Saturday 26 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শরীর ও মন দুটোই আমার জীবনে গুরুত্বপূর্ণ : জয়া

এন্টারটেইনমেন্ট ডেস্ক
২৬ জুলাই ২০২৫ ১৮:০২

“মন দিয়ে তো মানুষকে ছোঁয়া যায় না। শরীর দিয়ে মন ছুঁতে হয়।”

এই এক বাক্যেই হঠাৎ করেই আলোচনার কেন্দ্রে চলে এলেন বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অভিনেত্রী জয়া আহসান। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’ চলচ্চিত্রের প্রেক্ষাপটে ‘কুসুম’ চরিত্র নিয়ে বলতেই তিনি উচ্চারণ করলেন এই কথাগুলো। আর তারপর থেকেই নেটিজেনদের মধ্য বিভক্ত প্রতিক্রিয়া।

কেউ বলছেন, জয়া সাহসী, তিনি সাহিত্যের স্তর ভেঙে বাস্তবকে তুলে ধরছেন। অন্যদিকে, কেউ কেউ তার মন্তব্যকে নারী শরীরের বস্তুনির্ভর মূল্যায়ন বলেই মনে করছেন।

সে যাই হোক, ১৫ বছর দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে আগামী ১ আগস্ট ভারতের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেতে যাচ্ছে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালজয়ী উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’। মুক্তির আগেই ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্র ‘কুসুম’-এর অভিনেত্রী জয়া আহসানের এক বিশেষ মন্তব্য নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

‘পুতুলনাচের ইতিকথা’ চলচ্চিত্রটি পরিচালক সুমন মুখার্জির হাত ধরে জীবনের সামাজিক-রাজনৈতিক সংকট এবং নারী মুক্তির গল্প তুলে ধরে। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের একই নামের উপন্যাসের বাস্তব চিত্রায়ন এই সিনেমাটি ২০০৮ সাল থেকে নির্মাণাধীন থাকলেও নানা কারণে মুক্তি পেতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়।

চলচ্চিত্রের ট্রেলার প্রকাশ অনুষ্ঠানে জয়া আহসান ‘শরীর, শরীর তোমার মন নাই কুসুম?’—এই বিখ্যাত উক্তির ভিন্ন ব্যাখ্যা তুলে ধরেন। যেখানে সাধারণত ‘কুসুম’ চরিত্রটিকে কেবল শরীরসর্বস্ব, যৌনতার প্রতীক হিসেবে দেখানো হয়, সেখানে জয়া বললেন, বাস্তব জীবনে শরীর এবং মন—উভয়েরই সমান গুরুত্ব আছে।

জয়া বলেন, “মন দিয়ে তো মানুষকে ছোঁয়া যায় না। শরীর দিয়ে মন ছুঁতে হয়। আমার জীবনে মন এবং শরীর- উভয়ের ভূমিকাই গুরুত্বপূর্ণ। আমার বিশ্বাস কুসুমেরও তাই।”

এই মন্তব্য অনেকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছেন, কারণ এটি কেবল শরীরের বস্তুতাবাদ নয়, বরং নারী চরিত্রের মানসিক ও শারীরিক মুক্তির দৃষ্টিভঙ্গিকে তুলে ধরে।

পরিচালক সুমন মুখার্জি জানান, দীর্ঘ সময় লেগেও চলচ্চিত্রের বিষয়বস্তু আজও সমসাময়িক। “সেই সময়ের সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং নারীর অবস্থা আজও অনেকটাই অপরিবর্তিত,” তিনি বলেন। এর ফলে ‘কুসুম’ চরিত্রের মধ্য দিয়ে আজকের নারীর সংগ্রাম এবং বাস্তবতা চিত্রিত হয়েছে।

সুমনের ভাষায়, “পর্দার ‘কুসুম’ আর বাস্তবের জয়া আহসানের মধ্যে তেমন পার্থক্য নেই।” এটি বোঝায় যে নারী জীবনের দুই দিক— মন ও শরীরকে সামঞ্জস্য করার সংগ্রাম এখনও চলছে।

জয়া আহসানের এই ব্যাখ্যা নেটিজেনদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। কেউ তাকে নারী স্বাধীনতার নতুন কন্ঠস্বর হিসেবে স্বাগত জানিয়েছেন, আবার কেউ ছবির ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট থেকে এটি বিচ্যুত মন্তব্য বলে মনে করছেন।

একাংশ মত, জয়ার বক্তব্য আজকের আধুনিক নারীর সচেতনতা ও শক্তিকে প্রতিফলিত করে, যেখানে নারী কেবল বস্তুনিষ্ঠ চরিত্র নয়, বরং তাদের মনের ভাবনাও গুরুত্বপূর্ণ।

অন্যদিকে কিছু দর্শক মনে করছেন, ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’ উপন্যাস এবং চলচ্চিত্রের ঐতিহাসিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটকে বুঝে দেখলে, ‘কুসুম’ চরিত্রের ব্যাখ্যা এভাবে পরিবর্তন করা উচিত নয়।

১৫ বছর পর মুক্তি পাচ্ছে ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’, তাই চলচ্চিত্রটি শুধুমাত্র এক সাহিত্যকর্মের চিত্রায়ন নয়, বরং নারীর স্বাধীনতা, সমাজের সীমাবদ্ধতা ও রাজনৈতিক সংকটের একটি দর্পণ। জয়া আহসানের অভিনয় এবং তার দৃষ্টিভঙ্গি এই মুক্তির আগে নতুন মাত্রা যোগ করেছে আলোচনায়।

আসছে ১ আগস্ট দর্শকরা নিজ চোখে দেখবেন কুসুমের গল্প এবং তার শরীর-মনের দ্বন্দ্বের চিত্রায়ন। সেটি কতটুকু সফল হয়, সেটাই এখন সবচেয়ে আকর্ষণীয় প্রশ্ন।

তবে বিতর্কের মাঝেই একটা প্রশ্ন সামনে আসে—একজন নারী অভিনেত্রী কি শুধু চরিত্রে নিজেকে বিলিয়ে দেন, না কি সে সময় তিনি নিজের অভিজ্ঞতা ও অবস্থান থেকেও কিছু বলে ওঠেন? জয়াকে যদি ‘কুসুম’-এর শরীরী অভিজ্ঞতার বাইরে এনে দেখা হয়, তবে তার বক্তব্য শুধুই নন্দনতত্ত্ব নয়—এ এক আত্মজিজ্ঞাসা, যেখানে শিল্পী নিজেই প্রশ্ন তুলছেন, নারী কি কেবল শরীর, না কি মন-শরীর মিলে একটি জাগ্রত সত্তা?

সারাবাংলা/এফএন/এএসজি

অভিনেত্রী জয়া আহসান জয়া আহসান

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর