‘আমরা পিছিয়ে নেই, সিস্টেম পিছিয়ে আছে’
২ অক্টোবর ২০১৮ ১৫:০৬
এন্টারটেইনমেন্ট করেসপন্ডেন্ট ।।
খিজির হায়াত খান, স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতা। তার প্রথম সিনেমা ‘অস্তিত্বে আমার দেশ’ মুক্তি পায় ২০০৭ সালে। ২০১০ সালে তিনি নির্মাণ করেন ‘জাগো’ শিরোনামের একটি স্পোর্টস ফিল্ম। দুটি ছবিই সমালোচক মহলে প্রশংসিত হয়। ক্যামেরার চোখে তার গল্প বলার ধরণও নজর কাড়ে সবার। এরপর আট বছর পেরিয়ে গেলেও আর কোন পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা নির্মাণ করেননি তিনি। মাঝে কানাডায় ‘মাস্টার্স ইন ডিজিটাল মিডিয়া অ্যান্ড কনসেনট্রেশন ইন ফিল্ম মেকিং’ বিষয়ে পড়াশোনা করেন। এ সময় খিজির হায়াত খান ‘আই ফর অ্যান আই’ শিরোনামে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন, যেটি ২০১৫ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়। খিজির হায়াত খান বর্তমানে ব্যস্ত আছেন ‘মি. বাংলাদেশ’ ছবিটির প্রচারণায়। প্রযোজনার পাশাপাশি সিনেমাটিতে অভিনয়ও করেছেন তিনি। ছবিটি নিয়ে সারাবাংলার স্টাফ করেসপন্ডেন্ট তুহিন সাইফুল-এর সঙ্গে কথা হয় তার, যেখানে উঠে আসে বাংলা চলচ্চিত্র জগতের কিছু তিক্ত সত্য গল্পও।
- আপনি দেশপ্রেমের মোড়কে সিনেমা নির্মাণ করতে পছন্দ করেন। আপনার বানানো দুটো সিনেমা দেখেই এমনটা মনে হয়েছে। সিনেমায় জাতীয়তাবোধ তৈরীর একটা চেষ্টাও দেখা যায়…
সত্যি কথা বলতে কি আমি জাতিপ্রিয় মানুষ, গর্বিত বাংলাদেশি। আমার দেশপ্রেম অনেক শক্তিশালী। এটার কারণ হতে পারে আমি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান, আমার পরিবারের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। ওইটার একটা প্রভাব আমার ভেতরে রয়ে গেছে। আমি পড়াশোনা করেছি সিলেট ক্যাডেট কলেজে। মাধ্যমিক পর্যায়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একটা হচ্ছে ক্যাডেট কলেজ। প্রতিষ্ঠানটা চলে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের করের টাকায়। বাংলাদেশের মানুষের ট্যাক্সের টাকায় খিজির হায়াত খান পড়ালেখা করেছে। আমি যদি এই সুযোগগুলো রাষ্ট্রের কাছে না পেতাম তাহলে হয়তো এখানে আসতে পারতাম না। তো, ওই জায়গা থেকেই হয়তোবা দেশের প্রতি প্রেমের অনুভুতিটা আমার ভেতর বেশি কাজ করে। তবে এটাও সত্যি, আমার ছবিতে হয়তো দেশপ্রেমের ফিলটা আছে কিন্তু জনরা কিন্তু আলাদা। আমার প্রথম ছবি ছিলো ‘অস্তিত্বে আমার দেশ’, মুক্তিযুদ্ধ এবং আমাদের একজন বীরশ্রেষ্ঠকে নিয়ে। আমার দ্বিতীয় সিনেমা ‘জাগো’, স্পোর্টস ফিল্ম। দেশপ্রেম ওখানেও ছিল। আমাদের তৃতীয় সিনেমা, যেটা আমি পরিচালনা করিনি, লিখেছি, অভিনয় করেছি এবং প্রযোজনা করেছি, ‘মি. বাংলাদেশ’ সেটা জঙ্গীবাদ নিয়ে। তিনটা ছবিতেই জাতীপ্রেমের বিষয়টা ভিন্নপন্থায় এসেছে। যেহেতু বাংলাদেশী পরিচালক আমি, বাংলায় সিনেমা বানাই, বাংলাদেশী জাতীয়তাবোধটা যদি আমার মধ্যে শক্তিশালী না থাকে, তাহলে হয়তো বাংলাদেশী সিনেমাকে বাংলাদেশের মতো করে উপস্থাপন করাটা কষ্টকর হয়ে পড়বে। আমি হয়তো অন্য গল্পের সিনেমাও বানাবো তবে সেখানেও কোন না কোন ভাবে আমাদের জাতীয়তাবোধটা চলে আসবে। এখন তুমি আমাকে দেশপ্রেমী বলতে পারো বা যা খুশী বলতে পারো। আমি এরকমই।
- আপনার সিনেমায় তারকা অভিনয়শিল্পী খুব একটা থাকে না। ‘অস্তিত্বে আমার দেশ’ ছবিতে শশী আর আপনি অভিনয় করলেন। পরের ছবি ‘জাগো’তে ফেরদৌস ছাড়া বাকী সবাই বলতে গেলে নতুনই ছিলো। ‘মি. বাংলাদেশ’ ছবির কথা বলতে পারি অথবা ‘প্রতিরুদ্ধ’ শিরোনামে আপনার যে ছবিটা আটকে গেল সেখানেও একেবারে নতুনদের নিয়েই কাজ করেছেন আপনি…
