শেষ হলো তিনদিনের আর্টক্যাম্প
৫ আগস্ট ২০১৮ ১৫:৫৯
এন্টারটেইনমেন্ট করেসপন্ডেন্ট ।।
বাংলাদেশ বৈচিত্রপূর্ণ কৃষ্টি ও সংস্কৃতির এক অনুপম লীলাভূমি। এখানে রয়েছে হাজার বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার। ক্ষুদ্র জাতিসত্তার আচার অনুশীলন, জীবন চিত্র ও বিভিন্ন সুকুমার বৃত্তি দেশের সংস্কৃতির তাৎপর্যপূর্ণ অংশ।
সেগুলো সংগ্রহ করা এবং চিত্রশিল্পে উপস্থাপনের জন্য বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ২১ থেকে ২৩ জুলাই শিল্পকলা একাডেমি থেকে ৫০ জন শিল্পী কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী অঞ্চল পরিদর্শন করেছে। তারা বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিসত্তার তথ্য-উপাত্ত, স্থিরচিত্র এবং স্কেচ তৈরী করেছে।
আরও পড়ুন : নওশাবার বিরুদ্ধে ৫৭ ধারায় মামলা
কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ২ থেকে ৪ আগস্ট একাডেমির জাতীয় চিত্রশালায় প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত তিনদিনব্যাপী আর্টক্যাম্প আয়োজন করা হয়েছে। যেখানে ৫০টি জাতিসত্তার ৫০ জন শিল্পীর তুলিতে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার সাংস্কৃতিক জীবনের উপরে ১৫০টি চিত্রকর্ম তৈরী হয়েছে। চুড়ান্ত পর্যায়ে সেসব চিত্রকর্ম নিয়ে একটি ক্যাটালগসহ চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে আগামি অক্টোবর মাসে।
৪ আগস্ট, শনিবার বিকেলে একাডেমির জাতীয় চিত্রশালায় তিনদিনব্যাপী আর্টক্যাম্প এর সমাপনী দিনে আর্টক্যাম্প পরিদর্শন করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক জনাব লিয়াকত আলী লাকী এবং তিনদিনব্যাপী আর্টক্যাম্পের প্রধান সমন্বয়কারী শিল্পী কনক চাঁপা চাকমা।
শিল্পী আতিয়া মাইবম (মণিপুরী-সিলেট) তার কাজ করেছেন সাঁওতালদের নিয়ে। তিনি ৩টি শিল্পকর্ম তৈরী করেছেন। সাঁওতালদের নিজস্ব সংস্কৃতি বাদ্যযন্ত্র ‘তুমদা’ তৈরী করেছেন তিনি। শিল্পকর্মে দেখা যাচ্ছে তুমদা’র পাশে তামার হাড়ি, জবা ও পলাশ ফুল। শিল্পীর অভিজ্ঞতায় সাঁওতাল পাড়ায় পুরুষরা তুমদা বাজায় এবং মেয়েরা তামার হাড়ি মাথায় নিয়ে জবা ও পলাশ ফুল চুলে গুজে নৃত্য করে।
আরও পড়ুন : ‘নিশীথে’ একসঙ্গে অপি-রওনক
নয়ন ত্রিপুরা (রাঙ্গামাটি) কাজ করেছেন দিনাজপুরের মালো সম্প্রদায় নিয়ে। তিনি বলেন, ‘মালোদের বক্তব্য অনুযায়ি তাঁরা পূর্বে রাচ্চি দেশ থেকে এসে বর্তমানে দিনাজপুরের ঘোরাঘাটে অবস্থান করছেন। তাঁদের নিজস্ব ভাষা আছে, কিন্তু লিখিত কোন রূপ নেই। তারা বর্তমানে সনাতন ধর্ম থেকে ধর্মান্তরিত হয়ে খ্রিস্টান হয়েছেন। তাঁদের পেশা মাছ ধরা, কৃষি কাজ ও খেজুর পাতা দিয়ে মেয়েরা পাটি তৈরী করে। মালো সম্প্রদায়ের নিজস্ব সংস্কৃতিতে পুরুষরা ঢোল বাজায় আর মেয়েরা রঙিন সাজে নৃত্য করে। অনেকটা পালাগানের মত।’ শিল্পীর পরিদর্শনের অভিজ্ঞতায় মালোদের সংস্কৃতি অনেকটা সাঁওতালদের মত, যদিও তাঁরা সেটা স্বীকার করেনা।
বাংলাদেশে প্রায় ৫০টি ক্ষুদ্র জাতিসত্তার বসবাস রয়েছে। সেসব জাতিগোষ্ঠীর অধিকাংশেরই নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি রয়েছে। পরিচর্যা ও সংরক্ষণের অভাবে তাদের ভাষা ও সাংস্কৃতিক অনুষঙ্গগুলো আজ যথাযথভাবে বিকশিত হচ্ছেনা।
সারাবাংলা/পিএ