ঢাকা: ১৮ মার্চ ১৯৭১। এদিন সকাল থেকে বিভিন্ন সংগঠন মিছিল সহকারে শেখ মুজিবর রহমানের ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর বাসভবনের সামনে এসে জড়ো হয়। তারা প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সঙ্গে বৈঠক থেকে মুজিবকে বিরত থাকার আহ্বান জানায় এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের ঘোষণা দাবি করে।
বিদেশি সাংবাদিকরা শেখ মুজিবর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তারা দেশের এই রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তার পরিকল্পনা জানতে চান। এদিন তিনি পাকিস্তানের খ-অঞ্চলের সামরিক প্রশাসক লে. জেনারেল টিক্কা খান কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি প্রত্যাখ্যান করে একটি বিবৃতি দেন।
এদিন পাকিস্তান ন্যাপের সভাপতি ওয়ালী খান ঢাকায় আসেন। শেখ মুজিবুর রহমান ও ওয়ালী ন্যাপ প্রধান ওয়ালী খান এক ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। সেখানে পাকিস্তান ন্যাপের সভাপতি গাউস বক্স বেজেঞ্জোও ছিলেন।
সেনাবাহিনীর সদস্যরা তেজগাঁও ও মহাখালীতে শ্রমিকদের ট্রাকে হামলা চালায়। সৈন্যরা এই দুই স্থানে নিরস্ত্র আরোহীদের নির্মমভাবে প্রহার করে এবং তাদের টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেয়। এসব ঘটনায় নগরীতে জনসাধারণের মধ্যে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
দিনব্যাপী জনতার মিছিলের পর রাতে সরকারিভাবে ঘোষণা করা হয়, পরদিন বেলা ১১টায় প্রেসিডেন্ট ভবনে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের মধ্যে রাজনৈতিক সংকট নিয়ে তৃতীয় দফা আলোচনা হবে।
রাতে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম সংবাদপত্রে বিবৃতি দেন। তিনি বলেন, ‘আমরা পরিষ্কার ভাষায় জানিয়ে দিতে চাই, নিরস্ত্র মানুষের ওপর উসকানিমূলক আচরণ, তা যে কোনো মহলেরই হোক না কেন, আমরা আর সহ্য করব না। এর ফলাফলের দায়িত্ব উসকানিদাতাদেরই সম্পূর্ণ বহন করতে হবে।’
বাংলাদেশের জন্য খাদ্যশস্যবাহী ‘ইরনা এলিজাবেথ’ নামের একটি জাহাজের গতিপথ বদল করে চট্টগ্রাম থেকে করাচি নিয়ে যাওয়া হয়। ঢাকায় বিমানবাহিনীর সাবেক বাঙালি সৈনিকরা স্বাধীনতার সংগ্রামের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে সংগ্রাম কমিটি গঠন করে।
এদিন করাচি বসে ভুট্টো স্পষ্ট জানিয়ে দেন, আলোচনার জন্য তিনি ঢাকা গেলেও কোনো কাজ হবে না। তার ঢাকা আসতে অসম্মতি রাজনৈতিক জটিলতা বাড়িয়ে তোলে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, চীনে দেওয়া অস্ত্রে বাঙালি নিধনের প্রয়াস বন্ধ করার আহবান জানানো হয়। প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর কাছে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আগত সামরিক বাহিনী ও অস্ত্রের চালান বোঝাই উড়োজাহাজের চলাচল বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হয়।
এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি বিভিন্ন দেশের সরকার, বিশ্ববিদ্যালয় এবং বুদ্ধিজীবীদের কাছে তারবার্তা পাঠিয়ে, গণহত্যা ও যুদ্ধ থেকে পশ্চিম পাকিস্তানিদের নিবৃত্ত করার অনুরোধ জানান।