আমরা যখন অভিনয়শিল্পী নির্বাচন করি, তখন আসলে চরিত্র খুঁজি। তারকা খুঁজি না। তারকা দরকার আছে, অবশ্যই তারকাখ্যাতি সিনেমার বিপণনে অনেক সাহায্য করে। আমার কাছে তারকাখ্যাতির চেয়েও চরিত্র বেশি গুরুত্বপূর্ণ, মানে চরিত্রটা কে করতে পারবে সেটা আমি ভাবি। ওই সময়টা কে দিতে পারবে বা পরিশ্রমটা কে করবে সেটা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তারপর সামর্থ্য একটা ব্যাপার। ‘অস্তিত্বে আমার দেশ’ খুবই অল্প বাজেটের সিনেমা ছিল। আমি তখন মাত্র বাংলাদেশে ফিরে আসছি। সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির কোন মানুষকেই চিনতাম না। অডিশন নিতে গিয়ে শশীর সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। শশীর চেহারাটা মিলি রহমানের [বীরশ্রেষ্ট মতিউর রহমানের স্ত্রী] সঙ্গে অনেক মেলে। আমার কাছে সেটা অনেক বেশি প্রাধান্য পেয়েছে। শশী চমৎকার অভিনেত্রীও, তার অভিনয়-অভিব্যাক্তি ভালো। সে আমাকে কমিটমেন্ট দিয়েছে এবং আমার যে স্বল্প বাজেট ও স্বল্পক্ষমতা ছিল সেটাকে সে গ্রহণ করে নিয়েছে। সে কারণে তাকে নিয়েছিলাম। ‘জাগো’র ক্ষেত্রে ছিলো শুভ, নাঈম, রওনক। আমার ইয়াংস্টার দরকার ছিলো। আমরা প্রায় ছয়মাস ধরে শুট করেছি। যে পরিমান সময়, পরিশ্রম আমাদেরকে করতে হয়েছে, যে পরিমান কষ্ট তারা করেছে এটা বড় তারকার পক্ষে চাইলেও দেয়া সম্ভব না। সে যদি এটা দিতে চায় তাহলে তাকে যে পারিশ্রমিক দেয়ার দরকার পরবে সেটা আমার পক্ষে দেয়া সম্ভব না। তাই ব্যাটে বলে হয়নি।
কিন্তু আমার কাছে মনে হয় শুভ-রওনক-নাঈমকে আমি যে যে চরিত্রে নিয়েছি, আমি ভুল করি নাই। আজকে ওরা নিজেদের জায়গায় অনেক ভালো করছে। ওদেরকে যখন দেখি তখন গর্ববোধ করি যে, বয়েজ হ্যাভ গ্রোন আপ। এখন অবশ্য কথা হয় না, অনেকদিন ধরে কথা হয় না। একটা ক্ষোভ কাজ করে (হাসি) স্টার হয়ে যাওয়ার পর সবাই যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। ‘প্রতিরুদ্ধ’ যেহেতু বন্ধ হয়ে গেছে সেটা নিয়ে আর না বলি। আর ‘মি. বাংলাদেশ’ ছবিতে যেটা হয়েছে যে আমার গল্পটাই এমন, সেন্সেটিভ টপিক। এখানে অনেকগুলো ব্যাপার কাজ করেছে। দীর্ঘ প্রস্তুতির দরকার ছিল, রিয়েল লোকেশনে শুটিং, এটার মধ্যে একটা বিশাল রিস্কফ্যাক্টর আছে। যেহেতু সিনেমাটা আমরা নিজেরা প্রযোজনা করেছি, তো তারকারা ওই রিস্কটা নিবে কিনা সেই সন্দেহটা আমার মধ্যে কাজ করে। আমার মনে হয় না এই সন্দেহটা অযৌক্তিক। আর নতুন কাউকে নেয়ার থেকে আমি নিজেকে বেশি প্রেফার করেছি। নতুনদের উপর অবশ্যই ভরসা করা যায় কিন্তু চরিত্রটার যে ডাইমেনশন সেটার নতুন কাউকে না খুঁজে আমি নিজেকে প্রস্তুত করেছি। আর পরিচালনার দায়িত্ব আবু আখতার ভাইকে দিয়েছি।
আর ওই যে বললাম, বাংলাদেশে যারা তারকা তারা তো অনেক ব্যস্ত। আমার সময় লাগে। আমার সেটে আসলে আমি ভালও বাসবো অনেক বেশি কিন্তু কষ্টও করতে হবে। আর সেটা হয়তো অনেক তারকাকে দিয়ে করানোটা কঠিনও হয়ে যায়। আর ওনারা যে পরিমাণ পারিশ্রমিক পাওয়ার যোগ্যতা রাখেন সেটা হয়তো আমাদের মতো স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতাদের পক্ষে দেয়া সম্ভব না। তবে স্টারদের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা খুব ভালো। ফেরদৌস ভাইয়ের সঙ্গে আমার খুব ভালো সম্পর্ক। তারিক আনাম খানের সঙ্গেও আমার ভালো সম্পর্ক। পূর্ণিমার সঙ্গেও কাজ করেছি। তবে আমি না স্টারদেরকে একটু ভয়ও পাই। কারণ ওই যে একজন তারকাকে কোথাও নিয়ে গিয়ে একটা শট নিতে বেশি পরিমাণ পরিশ্রম করতে হয়। কারণ তাদেরকে দেখার জন্য মানুষের ভিড়।
