে এবং প্রতিবেশি দেশ ভারতের বিভিন্ন ট্রেনিং ক্যাম্পে গেরিলা যুদ্ধের সশস্ত্র ট্রেনিং নিয়ে হানাদার বর্বর পাকিস্তানি নরপশুদের বিরুদ্ধে প্রথমে গেরিলা কায়দায় বীরবিক্রমে লড়তে থাকে। প্রায় ১ কোটি লোক ঘরছাড়া হয়ে আশ্রয় নিলো বন্ধুপ্রতীম বিপদের বন্ধু প্রতিবেশি দেশ ভারতে।

একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর পাপাশ্রয়ী গণধিক্কৃত নারী ধর্ষণকারী হানাদার পাকিস্তানিরা মুক্তিবাহিনী এবং মিত্রবাহিনীর দুর্বার আক্রমণের কাছে টিকতে না পেরে যুদ্ধে শোচনীয়ভাবে পরাজিত ৯৩ হাজারেরও বেশি হন্তারক ঘৃণ্য যমদূত কুখ্যাত হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী ১৬ ডিসেম্বর ৭১ বিকেল ৪টা ৩১ মিনিটে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে আনুষ্ঠানিকভাবে বিনা শর্তে নির্লজ্জের মতো আত্মসমর্পণের মাধ্যমে হিংস্র শ্বাপদের ভয়াল থাবার নখর-দন্তের বিষাক্ত ছোবল থেকে শ্যামল বাংলার পবিত্র মাটি মিত্র ও মুক্তিবাহিনী উদ্ধার করে এবং পাকিস্তানি ‘চাঁনতারা মার্কা বেঈমান পতাকা’-কে চিরদিনের জন্য নামিয়ে বাংলাদেশের স্বর্ণালি মানচিত্র খচিত গাঢ় সবুজের মধ্যে রক্তিম সূর্য সম্বলিত ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তস্নাত বাংলাদেশের নতুন পতাকা উড়িয়ে দেয়। বিশ্বের মানচিত্রে বাঙালি জাতির হাজার বছরের স্বপ্নের স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে ছাড়া বাঙালি বিজয়ের স্বাদ পেলেও ছিল না পরিপূর্ণ বিজয়ের আনন্দ।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় হানাদার পাকিস্তানি সামরিক সরকার ৩ আগস্ট ৭১ রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ এনে কোর্ট মার্শালে বঙ্গবন্ধুর বিচার করার ঘোষণা দেয়। কোটি কোটি বাঙালিসহ বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। বঙ্গবন্ধুর জন্য পাকিস্তানের জেলখানার পাশে কবর পর্যন্ত খোঁড়া হয়েছিল- এমনকি পাকিস্তানি সামরিক ঘাতক বাহিনীও পাঠানো হয়েছিল। ৪ ডিসেম্বর ৭১ পাকিস্তানি হানাদারদের বিচারকরা প্রহসনমূলক তথাকথিত বিচারে বঙ্গবন্ধুকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করে রায় দেয়- এতে একটুও প্রাণ কাঁপেনি হানাদারদের! এ যেন ‘শৃগাল হয়ে সিংহকে ফান্দেতো ফেলিল।’

বিশ্বনেতারা বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠেন। ভারত, সোভিয়েত ইউনিয়নসহ সারাবিশ্বের চাপের মুখে পরাজিত পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী শেষ পর্যন্ত বন্দীদশা থেকে বঙ্গবন্ধুকে সসম্মানে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।

ঐতিহাসিক ১০ জানুয়ারি ৭২ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি শতাব্দীর মহাপুরুষ স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা মহান স্থপতি ও প্রতিষ্ঠাতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি কারাগারে বন্দীদশা থেকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে মুক্তি পেয়ে লন্ডন-দিল্লি হয়ে বিজয়ী বীরের বেশে তাঁর মাতৃভূমি স্বপ্নের স্বাধীন বাংলাদেশে শহীদের রক্তস্নাত পবিত্র মাটিতে পদার্পণ করেন।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘বঙ্গমাতা’ কবিতায় বলেছেন, ‘সাত কোটি সন্তানেরে, হে মুগ্ধ জননী। রেখেছ বাঙালি করে- মানুষ করনি।’ কিন্তু বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে এসেই রেসকোর্স ময়দানে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি কবিগুরুর ‘বঙ্গমাতা’ কবিতার সেই দুটি  লাইন উচ্চারণ করে অত্যন্ত আবেগময় মর্মস্পর্শী ভাষণে কবিগুরুকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘আমার বাঙালি আজ মানুষ।’ এ কথা বলে আবেগাপ্লুত বঙ্গবন্ধু অশ্রুসিক্ত হয়ে শিশুর মতো কাঁদলেন এবং রেসকোর্স ময়দানে উপস্থিত লক্ষ লক্ষ জনতাকে কাঁদালেন- কাঁদালেন সমগ্র বাংলার কোটি কোটি বাঙালিকে।

১৯৭৩ সালে আলজিয়ার্সে জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে (ন্যাম) যোগ দিতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর বিশালতা ও ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে বলতে গিয়ে কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল ক্যাস্ট্রো বলেছিলেন, ‘আমি হিমালয় দেখিনি, বঙ্গবন্ধুকে দেখেছি। তাঁর ব্যক্তিত্ব ও নির্ভীকতা হিমালয়ের মতো। এভাবেই তার মাধ্যমে আমি হিমালয়কে দেখেছি।’ বঙ্গবন্ধু ছিলেন বিশ্বনেতা- বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতিকে তিনি বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে তুলে ধরেছিলেন।

অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘পৃথিবীতে খুব কম দেশ আছে, যে দাবি করতে পারবে একটি দেশ এবং একটি মানুষ সমার্থক। বাংলাদেশের মানুষেরা সেই দাবি করতে পারে। কারণ, বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধু সমার্থক। বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশ হতো না।’

রক্তের আখরে লেখা বাঙালির ইতিহাসে হৃদয়বিদারক ও মর্মান্তিক শোকাবহ ১৫ আগস্ট। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি শতাব্দীর মহাপুরুষ স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা মহান স্থপতি ও প্রতিষ্ঠাতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কতিপয় বিপথগামী সৈনিক নির্মমভাবে হত্যা করে। নরপশুদের এই হত্যাকাণ্ড ইতিহাসের যে কোনো বর্বর হত্যাকাণ্ডকে হার মানায়। ১৫ আগস্ট ৭৫ শুধু একজন বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি ঘৃণ্য পশুরা- তারা একে একে হত্যা করেছে বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশুপুত্র শেখ রাসেলসহ পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামালকে। জঘন্যতম এ হত্যাকাণ্ড থেকে রক্ষা পাননি বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, ভাগ্নে যুবনেতা ও সাংবাদিক শেখ ফজলুল হক মণি, বেগম আরজু মণি, কর্নেল জামিলসহ ১৬ জন। বিদেশে থাকার কারণে এ হত্যাকাণ্ড থেকে ভাগ্যক্রমে রক্ষা পেয়ে যান বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। এই হত্যার মাধ্যমে হত্যাকারীরা বাঙালির মুক্তিযুদ্ধের মহান আদর্শ ও চেতনাকে এবং বঙ্গবন্ধুর নাম নিশানা পর্যন্ত চিরতরে মুছে ফেলতে চেয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা সফল হয়নি।

মুঘল সম্রাট আকবরকে ‘আকবর দি গ্রেট’ বলা হয় এবং গ্রিক বীর বিশ্ববিজয়ী আলেকজেন্ডারকে ‘আলেকজেন্ডার দি গ্রেট’ বলা হয়। কিন্তু বিশ্বনেতা বঙ্গবন্ধুকে কেন শুধু বঙ্গবন্ধু বলা হয়? স্বাধীনতার এতো বছর পরও কি বঙ্গবন্ধুকে ‘বঙ্গবন্ধু দি গ্রেট’ বলার সময় হয়নি? বঙ্গবন্ধুকে শুধু বঙ্গবন্ধু কে কে বললো বা না বললো তাতে আমার কিছু আসে যায় না- যার ডাকে যুদ্ধে গেলাম অস্ত্র নিলাম জীবন দিলাম- যিনি আমাদেরকে একটি স্বাধীন দেশ, একটি পতাকা, একটি মানচিত্র, একটি জাতীয় সংগীত উপহার দিয়েছেন- মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাঁকে বলে যাবো এবং বলেই যাবো তিনি হলেন বাঙালি জাতির পিতা শতাব্দীর মহাপুরুষ ‘বঙ্গবন্ধু দি গ্রেট’।

মুক্তিযুদ্ধ জয়ের এতো বছরে মেঘনা-তিতাস-পদ্মা-যমুনায় অনেক জল গড়িয়েছে। আজ সময় এসেছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাকে নতুনভাবে মূল্যায়ন করার। বঙ্গবন্ধুর প্রত্যয় ছিল সুখী অভাবমুক্ত, শোষণমুক্ত সমাজ, অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের নিশ্চয়তা, গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িকতা- তার কতটুকু আমরা অর্জন করেছি। বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন- কিন্ত আমরা কি সেটা অনুধাবন করতে পেরেছি? ১৯৭৫-এর পর মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত শক্তি বাঙালি জাতিকে ভিতরে ভিতরে ধ্বংস করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং মুক্তিযুদ্ধেরে ইতিহাসকে নির্বাসিত করার চেষ্টা করছে। মিথ্যা বলা হয়েছে, মিথ্যার অভিনয় করা হয়েছে- এমন কি রূপকথার প্রবাদ পুরুষ বাঙালির অবিসংবাদিত সংগ্রামী নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নাম নিশানা পর্যন্ত মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। তাই অন্নদাশঙ্কর রায়-এর কবিতার ভাষায় বলতে হয়-

‘যতকাল রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান

ততকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।

দিকে দিকে আজ অশ্রুমালা রক্তগঙ্গা বহমান

তবু নাই ভয় হবে হবে জয়, জয় মুজিবুর রহমান’

কিন্তু কে বলেছে বঙ্গবন্ধু বেঁচে নেই! বঙ্গবন্ধু অমর-তাঁর মৃত্যু নেই। এই মৃত্যুঞ্জয় মহান নেতার চেতনা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম পার হয়ে অনন্তকাল ধরে বাঙালির হৃদয়ে প্রবাহিত হবে। বঙ্গবন্ধুর চেতনাকে ধারণ করতে পারলেই আমরা জাতি হিসেবে সমৃদ্ধ হতে পারবো এবং বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলে হারানো বাংলাকে আবার ফিরে পাবো এবং বঙ্গবন্ধুকেও আবার ফিরে পাবো- তিনি আবার ফিরে আসবেন। কিংবদন্তি কবি-লেখক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর কথায় এবং হিমাংসুর সুরে বলবো ‘বঙ্গবন্ধু আবার যখন ফিরবেন, পদ্মাপারের নৌকা করে ভিড়বেন।’

 [লেখক: যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা; ২ নং সেক্টর বাঞ্ছারামপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া]

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর