ভারতীয় চলচ্চিত্র ইতিহাসে যেসব সিনেমা যুগান্তকারী প্রভাব ফেলেছে, তাদের মধ্যে একটি নির্দ্বিধায় রমেশ সিপ্পির পরিচালনায় ১৯৭৫ সালের ‘শোলে’। ‘শোলে’ মানেই জয়-বীরু, ঠাকুর, গব্বর, বাসন্তী আর কালিয়া—মিলেমিশে এক অনন্য কাহিনিচিত্র। কিন্তু এই কালজয়ী সিনেমাটির এমন একটি দিক ছিল যা কখনোই দর্শকের সামনে পুরোপুরি উন্মুক্ত হয়নি—তার মূল ও অবিকৃত সমাপ্তি। এবার, ছবির ৫০ বছর পূর্তিতে সেই ‘নিষিদ্ধ শেষাংশ’সহ আসল ‘শোলে’ মুক্তি পাচ্ছে আন্তর্জাতিক মঞ্চে।
১৯৭৫ সালে ভারতের জরুরি অবস্থার আবহে সেন্সর বোর্ড ‘শোলে’র মূল সমাপ্তিকে অত্যন্ত হিংসাত্মক বলে নাকচ করে দেয়। পরিচালক রমেশ সিপ্পিকে নির্দেশ দেওয়া হয় ছবির শেষাংশ নতুন করে নির্মাণ করতে। সেলিম-জাভেদ এর লেখা শক্তিশালী স্ক্রিপ্ট অনুযায়ী, গব্বর সিংয়ের বিচার ঠাকুর নিজ হাতে করেন—লোহার কাঁটা লাগানো জুতো দিয়ে তাকে পিষে হত্যা করেন। কিন্তু সেই দৃশ্য ‘আইনের বাইরে’ বলে সেন্সরের চোখে পড়ে যায়। ফলে নতুন শুটিং করে দেখানো হয়, গব্বরকে পুলিশের হাতে তুলে দিচ্ছেন ঠাকুর।
পাঁচ দশক পরে এসে সেই ‘হারিয়ে যাওয়া’ দৃশ্যগুলো আবার ফিরে এসেছে রূপালী পর্দায়। রমেশ সিপ্পির পুত্র শাহজাদ সিপ্পির উদ্যোগে এবং ফিল্ম হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের সহায়তায় ছবির পূর্ণ ডিজিটাল রিস্টোরেশন সম্পন্ন হয়েছে। শুধু ছবির গুণগত মানই উন্নত করা হয়নি—ফিরিয়ে আনা হয়েছে সেন্সরে কাটা পড়া সংলাপ, দৃশ্য এবং মূল সমাপ্তি।
চমকপ্রদভাবে, এই নতুন সংস্করণটি প্রথম মুক্তি পাচ্ছে ভারতে নয়, বরং ইতালির বোলোনিয়ায় আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ‘ইল চিনেমা রিত্রোভাটো’-তে। শুক্রবার, ২৭ জুন, উৎসবে বিশেষ প্রদর্শনীর মাধ্যমে দর্শকেরা প্রথমবারের মতো ‘শোলে’র অবিকৃত আসল রূপটি দেখতে পাবেন।
‘শোলে’ শুধু একটি চলচ্চিত্র নয়, এটি ভারতীয় চলচ্চিত্রের একটি সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রতীক। এটি বন্ধুত্ব, প্রতিশোধ, বিচার এবং ন্যায়ের জ্বলন্ত প্রতিচ্ছবি। ৫০ বছর পর সেই ছবির পূর্ণাঙ্গ রূপ দর্শকের সামনে আসা মানে ইতিহাসের এক অসম্পূর্ণ অধ্যায় পূরণ হওয়া। নতুন প্রজন্ম এই সিনেমাকে যেভাবে চেনে, এবার তার শেকড়ে ফিরে যেতে পারবে।
‘শোলে’র এই পুনরুজ্জীবন প্রমাণ করে দেয়—একটি শিল্প কখনোই মরে না। কালের খাতায় হারিয়ে যাওয়া জিনিসকেও যথাযথ উদ্যোগ ও ভালোবাসার মাধ্যমে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। শাহজাদ সিপ্পি এবং ফিল্ম হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের প্রচেষ্টা শুধু একটি চলচ্চিত্র রক্ষা করেনি, বরং ফিরিয়ে এনেছে ভারতের চলচ্চিত্র ঐতিহ্যের এক মূল্যবান খণ্ড।