- বলছিলেন, আপনার সিনেমায় অভিনয় করা শিল্পীদের বড় হওয়া দেখে আপনি গর্বিত হোন। কিন্তু বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। আপনি যে নতুনদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন তারা কেউই সে অর্থে বড় তারকা হয়ে উঠতে পারেনি। শুভর কথাও যদি ধরি তাহলে সে ঠিক শাকিবের সমকক্ষ হয়ে উঠতে পারেনি। রওনক-নাঈমরাও পরিশ্রম করছেন, শশী তখনও যেমন ছিলো এখনো তেমনি আছে বলা যায়…
তুমি আমাকে ডিরেক্ট প্রশ্ন করেছ, আমিও তোমাকে ডিরেক্টে আন্সার দেই। বাংলাদেশে শাকিব খানের ছবিও কিন্তু ফ্লপ যায়। বাংলাদেশে তারকাটা কে ভাই? আমাকে বলো গ্যারান্টেড তারকা কে, যে ওকে নিবেন ছবি হিট করবে! আমাদের দেশের স্ট্রাকচারটাই ফল্টি। আস্তে আস্তে এটা বদলানো শুরু করছে। ‘আয়নাবাজি’, ‘মনপুরা’, ‘ঢাকা অ্যাটাক’, ‘পোড়ামন ২’, ছবিগুলো দেখিয়েছে তারকা ছাড়াও গল্প দিয়ে, ভালো মেকিং দিয়ে, ভালো অভিনয় দিয়ে ভালো ছবি হতে পারে। এই ট্রেন্ডটা কিন্তু শুরু হয়েছে। আমরা ‘জাগো’ বানিয়েছিলাম তখনকার প্রেক্ষাপট একরকম ছিল। দশবছর পর এসে এখন ছবিটার কদর দেয়া শুরু করছে। স্টার নিলেই ছবি হিট করবে? শুভর কথা যদি বলি, সে তো চমৎকার করছে। বাংলাদেশে দুইজন নায়কের কথা বললে ওর নাম আসবে। নাটকের তিন জনের নাম বললে সেখানে নাঈমের নাম আসবে। রওনকের কথা যদি বলি সে ভালো লেখক। ও প্রথম থেকেই ধীরে আগাচ্ছে। সে ভালো অভিনেতাও। ওরা কিন্তু খারাপ করছে না। আর সবাই তো ভালো করবে না। আর আমিও তো যাদুকর না যে নিলাম আর দাঁড়িয়ে গেল। এরা ভালো করছে না সেটার সঙ্গে আমি একমত হবো না। ওরা বেশ ভালো ভাবেই চেষ্টা করে যাচ্ছে।
- আমি আসলে বলতে চাচ্ছি সিনেমা বা সিনেমায় সংশ্লিষ্টদের মানুষদেরকে আপনারা ঠিকভাবে তুলে ধরতে পারছেন না। মানে মার্কেটিংটা ঠিক মতো হচ্ছে না আরকি…
সিনেমার মার্কেটিং আমরাও করতে পারি। টাকা দাও করে দেখাচ্ছি। ‘মি. বাংলাদেশ’ ষোল কোটি মানুষের মধ্যে দশ কোটি মানুষ দেখবে তুমি আমাকে টাকা দাও। ছবিটা বানাতে এক কোটি পনের লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এখন আমার কাছে টাকা নাই। তো আমি বাজারজাতটা করবো কোনদিক থেকে। বাংলাদেশের কোন ব্যাংক, প্রাইভেট ব্যাংক বা পাবলিক ব্যাংক আজকে পর্যন্ত কোন ছবিতে লগ্নি করেছে? করে নাই। এক কোটি পনের লাখ টাকা দিয়ে সিনেমা হয় নাকিরে ভাই। বাইরের দেশে তো গানই হয় না এই টাকায়। তুমি আমার বন্দুকে যদি গুলি না দাও তাহলে গুলিটা আমি করবো কিভাবে! বাজারজাত করার জন্য আমার টাকা লাগবে। ইনফ্রাস্ট্রাকচার লাগবে। আমার তো সেটা নাই। ওদের দেশে যখন একটা ছবি হয় ওদের এভিনিউগুলো চিন্তা করো, আমাদের তো এক ফেসবুক ছাড়া আর কি আছে বলতো! বিনোদনে যারা তোমরা আছো, অন্যভাবে নিও না। আমার খুব কষ্ট লাগে। যেমন, আমি জাহাঙ্গীরনগরে প্রচারের কাজে গিয়েছিলাম। ওখানে আমি আমার পরবর্তী ছবির ঘোষণা দিয়েছিলাম, কোন অথেনটিক নিউজ হয়নি, করানোটা খুব ডিফিকাল্ট। এখন এটা হতে পারে বিনোদন সাংবাদিক যারা আছেন, তারা অনেক ব্যস্ত অথবা ইন্টারেস্ট হারায় ফেলছেন। ফলে আমাদের পাবলিসিটি ওই ফেসবুকেই করতে হয়, সেখানেও অবশ্য টাকা দিয়ে করতে হয়। এটা ফ্যাক্ট, আই হ্যাভ টু পে। ফেসবুককে টাকা দিলে সেটা আগাবে না হলে আগাবে না।
এখন এই যখন আমাদের দেশের রিয়ালিটি। অথেনটিক জার্নালিজম যেটা, সেটা যখন আস্তে আস্তে নানা কারণে হারিয়ে যাচ্ছে। সেখানে আমি বাজারজাতটা করবো কিভাবে ভাই! আমার তো হাত-পা বাঁধা। আমি মেকার। আমার দায়িত্ব সিনেমাটা বানানো। ছবিটি কেমন হয়েছে, সেটা নিয়ে কথাবার্তার দায়িত্ব কিন্তু অনেকের উপর বর্তায়। এখন তুমি বলতে পারো আপনি আমির খান না কেন? আমির খান তো একদিনে আমির খান হয়নি। অনেক সময় সে নিয়েছে। তার ইন্ডাস্ট্রিটা দেখ আর আমার ইন্ডাস্ট্রিটা দেখ। আমি যেখানে আমার ছবিটা কিভাবে ডিস্ট্রিবিউট করবো সেটা নিয়ে স্ট্রাগল করতেছি। আমি শেষ ছবি বানিয়েছি ২০১০ সালে, ‘জাগো’। ২০১৮তে বের হচ্ছে পরের ছবি। আট বছর লাগছে আমার একটা ছবি করতে। এখন ‘মি. বাংলাদেশ’ যদি বাণিজ্যিক সফলতা না পায় তাহলে এর পরের ছবি আমি কত দিনে শেষ করতে পারবো আমি জানি না। আমাদের স্ট্রাগলটা তো অন্য জায়গায়। আমার যদি ইনফ্রাস্ট্রাকচার না থাকে, আমি কিভাবে আগাবো? আমাদের কাজ ছবি বানানো।
