Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

একজন শেকড় সন্ধানী সেলিম আল দীন


১৮ আগস্ট ২০১৮ ১৩:০২

সেলিম আল দীন

এন্টারটেইনমেন্ট করেসপন্ডেন্ট।।

পৃথিবীতে কিছু মানুষ খুব কম সময়ের জন্য জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু তারা নিজ কর্মগুনে অমর হয়ে থাকেন পৃথিবীর মানুষের কাছে। নাট্যকার সেলিম আল দীন সেইসব মানুষদের একজন। তিনি তার সৃষ্টিকর্ম দিয়ে অমর হয়ে আছেন বিশ্বে বাংলা ভাষাভাষী মানুষের কাছে। তাকে বাংলা নাটকের নতুন ধারার প্রবর্তক বলা হয়ে থাকে। বাংলা নাটকের শেকড় সন্ধানী নাট্যকার উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে তাকে।

বিজ্ঞাপন

বাবার চাকরি সূত্র ধরে দেশের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন সেলিম আল দীন। উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোনোর পর তিনি ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তখন তিনি পেশাদার লেখক হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেন। যেই ভাবা সেই কাজ।  কবি আহসান হাবিব সম্পাদিত দৈনিক পাকিস্তান পত্রিকায় প্রথম তিনি লেখেন ১৯৬৮ সালে।

এরপর তিনি যতোদিন বেঁচে ছিলেন ততোদিন লিখে গেছেন অবিরত। তার লেখনিতে সৃষ্টি হয়েছে কালজয়ী সব নাটক। যা বাংলাদেশের নাট্য জগতে বাইবেল হয়ে আছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়েই নাটকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন সেলিম আল দীন। যুক্ত হন ঢাকা থিয়েটারের সঙ্গে। প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা শেষে কপি রাইটার হিসাবে যোগ দেন বিজ্ঞাপনী সংস্থা বিটপীতে। ১৯৭৪ সালে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসাবে যোগ দেন।

তিনি বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের সপ্নদ্রষ্টা । ঢাকা থিয়েটার ও গ্রাম থিয়েটারের কাজ করার পাশাপাশি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটার প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। শুধু তাই নয় ‌‌‘আমরা নাট্য শ্রমিক,নাটক আমাদের শ্রম ও ঘামের ফসল’- এই স্লোগানটিও তার লেখা।

বিজ্ঞাপন

সাংস্কৃতিক কর্মীদের তীর্থস্থান ‘সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চ’র (পূর্বে যার নাম ছিল শুধু মুক্তমঞ্চ) পরিকল্পনাকারী নাট্যচার্য সেলিম আল দীন। ঢাকা ও গ্রাম থিয়েটারের পাশাপাশি নাটককে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দেওয়ার জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠা করেন নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ। এই বিভাগে শিক্ষকতার পাশাপাশি দ্বৈতা-দ্বৈতাবাদের আলোকে লেখেন কালজয়ী সব নাটক। বাংলা নাটকের ইতিহাসে তিনি প্রথম বাংলা নাট্যকোষ রচনা করেছেন।

সেলিম আল দীন রচিত উল্লেখযোগ্য নাটকের মধ্যে আছে ‘জন্ডিস ও বিবিধ বেলুন’, ‘মুনতাসির’, ‘শকুন্তলা’ ও ‘কীত্তনখোলা’। এছাড়া ‘কেরামত মন্ডল’, ‘যৈবতি কন্যার মন’, ‘চাকা’, ‘হরগজ’, ‘প্রাচ্য’, ‘হাতহদাই’, ‘মধ্যযুগের বাঙলা নাট্য (গবেষণা)’, ‘একটি মারমা রুপকথা’, ‘বনপাংশুল’, ‘নিমজ্জন’, ‘ধাবমান’, ‘স্বর্ণবোয়াল’, ‘পুত্র’।

তার লেখা বেশ কয়েকটি নাটক থেকে নির্মিত হয়েছে চলচ্চিত্র। সেসবের মধ্যে ১৯৯৪ সালে নির্মিত হয় ‘চাকা’, ‘কীত্তনখোলা’ নাটক থেকে চলচ্চিত্র নির্মিত হয় ২০০০ সালে। এছাড়া তিনি ‘একাত্তরের যীশু’ চলচ্চিত্রের সংলাপ রচনা করেন। সবশেষ তার নাটক ‘যৈবতি কন্যার মন’ অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। যেটি মুক্তির অপেক্ষায় আছে।

সেলিম আল দীনের লেখনিতে আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক বিষয়গুলো স্থান পেয়েছে সবসময়। তিনি তার নাটকে বাঙালি জাতীয়তাবাদের কথা বলেছেন। সেই সাথে তার লেখায় অসাম্প্রদায়িক চেতনার স্ফুরণ ঘটেছে।

কাজের স্বীকৃতি হিসেবে সেলিম আল দীন অর্জন করেন একুশে পদক, বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার। তার রচনা বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

এই প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তির ৬৯ তম জন্মবার্ষিকী আজ। ফেনী জেলার সোনাগাজীতে ১৯৪৯ সালের ১৮ আগস্ট তিনি জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যুবরণ করেন  ২০০৮ সালের ১৪ জানুয়ারী।

এদিকে সেলিম আল দীনের জন্মদিন উপলক্ষে জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে তিন দিনব্যাপী স্মরনসভার আয়োজন করা হয়েছে। স্মরণসভায় সেলিম আল দীনের এর জীবন ও কর্মের ওপর আলোচনাসহ তার লিখিত নাটক মঞ্চায়ন করা হবে। এছাড়া ঢাকা থিয়েটার আয়োজন করেছে দুই দিনব্যাপী জন্মোৎসব।

সারাবাংলা/আরএসও/পিএম

চলচ্চিত্র নাটক সেলিম আল দীন জন্মোৎসব

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

২৪ বলে ০ রানে জাকিরের লজ্জার রেকর্ড
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৫:১৮

সম্পর্কিত খবর