শোবিজ মানেই আলো, ক্যামেরা আর নিরন্তর কথা। সেখানে কেউ হঠাৎ চুপ করে গেলে সেটাই সবচেয়ে জোরালো শব্দ হয়ে ওঠে। রুকাইয়া জাহান চমক যেন ঠিক সেটাই করলেন। যিনি একসময় ঠোঁটকাটা, স্পষ্টভাষী আর সাহসী মন্তব্যের জন্য পরিচিত ছিলেন, তিনি এবার বেছে নিলেন নীরবতার পথ— তাও আবার শাড়ির ভাঁজে মোড়া এক রোমান্টিক ঘোষণায়।
‘আজকে থেকে যাই হোক, শাড়ি পরে রোমান্টিক ছবি দিব’— চমকের এই একটি লাইনেই লুকিয়ে আছে সময়ের বাস্তবতা, সমাজের চাপ আর একজন শিল্পীর মানসিক ক্লান্তি। প্রথম নজরে এটি নিছক মজা কিংবা ব্যঙ্গ মনে হলেও, একটু গভীরে তাকালেই বোঝা যায়— এটি আসলে এক ধরনের প্রতিবাদ, তবে উচ্চকণ্ঠে নয়; নিঃশব্দে।
চমক লিখেছেন, এই দেশে নাকি চুপ থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ। অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে মানুষ আপনাকে নির্বোধ ভাববে। এমন উপলব্ধি হঠাৎ আসে না। এর পেছনে আছে অভিজ্ঞতা, ভয় আর ক্ষত। সম্প্রতি হত্যার হুমকি, ব্যক্তিগত ফোন নম্বর ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ—এসব মিলিয়ে একজন অভিনেত্রীর ব্যক্তিগত জীবনে যে অস্থিরতা তৈরি হয়, তা সহজেই অনুমেয়।
তবু চমক প্রতিবাদ থামাননি, কেবল ভাষা বদলেছেন। স্লোগানের বদলে বেছে নিয়েছেন শাড়ি, তর্কের জায়গায় রোমান্টিক ছবি। যেন বলছেন—আমি থাকব, আমি দেখাব, কিন্তু তোমাদের শর্তে। এই সিদ্ধান্তে আছে আত্মরক্ষা, আবার আছে তীক্ষ্ণ বিদ্রুপও।
শাড়ি এখানে শুধু পোশাক নয়, হয়ে উঠেছে প্রতীক। একদিকে এটি বাঙালিয়ানা, সৌন্দর্য আর নরমতার চিহ্ন, অন্যদিকে চমকের ঘোষণায় তা রূপ নিয়েছে সামাজিক বাস্তবতার আয়নায়। যেখানে একজন নারী শিল্পীকে হয় চুপ থাকতে হয়, নয়তো ‘নিরাপদ’ কনটেন্টে নিজেকে সীমাবদ্ধ করতে হয়।
চমকের এই অবস্থান হয়তো নতুন কোনো বিতর্ক উসকে দেবে না, কিন্তু প্রশ্ন রেখে যাবে—আমরা কি সত্যিই এমন এক সমাজে বাস করছি, যেখানে সত্য বলার চেয়ে শাড়ি পরে হাসিটাই বেশি নিরাপদ?