এই যে আজকে তুমি আমার সাক্ষাৎকার নিতে আসছো, এমন অথেনটিক সাক্ষাৎকার আমি কয়টা দিয়েছি? এই পর্যন্ত পঞ্চাশের বেশি জায়গায় ছবির কাভারেজ হয়েছে কিন্তু আমি যদি তুলনা করি যে প্রেস রিলিজটা আমি পাঠিয়েছিলাম সেটা আগে পরে করে নিউজ হয়েছে। এটা কেন হবে ভাই। আমি তো জঙ্গীবাদ নিয়ে ছবি বানিয়েছি। অনেক কথা আমাকে জিজ্ঞেস করার আছে। কেউ তো আমাকে জিজ্ঞেস করে না। তুমি জিজ্ঞেস না করলে আমি কিভাবে বলবো। এখন এক পারি তোমাকে আমি টাকা দিয়ে বলতে যেটা আমি কখনো করবো না। আরেক হচ্ছে, আমি তো অপেক্ষা করি যে সাংবাদিকরা আমাকে সঠিক প্রশ্নটা করবে। আমি তো বলতে চাই। তুমি প্রশ্ন করতে পারো না আমি কেমনে বলবো। আমার জায়গা কোনটা? ফেসবুকে লেখা। আমি লিখতেছি।
- সমসাময়িক ‘দেবী’ ছবিটি কিন্তু চমৎকার প্রচারণা চালাচ্ছে। আপনি ‘পোড়ামন ২’ এর কথা বলছেন, সেই ছবিরও চমৎকার প্রচারণা করেছে। প্রচারণা হচ্ছে। কস্ট মিনিমাইজিং বলতেও কিন্তু একটা ব্যাপার আছে, সেভাবে কি চিন্তা করা যায় না?
দেবী বিশ্ববিদ্যালয়ে গেছে, আমরাও গেছি। ওরা টি-শার্ট করেছে আমরাও করেছি। জাস্ট উদাহরণ টানছি। আমারা সবাই কিন্তু ভালো ব্যাপারগুলো ফলো করার চেষ্টা করি। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রির যদি টোটাল মানসিকতাটা না বদলায়, যে আমরা ভালো ছবির সঙ্গে থাকবো, দেশের স্বার্থে ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে থাকবো। তাহলে ইন্ডাস্ট্রি বদলাবে। অনেক পাবলিসিটি করে তো ‘আয়নাবাজি’ রিলিজ করেছে। এই ছবিটা অনেক অনেক হলে চলেছে। অনেক দর্শক দেখেছে। তাহলে প্রডিউসার কেন বলে এখনো টাকা পাইনি! নিশ্চয় কোন কষ্ট আছে! জয়ার [প্রযোজক হিসেবে] প্রথম ছবি, অনমের প্রথম ছবি, হুমায়ূন আহমেদের ‘দেবী’ নিয়ে, এতো বহুল পঠিত একটা উপন্যাস, এতো সুন্দর গল্প, তারা তাদের জীবন দিয়ে চেষ্টা করবেই। আমি নিঃসন্দেহে বলতে পারি, ছবিটা ভালো হয়েছে। কিন্তু আমরা যদি ছবিটাকে আপন করে না নেই, কাকরাইলের বাইরে বা কোন একটা গোষ্ঠির হাতে যে হলগুলো রয়েছে ওগুলোর বাইরে গিয়ে যদি ছবিগুলো না চলে তাহলে দর্শক হিসেবে আমরা কিন্তু আমাদের দায়িত্বে অবহেলা করবো না। আমরা চেষ্টা করেছি। আমরা আরো চেষ্টা করবো। মি. বাংলাদেশকে যতদূর নেয়া যায় আমরা নেব। কিন্তু বাজারটা না কেমন জানি ঘোলাটে হয়ে গেছে। আমি বলবো না নষ্ট হয়ে গেছে। এখানে ভালো জিনিসের কদর অনেক কষ্ট করে পেতে হয়। যেখানে আমাদের ইন্ডাস্ট্রিটা ডুবে যাচ্ছে সেখানে ভাল জিনিশের কদর আরো আগে পাওয়া উচিত ছিল।
- হলের প্রসঙ্গ টানলেন। এই কথাটা প্রায় সবাই বলেন। অনেক প্রযোজক আক্ষেপ করে বলেন যে সিনেমা হল ‘বন্দী’ হয়ে আছে। হলটা আসলে কিভাবে ‘বন্দী’, কেন প্রযোজক টাকাটা ফেরত পাচ্ছে না…
আমি আমার অভিজ্ঞতার কথা বলতে পারবো। আমি দুইটা সিনেমা রিলিজ দিয়েছি। আমি যেটা জানি বা বুঝি সেটা হয়তো সম্পূর্ণ সঠিক নাও হতে পারে কিন্তু যেটা আমি জানি বা বুঝি সেটাই বলছি। তের’শ হল ছিল, এখন একটিভ হল দুইশ। সিনেপ্লেক্স তিন-চারটা। ইন্ডাস্ট্রি বদল হয় মধ্যবিত্ত হলে আসলে। এখল মিডলক্লাস অডিয়েন্স হলে যাওয়ার মতো হল আছে তিন থেকে চারটা। ঢাকায় তিনটা সিনেপ্লেক্স আর বলাকা। শিক্ষিত মধ্যবিত্ত হলে খুব কম যাচ্ছে। কারণ হলের পরিবেশের অবস্থা খুবই খারাপ। প্রজেকশনের অবস্থা খুবই খারাপ। খুবই কঠিন ওদেরকে নেয়া। ইনফ্রাস্ট্রাকচারের দিক থেকে আমরা খুবই বাজে জায়গায় আছি। এরমধ্যে কি হয়েছে, যারা হলগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করছে, আগে একসময় কাকরাইল এটাকে নিয়ন্ত্রণ করতো, বুকিং এজেন্টরা। একসময় বুকিং এজেন্টরাই প্রযোজক হয়েছে, যার হাতে হল সে’ই প্রযোজক হয়েছে পরবর্তীতে। ওইটারই একটা আধুনীকরণ হয়েছে জাজ মাল্টিমিডিয়াতে।
উনি [আব্দুল আজিজ] একজন ব্যবসায়ী, উনি সুযোগ দেখছেন সেটা তিনি নিয়েছেনও। হলগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, উনি বলছেন আচ্ছা তোমার হলগুলো আমার কাছে ভাড়া দাও, আমি এখানে প্রজেক্টর বসাই, সাউন্ড বসাই, আমার ছবিগুলো যেন এখানে সুবিধা পায়। উনি তো ব্যবসা করতে আসছে ভাই। ওনাকে দোষ দেয়া যাবে না। এখন উনি যখন প্রযোজক হয়ে গেছেন, এখন আমি প্রযোজক আমার হাতে হল থাকলে আমি এটাকে প্রায়োরিটি দেব না? খুবই সিম্পল। এখানে হওয়ার কি ছিলো, এখানে রাষ্ট্রের দায়িত্ব নেয়া উচিত ছিলো। আমার সিনেমা, আমি এটাকে শিল্পখাত ঘোষণা করছি। আমার এই খাতটা ডুবে যাচ্ছে, আমার হল নাই, যেগুলো আছে সেগুলো কখনো না কখনো কারো হাতে চলে যাচ্ছে, সো এটা যাতে না হয় তার জন্য আমি এমন একটা নীতিমালা করবো যাতে এই সমস্যাটা পুরো ইন্ডাস্ট্রিকে সাফার না করায়। রাষ্ট্র সেখানে ব্যর্থ হয়েছে বা পদক্ষেপ নিতে দেরি করে ফেলছে। বাংলাদেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি পরিবর্তন করতে বেশী কিছু লাগে না। তুমি বাংলাদেশে তিরিশটা সিনেপ্লেক্স যদি তৈরী করে দিতে পারো তাহলে সিনেমার চাকা ঘুরে যাবে। যেটা আমাদের পাশের দেশ চাচ্ছে। ওরা কেন চায়? কখনো নাফটা, কখনো সাফটা, কখনো যৌথ প্রযোজনা দিয়ে হলগুলোতে ঢুকতে চায়। আরে ভাই সতের কোটি মানুষের বাজার, ও কেন চাইবে না। ও এটা বুঝে কিন্তু আমি বুঝি না। এখন আমি যেহেতু বুঝিনা আমার জিনিসটা দিন দিন নীচে যাচ্ছে। আল্টিমেটলি ওদের ছবিগুলোই ডান-বাম করে আমাদের এখানে আসছে। আমাদের শিল্পটা মার খাচ্ছে।
আমাদের রাষ্ট্রকে দায়িত্ব নিতে হবে। রাষ্ট্রকে বুঝতে এই সতের কোটি মানুষের এন্টারটেইনমেন্টের জন্য আমাদের লোকাল সংস্কৃতির যে আয়না, সেই সিনেমার জন্য গঠনমূলক কিছু স্টেপ নিতে হবে। রাষ্ট্র এটা নিতে ব্যর্থ হয়েছে আনফরচুনেটলি। আমি সরি, আমি একদম সরি। রাষ্ট্র যে ব্যর্থ হয়েছে তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ এফডিসিতে ঢুকলে। এফডিসিতে আসলে কোন ক্যামেরাগুলো আসে? এফডিসি’র যে লোকগুলো আছে তাদেরকে কি ট্রেইন করানো হয়? প্রথম থেকেই একটা টার্গেট ছিল ‘মি. বাংলাদেশ’কে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ ফিল্ম বানাবো। কারণ ‘জাগো’তে আমার প্রচুর টাকা নষ্ট হয়েছে ভারতে যেতে। কারণ সুবিধাগুলো আমাদের দেশে ছিল না। ‘মি. বাংলাদেশ’ ছবির কালার গ্রেড করতে আমি এফডিসিতে যাই, মেশিনগুলো সব ঠিক আছে কিন্তু লোকগুলোকে সেভাবে ট্রেইন করানো হয় নাই। ভালো মানুষ, তারাও শিখতে চায়। ওদেরকে ট্রেনিং করানো হয় নাই। এখন আমিই আমাকে পঙ্গু করে রেখেছি। আমি কি না জেনেই পঙ্গু করে রাখছি নাকি কোন আন্তর্জাতিক কন্সপিরিসি আছে সেটা আমি জানি না। কিন্তু এই কথাগুলো যাদের শুনার কথা সেখানে কোন একটা প্রতিবন্ধকতা আছে এ কারণে হয়তো শুনেনা। নইলে বাংলাদেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি এভাবে আটাকে থাকতে পারে না।
এটা [বাংলা সিনেমা] জাম্প স্টার্ট দেয়া কোন ব্যাপার না। এতোগুলো বড় বড় ইন্ডাস্ট্রি ওদের কি ক্ষমতা নাই তিরিশটা সিনেপ্লেক্স বানিয়ে দেয়ার? তাহলে পাশের দেশের পিভিআর কেন এখানে এসে সিনেমা হল করতে চায়? কি কারণে? আমাদের ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করা হচ্ছে না কেন? সরকারের তো জমি আছে ষাটটা জেলাতে, সরকার বলে দিক, আমরা জমি দিচ্ছি আপনারা সিনেপ্লেক্স করেন। কই সরকার তো বলে না। কুমিল্লা শহরে আটটা হল ছিল। এখন একটা আছে, সেটাতেও সব বাজে ছবি চলে। এখন আমরা বললে তো দোষ। কিন্তু এটা তো সত্যি, আমাদের যারা নীতিনির্ধারক তারা তো সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না সিনেমাকে বাঁচানোর জন্য। বছর বছর আমি পাঁচটা ছবিতে অনুদান দিলাম, আর বড় বড় প্রিমিয়ারে গিয়ে হাজির হয়ে গেলাম, এগুলা করলে কর্তৃপক্ষ হিসেবে আমার দায়িত্ব পালন করা হয় না। আমাদের যে একটা ফিল্ম সিটি আছে সেটা পার্ক! পার্কও না। এটা যে আসলে কি! আমি শ্যুট করতে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখি কতগুলো ঘরবাড়ি উঠিয়ে রেখেছে, কেন? কি কারণ? এগুলো বললে খারাপ আমরা। ওনারা না পারলে আমাদেরকে বলুক। আমরা করে দেই। অনেক ফিল্মমেকার আছে যারা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিকে কিভাবে বদলাতে হবে সেটা বোঝে। এখন দুইদিন পরপর এফডিসির এমডিকে বদল করে দিলাম একজন সচিব সাহেবকে পাঠালাম, ও এসে দুইপক্ষের রাজনীতি সামলাতে সামলাতেই তো দশ বছর চলে যায়। প্রপার লোকটাকে তো বসাতে হবে।
- বাংলাদেশে এখন ভারতীয় সিনেমা আসছে সাফটা চুক্তির আওতায়, সেখানে অনেক ভালো ভারতীয় বাংলা সিনেমার বিপরীতে আমাদের দেশ থেকে মানহীন সিনেমা যাচ্ছে। এতে করে ওদের বাজারে আমাদের সিনেমা সম্পর্কে একটা বাজে ধারণা তৈরী হচ্ছে। আপনার কি মনে হয় না আমদানী রফতানীর এই ব্যাপারটা অসম হয়ে যাচ্ছে?
যদি আইন থাকে আর আইনের প্রয়োগ ঠিক মতো না হয়, ফাঁকফোকর থাকে, সেখানে তো অবিচার হবেই। আমাদের ফিল্ম কোনটা সাফটাতে যাবে সে ব্যাপারে একটা কমিটি থাকা উচিৎ। ছবি কোনটা যাবে কোনটা আসবে এটা কার হাতে? আমি কাকে দোষ দিবো? এই প্রশ্নটা আমাকে না করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে করা উচিত। ভাই কি করলেন? যৌথ প্রযোজনা করলেন এমন ভাবে করলেন যে পুরটাই একটা ভেলকিবাজী ছিলো, করে ওদের দেশের ছবি আমাদের এখানে ঢুকায় দিচ্ছেন? আমাদের ছবিগুলোকে মার খাওয়ায় দিচ্ছেন? কেন? যারা দায়িত্বে অবহেলা করছেন তাদেরই দায়িত্বটা নেয়া উচিত। তাদের বলা উচিত এটা কেন হচ্ছে। কেন সাফটাতে ওদের হিট ছবি আসে আর আমাদের এখান থেকে যায় বস্তাপচা ছবি। দায়িত্বে কে আছে? কাকে জিজ্ঞেস করা উচিত আপনার দায়িত্বে অবহেলা হয়েছে এখানে! কেন এখান থেকে প্রপার ছবিটা যায় না। কেন পনের বছর ধরে অস্কারে কেবল একটা প্রতিষ্ঠানের প্রযোজনা করা ছবি যায়? এই কমিটি কে? কে নির্ধারণ করেছে এই কমিটিকে? ওরা কারা? ওরা কাদের টাকায় চলে? দালালিটা কারা করে? কেউ এই প্রশ্ন করে নাই। এই বার বলা হয়েছে। বিপদে পড়ে ‘ডুব’কে পাঠিয়েছে। এইগুলো কি মানুষ বুঝে না! বললেই দোষ। এতে তো সবার নাম খারাপ হয়। আজকে যদি একটা প্রতিষ্ঠানের ছবি পনের বছর ধরে পাঠায় মানুষ তো প্রতিষ্ঠানটিকে খারাপ বলে। কিন্তু ওই প্রতিষ্ঠানের থেকেও তো দোষ বেশি ওই দালালগুলোর। বাংলাদেশে কি ভাল ছবি কম হয়? হ্যা কম হয়, কিন্তু হয় তো। তাকে তো প্রপার সুযোগটা দিতে হবে। এ বছর একটা ছবি আসছে, ‘মাটির প্রজার দেশে’। ছবিটা অস্কারে জমাই দিতে পারলো না। অস্কারে জমা পড়ছে দুইটা ছবি। ‘ডুব’ আর ‘কমলা রকেট’। এবার যেহেতু আমরা এটা নিয়ে কথা বলা শুরু করছি তাদের টনক নড়ছে। আরেকবার পাঠাক না ওরা। আরেকবার পাঠানোর চেষ্টা করুক, প্রপার জাজমেন্ট না করে। তারপর দেখা যাবে।
- আপনি বলছিলেন, সঠিক জায়গায় সঠিক লোকটি নেই। এটা আমাদের মানসিকতার সমস্যা যে কাজের জন্য সঠিক লোক নির্বাচন করতে পারি না?
এটা সত্য যে অনেক জায়গাতে আমাদের সঠিক মানুষ নেই। কিছু হলেই আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে চলে যাই। একজন মানুষ একা কতকিছু করবেন? বাকীরা কি করছে তাহলে? এখন সিনেমার সমস্যা, এটা প্রধানমন্ত্রী কেন সমাধান করবেন? সিনেমা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাহলে কি করছেন? আমাদের ইন্ডাস্ট্রির জন্য দায়িত্বপ্রাপ্তরা আসলে কি করছে? ‘নায়ক’ একটা ছবি আছে না? অনিল কাপুর বলছিল, একদিনের জন্য দায়িত্ব নিতে চায়। আমি তো বলি আমাকে যদি সাত দিনের জন্য সিনেমা বদলের দায়িত্ব দেয়া হয় আমি বদলে দিতে পারবো। মানসিকতা লাগে তো ভাই। দেশপ্রেমিক আমি বললেই হয় না। কাজে বুঝাতে হয়। সিনেমা কর্তৃপক্ষের কাজটা কোথায়? কেন আমাদের দেশের ইন্ডাস্ট্রি ভারতের হাতে চলে যাবে? হ্যা, সব দেশের সিনেমা সব দেশে চলবে কিন্তু এখানে লেভেল প্লেইং গ্রাউন্ড থাকতে হবে। আমি নিয়ে আসবো বিএমডব্লু আর তুমি চালাবা মারুতি সুজুকি তাহলে হবে না। সমান হতে হবে। আমি যদি পারতাম সিনেমা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যারা আছেন তাদের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীকে আরেকটু ভেবে দেখতে বলতাম।
- আমাদের দেশে ভালো সিনেমা কম হওয়ার কি কারণ? আমাদের পরিচালকরা সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না?
[নিজের কাজের টেবিল দেখিয়ে] এখানে তিনটা কম্পিউটার, অ্যাপেরেল। আমি সময়ের থেকে কোন দিকে পিছিয়ে আছি আমাকে বলো! হলিউড যে সফটওয়্যারে এডিট করে আমিও সেই সফটওয়্যারে এডিট করি। আমরা সময় থেকে পিছিয়ে নেই। তুমি আমাদের হাত পা বেঁধে রাখছ, আর বলছ অলিম্পিকে সাঁতার কাটতে, আমি কিভাবে সাঁতার কাটব? আমার ছবি দেখানোর জায়গা নাই। আমার একটা ডিজিটাল টিকেটিং সিস্টেম নাই। কুমিল্লায় টিকিট সেইল হয়েছে পাঁচশ আর আমি এখানে রিপোর্ট পেয়েছি পঞ্চাশ। অথচ আমার এখানে ল্যাপটপে বসে দেখার কথা সারা বাংলাদেশে আমার কতো সেইল হয়েছে। এই সিস্টেম কই? কে করবে এই সিস্টেম? আমি আপগ্রেডেট হয়ে আসলাম, আমিও তো কানাডায় পড়াশোনা করে আসছি, তো আপগ্রেড হয়ে আমার লাভ হলো কি? জাগো তো চালাতে পারলাম না। হলেই নিতে পারলাম না। জানতামই না কোথায় কি হচ্ছে। আমাদের তো হাত পা বাঁধা! তারপর বলতেছ সাতার কাটো। আমরা পারবো না। আমরা পিছিয়ে নেই। আমরা পিছিয়ে নেই, সিস্টেমটা পিছিয়ে আছে। তবে হ্যাঁ, এই সিস্টেম বদলানোর দায়িত্ব আমাদের সবার। অগ্রজ ভূমিকাটা নিতে হবে নীতি নির্ধারকদের। আমরা সেটা ফলো করবো। এখন আপনি এমন নীতি দিয়ে রাখছেন সেই নীতির মধ্যেই আমরা ঘুরপাক খাচ্ছি। সিনেমার উন্নয়ন হবে! দেখান কি উন্নয়ন হয়েছে সিনেমায়! এফডিসিতে যে ক্যামেরাগুলো আসছে সেগুলো কি সেরা ক্যামেরা? সরকার তো টাকা দিয়েছে।
- আচ্ছা, টেকনিক্যাল ব্যাপারগুলো বাদ দেই। নিয়মনীতিও বাদ দেই। বাংলা সিনেমা এখন যে জায়গায় আছে সেখান থেকে সামনে নিয়ে যেতে হলে কি করা দরকার…
পশ্চিমবঙ্গে বাণিজ্যিক সফলতা পায় কোন ছবিগুলো? যেগুলো দর্শক নন্দিত ছবি। ওদের দর্শক কারা? শহুরে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত। ‘প্রাক্তন’, ‘বেলাশেষে’, আমাদের জয়া আহসানের ‘বিসর্জন’, এগুলো সব গল্পনির্ভর ছবি। আমাদের দেশেও কিন্তু গল্প নির্ভর ছবি ভালো করা শুরু করছে। সিনেমার আসল সফলতা ওই জায়গায়। অস্কার পায় কোন ছবিগুলো? অ্যাভেঞ্জার অস্কার পায় না, পেলেও ভিএফএক্সে। অস্কারে সেরা কোন ছবি? যেটাতে মৌলিক গল্প আছে। যে ছবি মানুষের বিবেককে নাড়া দেয়। আমার মনে হয় ইনফ্রাস্ট্রাকচার যদি বদলায়, ছবি দেখানোর সুযোগ যদি বাড়ে, তাহলে বাণিজ্যিক ছবির সংজ্ঞা বদলে যাবে। দুনিয়াতে বাণিজ্যিক ফিল্ম বা আর্ট ফিল্ম বলতে কিছু নাই। আমাদের দেশে টাকা বানালেই এটা বাণিজ্যিক সিনেমা। এখন ‘পোড়ামন ২’ বা ‘ঢাকা অ্যাটাক’ বাণিজ্যিক সিনেমা নাকি আর্ট ফিল্ম? কেমনে বলবো? টাকা বানিয়েছে এজন্য এটাকে কোন ক্যাটাগরীতে ফেলা হয় না! এখন ফর্মূলা ফিল্ম হয়ে গেছে বাণিজ্যিক ফিল্ম আর ইন্ডিপিন্ডেন্ট ফিল্ম হয়ে গেছে আর্ট ফিল্ম। জাগো তো আর্ট ফিল্ম না। এটা সাধারণ মানুষের জন্য বানানো সিনেমা। এখন ওভারঅল স্ট্রাকচারটাকে সিনেমা ফ্রেন্ডলি করতে হবে, সংস্কৃতিবান্ধব করতে হবে। নাহলে আমাদের বিশাল ইন্ডাস্ট্রিটা ধ্বংস হয়ে যাবে। আমাদের সবাইকে সাফার করতে হবে। এতোগুলো লোক এর সঙ্গে জড়িত, চলচ্চিত্র বন্ধ হয়ে গেলে কিন্তু তোমরা যারা বিনোদন সাংবাদিক তোমাদের বিনোদনও শেষ হয়ে যাবে! এই যে চেইন এইটা ভেঙ্গে পড়লে সবাই ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়বে। দায়িত্বশীল লোকদেরকে দায়িত্বের সঙ্গে গঠনমূলক সময়পোযোগী পদক্ষেপ নিয়ে বাস্তবায়ন করতে হবে।
- অন্য একটা প্রসঙ্গ সামনে আনি। মাঝখানে শাকিব খান এবং আপনাকে জড়িয়ে দ্বন্দ্বমুখর কিছু কথা ছড়িয়েছিলো ইন্ডাস্ট্রিতে…
স্পাইডারম্যান ছবিতে একটা ডায়লগ আছে এরকম, ‘উইথ গ্রেট পাওয়ার কামস গ্রেট রেসপন্সিবিলিটি। আমরা মানি বা না মানি, শাকিব খান সুপারস্টার। তাকে দেখতে মানুষ হলে যায়, তার উপরে লগ্নি করে প্রযোজকরা সিনেমা বানায়। ঈদে তার ছবির সঙ্গে অন্য ছবি লড়তে খুব কষ্ট হয়। তার ছবি যে ফ্লপ হয় না তা নয়। তবে কোন পরিচালক যদি নিশ্চিন্ত মনে কোন সিনেমা বানাতে চায় তবে সেটা শাকিবকে নিয়ে বানায়। এবং সে এটা আর্ন করে নিছে। আজকে সে বাংলাদেশের পাশাপাশি পাশের দেশেও ভালো করছে। শাকিবের সঙ্গে তো আমার কোন দ্বন্দ্ব নাই তবে আক্ষেপ আছে। ও চাইলে দশটা ভালো ছবির পাশে থাকতে পারতো। সে বলতে পারে আমাকে তো অফার করা হয়নি। তাহলে এখানে আমি সুপারস্টারের একটা উদাহরণ দেই, আমির খানের একটা সাক্ষাৎকার পড়েছিলাম। তিনি নিজে প্রজেক্ট চুজ করেন। তার কাছে তো প্রতিদিন প্রযোজকরা ধর্ণা দেয়। যেই গল্পটাতে বিশ্বাস করে সেটা তিনি নির্বাচন করেন। এখন পাশের দেশের আমির খান যদি ‘দঙ্গল’ বানাতে পারে, ‘তারে জামিন পার’, ‘রঙ দে বাসন্তি’ বানাতে পারে আবার কমার্শিয়ালও বানাচ্ছে, ‘গজনী’, ‘থাগস অফ হিন্দোস্তান’ও বানাচ্ছে, তাহলে আমরা কি শাকিবের কাছে এমন কিছু আশা করতে পারি না? এখন বলতে পারো শাকিবকে এই অফার দেয়া হয়নি! কেন? আমির তো এই ছবিগুলোর সঙ্গে নিজে জড়িত ছিল। সে ইন্সপায়ার করছে এই গল্পটা ভালো, আমি এই ছবিটা করবো। আজকে যদি শাকিব একটা তরুণ নির্মাতার গল্প নিয়ে বলে আমি এটা করবো, তাহলে কি তার প্রযোজকের অভাব হবে? কেন সে এটা করে না? এটাই তার প্রতি আমার আক্ষেপ। তবে এটা আমার ভাল লাগে যে আমার দেশের জয়া আহসান, আমার দেশের শুভ, আমার দেশের শাকিব যখন কলকাতায় গিয়ে ছবি করে তখন আমার গর্ব হয়। আমি চাই তারা আরো উপরে উঠুক।
সারাবাংলা/টিএস/পিএম
আরও পড়ুন :
এক ফ্রেমে শাকিব-ফারিয়া, তবে কি শুটিং শুরু?
আমন্ত্রণপত্রে নেই পরিচালকের নাম, দ্বন্দ্ব নাকি ভুল বোঝাবুঝি?
প্রতিবেদন দাখিল হয়নি, পেছালো নওশাবার মামলা
মণিকর্ণিকার প্রথম ঝলক
ভোট পুনঃগণনার ফল প্রকাশ, বিজয়ীরা অপরিবর্তিত
আরো দেখুন :
লুবনা মারিয়ামের সাক্ষাৎকার: নাচের মানুষ, কাছের মানুষ
https://www.youtube.com/watch?v=Vlz9HVc3_tY